তাক্বদীর

বইটির পিডিএফ কপি ডাউনলোড

তাক্বদীর: আল্লাহর আদেশ

সৃষ্টিজগতে বিশ্বপ্রভুর প্রাকৃতি নিয়ম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ

আল্লাহর আদেশ (হুকুম ও আমর)

ভাগ্যবাদের একটি অন্যতম দাবি হলো, সবকিছু আল্লাহর হুকুমে হয়। সুতরাং মানুষের জীবনে যত ঘটনা ঘটে সেটা আল্লাহর হুকুমেই ঘটে থাকে। এমন কি মানুষ যে ভালো কাজ বা মন্দ কাজ করে সেটাও আল্লাহর আদেশেই করে থাকে। এ অধ্যায়ে আমরা এ বিষয়টি কুরআনের আলোকে পর্যালোচনা করে দেখবো।

এ বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য অনুধাবনের জন্য নিম্নে আল্লাহর হুকুম (বিধান) ও আমর (আদেশ-নির্দেশ) সম্বলিত কিছু আয়াত উপস্থাপন করা হলো।

আল্লাহর হুকুম (বিধান)

৫:৫০ :: তবে কি তারা জাহিলিয়াতের বিধান তালাশ করে? প্রত্যয়শীল জনগোষ্ঠীর জন্য বিধান দেয়ার যোগ্যতায় আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম হতে পারে?

৬:৫৭ :: বলো, “নিশ্চয় আমি আমার প্রভুর পক্ষ থেকে আসা স্পষ্ট যুক্তি-প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত। অথচ তোমরা সেটাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছো। তোমরা যা (যে শাস্তি) শীঘ্রই পেতে চাচ্ছো, তা আমার কাছে নেই। আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেয়ার যোগ্যতা ও অধিকার নেই। তিনি সত্য বর্ণনা করেন। আর তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ ফায়সালাকারী।

৬:৬২ :: তারপর তাদেরকে আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হয় যিনি তাদের প্রকৃত অভিভাবক। জেনে রাখো, শুধু তাঁরই বিধান দেয়ার যোগ্যতা ও অধিকার আছে। আর তিনি দ্রুততম হিসাবকারী।

১২:৪০ :: তোমরা তো তাঁকে বাদ দিয়ে কিছু নামেরই পুজা করছো, যার নামকরণ তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা করেছো। আল্লাহ যে সম্পর্কে কোনো প্রমাণপত্র নাযিল করেন নি। আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেয়ার যোগ্যতা ও অধিকার নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা একমাত্র তাঁর ছাড়া কারো দাসত্ব করো না। এটাই সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থা। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।

১২:৬৭ :: আর সে (ইয়াক্বুব) বললো, “হে আমার পুত্ররা, তোমরা (শহরের) একটিমাত্র দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না, (বরং) বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করো। আর তোমাদেরকে আল্লাহর থেকে বাঁচাতে আমি কিছুমাত্রও কাজে আসবো না। আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেয়ার যোগ্যতা ও অধিকার নেই। আমি তাঁরই উপর ভরসা করি। আর ভরসাকারীরা তাঁরই উপর ভরসা করা উচিত।”

১৩:৩৭ :: আর এভাবেই (শিরকমুক্ত দাসত্বের নির্দেশ সহকারে) আমরা উহাকে (কুরআনকে) নাযিল করেছি আরবী ভাষায় বিবৃত বিধান হিসেবে। আর অবশ্যই যদি তোমার কাছে যে জ্ঞান এসেছে তারপর তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো, তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর (পাকড়াও) থেকে (বাঁচাতে) কোনো অভিভাবক ও রক্ষাকারী থাকবে না।

১৮:২৬ :: বলো, “তাদের অবস্থানকাল সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়সমূহ তাঁরই (জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণের) অধিকারভুক্ত। তিনি সবকিছু খুব ভালোভাবে দেখেন এবং তিনি সবকিছু খুব ভালোভাবে শুনেন। তিনি ছাড়া তাদের জন্য কোনো অভিভাবক নেই। আর তিনি তাঁর বিধান প্রণয়নে কাউকেই শরীক করেন না।”

২৮:৭০ :: আর তিনি আল্লাহ। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আগের ও পরের (দুনিয়ার ও আখিরাতের) সমস্ত প্রশংসা তাঁর। আর তাঁরই রয়েছে বিধান দেয়ার অধিকার ও যোগ্যতা। আর তাঁরই কাছে তোমরা ফিরে যাবে।

২৮:৮৮ :: আর তুমি আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহকে ডেকো না। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তাঁর সত্তা ছাড়া সবকিছু ধ্বংসশীল। আর তাঁরই রয়েছে বিধান দেয়ার অধিকার ও যোগ্যতা। আর তাঁরই কাছে তোমরা ফিরে যাবে।

৪০:১২ :: (কাফিরদেরকে বলা হবে,) “ঐরূপ হবে (তোমরা স্থায়ী শাস্তি পাবে), এ কারণে যে, যখন আল্লাহর দিকে ডাকা হতো তাঁর একত্ববাদ স্বীকার করে, তখন তোমরা অবিশ্বাস করতে। আর যখন তাঁর সাথে শিরক করা হতো তখন তোমরা উহাতে বিশ্বাস করতে। বস্তুত আল্লাহরই রয়েছে বিধান দেয়ার অধিকার ও যোগ্যতা, যিনি সমুচ্চ-সুমহান।

৭৬:২৪ :: আর তুমি তোমার প্রতিপালকের বিধান বাস্তবায়িত হওয়ার বিষয়ে সবর করো। আর তুমি তাদের মধ্য থেকে কোনো পাপী ও অকৃতজ্ঞের আনুগত্য করো না।

৫:১ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমরা (প্রতিশ্রুতির) বন্ধনসমূহ পূর্ণ করো। তোমাদের জন্য গবাদি পশু প্রকৃতির বিচরণশীল চতুষ্পদ পশুসমূহ হালাল করা হয়েছে, তোমাদের কাছে যেগুলোর (হারাম হওয়ার বিষয়ে) তিলাওয়াত করা হচ্ছে সেগুলো ছাড়া। (স্থলভাগের) শিকারকারী হওয়া যাবে না, তোমরা হুরুমুন (হারাম মাসসমূহে থাকা) অবস্থায়। নিশ্চয় আল্লাহ বিধান দেন, যা তিনি ইচ্ছা করেন।

‌‌‌আল্লাহর আমর (আদেশ-নির্দেশ)

৪:৫৮ :: নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানাত উহার প্রাপক/যোগ্য ব্যক্তির কাছে অর্পণ/প্রত্যর্পণ করো। আর তোমরা যখন বিচার-ফায়সালা করবে তখন ন্যায়বিচার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা অত্যন্ত উত্তম। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

৪:৬০ :: তুমি কি তাদের অবস্থা দেখো নি যারা দাবি করে যে, তারা উহার প্রতি বিশ্বাস করেছে যা তোমার প্রতি নাজিল করা হয়েছে আর ঐসবের প্রতি যা তোমার আগে নাজিল করা হয়েছে। তারা ইচ্ছা করে যে, তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হবে। অথচ নিশ্চয় তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো তাগুতের প্রতি কুফর করার জন্য। আর শয়তান তোমাদের সুদূর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে ইচ্ছা করে।

৭:২৮ :: আর যখন তারা (ধর্মীয় রীতির নামে) অশ্লীল কাজ করে তখন বলে, “আমরা এর উপর (এরূপ রীতির উপর) আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পেয়েছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন।” বলো, “নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলছো, যা (আল্লাহ বলেছেন কিনা) তোমরা জানো না?”।

৭:২৯ :: বলো, “আমার প্রভু আদেশ করেছেন ন্যায়বিচার করার জন্য।” আর তোমরা স্থির রাখো তোমাদের লক্ষ্য প্রত্যেক মাসজিদের অনুকূলে। আর তাঁকে (আল্লাহকে) ডাকো তাঁরই জন্য জীবনব্যবস্থাকে খাঁটি করে নিয়ে। যেভাবে তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সেভাবে তোমরা ফিরে আসবে।

৭:৫৪ :: নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি রাতকে দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে। আর (সৃষ্টি করেছেন) সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজী, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখো, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব।

৯:৩১ :: তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের আহবার ও রুহবানকে (ধর্মীয় পণ্ডিত ও সন্ন্যাসীদেরকে) রব বা বিধানদাতা হিসেবে গ্রহণ করে। আর মাসীহ ইবনে মারিয়ামকেও (বিধানদাতা হিসেবে গ্রহণ করে)। অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় নি এ ছাড়া যে, যেন তারা একক ইলাহের (অর্থাৎ আল্লাহর) দাসত্ব করে। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তারা তাঁর সাথে যে শিরক করে তা থেকে তিনি পবিত্র।

১৩:৩৬ :: আর যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছিলাম তারা আনন্দিত হচ্ছে উহার কারণে যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি আর বিভিন্ন দলের মধ্য থেকে কেউ কেউ অস্বীকার করে উহার কিছু অংশ। বলো, “নিশ্চয় আমি নির্দেশ পেয়েছি যেন আমি আল্লাহর দাসত্ব করি। আর আমি যেন তাঁর সাথে শিরক করি না। তাঁরই দিকে আমি ডাকি। আর তাঁরই দিকে আমার গন্তব্য/ প্রত্যাবর্তন।”

১৬:৯০ :: নিশ্চয় আল্লাহ আদেশ দেন ন্যায়বিচার করতে, সদাচার করতে এবং আত্মীয়-স্বজনদেরকে দান করতে। আর তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা থেকে, অন্যায় কাজ থেকে এবং সীমালঙ্ঘন/ অসঙ্গত বিদ্রোহ করা থেকে। তিনি তোমাদেরকে সদুপদেশ দেন, যেন তোমরা স্মরণীয় উপদেশ গ্রহণ করো।

৪২:১৫ :: তুমি উহার জন্য (সঠিক জীবনব্যবস্থার দিকে) আহবান করো। আর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকো যেরূপে তুমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছো। আর তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর বলো, “আমি বিশ্বাস করেছি যা আল্লাহ নাযিল করেছেন সেই কিতাবের প্রতি আর আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে। আল্লাহ আমাদের রব আর তোমাদেরও রব। আমাদের জন্য আমাদের কাজ আর তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোনো তর্ক নেই। আল্লাহ আমাদেরকে একত্রিত করবেন, আর তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনস্থল।”

৯৮:৫ :: আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যে, তারা যেন আল্লাহর দাসত্ব করে তাঁরই জন্য জীবনব্যবস্থাকে একনিষ্ঠ করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে; আর এটিই হল সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থা।

আলোচনা : উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের জন্য বিধান রচনার অধিকার ও যোগ্যতা একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে। তাই আল্লাহর বিধানকে নিজেদের মূল বিধান বা সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করে মানুষ তাদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। আর আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁর বিধানকে সর্বশেষে আরবি ভাষায় বিবৃত ‘কুরআন’ এর মাধ্যমে নাযিল করেছেন। তাই অন্যান্য ভাষাভাষীরা তাঁর বিধান জানার ক্ষেত্রে আরবি ভাষার কুরআনের বক্তব্যকে নিজেদের মাতৃভাষায় অনুবাদ করে নিতে হবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। তবে আল্লাহর হুকুম বা বিধান মানা না মানার ক্ষেত্রে মানুষকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দিয়েছেন। তারা আল্লাহর বিধান না মেনে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে পারে, তাগুতের বিধান মেনে চলতে পারে। কিন্তু একমাত্র আল্লাহর বিধানই প্রকৃত জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রণীত বিধান, অন্যদিকে তাগুতের বিধান হলো জাহিলিয়্যাতের বিধান তথা অজ্ঞতা-মুর্খতাপ্রসূত বিধান। আল্লাহ তাঁর বিধান প্রণয়নে কাউকে শরীক করেন না। তাই আল্লাহর বিধানের বাইরে অন্য কারো বিধান মেনে চলার পরিণতি হলো পৃথিবীতেও অকল্যাণ এবং আখিরাতেও জাহান্নামের শাস্তি।

আল্লাহ কোনো অন্যায় ও অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না। বরং তিনি ন্যায়নীতির নির্দেশ প্রদান করেন। ধর্মের নামে বিভিন্ন অশ্লীল কাজের প্রচলনকারীরা তাদের ঐসব কাজের বিষয়ে ‘আল্লাহর নির্দেশ’ থাকার কথা বললে, জবাবে বলা হয়েছে যে, এটা আল্লাহর ব্যাপারে তাদের মিথ্যারোপ। আল্লাহ ভালো কাজের নির্দেশ দেন এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করেন। কিন্তু কোনো ব্যক্তির আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অমান্য করলে তার পক্ষে তা করা সম্ভব হয়, কিন্তু সেটা তার জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সুতরাং মানবজীবনে যা ঘটে তার সবই আল্লাহর হুকুমে ঘটে এবং তাই মানুষ যা কিছু ভালো বা মন্দ কাজ করে তাও আল্লাহর হুকুম বা নির্দেশে ঘটে- এরূপ কথা আল কুরআনের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। বরং প্রকৃত সত্য হলো, আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন বিধায় মানুষের পক্ষে তাঁর হুকুম ও নির্দেশ অমান্য করা সম্ভব হয় এবং অনেকে তা অমান্য করে।

শয়তান ও তার অনুসারীরাই মন্দ কাজের আদেশ দেয়

কোনো মন্দ কাজ আল্লাহর হুকুমে বা নির্দেশে ঘটে না। আল্লাহ কোনো অন্যায় ও অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না। বরং শয়তান ও তার অনুসারীরাই মন্দ কাজের আদেশ দেয়। নিম্নে এ বিষয়ে কিছু আয়াত উল্লেখ করা হলো।

২:১৬৮-১৬৯ :: হে মানুষ, তোমরা পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র জিনিস রয়েছে, তোমরা তা থেকে খাও। আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে (শয়তান) তোমাদের স্পষ্ট শত্রু। মূলতঃ সে (শয়তান) তোমাদেরকে নির্দেশ দেয় মন্দ ও অশ্লীল কাজের জন্য এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কথা বলার জন্য যা (সঠিক কিনা) তা তোমরা জানো না।

২:২৬৮ :: শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং তোমাদেরকে অশ্লীলতার আদেশ দেয়। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের ওয়াদা দেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী-সর্বজ্ঞ।

২৪:২১ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। আর যে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, নিশ্চয় সে (শয়তান) তাকে অশ্লীল ও অন্যায় কাজের আদেশ দেয়। আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না হতো, তাহলে তোমাদের মধ্য থেকে কেউ কখনোই পরিশুদ্ধ হতো না। কিন্তু আল্লাহ পরিশুদ্ধ করেন, যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা-সর্বজ্ঞ।

৫৭:২৪ :: যারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতা করার জন্য আদেশ দেয় এবং যে (আল্লাহ বিধান থেকে) বিমুখ হয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত।

কুরআন কি আল্লাহর নির্দেশে ফাসেকি সংঘটনের প্রমাণ দেয়? : সূরা বানী ইসরাইলের ১৬ আয়াতের প্রকৃত তাৎপর্য কী?

১৭:১৬ :: আর যখন আমরা কোনো জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি (তা এভাবে হয় যে,), আমরা উহার মুতরাফীনকে (যারা দুর্বিনীত ও বেপরোয়া শাসক ও শোষক হওয়ার প্রেক্ষিতে বিত্ত-বিভব পেয়েছে তাদেরকে, ধ্বংস থেকে বাঁচতে হলে তাদের কর্মনীতি সংশোধন করার জন্য) আদেশ প্রদান করি। তারপর তারা তাতে আদেশ পরিপালনে অবাধ্য হয়। তখন তারা নিজেদের উপর আমার (শাস্তির) বাণীর হক্বদার হয়ে যায় (বা তাদের কর্মের কারণে তাদের উপর কিতাবের মাধ্যমে আমার জানিয়ে দেয়া শাস্তির বাণী যৌক্তিক হয়ে যায়)। তখন আমরা সেটাকে যথাযথভাবে বিধ্বস্ত করে দিই।

আলোচনা : ভাগ্যবাদ অনুসারে মানুষ ভালো ও মন্দ যা কিছু কাজ করে তা আল্লাহর নির্দেশে করে থাকে। এ দাবির দলীল হিসেবে উপরোল্লেখিত আয়াতটি উল্লেখ করে বলা হয় যে, আয়াতটিতে বলা হয়েছে, আল্লাহ যখন কোনো জনপদকে ধ্বংস করতে ইচ্ছা করেন তখন তিনি সেই জনপদের মুতরাফীনকে তথা ধনী, স্বচ্ছল ও সমৃদ্ধিশালী লোকদেরকে পাপাচারের আদেশ দেন, তারপর তারা পাপাচার করে, তারপর আল্লাহ সেই জনপদকে ধ্বংস করে দেন। এখন আমাদেরকে আয়াতটির প্রকৃত তাৎপর্য অনুসন্ধান করে দেখতে হবে যে, এ দাবিটি সঠিক কিনা?

প্রথমে উল্লেখ্য যে, আয়াতটিতে আল্লাহ পাপাচারের আদেশ দেন কথাটি বলা হয় নি, বরং বলা হয়েছে ‘আমারনা’ অর্থাৎ ‘আমরা আদেশ দিই’। এখন আল্লাহ কিসের আদেশ দেন? যেহেতু পরে বলা হয়েছে, ‘তারপর তারা পাপাচার করে’, তাই ধরে নেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ পাপাচারের আদেশ দেন, তারপর তারা পাপাচার করে। কিন্তু এ ধরে নেয়া সঠিক নয়। কারণ আল্লাহ কুরআনে অন্য আয়াতসমূহে স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি মন্দ কাজের আদেশ দেন না। সুতরাং এখানে ‘আল্লাহ আদেশ দেন’ বলতে ‘আল্লাহ পাপাচারের আদেশ দেন’ কথাটি সঠিক হতে পারে না। বরং আল্লাহর আদেশ হয়ে থাকে সৎকর্মের আদেশ। এজন্য অনেকে এখানে ব্রাকেটে (সৎকর্মের) কথাটি লিখে দেন। এটাই সঠিক। তবে সৎকর্মের শব্দটি আয়াতে সরাসরি উল্লেখ করা হয় নি। তা সত্ত্বেও এখানে সৎকর্মের কথাটিই যথার্থ। প্রশ্ন হলো, (১) কেন আয়াতে ‘কিসের’ আদেশ প্রদান করেন, তা সরাসরি উল্লেখ করা হয় নি?, (২) কেন এখানে উল্লেখ না করা সত্ত্বেও ‘সৎকর্মের’ আদেশ দেয়ার বিষয়টিই যে বুঝানো হয়েছে তা স্বত:সিদ্ধভাবে ধরে নেয়া যায় ও ধরে নিতে হবে?। এ পর্যায়ে আমরা এ প্রশ্নগুলোর সমাধানের চেষ্টা করবো।

আয়াতের প্রথমে বলা হয়েছে যে, যখন আমরা কোনো জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি। আল্লাহ বিনা কারণে কোনো জনপদকে ধ্বংস করেন না এবং ধ্বংস করার ইচ্ছাও করেন না। বরং আল্লাহর তৈরি নীতিমালা অনুসারে যখন কোনো জনপদকে ধ্বংস করে দেয়া যৌক্তিক হয়ে যায়, তখনি তিনি তা ধ্বংস করেন। আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে যে, তারা যখন ফাসেকি করে তখন তাদের উপর আল্লাহর শাস্তির বাণী যৌক্তিক হয়ে যায় বা তারা শাস্তির হক্বদার হয়ে যায়। আর তখন আল্লাহ ঐ জনপদকে ধ্বংস করে দেন। সুতরাং তাদেরকে ধ্বংস করা হয় তাদের অন্যায় কর্মের কারণে এবং যৌক্তিক কারণে, বিনা কারণে বা অযৌক্তিক কারণে নয়।

আয়াতটিতে কোনো জনপদকে ধ্বংস করার ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ যখন কোনো জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করা হয় তখন তা কীভাবে ঘটে তা বলা হয়েছে। আগেই বলা হয়েছে যে, আল্লাহ বিনা কারণে জনপদকে ধ্বংস করেন না বা ধ্বংস করার ইচ্ছা করেন না। সুতরাং কোনো জনপদবাসী অন্যায় করার পরই তাদেরকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করা হয়। তবে অন্যায়ের সাথে সাথে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয় না। বরং প্রথমে তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়। অর্থাৎ ঐ অন্যায় সংশোধনের আদেশ দেয়া হয়।

বলা হয়েছে ‘আমারনা মুতরাফীহা’ (ঐ জনপদের মুতরাফীনকে আদেশ প্রদান করি)। এখন আমাদেরকে বুঝতে হবে, কুরআনে বর্ণিত ‘মুতরাফীন’ কারা? তাহলে কাদেরকে আদেশ দেয়া হয় এবং কী আদেশ দেয়া হয়, এ দুটি বুঝতে সহজ হবে। তাই নিম্নে ‘মুতরাফীন’ সম্পর্কিত এ আয়াতটি (১৭:১৬) ছাড়া অন্য যেসব আয়াত রয়েছে সেগুলোও উল্লেখ করা হলো।

২৩:৬৪ :: শেষ পর্যন্ত যখন আমরা মুতরাফীনকে শাস্তি দিয়ে পাকড়াও করি, তখন তারা আর্তনাদ করে উঠে।

৩৪:৩৪ :: আর আমরা কোনো জনপদে কোনো সতর্ককারী প্রেরণ করি নি, যার সাথে এরূপ ঘটে নি যে, মুতরাফীন বলেছিলো, “নিশ্চয় তোমরা যা নিয়ে এসেছো আমরা উহার প্রতি অবিশ্বাসী (বা উহাকে প্রত্যাখ্যানকারী)।” তারা আরো বলেছিলো, “আমরা সম্পদে ও সন্তানে (ধনবলে ও জনবলে) তোমাদের তুলনায় অধিক সমৃদ্ধ। আর তাই আমরা শাস্তিপ্রাপ্ত হবো না (অর্থাৎ কেউ আমাদেরকে শাস্তি দিতে পারবে বলে পরোয়া করি না)।

৪৩:২৩ :: আর এরূপে আমরা কোনো জনপদে কোনো সতর্ককারী প্রেরণ করি নি, যার সাথে এরূপ ঘটে নি যে, উহার মুতরাফীন বলেছিলো, “নিশ্চয় আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে একটি আদর্শিক জনগোষ্ঠী হিসেবে পেয়েছি, আর নিশ্চয় আমরা তাদেরই শিক্ষার অনুসারী (ছিলাম এবং থাকবো)।”

৫৬:৪৫ :: নিশ্চয় তারা উহার আগে (জাহান্নামবাসী হওয়ার আগে দুনিয়াতে) মুতরাফীন হিসেবে ছিলো।

উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্ট যে, ‘মুতরাফীন’ বলতে সাধারণভাবে ‘ধনী, স্বচ্ছল ও সমৃদ্ধিশালী’ বুঝায় না, বরং যে সকল ধনী, স্বচ্ছল ও সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তি অন্যদেরকে শাসন ও শোষণ করে তাদেরকে বুঝায়। এ শব্দটির আভিধানিক অর্থের মধ্যেও এই শাসন ও শোষণের বিষয়টি রয়েছে। এছাড়াও তাদের দুর্বিনীত ও বেপরোয়া হওয়ার বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। এজন্য মুতরাফীনরা সব সময় নবী-রসূলদের দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এক পর্যায়ে তাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পার্থিব শাস্তি দ্বারাও পাকড়াও করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত বিচারে তারা জাহান্নামবাসী হবে।

এমতাবস্থায়, মুতরাফীনকে আদেশ দেয়ার অর্থ হলো, তাদেরকে তাদের ‘মুতরাফীন’ হওয়ার স্বভাব-বৈশিষ্ট্য থেকে নিজেদেরকে সংশোধন করার জন্য আদেশ দেয়া। আর এ আদেশ দেয়ার কারণ হলো, আল্লাহ কোনো জনপদকে তাঁর আদেশ সম্পর্কে অনবহিত রেখে বা চূড়ান্ত সাবধানতার আদেশ পৌঁছানো ছাড়া ধ্বংস করেন না। এ বিষয়ে নিম্নের আয়াতটি লক্ষ্যণীয়।

৬:১৩১ :: তা এজন্য যে, তোমার প্রভু কোনো জনপদকে যুলুমের দ্বারা ধ্বংসকারী নহেন, এ অবস্থায় যে, তার অধিবাসীরা (তাঁর সতর্কবার্তা সম্পর্কে) অনবহিত।

তারপর ‘আমারনা’ বলতে যে, ‘অসৎকর্ম পরিহার করে সৎকর্ম সম্পাদনের নির্দেশ’ বুঝানো হয়েছে, তার আরো প্রমাণ হলো, এরপর বলা হয়েছে, ‘ফাফাছাক্বূ’ (তারপর তারা ফাসেক্বি করেছে তথা আদেশ পরিপালনে অবাধ্য হয়েছে)। ‘ফাছাক্বূ’ মানে ‘আদেশ পরিপালনে অবাধ্য হওয়া’। এক কথায়, আদেশ অমান্য করাটাই ফাসেক্বি। তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেটা তারা মানে নি। সুতরাং তাদেরকে ফাসেক্বির নির্দেশ দেয়া হয় নি বা তারা আল্লাহর নির্দেশে ফাসেক্বি করে নি। বরং তারা আল্লাহর নির্দেশ মানে নাই, আর এই না মানাটাই তাদের ফাসেক্বি। ফাসেক্বি মানে যে, আল্লাহর নির্দেশ না মানা, এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে অনুধাবনের জন্য ১৮:৫০ আয়াত লক্ষ্যণীয়।

১৮:৫০ :: আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা ফেরেশতাদেরকে বললাম, “তোমরা আদমের প্রসঙ্গে সাজদাহ করো।” তখন তারা সাজদাহ করলো। কিন্তু ইবলিস (সাজদাহ করলো না)। সে ছিলো জিনদের অন্তর্ভুক্ত। তখন সে তার রবের আদেশ পরিপালনের বিষয়ে অবাধ্যতা করেছে। তবে কি তোমরা আমাকে বাদ দিয়ে তাকে ও তার বংশধরদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করছো? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। জালিমদের এই বদল (অর্থাৎ আল্লাহকে বদলে শয়তান ও তার বংশধরদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ) অত্যন্ত নিকৃষ্ট।

আল্লাহর আদেশে কেউ অন্যায় করা একটি অবান্তর চিন্তা ছাড়া কিছু নয়। বরং কোনো জনপদের অধিবাসীরা পাপ করলে আল্লাহ তাদেরকে পাপ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করেন ও আদেশ দেন। আর তারা যেন পাপ থেকে ফিরে আসে সেজন্য তাদেরকে বড় শাস্তির পূর্বে ছোটো-খাটো শাস্তি দিয়ে থাকেন, যেন তারা ফিরে আসে। তবে আল্লাহ তাদের পাপাচারের সুযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেন না, বরং প্রাকৃতিক নিয়মে থাকা অবকাশ অনুসারে তারা সংশোধিত না হলে বরং বেপরোয়াভাবে উত্তরোত্তর পাপাচার করতে থাকে এবং এভাবে এক পর্যায়ে তাদের অবকাশ শেষ হয়ে যায়, ফলে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়।

৩২:২১ :: আর আমরা তাদেরকে বড় শাস্তির আগে লঘু শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো, যেন তারা ফিরে আসতে পারে।

৯:১২৬ :: তারা কি দেখে না যে, তারা প্রত্যেক বছর একবার বা দুইবার বিপদে/পরীক্ষায় পড়ে, তারপরও তারা তাওবাহ করেন এবং স্মরণীয় উপদেশ গ্রহণ করে না।

পরিশেষে বলা যায় যে, ‘সবকিছু আল্লাহর হুকুমে হয়, মানুষের ভালো ও মন্দ কাজও এর অন্তর্ভুক্ত’- এই প্রচারণাটি কুরআনসম্মত নয়। অবশ্যই সবকিছু আল্লাহর প্রাকৃতিক বিধান অনুসারে হয় এবং তাতে মানুষের জন্য সীমিত ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতার অবকাশ রয়েছে। তাই মানুষকে আল্লাহ যা হুকুম দিয়েছেন সে যেমন তা পালন করতে পারে, তেমনি তা লঙ্ঘনও করতে পারে। এই যে আল্লাহর হুকুম না মেনে তার বিপরীত কিছু করা, এটা মানুষ এজন্যই করতে পারে যে, স্বয়ং আল্লাহ তাকে এ স্বাধীনতা দিয়েছেন। অন্যথা মানুষের পক্ষে আল্লাহর হুকুম অমান্য করা সম্ভব হতো না। সুতরাং মানুষের ভালো কাজগুলো আল্লাহর হুকুম মেনে সম্পাদিত হয় এবং মন্দ কাজগুলো আল্লাহর হুকুম অমান্য করে সম্পাদিত হয়।

জন্ম : পূর্বনির্ধারিত ভাগ্য না প্রাকৃতিক আইনের প্রয়োগ?

ভাগ্যবাদে দাবি করা হয় যে, “জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে, নির্ধারিত ভাগ্য দিয়ে।” জন্ম প্রসঙ্গে এ কথার অর্থ হলো, কে কাকে জন্ম দিবে তথা কে কার পিতা-মাতা বা পুত্র-কন্যা হবে, সেটা ভাগ্যে পূর্বনির্ধারিত রয়েছে। এটা ঠিক যে, কে আমাদের পিতা-মাতা হবে তা আমরা বাছাই করি না, তাই আমরা সহজে ভাগ্যবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যাই। এ অধ্যায়ে আমরা ‘জন্ম কি পূর্ব নির্ধারিত ভাগ্য নাকি প্রাকৃতিক আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে হয়ে থাকে?’ এ বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করবো।

সন্তান জন্মদানের প্রাকৃতিক নিয়ম

৭:১৮৯ :: তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে বানিয়েছেন তার সঙ্গিনীকে, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করে। অতঃপর যখন সে তার সঙ্গিনীর সাথে মিলিত হলো, তখন সে হালকা গর্ভ ধারণ করলো এবং তা নিয়ে চলাফেরা করতে থাকলো। অতঃপর যখন সে ভারী হলো, তখন উভয়ে তাদের প্রভুকে আল্লাহকে ডাকলো, “যদি আপনি আমাদেরকে সুসন্তান দান করেন তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবো।”

৬০:১২ :: হে নবী, যখন তোমার কাছে মু’মিন নারীরা এসে বাইয়াত (শপথ) করে এ মর্মে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক (অংশীদার সাব্যস্ত) করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানকে হত্যা করবে না, এবং মিথ্যা দাবি (বুহতান) নিয়ে আসবে না যা তারা রচনা/সংঘটিত করে তাদের হাতসমূহ ও পাসমূহের মধ্যবর্তীতে (অর্থাৎ স্বামীর সন্তান হিসেবে অন্যের সন্তানকে নিয়ে আসবে না), ন্যায়সঙ্গত ক্ষেত্রে তোমাকে অমান্য করবে না, তখন তাদের বাইয়াত গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।

১৭:৩২ :: তোমরা ব্যভিচারের (বিবাহ-বহির্ভূত যৌন-সম্পর্কের) ধারে কাছেও যেও না। নিশ্চয় তা অশ্লীলতা এবং অত্যন্ত মন্দ পথ।

আলোচনা : সন্তান জন্মদানের প্রাকৃতিক নিয়ম হলো, স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলন। এখন যদি দুজন নারী-পুরুষ বিয়ে ছাড়াও দৈহিক মিলন করে, তাতে তাদের সন্তান জন্ম নিতে পারে। কিন্তু বিয়ে ছাড়া যৌন-সম্পর্ক বা ব্যভিচার (জিনা) আল্লাহর বিধানে হারাম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সাধারণভাবে কেউ যদি বিয়ে না করে এবং ব্যভিচারও না করে, তাহলে তার কোনো সন্তান জন্ম নেবে না। আবার বিয়ে করলেও যদি স্বামী-স্ত্রীর মিলন না হয় এবং তারা পরকীয়া না করে, তাহলেও তাদের সন্তান জন্ম নেবে না। এমতাবস্থায়, সন্তান জন্মলাভের জন্য ঐ সন্তানের পিতামাতার দৈহিক মিলন শর্ত, তারপর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তথা আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক নিয়মের অন্যান্য অনুঘটকের ভিত্তিতে তাদের সন্তান জন্মগ্রহণ করবে বা করবে না। এ বিষয়ে ৪২:৪৯ আয়াতটি লক্ষ্যণীয় (আয়াতটি পরে উল্লেখ করা হবে)। সুতরাং জন্মগ্রহণের ক্ষেত্রে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের ইচ্ছার কোনো ভূমিকা নেই, কিন্তু তার পিতা-মাতার ইচ্ছা ও কর্মের ভূমিকা রয়েছে। অর্থাৎ জন্মগ্রহণ ভাগ্য দ্বারা নয়, বরং প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত হয়।

নবী ঈসার জন্মের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম প্রসঙ্গ

৩:৪৭ :: সে (মারইয়াম) বলেছে, “আমার প্রভু, কিরূপে আমার সন্তান হবে, অথচ আমাকে স্পর্শ করেনি কোনো মানুষ?”। তিনি বলেছেন, “ঐভাবেই। আল্লাহ সৃষ্টি করেন যা তিনি (সৃষ্টি করার) ইচ্ছা করেন। যখন তিনি কোনো কাজের সিদ্ধান্ত করেন তখন তিনি উহার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘হও’, সুতরাং (তা) হয়”।

১৯:১৯-২১ :: সে (রূহ/ জিবরীল) বলেছে, “প্রকৃতপক্ষে আমি তোমার রবের রসূল, যেন আমি দিতে পারি তোমাকে এক পরিশুদ্ধ পুত্রসন্তান”। সে (মারিয়াম) বলেছে, “কিরূপে আমার পুত্র হবে, অথচ আমাকে স্পর্শ করেনি কোনো মানুষ, আর আমি নই সীমালংঘনকারী (সতীত্ব বর্জনকারী)”। সে (রূহ/ জিবরীল) বলেছে, “ঐরূপেই হবে। তোমার রব বলেছেন, ‘উহা আমার জন্য সহজ’। আর এজন্য যে, আমরা তাকে (তোমার পুত্রকে) করবো মানুষের জন্য নিদর্শনস্বরূপ আর আমাদের পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। আর উহা হয়েছে (প্রাকৃতিক নিয়ম ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণমূলক) স্থিরিকৃত সিদ্ধান্ত”।

আয়াতগুলো থেকে বুঝা যায় যে, যদিও সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী মিলিত হওয়াই প্রাকৃতিক নিয়ম, তবুও নবী ঈসার জন্মের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছিলো। আর তা হলো তাঁর মা মারইয়ামকে কোনো পুরুষ স্পর্শ না করা সত্ত্বেও আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাকৃতিক নিয়মকে নিয়ন্ত্রণের ফলে একটি ব্যতিক্রমমূলক পদ্ধতিতে তিনি ঈসা নবীকে গর্ভধারণ করেছিলেন। আর এই প্রেক্ষিতে তাঁকে ঈসা নবীর জন্মের বিষয়ে আগাম সুসংবাদ দেয়া হয়েছিলো। আর যেহেতু আল্লাহ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সবই জানেন, তাই কোনো বিষয়ে আগাম সুসংবাদ দেয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব। কিন্তু এর মানে কোনোক্রমে ভাগ্যবাদ নয়। কারণ, প্রাকৃতিক নিয়ম ও তার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আল্লাহর ভূমিকা এবং প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে মানুষের সীমিত স্বাধীন ইচ্ছা ও কর্মক্ষমতা পরস্পর সঙ্গতিপূর্ণভাবে ক্রিয়াশীল থাকতে পারে। কিন্তু ভাগ্যবাদের ক্ষেত্রে মানুষের কোনোরূপ স্বাধীন ইচ্ছা ও কর্মক্ষমতার অবকাশ থাকে না।

আল্লাহর সন্তান ও স্ত্রী না থাকা প্রসঙ্গ

৬:১০১ :: তিনিই আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা। কিরূপে হবে তাঁর কোনো সন্তান? আর তাঁর কোনো সঙ্গিনী নেই! আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন সকল কিছু। আর তিনি সকল বিষয়ে জ্ঞানী।

স্ত্রী ছাড়া কোনো পুরুষের সন্তান হতে পারে কিনা? অনুরূপভাবে পুরুষ ছাড়া কোনো নারীর সন্তান হতে পারে কিনা?- এসব প্রশ্নের সাথে ৬:১০১ আয়াতের সম্পর্ক নেই। কারণ আল্লাহ পুরুষ বা নারী হওয়ার তথা লিঙ্গগত সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে। আর তাই তাঁর সন্তান হওয়ার প্রশ্নের সাথে স্বামী বা স্ত্রীর প্রশ্ন আসবে না।

আয়াতটিতে বলা হয়েছে, “কিরূপে হবে তাঁর কোনো সন্তান? আর তাঁর কোনো সঙ্গিনী নেই!” এখানে ‘তাঁর কোনো সঙ্গিনী নেই’ তথ্যটি এ উদ্দেশ্যে নয় যে, সঙ্গিনী না থাকলে সন্তান হওয়া সম্ভব নয় বিধায় তথ্যটি জানানো হয়েছে। বরং এখানে ‘তাঁর কোনো সঙ্গিনী নেই’ এটি একটি সংযোজনমূলক তথ্য, একটি অতিরিক্ত বা বাড়তি তথ্য। আর সঙ্গিনী বলার কারণ এ নয় যে, আল্লাহ পুরুষ। বরং এর কারণ হলো, ‘আল্লাহ’ শব্দটি ব্যাকরণগতভাবে পুরুষবাচক (প্রকৃত পুরুষবাচক নয়) বিধায় বিপরীতে সঙ্গিনী (স্ত্রীবাচক শব্দ) আনা হয়েছে।

আয়াতটিতে থাকা ‘কীরূপে হবে তাঁর কোনো সন্তান?’ বাক্যটি প্রশ্নবোধক বাক্য, ‘আর তাঁর কোনো সঙ্গিনী নেই’ বাক্যটি নাবোধক বাক্য এবং ‘আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন সকল কিছু’ বাক্যটি হ্যাঁবোধক বাক্য।

এখানে আয়াতটি নিয়ে আলোচনার কারণ হলো, অনেকে এ আয়াতকে সন্তান জন্মদানের প্রাকৃতিক নিয়ম এবং আল্লাহ নিজেও প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা আবদ্ধ কিনা- প্রসঙ্গের জন্য উল্লেখ করেন বা করতে পারেন।

পুত্র সন্তান পছন্দ করা ও কন্যা সন্তান অপছন্দ করা বা এর বিপরীত করা অনুচিত

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দেন এবং যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দেন এবং মানব-সভ্যতার বিকাশের জন্য উভয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এমতাবস্থায়, পুত্র সন্তান পছন্দ করা এবং কন্যা সন্তান অপছন্দ করা বা এর বিপরীত করা উচিত নয়।

৪২:৪৯ :: আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আধিপত্য। তিনি সৃষ্টি করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন। তিনি দান করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন কন্যা সন্তান। আর তিনি দান করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন পুত্র সন্তান। অথবা তাদেরকে মিলিয়ে দেন পুত্র সন্তান ও কন্যাসন্তান। আর তিনি করে দেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন বন্ধ্যা। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞানী এবং প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

২১:৯০ :: তখন আমরা তার (জাকারিয়্যার) ডাকে সাড়া দিয়েছি। আর তাকে (পুত্র হিসাবে) দিয়েছি ইয়াহইয়াকে। আর তার স্ত্রীকে (বন্ধ্যাত্ব থেকে) নিরাময় করে উহার জন্য উপযোগী করে দিয়েছি। নিশ্চয় তারা প্রচেষ্টা করতো কল্যাণকর কাজের ব্যাপারে। আর তারা আমাদেরকে ডাকতো আগ্রহের সাথে ও ভীতির সাথে। আর তারা ছিলো আমাদের জন্য (দায়বদ্ধতার অনুভূতিতে) অবনমিত।

৩:৬ :: তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে আকৃতি দেন মাতৃগর্ভসমূহে, তাঁর (অতাৎক্ষণিক) ইচ্ছা অনুযায়ী (অর্থাৎ তাঁর তৈরি প্রাকৃতিক আইন অনুসারে)। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি মহাশক্তিমান, মহাবিজ্ঞ।

আলোচনা : আল্লাহর ইচ্ছাক্রমে কেউ পুত্রসন্তান বা কন্যা সন্তান পেয়ে থাকে বা কেউ পুত্র-কন্যা উভয় ধরনের সন্তান পেয়ে থাকে আর কেউ কোনো সন্তান পায় না বা বন্ধ্যা হয়ে থাকে। আর আল্লাহর ইচ্ছার বিষয়টি তাক্বদীর বা প্রাকৃতিক আইনের নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। বর্তমানে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষ জানে গর্ভধারণের কোন প্রাকৃতিক নিয়মে কেউ পুত্র সন্তান পেয়ে থাকে বা কন্যা সন্তান পেয়ে থাকে বা উভয় ধরনের সন্তান পেয়ে থাকে বা বন্ধ্যা হয়ে থাকে। এমনকি এখন মানুষ বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কেও জ্ঞাত। সূরা আম্বিয়ার ৯০ আয়াতে জাকারিয়্যার স্ত্রীকে বন্ধ্যাত্ব থেকে নিরাময় করে পুত্র সন্তান দেয়ার উল্লেখ রয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোনো শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করাও প্রাকৃতিক কার্যকারণের সাথে সম্পর্কিত। তাই এ বিষয়ে যেকোনো কুসংস্কারে প্রভাবিত না হয়ে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে বিবাহের ইচ্ছুক পাত্র-পাত্রী নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকে। সন্তান জন্মদানের পূর্বে বা গর্ভধারণের সময়কালে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। তাহলে সুস্থ শিশু জন্মগ্রহণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

১৬:২৮-৫৯ :: যখন তাদের (মুশরিকদের) কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার মুখ কালো হয়ে যায় এবং সে অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে সে (বাঁচিয়ে) রাখবে নাকি তাকে মাটির নীচে পুতে ফেলবে। জেনে রেখো, তাদের সিদ্ধান্ত খুবই নিকৃষ্ট।

কোনো সন্তান পুত্র হিসেবে জন্মগ্রহণ করবে না কন্যা হিসেবে জন্মগ্রহণ করবে তা প্রাকৃতিক আইন দ্বারা নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে পুত্র হলে পছন্দ করা, কন্যা হলে অপছন্দ করা অথবা কন্যা হলে পছন্দ করা, পুত্র হলে অপছন্দ করা মনুষ্যত্ববোধের সাথে সাংঘর্ষিক। মুশরিকরা কন্যা সন্তানকে অপছন্দ করতো এবং অনেক মুশরিক তাদের অনেক কন্যা সন্তানকে হত্যা করতো, যেন কন্যা সন্তান কন্যা হওয়াটাই তার মৃত্যুদণ্ডের উপযুক্ত অপরাধ! সূরা তাকভীরে বলা হয়েছে-

৮১:৮-৯ :: যখন জীবন্ত পুঁতে ফেলা কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেক মানুষ কন্যা সন্তানের জন্ম পছন্দ করে না, বরং পুত্র সন্তানের জন্ম পছন্দ করে। অথচ কোনো সন্তান পুত্র বা কন্যা হওয়ার বিষয়ে অপছন্দ করা উচিত নয়। অনুরূপভাবে কোনো পুরুষ বা নারী শুধুমাত্র পুরুষ বা নারী হওয়ার কারণে হেয়বোধ করা বা নিজের লিঙ্গগত পরিচয়ের উপর অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয়। কারণ, সৃষ্টিপ্রকৃতির মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে মহান আল্লাহ মানুষকে নারী ও পুরুষ এই দুই ভাগে ভাগ করে সৃষ্টি করেছেন। এখানে উভয়ের মানবিক মর্যাদা সমান। তাদেরকে জগত-সংসারে যার যার প্রকৃতিগত ভূমিকা বা দায়-দায়িত্ব পালনের দিক থেকে পরস্পরের পরিপূরক করে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং সঠিক শৃঙ্খলার সাথে তা সম্পন্ন করার প্রয়োজনে সুষম অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। কুরআনীয় ব্যবস্থায় যেহেতু নারীরা সন্তান জন্মদান ও লালন-পালনে যথেষ্ট পরিমাণ সময় ও শক্তি ব্যয় করতে হয়, তাই তাদের সামগ্রিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুরুষদেরকে ‘ক্বাওয়াম’ হতে হবে বা দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু সেই সাথে নারীদেরকে উপার্জনসহ সব ধরনের অধিকার প্রদান করা হয়েছে। লিঙ্গগত জৈবিক পার্থক্যের বিষয়ে বা এরূপ পার্থক্যের প্রেক্ষিতে কোনো ক্ষেত্রে প্রকৃতিগত সুযোগ-সুবিধার তারতম্য বিবেচনায় কোনো নারী বা পুরুষ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ঈর্ষা পোষণ করা সমুচিত নয়। মানুষের নৈতিক মর্যাদা লিঙ্গগত জৈবিক পার্থক্যের উপর নির্ভর করে না, বরং তার নৈতিক গুণাবলী ও কর্মের উপর নির্ভর করে। এসব বিষয়ে নিম্নের আয়াতসমূহ লক্ষ্যণীয়।

৪:৩২ :: আর আল্লাহ তোমাদের একের তুলনায় অন্যকে যা দ্বারা বিশেষ অনুগ্রহ বা বিশিষ্টতা দিয়েছেন তোমরা সেই বিষয়ে ঈর্ষা পোষণ করো না। পুরুষ যা উপার্জন করে তার উপর দায়-দায়িত্ব তার এবং নারী যা উপার্জন করে তার উপর দায়-দায়িত্ব তার। আর তোমরা আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী।

৪:৩৪ :: পুরুষরা নারীদের উপর সামগ্রিক দায়িত্বশীল। এজন্য যে আল্লাহ তাদের এককে অন্যের উপর বিশিষ্টতা দিয়েছেন এবং এজন্য যে পুরুষরা তাদের সম্পদ থেকে (নারীদের জন্য) ব্যয় করে। সুতরাং সৎকর্মশীলা নারীরা বিনয়ী হয় এবং আল্লাহর হেফাজতের আওতায় অদৃশ্যে থাকা বিষয়ের (স্বীয় সতীত্ব ও সন্তানের পিতৃপরিচয়গত বিষয়ের) সংরক্ষণকারিনী হয়। আর যাদের ব্যাপারে তোমরা আশংকা করো যে, তারা দাম্পত্য চুক্তি লংঘন করছে, তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদেরকে বিছানায় পরিত্যাগ করো এবং তাদেরকে (বিছানায় একা রেখে দেয়া থেকে) ভিন্ন অবস্থায় বের করে আনো (অর্থাৎ সম্পর্ককে স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনো)/ তাদেরকে (সমাধানে সম্পর্কিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের) সামনে উপস্থাপন কর। তারপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে, তাহলে তোমরা তাদের বিপক্ষে অন্য কোনো ব্যবস্থা তালাশ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোচ্চে অধিষ্ঠিত, সর্বশ্রেষ্ঠ।

 ৩১:১৪ :: আর আমরা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার প্রতি (উত্তম আচরণ করতে)। তাকে তার মা গর্ভধারণ করে কষ্টের পর কষ্ট স্বীকার করে এবং তার দুধপান ছাড়ানো হয় দুই বছরে। (নির্দেশ দিয়েছি) এ মর্মে যে, কৃতজ্ঞ হও আমার প্রতি এবং তোমার পিতামাতার প্রতি। এবং আমার দিকেই প্রত্যাবর্তন।

 ৩:১৯৫ :: তাদের প্রভু তাদের প্রার্থনার জবাবে বলেছেন, “আমি তোমাদের মধ্য থেকে কোনো কর্ম-সম্পাদনকারীর কর্মকে বিনষ্ট করবো না, সে পুরুষ হোক বা নারী হোক। (এক্ষেত্রে) তোমরা একে অন্যের সমান। সুতরাং যারা হিজরাত করেছে এবং আমার পথে থাকায় যাদেরকে তাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে এবং যারা আমার পথে থেকে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে, আমি অবশ্যই তাদের থেকে তাদের অতীতের মন্দসমূহ মোচন করে দেবো এবং তাদেরকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবো, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। প্রতিফল আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর আল্লাহ এমন যে, তাঁরই কাছে আছে উত্তম প্রতিফল।

পরিশেষে বলা যায় যে, জন্ম পূর্বনির্ধারিত ভাগ্য দ্বারা নয়, বরং প্রাকৃতিক আইনের প্রয়োগের মাধ্যমেই ঘটে থাকে। যখন কেউ কারো সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করে, তখন সে পুত্র হিসেবে জন্মগ্রহণ করুক বা কন্যা হিসেবে জন্মগ্রহণ করুক, তা প্রাকৃতিক আইন দ্বারা নির্ধারিত হয়। পুত্র সন্তান বা কন্যা সন্তান যা-ই হোক না কেন, এর কোনোটিকে অন্যটির তুলনায় পছন্দ বা অপছন্দ করা উচিত নয়। বরং সন্তান পুত্র হোক বা কন্যা হোক, তাদেরকে সমানভাবে পছন্দ করা উচিত। একইভাবে আমরা নিজেদের লিঙ্গগত পরিচয় নিয়ে কোনোভাবে হেয়বোধ করা এবং প্রাকৃতিকভাবে যে লিঙ্গ পরিচয় লাভ করেছি সেটাকে অপছন্দ করা উচিত নয়। এ কথা ঠিক যে, আমরা আমাদের পিতা-মাতাকে নিজেরা বাছাই করি নি, কিন্তু প্রাকৃতিক আইনের কার্যকারিতার মাধ্যমে যারা আমাদের পিতা-মাতা হয়েছেন, আমরা তাদের প্রতি উত্তম আচরণ করতে হবে।

মৃত্যুর সময়, স্থান ও কারণ

মৃত্যুর সময়, স্থান ও কারণ সম্পর্কে প্রচলিত ভাগ্যবাদী ধারণা ও তার প্রাথমিক পর্যালোচনা

সাধারণত বাপদাদাদের থেকে চলে আসা ও প্রচলিত ধর্মগুরুদের প্রচারিত ভাগ্যবাদ অনুসারে নিজেকে ধর্মপ্রাণ হিসেবে পরিচয় দিতে গিয়ে মৃত্যুর বিষয়ে যে ধর্মবিশ্বাস ব্যক্ত করা হয় তা হলো : আয়ুর একটিমাত্র নির্দিষ্ট সীমা আছে তার আগে (বা হায়াত থাকতে) কেউ মারতে পারবে না আর তার পরেও কেউ বাঁচবে না। এ ধারণা মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও ভয়মুক্ত বা সাহসী (ও সেই সাথে অসাবধান) করে তোলে। যদিও বাস্তব সত্য হলো, ভয়ে বা নির্ভয়ে যেভাবেই কাজ করা হোক না কেন, যে ধরনের কাজ করা হবে সেটার ক্ষেত্রে আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক আইনে যে ফলাফল নির্ধারিত আছে তা অবশ্যই ঘটবে।

ধারণা করা হয় যে, মৃত্যুর একটিমাত্র পূর্বনির্ধারিত সময় থাকার বিশ্বাসের মাধ্যমে যুদ্ধরত সৈন্যদের মৃত্যুভয় দূর করার সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ভাগ্যবাদ এরূপ যে, তা সৈন্যদের মনোভাবকে দ্বিধা-বিভক্ত করে তোলে। কারণ যেমন একদিকে তারা মৃত্যুর বিষয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে, তেমনি অন্যদিকে তারা ধারণা রাখে যে, তাদের ভাগ্যে জয় বা পরাজয় পূর্বনির্ধারিত রয়েছে এবং এখানে তাদের যুদ্ধ ও যুদ্ধকৌশলের কোনো প্রকৃত ভূমিকা নেই। এটি তাদেরকে মানসিকভাবে বিশৃঙ্খল করে রাখে আর তাদের রণনীতিতে এই মানসিক বিশৃঙ্খলার কুপ্রভাব পড়া অবশ্যম্ভাবী।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, আয়ুর বিষয়ে প্রচলিত ভাগ্যবিশ্বাসীরাও কিন্তু অন্যায় হত্যার প্রতিবাদ করে, বিচার চায় বা প্রতিশোধ নিতে চায়, আত্মহত্যাকেও মহাপাপ বলে, কেউ কেউ হতাশায় আত্মহত্যা-প্রবণও হয়ে পড়ে, কেউ কেউ অন্যকে হত্যা করতেও উদ্যত হয় ইত্যাদি। এটা কিন্তু তাদের কথিত ধর্মবিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। তাহলে আসলে কি তাদের কথিত ধর্মবিশ্বাস তাদের মনে আছে নাকি এটা শুধু একটা দাবি ও আত্মপ্রতারণা?

যে মশাগুলো এমনিতেই তার আয়ুসীমা শেষে মরে যাবে, তা নিধনের জন্য কেন মশক নিধন অভিযান? যে সাপটি এমনিতেই তার আয়ুসীমার পরে মরে যাবে তাকে কেন লাঠি দিয়ে মারতে যায়? আসলে তারা কি বিবেক প্রয়োগ করে? আসলে তারা কি ধর্মকে বিবেকসঙ্গত বলে বিশ্বাস করে? তারা কি আল্লাহকে প্রতারিত করতে চায়? আসলে তারা নিজেদেরকে ছাড়া আর কাউকেই প্রতারিত করে না।

মৃত্যুর সময়, স্থান ও কারণ সম্পর্কে ভাগ্যবাদী ধারণার অকল্যাণ

আয়ু নির্দিষ্ট থাকার ভাগ্যবাদী ধারণা একটি বিভ্রান্তি। আর এ বিভ্রান্তিটি তৈরি হয়েছে মৃত্যু সম্পর্কে আল্লাহর কিতাবের তথ্য সঠিক পদ্ধতিতে অধ্যয়নের মাধ্যমে বুঝে না নেয়া এবং তা গোপন করা বা সঠিকভাবে তুলে না ধরার কারণে।

জন্ম-মৃত্যুর মতোই মানুষের শরীর-স্বাস্থ্যের অবস্থাও পূর্বনির্ধারিত হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও যখন কোনো ভাগ্যবাদী অসুস্থ হয়, তখন অনেক সময় সে নিরাময়ের জন্য তার ক্ষমতার মধ্যে সবকিছু করে থাকে। এটা বিশ্বাস ও কর্মের স্পষ্ট বৈপরীত্য। আর বিশ্বাস ও কর্মের এরূপ অমিল অবশ্যই একটি জাতিবিধ্বংসী বিষয়।

আবার মৃত্যু সম্পর্কিত ভাগ্যবাদী ধারণার ফলে অনেক মানুষ শরীর সুস্থ রাখার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা গুরুত্ব দেয় না, ফলে অনেকের অকাল মৃত্যু হয়। তেমনি মৃত্যুর অনুঘটক (রোগ, দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি) থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক নিয়ম-কানুন আবিষ্কার ও অনুসরণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বস্তুত ভাগ্যবাদের প্রভাবে মুসলিম জাতি আজ চিকিৎসা, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য ধর্মীয় প্রেরণা হারিয়ে ফেলেছে বা কিছুটা প্রেরণা পেলেও তাদের ভুল ধারণাগুলোর প্রভাবে তা সর্বোচ্চ মাত্রায় কল্যাণবহ হচ্ছে না।

মৃত্যুর সময়, স্থান ও কারণ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্যের কল্যাণ

অন্যদিকে আল কুরআন মৃত্যুর সময়ের বিষয়ে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে তার ব্যাপক প্রচার হলে তারা মানবজাতির কল্যাণে অপমৃত্যু হ্রাসের জন্য ও ন্যায়সংগত জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে সম্ভবপর দীর্ঘায়ু লাভের জন্য তথা রোগ, দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক নিয়ম জানার ও আবিষ্কারের জন্য চিন্তা গবেষণা করতে পারবে এবং চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে অধিকতর উন্নত ব্যবস্থা অবলম্বন করতে পারবে।

মৃত্যুর সময়, স্থান ও কারণ সম্পর্কে বাস্তব সাধারণ জ্ঞান

১। বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির যথোপযুক্ত প্রতিরোধ ও চিকিৎসাপদ্ধতির আবিষ্কারের ফলে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার মানে হলো মানুষের ব্যক্তিগত আয়ু বৃদ্ধি পাওয়া। অর্থাৎ নতুন নতুন ওষুধ ও চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে এমন অনেক রোগ থেকে নিরাময় সম্ভব হচ্ছে, যেগুলোর কারণে পূর্বে মানুষের মৃত্যু হতো। অন্যদিকে যেসব দেশে এইডসসহ বিভিন্ন মরণব্যাধি বৃদ্ধি পায় তাতে মানুষের গড় আয়ু হ্রাস পায়। সুতরাং মানুষের আয়ু নির্ধারণ বা মৃত্যুর সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নিয়মের কার্যকারিতা অনস্বীকার্য।

২। যেসব দেশে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের মতো ব্যবস্থাপনা রয়েছে সেসব দেশে সড় দুর্ঘটনা কম হয়। আবার সেই সাথে দুর্ঘটনা হলে যথোপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হলেও দুর্ঘটনায় আহতদের মৃত্যুহার হ্রাস পায়। সুতরাং সড়ক দুর্ঘটনা এবং তাতে আহতদের যথোপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকা মৃত্যুর একটি অনুঘটক বা ফ্যাক্টর। এ থেকে বুঝা যায় যে, মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা আবদ্ধ।

৩। হার্ট হ্যাটাকের পর যদি দ্রুত সময়ে উন্নত হাসপাতালে নিয়ে জরুরি চিকিৎসা দেয়া যায় তাহলে তাকে বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকে, অন্যথায় তাকে বাঁচানো যায় না। এ থেকে বুঝা যায় যে, আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা আরম্ভ করার সময়ের ব্যবধান রুগীর সেরে উঠা না উঠার একটি অনুঘটক বা ফ্যাক্টর। এ থেকেও বুঝা যায় যে, মৃত্যুর বিষয়টি প্রাকৃতিক নিয়মে ঘটে থাকে।

অনেক সময় উন্নত হাসপাতালে ও ভালো মানের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা সত্ত্বেও রোগীর মৃত্যু ঘটে। এ বিষয়টিকে ভাগ্যবাদীরা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে যে, তার ভাগ্যে মৃত্যু ছিলো বলে চিকিৎসায় কাজ হয় নি। অথচ হাসপাতাল যত উন্নত হোক এবং ডাক্তার যত ভালো মানের হোক, যদি যে ধরনের অসুস্থ হলে প্রাকৃতিক নিয়মে তাকে সুস্থ করার চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো আবিষ্কার হয় নি বা যে ধরনের অসুস্থতা মৃত্যুর নিশ্চিত অনুঘটক, সেই ধরনের অসুস্থতায় মৃত্যু হবেই, এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। আর তাই এ বিষয়টিকে প্রাকৃতিক নিয়মের পরিবর্তে ভাগ্য দ্বারা মৃত্যুর একটি সময় নির্ধারিত থাকার প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা অগ্রহণযোগ্য।

মৃত্যুর সময়, স্থান ও কারণ সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য

১। মানুষের জন্মগতভাবে পাওয়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মের পর কয়েকমাস কম থাকে। তারপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা শক্তিশালী হতে থাকে এবং পূর্ণবয়সে তা সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী হয়। এরপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানের ওপর জীবানু দ্বারা মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার মাত্রা নির্ভর করে।  তাই, জন্মের পর কয়েকমাস মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকে এবং পূর্ণবয়সকালে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম থাকে। এরপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।

২। পূর্ণবয়সে পৌঁছার পর থেকে মানুষের শরীরের কোষগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে এবং একদিন তা অকেজো হয়ে যায়। এটিকে বয়বৃদ্ধির নিয়ম (Aging process) বলে। তাই, কোনো রোগ না হলেও বয়ঃবৃদ্ধির নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষের আয়ুর একটি নির্দিষ্ট শেষ সীমা আছে।

মৃত্যুর সময়, স্থান ও কারণ সম্পর্কে কুরআনের তথ্য

আল কুরআন থেকে মৃত্যুর সময়ের সাথে প্রাসংগিক আয়াতসমূহ অধ্যয়ন করলে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, আয়ু নির্দিষ্ট, তবে তার মানে যেভাবে ভাগ্য বিশ্বাস করা হয়, সেভাবে নয় যে, একটিমাত্র সময়সীমা নির্দিষ্ট, যেই একটিমাত্র সময়ে কেউ মারা যাওয়া ঠিক করা আছে, তার আগে কোনোক্রমেই কেউ মরবে না বা তার পরে কোনোক্রমেই কেউ বাঁচবে না।

আয়ু সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ। বস্তুত মানুষের আয়ু আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা নির্দিষ্ট। আর আয়ু সম্পর্কিত প্রাকৃতিক নিয়মের দুটি মৌলিক ধারা হলো-

(১) যদি একজন নিহত না হয়, তাহলেও তার জীবনকোষে সঞ্জীবনী শক্তির সর্বোচ্চ মাত্রা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ে তা অকেজো হয়ে সে স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করবে।

(২) যদি ঐ স্বাভাবিক শেষ সময়সীমার আগে নিহত হওয়ার উপযোগী মাত্রায় তার জীবিত থাকার মৌলিক জীবন কোষসমূহে (আনফুসে) চাপ সৃষ্টি হয় তবে যে মুহুর্তে তা পড়বে সে মুহুর্তে সে নিহত হবে, পক্ষান্তরে মুমুর্ষু অবস্থায়ও যদি যথাযথ চিকিৎসা বা সুব্যবস্থা পায়, তাহলে তার আয়ু বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে, তবে কোনক্রমেই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে তার স্বাভাবিক সর্বোচ্চ সীমাকে অতিক্রম করবে না।

সুতরাং আয়ু হ্রাস পেতে পারে, আবার আপেক্ষিকভাবে বৃদ্ধিও পেতে পারে, তবে বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিক সর্বোচ্চ মাত্রার চেয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে না।

এ পর্যায়ে আমরা মৃত্যুর বিষয়ে কুরআনের কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করবো এবং তা থেকে মৃত্যুর সময়, স্থান ও কারণ সম্পর্কেও কুরআনের তথ্য অনুধাবনের চেষ্টা করবো।

১। মৃত্যু অমোঘ ও অনিরুদ্ধ

২১:৩৪-৩৫ :: আর আমরা তোমার আগের মানুষের জন্যও চিরকালের স্থায়ীত্বের ব্যবস্থা করি নি। তবে কি যদি তুমি মৃত্যুবরণ করো তাহলে তারা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে? প্রত্যেক নফসই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর আমরা তোমাদেরকে মন্দ ও উত্তম অবস্থা দিয়ে পরীক্ষা করি। আর আমাদের কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।

২৯:৫৭ :: প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। তারপর আমারই দিকে তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।

৩:১৮৫ :: সকল জীবনসত্তাই আস্বাদন করবে মৃত্যুর স্বাদ। আর নিশ্চয় তোমাদেরকে পূর্ণ করে দেয়া হবে তোমাদের কর্মফল কিয়ামাত দিবসে। তখন যাকে দূরে রাখা হবে (জাহান্নামের) আগুন থেকে আর জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে নিশ্চয় সে-ই সফলতা পাবে। আর (আখিরাতের বিবেচনা বাদ দিলে) দুনিয়ার জীবন কিছু নয় প্রতারণার সামগ্রী ছাড়া।

৪:৭৮ :: যেখানেই তোমরা থাকো মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, যদিও তোমরা থাকো সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে। আর যদি তাদের কোনো উত্তম অবস্থা হয় তখন তারা বলে, “ইহা আল্লাহর পক্ষ থেকে (আল্লাহ কর্তৃক প্রভাবিত হওয়া ফলাফলস্বরূপ)।” আর যদি তাদের কোনো মন্দ অবস্থা হয়, তখন তারা বলে, “ইহা তোমার পক্ষ থেকে (রসূল কর্তৃক প্রভাবিত হওয়া ফলাফলস্বরূপ)।” বলো, “(কল্যাণ-অকল্যাণ) সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে (আল্লাহ কর্তৃক প্রভাবিত হওয়া ফলাফলস্বরূপ)।” তারপর এসব কাওমের কী হলো যে, তারা মোটেই উপলব্ধি করে না কোনো কথা?

৬২:৮ :: বল, ‘নিশ্চয় যা থেকে তোমরা পলায়ন কর সে মৃত্যু নিশ্চয় তোমাদের কাছে আসবেই। তারপর তোমরা ফিরে যাবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানীর (আল্লাহর) কাছে। তারপর তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন তোমরা যা করতে তা সম্পর্কে।

৩৯:৩০ :: নিশ্চয় তুমিও মরবে আর নিশ্চয় তারাও মরবে।

২। মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টির কারণ

৬৭:২ :: যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য তোমাদের মধ্যে কে কাজে কর্মে অধিক উত্তম? আর তিনি মহাশক্তিমান ও ক্ষমাশীল।

আলোচনা : উপরোল্লেখিত আয়াতটিতে মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে এমন উচ্চতর লক্ষ্যকে তুলে ধরা হয়েছে যার ধারণা মানুষকে মৃত্যুভয় থেকে মুক্ত করে বরং অমোঘ ও অনিরুদ্ধ মৃত্যুর জন্য প্রকৃত প্রস্তুতি অর্জনে অনুপ্রাণিত করে। আর তা হলো, মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ভালো অবস্থানে পৌঁছার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে অধিক উত্তম কাজের সক্ষমতা অর্জন ও অনুশীলন।

৩। একমাত্র আল্লাহ সবার মৃত্যুস্থানের নিশ্চিত পূর্বজ্ঞান রাখেন

৩১:৩৪ :: নিশ্চয় আল্লাহর নিকটেই আছে প্রলয়মুহুর্তের জ্ঞান। আর তিনিই বর্ষণ করেন বৃষ্টি। আর তিনিই জানেন গর্ভসমূহে কী আছে; আর কোনো প্রাণীই জানে না সে আগামী কাল কী উপার্জন করবে। আর কোনো প্রাণীই জানে না সে কোন ভূমিতে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।

আলোচনা : উপরোক্ত আয়াতে মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা এবং স্রষ্টার জ্ঞানের সর্বব্যাপ্ততা প্রকাশিত। একই সাথে আয়াতটি উপার্জন যে একটি ডায়নামিক বা গতিশীল প্রক্রিয়া যা পূর্ব থেকে ভাগ্য দ্বারা নির্ধারিত নয়, সেদিকেই নির্দেশক। উপার্জনের মতোই মৃত্যুও আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক আইনের বিভিন্ন ফ্যাক্টর বা অনুঘটকের উপর নির্ভর করে। যেহেতু আল্লাহ সময় ও স্থানের সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে, তাই তিনি মানুষের উপার্জন ও মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত পূর্বজ্ঞান রাখেন। কিন্তু আল্লাহর পূর্বজ্ঞানের মানে এ নয় যে, তিনি কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে মৃত্যু ঘটার ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং সেজন্য তিনি জানেন যে কোথায় তার মৃত্যু হবে। কারণ কুরআনের কোনো আয়াতে কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে মৃত্যু ঘটার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়ার কথা বলা হয় নি। অন্যদিকে মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাক্টর বা অনুঘটকের ভূমিকার বিষয়ে কুরআনে স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে। এ বিষয়ে নিম্নে উল্লেখিত বিভিন্ন আয়াতের বক্তব্য লক্ষ্যণীয়।

৪। আল্লাহর অনুমতিক্রমে বা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী মৃত্যু

৩:১৪৫ :: আর কোনো প্রাণীর জন্য আল্লাহর অনুমতি (আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক নিয়মের কার্যকারিতা) ছাড়া মৃত্যুবরণ করা সম্ভব নয়, (যেই অনুমতি) আয়ুসীমা নির্ধারণকৃত কিতাব হিসেবে রয়েছে। আর যে ইচ্ছা করে দুনিয়ার প্রতিফল পেতে আমরা তাকে দিই তা থেকে (দুনিয়া থেকে)। আর যে ইচ্ছা করে আখিরাতের প্রতিফল পেতে আমরা তাকেও দিই তা থেকে (আখিরাতের পুরস্কারের পাশাপাশি দুনিয়া থেকে)। আর শীঘ্রই আমরা কৃতজ্ঞদেরকে (কৃতজ্ঞতার) প্রতিফল দেবো।

৫৬:৬০ :: আমরা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছি তোমাদের মধ্যে মৃত্যু। আর আমরা অক্ষম হব না।

আলোচনা : উপরোল্লেখিত প্রথম আয়াতে ব্যবহৃত “ইল্লা বি-ইযনিল্লাহ” অর্থাৎ ‘আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত’- এই বাক্যংশটি আমরা কিভাবে বুঝতে পারি বা যেভাবে বোঝার কারণে আমরা তাক্বদীর নিয়ে নিয়তিবাদী চিন্তায় পর্যবসিত হই তার একটি ব্যাখ্যা প্রয়োজন।

সাধারণত কোনো বিষয়ে মানুষের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি তাৎক্ষণিক ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়ে থাকে। কিন্তু কিছুক্ষেত্রে তা অতাৎক্ষণিক অনুমতি বা পূর্ব থেকে দিয়ে রাখা অনুমতির সাথে বা কোনো পূর্বসিদ্ধান্তমূলক অনুমতির সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।

আল্লাহ কোনো বিষয়ে অনুমতি প্রদানের বিষয়টি সাধারণত প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা করে আলাদা আলাদা সময়ে অনুমতি প্রদানের সাথে সম্পর্কিত নয়। কারণ, এটা তাঁর মহিমা ও ক্ষমতার সাথে সঙ্গতিশীল নয়। তাই “ইল্লা বি-ইযনিল্লাহ” বাক্যাংশটি প্রকৃতপক্ষে কোনো ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক আইনে থাকা অবকাশের নির্দেশক।

আরবীতে “ইযন” শব্দটি যে মূল ধাতু থেকে তৈরী তার থেকে উদ্ভুত অন্যান্য শব্দ ও সেগুলোর অর্থ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এর মধ্যে “ঘোষিত”, “তথ্যাভিজ্ঞ করা”, “অবহিত করা” - ইত্যাদি পাওয়া যায়। অর্থাৎ মহাজ্ঞানী আল্লাহর ইচ্ছার মাধ্যমে সৃষ্ট সৃষ্টি-প্রকৃতি যে নিয়মাবলীর মাধ্যমে পরিচালিত তদনুসারে কোনো কিছু ঘটাকে ‘আল্লাহর অনুমতিক্রমে ঘটা’ হিসেবে অভিহিত করা যায়।

সৃষ্ট-প্রাণ যে মৃত্যু বরণ করবে সেটি প্রাকৃতিক বিধান বা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সূত্র। এই সূত্র মহাবিশ্বের যে অদৃশ্য আইন তাতে লিখিত, ঘোষিত, নির্ধারিত। এর মধ্যে বার্ধ্যক্যের কারণে মৃত্যু যেমন আছে, তেমনি কেউ যদি দূর্ঘটনাবশতঃ গাড়ি চাপা পড়ে তাহলেও তার মৃত্যু হবে। এর মানে এরকম কল্পনা করার কোনো কারণ নেই যে, একজন মাতাল তার মাতলামীর দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবে যদি তার মাতাল অবস্থায় চালানো গাড়িতে একজন পথচারীর মৃত্যু হয়। এখানে ভাগ্যের দোষ দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয় এবং সেটি একজন প্রকৃত ধর্মে বিশ্বাসী ব্যক্তির ধর্মবোধ সমর্থন করে না। বরং বায়োলজিক্যাল মেকানিজম প্রকৃতিগতভাবে একসময় ক্ষয়ের কারণে নিঃশেষ হয়, একইভাবে অস্বাভাবিক আঘাতে বায়োলজিক্যাল জীবনের সমাপ্তি ঘটে - এ দুটোই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টির প্রিন্সিপ্যাল বা মূলনীতি। এই মূলনীতির প্রেক্ষিতে কোনো কিছু ঘটলে সেটাকেই ‘আল্লাহর অনুমতিক্রমে ঘটা’ হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে।

একই আয়াতে মানুষই যে তার কর্মের পুরস্কার পাবে, এটা স্রষ্টার পুন:নির্ধারিত কোনো বিষয় নয় সেটি বোঝাতে আয়াতটি (৩:১৪৫) শেষ হয়েছে এই বাক্য দিয়ে: যে দুনিয়ার বা বৈষয়িক বিষয়ে আকাঙ্ক্ষা করবে, কাজ করবে সে তার পুরস্কার ও অর্জন দুনিয়া ও বৈষয়িক বিষয়ে পাবে। এটাও প্রাকৃতিক আইন। যে পরিশ্রম করবে, যে বিষয়েই হোক না কেন, তার ফলাফল সে পাবে। একই সাথে যে ভবিষ্যত, অদেখা জগতের জন্য কাজ করবে, পরিশ্রম করবে তাঁর ভবিষ্যতে বা আখিরাতে পুরস্কার বা অজর্ন মিলবে। এখানে ভাগ্যবাদিতার বিপরীতে কর্ম ও কর্মফলের বৈজ্ঞানিক সূত্রই প্রতিভাত হয়েছে।

সুতরাং মৃত্যু সম্পর্কে উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহের মূল বক্তব্য হলো- আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী মানুষের বয়স নির্ধারিত হয় ও মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর জন্য তৈরি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী মৃত্যুর অনুঘটকসমূহের যথাযথ সম্মিলন ছাড়া কেউ মৃত্যু বরণ করে না।

৫। আজাল বা আয়ুসীমা

৬:২ :: তিনিই তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি নির্ধারণ করেছেন জীবনের এক ধরনের আয়ুসীমা (যা বিভিন্ন ফ্যাক্টর বা অনুঘটকের দ্বারা পরিবর্তনশীল)। আর জীবনের একটি সর্বচূড়ান্ত আয়ুসীমা (আজালিম মুসাম্মা) তাঁর কাছে ঠিক করা আছে। তারপরও কি তোমরা সন্দেহবাদী?

২২:৫-৬ :: হে মানুষ, যদি তোমরা মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করো, তবে (তোমাদের লক্ষ্য করা উচিত যে,) নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে। তারপর নুতফাহ (ফোঁটার আকৃতিসদৃশ ভ্রুণ) থেকে। তারপর আলাক্বাহ (মায়ের জরায়ুতে শক্ত করে ঝুলে থাকা আকৃতিসদৃশ ভ্রুণ) থেকে। তারপর মুদগাহ (দুপাটির দাঁতের ছাপ থাকা সদৃশ গোশতপিন্ড) থেকে, যা পূর্ণ আকৃতিসম্পন্নও হয়, আর অপূর্ণ আকৃতিসম্পন্নও হয়। (এরূপ পর্যায় ও তা বর্ণনার একটি উদ্দেশ্য হলো), যেন আমরা তোমাদের জন্য বাস্তবতাকে স্পষ্ট করতে পারি। আর আমরা জরায়ুর মধ্যে স্বস্তিতে অবস্থান করতে দিই যেভাবে আমরা ইচ্ছা করি (তথা আমাদের নির্ধারিত প্রাকৃতিক জৈবিক আইন অনুসারে গর্ভকালের) একটি চূড়ান্ত সময়সীমা পর্যন্ত। তারপর আমরা তোমাদেরকে বের করি শিশুরূপে। তারপর (তার উদ্দেশ্য হলো এক পর্যায়ে) যেন তোমরা পৌঁছতে পারো তোমাদের যৌবনে। আর তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে আগেই মৃত্যু দেয়া হয়, আর তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে ফিরিয়ে দেয়া হয় জরাজীর্ণ বয়সে (বার্ধক্যে), যার ফলে (মস্তিষ্কের স্মরণশক্তি বিষয়ক কোষগুলো দুর্বল হয়ে) অনেক কিছু জানার পরও যেন সে জানে না (অর্থাৎ ভুলে যায়)। আর তুমি দেখছো শুষ্ক ভূমিকে, তারপর যখন আমরা বর্ষণ করি উহার উপর (বৃষ্টির) পানি, তখন তা সতেজ হয় ও ফুলে উঠে আর উদ্গত করে সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ। উহা প্রমাণ করে যে, আল্লাহই পরম সত্য। আরো প্রমাণ করে যে, তিনিই মৃতকে জীবিত করেন। আরো প্রমাণ করে যে, তিনিই সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৪০:৬৭-৬৮ :: তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। তারপর নুতফাহ (ফোঁটার আকৃতিসদৃশ ভ্রুণ) থেকে। তারপর আলাক্বাহ (মায়ের জরায়ুতে শক্ত করে ঝুলে থাকা আকৃতিসদৃশ ভ্রুণ) থেকে। তারপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরূপে। তারপর (তার উদ্দেশ্য হলো এক পর্যায়ে) যেন তোমরা পৌঁছতে পারো তোমাদের যৌবনে। তারপর (এক পর্যায়ে) যেন তোমরা বৃদ্ধ হতে পারো। আর তোমাদের মধ্যে কাউকে আগেই মৃত্যু দেয়া হয়। আর (তিনি তা করেন, যাদেরকে মধ্যবর্তীতে মৃত্যু দেয়া হয়নি) তারা আজালিম মুসাম্মা/ সর্বচূড়ান্ত আয়ুসীমায় পৌঁছানোর (চেষ্টা করার সুযোগ পাওয়ার) জন্য। আর তোমাদের আকল/ কমনসেন্স প্রয়োগ করার জন্য। তিনিই সেই সত্তা যিনি জীবনদান করেন আর মৃত্যুদান করেন। যখন তিনি কোনো ব্যাপারে ফায়সালা করেন, তখন বস্তুত তিনি উহার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘হও’, ফলে তা হয়।

৩৬:৬৮ :: আর আমি যাকে দীর্ঘায়ু দান করি (যৌবনের পরে বার্ধক্যে পৌঁছাই) তাকে আমি সৃষ্টিগত দিক দিয়ে পূর্বের অবস্থায় (শিশুকালের অবস্থায়) ফিরিয়ে দিই। (অর্থাৎ তার শরীরের কোষগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে সে জ্ঞান-বুদ্ধি, কর্মদক্ষতা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার দিক থেকে শিশুকালের অবস্থায় ফিরে যায়)। তবুও কি তোমরা আকল/ কমনসেন্স প্রয়োগ করবে না?

৬:৬০ :: আর তিনি রাতের বেলায় তোমাদের ওফাত ঘটান/ (অসম্পূর্ণভাবে) প্রাণ হরণ করেন (সাধারণত রাতের বেলায় তোমাদের ঘুম পায় ও তোমরা ঘুমাও)। আর দিনে তোমরা যা করে থাকো তা তিনি জানেন। তারপর তিনি তাতে (দিনের বেলায়) তোমাদেরকে পুনর্জাগরিত করেন আজালিম মুসাম্মা/ সর্বচূড়ান্ত আয়ুসীমা সুসম্পন্ন করার জন্য। তারপর তাঁর দিকেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। তারপর তোমরা যা করো তা তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।

৩৯:৪২ :: আল্লাহ ওফাত ঘটান/ (সম্পূর্ণরূপে/ অসম্পূর্ণরূপে) প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসেনি তাদের ঘুমের সময়। তারপর তিনি যার জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার প্রাণ রেখে দেন এবং অপরগুলো ফিরিয়ে দেন আজালিম মুসাম্মার/ সর্বচূড়ান্ত আয়ুসীমার দিকে পৌঁছানোর জন্য। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে বৈজ্ঞানিক চিন্তাগোষ্ঠীর জন্য।

আলোচনা : উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, মানুষের জন্য দুই ধরনের আয়ুসীমা রয়েছে, যার একটি বিভিন্ন পরিবর্তনশীল ফ্যাক্টরের উপর নির্ভরশীল এবং অন্যটি হচ্ছে সর্বচূড়ান্ত আয়ুসীমা, অর্থাৎ যদি পরিবর্তনশীল সকল ফ্যাক্টর পরিবর্তিত হয়ে কোনো ব্যক্তি বেঁচে থাকে, তাহলে বয়ঃবৃদ্ধিক্রম অনুযায়ী ব্যক্তি যে আয়ুসীমায় পৌঁছার পর আর বাঁচতে পারবে না। কাউকে দীর্ঘায়ু দান করলেও একটা সময় তার আয়ু শেষ হয় আর তা হলো সর্বচূড়ান্ত আয়ুসীমা (আজালিম মুসাম্মা)। এটি হচ্ছে- কোনো রোগ না হলেও বা কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও এবং আত্মহত্যা না করা বা অন্যের দ্বারা নিহত না হওয়া সত্ত্বেও যেদিন কোষগুলো অকেজো হয়ে যায় এবং সে মৃত্যুবরণ করে।

কোনো ব্যক্তি গর্ভাবস্থা থেকে শুরু করে শিশুকালে, যৌবনে বা বার্ধক্যে বিভিন্ন বয়সে মৃত্যুবরণ করতে পারে। যে বার্ধক্যে পৌঁছে তার স্মরণশক্তি বিষয়ক কোষগুলো দুর্বল হয়ে যায় আর তাই সে অনেক কিছু জানার পরও এমনভাবে ভুলে যায় যে, যেন সে তা কখনো জানে নি। মস্তিষ্কের স্মরণশক্তি বিষয়ক কোষগুলোর মতোই মানুষের প্রাণশক্তির ধারক মূল কোষগুলোও দুর্বল হতে থাকে এবং এভাবে একসময় উপস্থিত হয় তার আজালিম মুসাম্মা/ সর্বচূড়ান্ত আয়ুসীমা তথা কোনো রোগ না হলেও কোষগুলো যেদিন অকেজো হয়ে যায় এবং সে মৃত্যুবরণ করে।

উপরোল্লেখিত শেষ আয়াতটিতে বলা হয়েছে- আল্লাহই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। কিন্তু এর মানে এ নয় যে, তিনি প্রত্যেক প্রাণীকে স্বতন্ত্রভাবে তাৎক্ষণিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটা একটা করে জীবন দান করেন এবং একটা একটা করে মৃত্যু ঘটান। বরং জীবনের শুরু ও শেষ হয় তাঁর সৃষ্টিগত মেকানিজমের মাধ্যমে তথা সৃষ্টির জন্য তাঁর তৈরি প্রাকৃতিক আইন অনুসারে।

মৃত্যুর জন্য নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইনে থাকা একটি ফ্যাক্টর হচ্ছে ঘুম। তবে ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হবে কিনা তা নির্ধারিত হয় অন্য কোনো ফ্যাক্টর দ্বারা ঘুম মৃত্যু ঘটানোর মতো স্তরে পৌঁছার উপর। এক রাতের ঘুমের মাধ্যমে মৃত্যু না হলেও অন্য রাতের ঘুমের মাধ্যমে মৃত্যু হতে পারে। ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হলে আজালিম মুসাম্মার/ সর্বচূড়ান্ত আয়ুসীমার আগেই মৃত্যু হলো। অন্যথায় আজালিম মুসাম্মার/ সর্বচূড়ান্ত আয়ুসীমার দিকে সে এগুতে থাকে। ঘুমসহ মৃত্যুর সকল অনুঘটক থেকে অন্য অনুঘটকের কারণে রক্ষা পেলেও একসময় কোনো অনুঘটকই শরীরের কোষগুলোকে আর সাপোর্ট দিতে পারবে না এবং ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করবে।

৬। আজাল এসে গেলে অবকাশ না দেয়ার তাৎপর্য

৬৩:১০-১১ :: আর তোমরা ইনফাক (অন্যের প্রয়োজন পূরণে ব্যয়) করো যা আমি তোমাদেরকে রিযিক হিসেবে দিয়েছি তা থেকে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগেই। অন্যথায় মৃত্যু এলে সে বলবে, “হে আমার প্রভু আমাকে এ সময়টির নিকটবর্তী (সামান্য বেশি) সময়সীমা পর্যন্ত অবকাশ দিলে আমি সদাকা করতাম এবং সৎলোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।” কিন্তু আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে অবকাশ দেন না যখন এসে যায় তার আজাল/ আয়ুসীমা (যা তার মৃত্যুবরণের সর্বচূড়ান্ত সীমা বা যাতে মৃত্যু হওয়ার মতো অনুঘটকসমূহের সম্মিলন ঘটে যায়)। আর আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্মের বিষয়ে সম্যক অবগত।

আলোচনা : এ আয়াতে বলা হয়েছে, যখন কোনো ব্যক্তির আজাল বা আয়ুসীমা এসে যায়, তখন তাকে আর অবকাশ দেয়া হয় না। এ থেকে অনেকে ধারণা করেন যে, প্রত্যেকের ভাগ্যে মৃত্যুর একটিমাত্র সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। আর মৃত্যুর ঐ সময় এসে গেলে তারপর আর কাউকে অবকাশ দেয়া হয় না। কিন্তু ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন আয়াত থেকে জেনেছি যে, মানুষের আয়ুসীমা বিভিন্ন পরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক ফ্যাক্টর দ্বারা নির্ধারিত এবং কোনোক্রমে এরূপ কোনো ফ্যাক্টর দ্বারা মৃত্যু না হলে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ কত সময় আয়ু পাবে তাও প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত। এমতাবস্থায়, এ আয়াতে কোনো ব্যক্তির আজাল এসে গেলে তাকে অবকাশ না দেয়ার তাৎপর্য হলো কোনো ব্যক্তিকে নিম্নোক্ত দুটি অবস্থায় অবকাশ দেয়া হয় না, বরং সে মৃত্যুবরণ করে-

(১) যদি সে তার মৃত্যুর সর্বচূড়ান্ত আয়ুসীমায় পৌঁছে যায়। অথবা-

(২) যদি কোনো সময়ে মৃত্যু হওয়ার মতো অনুঘটকসমূহের সম্মিলন ঘটে যায়। অর্থাৎ যখন কোনো ব্যক্তির উপর মৃত্যু হওয়ার জন্য থাকা কোনো ফ্যাক্টর মৃত্যু হওয়ার মতো স্তরে পৌঁছে যায়, তাহলে সে মৃত্যুবরণ করে।

৭। বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণ (বিলম্বিত করা) বা আয়ুকে সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘ করার বিষয়ে প্রাকৃতিক নিয়মের কার্যকারিতা

৩৫:১১ :: আর আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। তারপর নুতফাহ (ফোঁটার আকৃতিসদৃশ ভ্রুণ) থেকে। তারপর তোমাদেরকে (নারী-পুরুষ) জোড়া হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আর গর্ভধারণ করে না কোনো নারী আর প্রসবও করে না (কোনো নারী), তাঁর জ্ঞান অনুযায়ী ছাড়া। আর আয়ু পায় না কোনো আয়ুপ্রাপ্ত ব্যক্তি আর তার আয়ু থেকে আয়ু কমে না, কিতাব অনুযায়ী ছাড়া। নিশ্চয় উহা আল্লাহর পক্ষে সহজ।

আলোচনা : সবকিছুর জ্ঞান স্রষ্টার আয়ত্তে রয়েছে। স্রষ্টা নিজে সবকিছুর স্রষ্টা এবং সব কিছুর প্রাকৃতিক নিয়মেরও স্রষ্টা তিনি। তাই “তাঁর জ্ঞাতসারে ছাড়া কোনো নারী তার গর্ভে কিছু ধারণ করে না এবং এবং প্রসব করে না”- তথ্যটির অন্যতম তাৎপর্য হলো- নারীর গর্ভে একটি ভ্রুণের বেড়ে ওঠার সব ধাপ ও প্রসব স্রষ্টার তৈরি প্রাকৃতিক আইন অনুসারে হয়। আর যেহেতু তিনি ঐ প্রাকৃতিক আইন তৈরি করেছেন, তাই তিনি তা সম্যকভাবে জানেন। এছাড়া স্রষ্টা সময় ও স্থানের মাত্রার ঊর্ধ্বে বিধায় এবং কোনো কিছু তাঁর অতাৎক্ষণিক বা তাৎক্ষণিক ইচ্ছার বাইরে হয় না বিধায় নিজ গুণে তিনি সব জানেন।

আয়াতটিতে আয়ু প্রসঙ্গে নেতিবাচকভাবে যা বলা হয়েছে সেটাকে ইতিবাচকভাবে বললে দাড়ায়- ‘দীর্ঘায়ুদের মধ্য থেকে কেউ আয়ু পায় এবং কারো (সর্বচূড়ান্ত) আয়ু হতে কিছু আয়ু কমে কিতাব (আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক বিধি) অনুযায়ী। আয়ু হ্রাস-বৃদ্ধির যাবতীয় ফ্যাক্টরের/ অনুঘটকের যাবতীয় সংমিশ্রণ বিধিবদ্ধ করা আল্লাহর জন্য সহজ।

আয়াতটি থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কারো একটি সুনির্দিষ্ট বয়স পূর্ব-নির্ধারিত নয়। এটি প্রাকৃতিক শারীরিক আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, যেমন- বংশগত প্রবণতা, সেইসাথে স্বাস্থ্য-সুরক্ষা, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ইত্যাদি। এটি একটি পরিচিত বৈজ্ঞানিক সত্য যে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বাভাবিক আয়ু স্বাস্থ্যবিধি, খাদ্যাভ্যাস, রোগ প্রতিরোধ ও চিকিত্সা এবং জীবনযাত্রার মান ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। আর জীবনের জন্য যা ক্ষতিকর তা আয়ুক্ষয় করতে পারে।

৮। মৃত্যুর ফ্যাক্টর হিসেবে মানুষের কর্মকাণ্ড ও প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান

২:১৯৫ :: আর তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো আর তোমরা নিক্ষেপ করো না (তোমাদের নিজেদেরকে) তোমাদের নিজেদের হাতে ধ্বংসের দিকে। আর উত্তম স্তরে কর্তব্য পালন করো/ উত্তম আচরণ করো। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন উত্তম স্তরে কর্তব্য পালনকারীদেরকে।

আলোচনা : মানুষ তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। অর্থাৎ মানুষের কর্মকাণ্ড তার মৃত্যুর বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বা আত্মবিধ্বংসী হতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে, মানুষের ভাগ্যে তার মৃত্যুর একটি সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত থাকার ধারণাটি সঠিক নয়।

৪:২৯-৩০ :: হে ঐসব লোক যারা বিশ্বাস করেছো তোমরা খেয়ো না/ অধিগ্রহণ করো না তোমাদের মালসমূহ তোমাদের মধ্যে অগ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে। এছাড়া যে, তা অধিগ্রহণ করতে হবে নগদ বিনিময়ের মাধ্যমে (সম্পদের বিনিময়ে সম্পদ বা সম্পদের বিনিময়ে মুদ্রা) তোমাদের মধ্যকার পারস্পরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে (দ্র: চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে বা ভুল তথ্য দ্বারা প্রতারিত হয়ে বা অন্যায় আসক্তিতে/ মোহে পড়ে ব্যক্ত করা সন্তুষ্টি প্রকৃত সন্তুষ্টি নয়)। আর তোমরা আত্মহত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল (আল্লাহ দয়াশীল বলেই এ বিধান দেয়া হচ্ছে এবং এ বিধান লংঘন করলে তিনি সুবিচারের জন্য জালিমকে শাস্তি দেবেন)। আর যে উহা করে সীমালংঘন করে ও যুলম করে, তাহলে শীঘ্রই আমরা তাকে জ্বালাবো (জাহান্নামের) আগুনে। আর তা হবে আল্লাহর জন্য অত্যন্ত সহজ কাজ।

আলোচনা : আত্মহত্যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার Aging Process বা বয়ঃবৃদ্ধিক্রম অনুযায়ী থাকা সর্বচূড়ান্ত আয়ুসীমার আগেই মৃত্যুবরণ করতে পারে। কিন্তু একজন ব্যক্তি যেমন নিজ ইচ্ছায় জন্মলাভ করে নি বা নিজের জীবন নিজে সৃষ্টি করে নি, তেমনি সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়ারও অধিকার রাখে না। জন্মের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজ ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোনো ভূমিকা নেই, তাই এজন্য তার কোন পাপ-পূণ্য নেই। কিন্তু মৃত্যুর ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজ ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার একটা নিয়ন্ত্রিত সীমায় ভূমিকা আছে। তাই আত্মহত্যার জন্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং আত্মহত্যা করা অপরাধ।

৪:৯২-৯৩ :: আর মু’মিনদের দ্বারা সম্ভব নয় যে, সে হত্যা করবে কোনো মু’মিনকে ভুলবশত: হত্যা করা ছাড়া। আর (০১) যে হত্যা করেছে কোন মু’মিনকে ভুলবশত: তাহলে তার করণীয় হচ্ছে একজন মু’মিন দাসকে/ দাসীকে মুক্ত করা। আর (সেইসাথে) দিয়াত/ রক্তপণ সমর্পণ করতে হবে মৃত ব্যক্তির পরিবারের নিকট (তথা যারা মৃতব্যক্তির উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিলো তাদের নিকট)। কিন্তু মৃতব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে রক্তপণকে সদকা করে দেয়া হলে (মাফ করে দেয়া হলে) তা ভিন্ন ব্যাপার। (০২) তবে যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু ক্বাওমের অন্তর্ভুক্ত হয় আর সে (নিহত ব্যক্তি) মু’মিন হয়, তাহলে তার করণীয় হচ্ছে একজন মু’মিন দাসকে/ দাসীকে মুক্ত করা। আর (০৩) যদি নিহত মু’মিনটি হয় এমন কাওমের অন্তর্ভুক্ত তোমাদের ও যাদের মধ্যে সন্ধিচুক্তি আছে, তাহলে দিয়াত/ রক্তপণ সমর্পণ করতে হবে মৃত ব্যক্তির পরিবারের নিকট (তথা যারা মৃতব্যক্তির উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিলো তাদের নিকট)। আর তার করণীয় হচ্ছে একজন মু’মিন দাসকে/ দাসীকে মুক্ত করা। তবে যে (দাস/ দাসী বা দাসী/ দাসীকে মুক্ত করার সামর্থ্য) পাবে না সে সিয়াম করবে দুই মাস ক্রমাগত/ একটানা। ইহা (তার ক্ষেত্রে) আল্লাহ প্রদত্ত তাওবা করার পদ্ধতি। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞ। আর যে হত্যা করে কোনো মু’মিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে, তার প্রতিফল হবে জাহান্নাম। সে তাতে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ গদব দিয়েছেন তার উপর আর তিনি লা’নত করেছেন তাকে আর তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন তার জন্য মহাশাস্তি।

৫:৩২-৩৩ :: এই কারণেই (মানুষের মধ্যে এই দুই ধরনের স্বভাব প্রকৃতির মানুষ থাকার কারণেই) আমরা বিধিবদ্ধ করে দিয়েছি বানী ইসরাইলের উপর এই (চিরন্তন আইন) যে, যে হত্যা করেছে কোনো ব্যক্তিকে সে অন্য কোনো ব্যক্তির হত্যাকারী না হওয়া সত্ত্বেও অথবা পৃথিবীতে (মৃত্যুদণ্ডযোগ্য স্তরের) বিশৃংখলাসৃষ্টি না করা সত্ত্বেও; তাহলে সে যেন হত্যা করেছে সমগ্র মানবজাতিকে। আর যে তাকে (কোনো ব্যক্তিকে) বাঁচিয়েছে সে যেন বাঁচিয়েছে সমগ্র মানবজাতিকে। আর নিশ্চয় তাদের কাছে এসেছে আমাদের রসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণসহ। তারপর নিশ্চয় তাদের মধ্যকার অনেকে উহার পরও পৃথিবীতে সীমালংঘনকারী হয়ে আছে। নিশ্চয় তাদের প্রতিফল যারা আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে (আল্লাহর প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী রসূলের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা উৎখাতের জন্য যুদ্ধ করে), আর প্রচেষ্টা চালায় পৃথিবীতে বিশৃংখলা করার (তাদের প্রতিফল) এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে। অথবা তাদেরকে শূলে চড়ানো বা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে। অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে। অথবা তাদেরকে দেশ থেকে অপসারিত করা হবে। উহা তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনের লাঞ্চনা। আর তাদের জন্য আখিরাতের জীবনে আছে মহাশাস্তি।

২:১৭৮-১৭৯ :: হে ঐসব লোক যারা বিশ্বাস করেছো, বিধিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে তোমাদের উপর কিসাস (ফৌজদারি মামলায় অপরাধীকে সমানুপাতিক শাস্তিপ্রদান), হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে। হত্যাকারী স্বাধীন ব্যক্তি হলে তার বদলায় ঐ স্বাধীন ব্যক্তিকেই আর হত্যাকারী দাস হলে তার বদলায় ঐ দাসকেই আর হত্যাকারী নারী হলে তার বদলায় ঐ নারীকেই (হত্যা করতে হবে)। তারপর যাকে মাফ করে দেয়া হবে তার ভাইয়ের (নিহতের নিকটতম আত্মীয়দের) পক্ষ থেকে কিছুটা। তাহলে ন্যায়নীতির অনুসরণ করবে আর উত্তমভাবে তাকে (দিয়াত/ রক্তপণ) আদায় করে দেবে। উহা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে (শাস্তি) হ্রাসকরন ও দয়া। সুতরাং যে সীমালংঘন করবে এরপরও, তার জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর কিসাসের (অন্যায়ভাবে হত্যাকারীর বিচার হিসেবে তাকে হত্যা করার দন্ডবিধি বাস্তবায়নের) মধ্যেই আছে তোমাদের জীবন (জাতীয় গড় আয়ুর বৃদ্ধি), হে চিন্তাশীল লোকেরা, আশা করা যায় তোমরা স্রষ্টা-সচেতনতা অবলম্বন করবে।

আলোচনা : উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত হত্যার বিষয়ে বিভিন্ন দন্ডবিধি দেয়া হয়েছে। যদি কারো একটি সুনির্দিষ্ট বয়স (জন্ম-মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়কাল) পূর্বনির্ধারিত থাকতো, তাহলে কারো জীবন রক্ষা করা বা কাউকে হত্যা করা অর্থবহ কথা হতো না। সেই অবস্থায় কাউকে হত্যা করতে নিষেধাজ্ঞার কোনো মানে থাকতো না।

অন্যায় হত্যা মানুষের আয়ু কমে যাওয়ার একটি ফ্যাক্টর। কিসাস (অন্যায়ভাবে হত্যাকারীর বিচার হিসেবে তাকে হত্যা করার দন্ডবিধি) বাস্তবায়ন করলে এ ফ্যাক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ফলে বাহ্যত অন্যায়কারীকে হত্যার মধ্য দিয়ে আরো একটি জীবন ক্ষয়ের মাধ্যমে গড় আযু কমে মনে হলেও এর ফলে ঐ অন্যায় হত্যাকারী আর কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার সুযোগ পাবে না (অন্যথায় তার সাহস বেড়ে গিয়ে সে একইভাবে আরো লোককে অন্যায়ভাবে হত্যা করতে পারে)। সেই সাথে অন্য লোকেরা এমন বিচার দেখে নিজেরা অন্যায় হত্যার প্রবণতা থেকে সংযত হবে (অন্যথায় অন্য আরো লোক অন্যায় হত্যার প্রবণতা লালন করতে পারে)। আর কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার মাধ্যমে সে নিজে বেঁচে থাকার অধিকার হারিয়ে ফেলে এবং অন্যায় হত্যার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের উপযুক্ত হয়। বস্তুত অন্যায় হত্যাকারীকে বিচার করে সর্বসমুখে হত্যা করে ফেললে জাতীয় গড় আয়ু বেড়ে যাবে। না হলে জাতীয় গড় আয়ু কমে যাবে।

৪:৭১-৭২ :: হে ঐসব লোক যারা বিশ্বাস করেছো, তোমরা অবলম্বন করো তোমাদের সতর্কতা। তারপর তোমরা অভিযানে বের হও গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনাকারী ছোট ছোট সেনাদলে অথবা অভিযানে বের হও একত্রে। আর নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও আছে যে পিছনে সরে যাবে। তারপর যদি তোমরা মুসিবতগ্রস্ত হও, সে বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন আমার উপর, তখন আমি ছিলাম না তাদের সাথে (যুদ্ধক্ষেত্রে) উপস্থিত’।

৪:১০১-১০২ :: আর যখন তোমরা সফর করো পৃথিবীতে তখন তোমাদের উপর গুনাহ নেই তোমরা সালাতকে সংক্ষিপ্ত করলে যদি তোমরা ভয় করো যে, তারা তোমাদেরকে ফিতনায়/ বিপদে ফেলবে যারা কুফর করেছে। নিশ্চয় কাফিরগণ তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু। আর ‘(কাফিরদের কর্তৃক ফিতনায় পড়ার আশংকাগ্রস্ত অবস্থায়) যখন তুমি (রাসূল) তাদের মধ্যে থাকো, আর তুমি দাঁড়াও তাদের জন্য (তাদের নেতৃত্বমূলক ভূমিকায় থেকে) সালাতে; তখন যেন দাঁড়ায় তাদের মধ্য থেকে একদল তোমার সাথে। আর তারা যেন তাদের অস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র থাকে। তারপর যখন তারা সিজদা করবে, তখন তারা যেন তোমাদের পেছনে থাকে। আর যেন আসে অন্যদল যারা সালাত করেনি। তখন তারা যেন সালাত করে তোমার সাথে। আর তারা যেন গ্রহণ করে তাদের সতর্কতা আর তাদের অস্ত্র। আর তারা কামনা করে যারা কুফর করেছে, যদি তোমরা গাফেল হয়ে যাও তোমাদের অস্ত্র থেকে আর তোমাদের সরঞ্জামাদি থেকে! তাহলে তারা আক্রমণ করবে তোমাদের উপর একটাই চরম আক্রমণ। আর কোন গুনাহ নেই তোমাদের উপর, যদি তোমাদের কষ্ট হয় বৃষ্টির কারণে অথবা তোমরা হয়ে পড়ো অসুস্থ, সে অবস্থায় সরিয়ে রাখলে তোমাদের অস্ত্র। আর তোমরা অবলম্বন করো তোমাদের সতর্কতা। নিশ্চয় আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন কাফিরদের জন্য অপমানকর শাস্তি।

আলোচনা : কাফিরদের আক্রমণে বা অপঘাতে নিহত ও আহত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সতর্কতার নির্দেশ থেকে প্রতিভাত হয় যে, হতাহত হওয়ার ক্ষেত্রে ভাগ্যে কিছু নির্ধারিত থাকা নয়, বরং প্রাকৃতিক ব্যবস্থা অনুসারে হতাহত হওয়া ও না হওয়ার দ্বিবিধ সম্ভাবনা নিহিত রয়েছে।

৯। আল্লাহর পথে সংগ্রামে মৃত্যুবরণ করার যৌক্তিকতা এবং মৃত্যুভয়ে সংগ্রামে অংশগ্রহণ না করার অযৌক্তিকতা

পূর্বে বর্ণিত আয়াত থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংস করা যাবে না ও আত্মহত্যা করা যাবে না। অর্থাৎ নিজেদের স্বাস্থ্য-সচেতনতার অভাব, অসাবধানতা, অযত্ন-অবহেলা ও আত্মবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড যেন নিজেদের মৃত্যুর কারণ না হয়। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তি প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে তার পক্ষে যতদিন বেঁচে থাকা সম্ভব ততদিন বেঁচে থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। বস্তুত প্রতিটি জীবের জন্য আত্মসংরক্ষণ বা ভালোভাবে বেঁচে থাকার প্রয়াস অন্যতম জৈবিক মূল্য (Value)।

অন্যদিকে এই বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করা বা মৃত্যুর ঝুঁকিকে বরণ করা যেতে পারে মহত্তম নৈতিক কারণে। মূলত বেঁচে থাকার শত চেষ্টা সত্ত্বেও মৃত্যু হবেই, তাই সেই মৃত্যু যদি কিছুটা ত্বরান্বিত হয় মহত্তর মিশনের কারণে, তাতে কোনো আফসোসের অবকাশ নেই। বরং বিষয় হলো, অন্যরা তো মরে যায়, কিন্তু যারা আল্লাহর পথে মরে তারা মরেও অমর, যেমন অনুপ্রেরণারূপে, তেমনি অন্তরালের (বারযাখ) জগতেও। নিম্নের আয়াতগুলোতে এ বিষয়টিই উল্লেখ করা হয়েছে-

২:১৫৪ :: আর তোমরা বলো না তাদের প্রসঙ্গে যারা নিহত হয়েছে আল্লাহর পথে, (বলো না যে, তারা) মৃত। বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা তা অনুভব করো না।

২:১৫৫-১৫৭ :: আর অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো (কাফিরদের কারণে উদ্ভুত) কিছু বিষয় দ্বারা যেমন আশংকা আর ক্ষুধা আর মালসামানা, জীবনসমূহ ও ফলফলাদির ক্ষয়ক্ষতি। আর সবরকারীদেরকে সুসংবাদ দাও। যারা (এমন যে,) যখন তারা মুসীবতগ্রস্ত হয়, তারা বলে’নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে ফিরে যাবো’। তারা (ঐসব লোক) যাদের উপর তাদের রবের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ ও দয়া করা হয়। আর তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত।

৩:১৫২ :: আর নিশ্চয় আল্লাহ সত্যে পরিণত করেছেন তাঁর ওয়াদা যখন তোমরা তাদেরকে বিনাশ করছিলে যতক্ষণ না তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলেছো আর তোমরা নির্দেশের ক্ষেত্রে মতবিরোধ করেছো আর তোমরা অবাধ্যতা করেছো উহার পর যা তিনি তোমাদেরকে দেখিয়েছেন যা তোমরা ভালোবাসো। তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক আছে যারা ইচ্ছা করে দুনিয়া পেতে আর তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক আছে যারা ইচ্ছা করে আখিরাত পেতে। তারপর তিনি তোমাদেরকে সরিয়ে দিয়েছেন তাদের (প্রতিরোধ করা) থেকে, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। আর (তোমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারায়) নিশ্চয় শেষ পর্যন্ত তিনি উদারতা দেখিয়েছেন তোমাদের প্রতি। আর আল্লাহ মু’মিনদের উপর অনুগ্রহশীল ।

৩:১৫৩ :: যখন তোমরা ঊর্ধ্বমুখে পালিয়ে যাচ্ছিলে আর তোমরা দৃষ্টি ফিরাচ্ছিলে না কারো উপর অথচ রসূল তোমাদেরকে ডাকছিলো তোমাদের পিছন থেকে। সুতরাং তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে প্রতিফল দিয়েছেন তোমাদের (ভবিষ্যত) বিষাদ/ দু:খ প্রতিরোধের জন্য (তাৎক্ষণিক) বিষাদ/ দু:খ। তোমরা দু:খিত না হওয়ার জন্য উহার উপর যা তোমাদের থেকে হারিয়ে গেছে। আর যেন তোমাদের যে মুসিবত ঘটে গেছে তার উপরও দু:খিত না হও। আর আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সম্যক অবগত।

৩:১৫৪ :: তারপর তিনি নাযিল করেছেন তোমাদের উপর এই বিষাদের/ দু:খের পর নিরাপত্তাবোধ তন্দ্রারূপে, যা আচ্ছন্ন করে তোমাদের মধ্যকার একটি দলকে। আর একটি দল, নিশ্চয় (তাদের নিজেদেরকে) উদ্বিগ্ন করেছে তাদের নিজেদের জান-প্রাণ রক্ষার ভাবনায়। তারা ধারণা করেছে আল্লাহর সম্পর্কে অযৌক্তিকভাবে, জাহিলিয়াতের ধারণা। তারা বলে, ‘আমাদের কি কোনো নির্দেশের বিষয়ে (স্বাধীনভাবে) কোনো কিছু করার আছে?’ বলো, ‘সকল বিষয়ে (স্বাধীনভাবে) নির্দেশ প্রদান শুধু আল্লাহর অধিকারে।” তারা গোপন রাখে তাদের নিজেদের মধ্যে যেই মনোভাব তারা প্রকাশ করে না তোমার কাছে। তারা বলে, “যদি কোনো বিষয়ের নির্দেশ আমাদের অধিকারে থাকতো, তাহলে এখানে আমরা নিহত হতাম না (অর্থাৎ আমাদের মধ্য থেকে যারা নিহত হয়েছে তারা নিহত হতো না।” বলো, ‘যদি (যুদ্ধের সময় নিহত হওয়ার ভয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে না এসে) তোমরা থাকতে তোমাদের ঘরসমূহে, তাহলেও (তখন বা অন্য কোনো সময়, সেখানে বা অন্য কোনো স্থানে, স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়) তারা বের হতো- যাদের উপর নিহত হওয়া লিখে দেয়া হয়েছে (অর্থাৎ নিহত হওয়ার মতো প্রাকৃতিক বিধি কার্যকর হয়েছে)- তাদের নিহত হওয়ার স্থানের দিকে। আর আল্লাহ তা ঘটিয়েছেন তোমাদের স্নায়ুকেন্দ্রে (মন-মানসিকতায়) কী আছে তা পরীক্ষা করার জন্য। আর তোমাদের মনে যা (ধ্যান-ধারণা) আছে তা পরিশোধন করার জন্য। আর আল্লাহ মন-মানসিকতায় থাকা বিষয় (ভাবধারা) সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞাত।

৩:১৫৫ :: নিশ্চয় যারা পিছনে ফিরে গিয়েছে তোমাদের মধ্য থেকে দুই সেনাবাহিনীর মোকাবেলার দিন, মূলত শয়তান তাদের পদস্খলন ঘটিয়েছে (তাদেরকে তাদের যুদ্ধনীতি থেকে বিচ্যুত করেছে) এমন কিছুর সূত্র ধরে যা তারা উপার্জন করেছে (অর্থাৎ তাদের কিছু কৃতকর্মের ফলে)। আর নিশ্চয় আল্লাহ উদারতা দেখিয়েছেন তাদের প্রতি। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।

৩:১৫৬ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমরা হয়ো না তাদের মতো যারা অবিশ্বাস করেছে আর যখন তাদের ভাইয়েরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করেছে (ও সেখানে মৃত্যুবরণ করেছে) অথবা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হয়েছে (ও তাতে নিহত হয়েছে) তখন তারা তাদের প্রসঙ্গে বললো, “যদি তারা আমাদের কাছে থাকতো তাহলে তারা মৃত্যুবরণ করতো না এবং তারা নিহত হতো না।” (এরূপ হয়ে থাকে) যেন আল্লাহ উহাকে আক্ষেপে পরিণত করে দেন তাদের অন্তরে (অর্থাৎ এরূপ কথার মাধ্যমে কাফিররা জীবন মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে না বুঝে হাহুতাশ করতে থাকে)। আর আল্লাহ (সাধারণত তাঁর তৈরি প্রাকৃতিক আইন প্রয়োগ করে এবং মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য) জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান । আর আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্মের প্রতি দৃষ্টিবান।

৩:১৫৭ :: আর অবশ্যই যদি আল্লাহর পথে থেকে তোমরা নিহত হও অথবা মৃত্যুবরণ করো, তবে অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া ক্ষমা ও দয়া তা থেকে উত্তম যা তারা জমা করে।

৩:১৫৮ :: আর যদি তোমরা মৃত্যুবরণ করো অথবা নিহত হও, নিশ্চয় (উভয় অবস্থায়) আল্লাহর দিকেই তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।

৩:১৬৫ :: কি হলো যখন তোমরা মুসিবতগ্রস্ত হয়েছো, (অথচ) নিশ্চয় (আগের যুদ্ধে) তোমরা তাদের উপর ঘটিয়েছিলে উহার দ্বিগুণ মুসিবত, (তবুও) তোমরা বললে, “এটা কোথা থেকে এলো?” বলো, “উহা তোমাদের নিজেদের নিকট থেকে (তোমাদের কার্যকলাপের কারণে)। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।”

৩:১৬৬ :: আর তোমাদের উপর যা ঘটেছে দুটি সেনাবাহিনীর মোকাবেলার দিন তা আল্লাহর অনুমতিক্রমে ঘটেছে। আর তা এজন্য হয়েছে যেন তিনি (পরীক্ষার মাধ্যমে) জেনে নেন মু’মিনদেরকে।

৩:১৬৭ :: আর যেন তিনি জেনে নেন তাদেরকে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। (অর্থাৎ পরীক্ষার মাধ্যমে কে মু’মিন কে মুনাফিক্ব তা স্পষ্ট হয়ে যায়)। আর যখন তাদেরকে বলা হলো, “তোমরা আসো, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো বা তোমরা (অন্তত) প্রতিরক্ষার কাজ করো।” (তখন) তারা বললো, “যদি আমরা জানতাম যে, যুদ্ধ হবে, তাহলে আমরা তোমাদের অনুসরণ করতাম।” তারা কুফরের ক্ষেত্রে সেদিন বেশি কাছাকাছি পৌঁছেছিলো তাদের ঈমানের তুলনায়। তারা তাদের মুখে বলে যা তাদের অন্তরে নেই। (তারা মনে রাখে এক কথা, মুখে বলে আরেক কথা)। আর আল্লাহ তা জানেন, যা তারা গোপন রেখেছে।

৩:১৬৮ :: যারা নিজেরা বসে থেকে তাদের ভাইদের প্রসঙ্গে বললো, “যদি তারা আমাদের আনুগত্য করতো, তাহলে তারা নিহত হতো না।” বলো, “তাহলে তোমরা তোমাদের মৃত্যুকে হটিয়ে দাও, যদি তোমরা (তোমাদের দাবিতে) সত্যবাদী হও।”

৩:১৬৯ :: আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলে ধারণা করো না। বরং তাদের প্রভুর কাছে তারা জীবিত। তাদেরকে জীবিকা দেয়া হয়।

৩:১৭০ :: তারা খুশি হয়েছে তার কারণে যা আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন তাঁর অনুগ্রহ থেকে। আর তারা সুসংবাদ পাচ্ছে তাদের ব্যাপারে যারা এখনো (আল্লাহর পথে নিহত হয়ে) তাদের সাথে মিলিত হয়নি তাদের পরবর্তী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে; এ সুসংবাদ যে, (আল্লাহর পথে নিহত হয়ে এলে) তাদের জন্যও কোনো ভয় থাকবে না আর তারা দু:খিতও হবে না।

৩:১৮৬ :: অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা নেয়া হবে তোমাদের মালের ব্যাপারে আর তোমাদের জানের ব্যাপারে। আর অবশ্যই তোমরা শুনতে পাবে তাদের পক্ষ থেকে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের আগে আর তাদের পক্ষ থেকেও যারা শিরক করেছে/ আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করেছে (তোমরা তাদের থেকে শুনবে) অনেক কষ্টদায়ক কথা। আর এ অবস্থায় যদি তোমরা ধৈর্য ধরো আর স্রষ্টা-সচেতনতা অবলম্বন করো তাহলে নিশ্চয় উহাই হবে যথাযথ সিদ্ধান্তকর কাজ।

আলোচনা :

উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তাঁর পথে থাকার দাবিতে কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী তা স্পষ্ট করার জন্য তাদের জান-মালের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। যারা আল্লাহর পথে থেকে মৃত্যুবরণ করে বা নিহত হয় তারা তাদের প্রতিফল তাদের চেয়ে উত্তম, যারা আল্লাহর পথে নিহত হওয়ার ভয়ে ঘরে বসে থাকে এবং পার্থিব সম্পদ জমা করে। আল্লাহর পথে সংগ্রামের নির্দেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রসূলের নেতৃত্বের প্রতি যাদের আপত্তি ছিলো, তারা এমনকি আল্লাহর বিষয়েও জাহিলিয়্যাতের ধারণা পোষণ করেছিলো যে, আল্লাহ মু’মিনদেরকে সাহায্য করার যে ওয়াদা করেছেন বাস্তবে তিনি আদৌ তা করেন কিনা। এসবের কারণ হলো, তারা যুদ্ধের নির্দেশের প্রতি মতভেদ করেছিলো এবং পার্থিব সম্পদের মোহে পড়ে গিয়েছিলো। আর এর ফলে তারা বিপর্যয় ও পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিলো।

তাদের মতে, যদি নির্দেশের বিষয়ে তারা স্বাধীনভাবে কিছু করার থাকতো, তাহলে তারা সেখানে নিহত হতো না। এর জবাবে বলা হয়েছে যে, স্বাধীনভাবে নির্দেশ প্রদান শুধুমাত্র আল্লাহর অধিকার। তিনি যে বিষয়ে যে নিয়ম করে দিয়েছেন তা অনুসরণ করলেই তোমরা তাতে কৃতকার্য হবে, আর তা লঙ্ঘন করলে তোমরা তাতে অকৃতকার্য হবে।

যারা আল্লাহর পথে পৃথিবীতে যুদ্ধাভিযানে বের হয়ে তাতে নিহত হয়, তাদের ক্ষেত্রে মুনাফিক্বদের কথা হলো, যদি তাদের কথা মতো তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতো, তাহলে তারা নিহত হতো না। তাদের এই দাবির জবাবে বলা হয়েছে, তাহলে তারা তাদের নিজেদের মৃত্যুকে হটিয়ে দিক। অর্থাৎ মৃত্যু অমোঘ ও অনিরুদ্ধ। তাই কারো কথা মতো ন্যায়যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থেকে মৃত্যুকে এড়ানো শোভনীয় নয়, আবার এভাবে নিহত হওয়ার সম্ভাবনাকে এড়ানো যায় না।

তাদেরকে চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, “যদি (যুদ্ধের সময় নিহত হওয়ার ভয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে না এসে) তোমরা থাকতে তোমাদের ঘরসমূহে, তাহলেও (তখন বা অন্য কোনো সময়, সেখানে বা অন্য কোনো স্থানে, স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়) তারা বের হতো- যাদের উপর নিহত হওয়া লিখে দেয়া হয়েছে (অর্থাৎ নিহত হওয়ার মতো প্রাকৃতিক বিধি কার্যকর হয়েছে)- তাদের নিহত হওয়ার স্থানের দিকে।”

অর্থাৎ স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেভাবেই কেউ কোথাও বের হোক না কেন, যদি কোথাও তার উপর নিহত হওয়ার মতো আঘাত আসতো, তাহলে সে সেখানে নিহত হতো। সুতরাং নিহতের সংখ্যা কম-বেশি হওয়ার বিষয়টি যুদ্ধনীতি সঠিকভাবে অনুসরণ করা না করার সাথে সম্পর্কিত, যার নিয়ন্ত্রণেই সিদ্ধান্তক্ষমতা থাকুক না কেন, যদি যুদ্ধনীতি অনুসরণে যোদ্ধারা একই ধরনের আচরণ করতো তবে তারা একই ধরনের পরিণতির সম্মুখীন হতো। তথ্যটি আয়াতটির (৩:১৫৪) প্রথম থেকে চলে আসা বক্তব্যের সাথে প্রাসংগিক। এখানে বলা হয়েছে, যুদ্ধে নিহত হওয়ার কারণ যুদ্ধনীতি অনুসরণে দুর্বলতা হেতু নিহত হওয়ার মতো আক্রমণের শিকার হওয়া/ আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া।

এছাড়া নিহত হওয়া থেকে বাঁচার জন্য কোন একটি যুদ্ধক্ষেত্রে না গিয়ে ঘরে বসে থাকা ব্যক্তিও যে কোনো উদ্দেশ্যে ঘরের বাহিরে অন্যত্র গিয়ে নিহত হতে পারে। অথচ সে কল্পনাও করেনি যে, সে যেখানে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর তা তার মৃত্যুস্থানে পরিণত হবে (২:২৪৩, ৩৩:২৬, ৫৯:২)। যুদ্ধক্ষেত্র মানেই হত্যা করা ও নিহত হওয়ার মতো ক্ষেত্র (৯:১১১)। অবশ্য আল্লাহর পথে প্রাণোৎসর্গের প্রেরণা ও মানসিকতা রেখে যে সশস্ত্র সংগ্রাম করা হবে তাতে আত্মরক্ষার চেষ্টায় ঢিল দেয়া যাবে না কারণ তাহলে তা আত্মহত্যা বলে গণ্য হয়ে যাবে। কিন্তু সঙ্গী সাথীদের দিকে খেয়াল না করে নিজ জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়ানো ও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া যাবে না (৩:১৫৩, ৮:১৫-১৬)। যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্য আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী সঠিক জায়গায় সৈন্য বিন্যস্তকরন (৩:১২১) ও নেতার আদেশ পালনে মতভেদ না করা, সম্পদের মোহ ত্যাগ করা এবং স্বার্থপর না হওয়া অত্যন্ত জরুরী, নাহলে পরাজয় অনিবার্য (৩:১৫২-১৫৩, ৩:১৬৫)। সুতরাং যারা আলোচ্য যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়েছে তারা যুদ্ধক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত প্রাকৃতিক নিয়মানুযায়ীই নিহত হয়েছে। যেহেতু আল্লাহ কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম বিধিবদ্ধ করেছেন তাই মু’মিনরা তো যুদ্ধক্ষেত্রে আসবেই এবং কেউ কেউ শহীদও হবে (৯:৪৪, ৩:১৪০)। আর যারা শত্রুর ভয়ে ভীত তারাও নিহত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে না। আর যারা মুসলিমদেরকে আক্রমণ করতে আসে তাদের মধ্য থেকে অনেকে এভাবে তাদের মৃত্যুস্থানের দিকেই আসে (৩৩:২৬)।

অনেকে ৩:১৫৪ আয়াতকে মৃত্যুর সময়, স্থান ও কারণ হিসেবে ভাগ্যলিপির বা ভাগ্যবাদের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। কিন্তু আমরা উপরে এর যে তাৎপর্য উল্লেখ করেছি সেটাই মৃত্যুর সময়, স্থান ও কারণের বিষয়ে থাকা কুরআনের সকল বক্তব্যের সাথে সঙ্গতিশীল। অন্যদিকে এসবকিছু যদি ভাগ্যলিপির কারণে হয়ে থাকে, তাহলে কাউকে ন্যায়যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা বা না করা সমান। এবং ন্যায়যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা কোনো পুণ্য এবং ন্যায়যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা কোনো পাপ হতে পারে না। কারণ ভাগ্যলিপি অনুসারে এগুলো সবই মানুষকে দিয়ে করিয়ে নেয়া হচ্ছে এবং সে তাকে দিয়ে যা করিয়ে নেয়া হচ্ছে তা করার বাধ্যতামূলক চরিত্রে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।

“কোনো নির্দিষ্ট সময় যুদ্ধক্ষেত্রে না গেলে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকার অবকাশ পাওয়া যাবে কিনা?”- এ প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট জবাব পাওয়া যায় সূরা আহযাবের ১৬ নং আয়াতে, যাতে বলা হয়েছে-

৩৩:১৬ :: বলো, “ যদি তোমরা মৃত্যু অথবা হত্যার ভয়ে পলায়ন করো, তাহলে পলায়ন তোমাদের জন্য উপকারে আসবে না। আর তখন তোমরা জীবন উপভোগ করবে না অল্পকিছু সময় ব্যতীত।” (অর্থাৎ সেক্ষেত্রে তোমরা সামান্য কিছু কাল অবকাশ পেতে পারো)।

কিন্তু ঐ অল্পকিছু সময় বেশি বাঁচার আশায় জিহাদ থেকে দূরে থাকা সঙ্গত নয়। কারণ আল্লাহর পথে থেকে নিহত হওয়া বা স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করা অন্যভাবে নিহত হওয়া বা মৃত্যুবরণ করার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। মৃত্যুবরণ করা বা নিহত হওয়া যেভাবেই হোক, সকলকে পার্থিব জীবনের পর্যায় অতিক্রম করে বিচারের সন্মুখীন হতেই হবে। সুতরাং জিহাদ থেকে দূরে থাকা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

পরিশেষে বলা যায় যে, মৃত্যুর একটিমাত্র সময়, স্থান ও কারণ ভাগ্যলিপিতে সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ বা পূর্বনির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে বলে মনে করা একটি বিভ্রান্তিমূলক চিন্তাধারা। এ বিষয়ে সঠিক তথ্য হলো- কোনো মানুষ যেই সময় ও স্থানে মৃত্যু হওয়ার মতো কোনো প্রাকৃতিক ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত হবে, সেই সময় ও স্থানে তার মৃত্যু হবে, যদি না অন্য কোনো বিপরীত ফ্যাক্টরের প্রভাবে সেই ফ্যাক্টরটি পরিবর্তিত হয়। আর যদি কোনোভাবে মুমুর্ষু অবস্থা থেকে কেউ পরিত্রাণ পায়, তাহলে যেই সময় ও স্থানে সে প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত একটি চূড়ান্ত আয়ুসীমায় পৌঁছে যাবে, সেই সময় ও স্থানে সে মৃত্যুবরণ করবে।

জাতির উত্থান-পতনের কার্যকারণ

জাতির ভাগ্য! (জাতির উত্থান-পতনের ক্ষেত্রে নৈতিক আইনের প্রভাব)

১৩:১১ :: তার জন্য আছে প্রহরীগণ (ফেরেশতা) তার আগে ও তার পিছে, তারা তাকে হেফাযত করে আল্লাহর আদেশে (তার ভারসাম্য রক্ষার পরিবেশ সংরক্ষণ করে)। নিশ্চয় আল্লাহ পরিবর্তন করেন না কোনো কওমের অবস্থা যতক্ষণ না তারা পরিবর্তন করে তাদের নিজেদের অবস্থা/ গুণাবলী। আর যখন আল্লাহ ইচ্ছা করেন কোনো কওমকে মন্দ শাস্তি দিতে, তখন তা ফেরানোর কেউ নেই। আর তাদের জন্য নেই তিনি ছাড়া কোনো অভিভাবক।

৬:১৩১ :: উহা এজন্য যে, তোমার রব ছিলেন না কোনো জনপদকে ধ্বংসকারী যুলুমের দ্বারা এ অবস্থায় যে, তার অধিবাসী ছিলো (সত্য সম্পর্কে) অনবহিত।

২৮:৫৮-৫৯ :: আর কত যে জনপদবাসীকে আমরা ধ্বংস করেছি যারা তাদের জীবন যাপনের উপায়-উপকরনের অহংকার করতো। তারপর এই তাদের বাসগৃহসমূহ। উহাতে বসবাস করে নি তাদের পরে, অল্পসংখ্যক ছাড়া। আর আমরাই হলাম উত্তরাধিকারী। আর তোমার রব ছিলেন না কোনো জনপদকে ধ্বংসকারী, যতক্ষণ না তিনি সমুত্থিত/ প্রেরণ করেন উহার কেন্দ্রে একজন রসূল, যে আবৃত্তি করে তাদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ। আর আমরা ছিলাম না কোনো জনপদকে ধ্বংসকারী, এছাড়া যে, উহার অধিবাসীগণ ছিলো যালিম।

১১:১১৭ :: আর তোমার রব এমন নন যে, ধ্বংস করে দেবেন কোনো জনপদকে যুলুম করে; এ সত্ত্বেও যে, উহার অধিবাসীরা ছিলো সৎকর্মশীল ও সংশোধনকারী।

২১:১১-১৫ :: আর কত যে আমরা বিধ্বস্ত করেছি জনপদবাসীকে, যা ছিলো অত্যাচারী। আর আমরা উদ্ভব ঘটিয়েছি তাদের পরে পরবর্তী অন্য ক্বওমগুলোকে। সুতরাং যখন তারা অনুভব করেছে আমাদের শাস্তি তখন তারা তা থেকে পালাচ্ছিলো/ তা থেকে বাঁচার জন্য দৌড়াদৌড়ি করছিলো। “তোমরা পলায়ন করো না। আর তোমরা ফিরে যাও (শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার অন্তর্বর্তীকালে) তোমাদেরকে যে শোষণের সুযোগ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে আর তোমাদের ঘরবাড়িগুলোতে। যাতে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে।” তারা বলেছে, “হায়, আমাদের আফসোস। নিশ্চয় আমরা ছিলাম জালিম।” তারপর চলতে থাকলো তাদের এই আর্তনাদ/ আহাজারি, যতক্ষণ না আমরা তাদেরকে পরিণত করেছি কেটে ফেলা শস্যে ও আগুনে পুড়ে যাওয়া ভষ্মে/ ছাইতে।

৬:৬ :: তারা কি দেখে নি কতসংখ্যক আমরা ধ্বংস করেছি তাদের আগের জনগোষ্ঠী। তাদেরকে আমরা অধিষ্ঠিত করেছিলাম পৃথিবীতে যেমনভাবে আমরা অধিষ্ঠিত করি নি তোমাদেরকে, আর আমরা প্রেরণ করেছিলাম আসমান থেকে তাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি, আর আমরা করেছিলাম নদীগুলোকে প্রবাহিত তাদের নিম্নভূমিতে। শেষ পর্যন্ত আমরা তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি তাদের পাপসমূহের কারণে, আর অভিষিক্ত করেছি (নিয়ে এসেছি) তাদের পরে অন্যান্য জনগোষ্ঠিকে।

৩০:৯-১০ :: তারা কি ভ্রমণ করে নি পৃথিবীতে? তাহলে তারা দেখতে পেতো কিরূপ হয়েছিলো পূর্ববর্তীদের পরিণতি। তারা ছিলো শক্তিতে তাদের চেয়ে অধিক প্রবল, আর তারা ভূমি কর্ষণ করতো আর তারা উহাতে আবাদ করতো এরা উহাতে যা আবাদ করে তার চেয়ে বেশি। আর তাদের কাছে এসেছিলো আমাদের রসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণসহ। তারপর আল্লাহ তাদের উপর যুলুম করার ছিলেন না। কিন্তু তারাই নিজেদের উপর যুলুম করতো। তারপর যারা মন্দকাজ করেছিলো তাদের পরিণাম মন্দ হয়েছিলো, এ কারণে যে, তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো আল্লাহর আয়াতসমূহকে আর তারা উহার প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতো।

অর্থাৎ ধনে-জনে প্রাচুর্য সত্ত্বেও আল্লাহর বিধান অমান্য করায় তাদের মধ্যে সামাজিক ব্যাধি ও ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয় এবং তাদের ধ্বংস সাধিত হয়।

৬:১১:: বলো, “তোমরা ভ্রমণ করো পৃথিবীতে। তারপর লক্ষ্য করো কেমন হয়েছিলো মিথ্যাবাদীদের পরিণতি।”

১০:৭৩ :: তারপর তারা তাকে (রসূলুল্লাহ নূহকে) মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। তারপর আমরা মুক্তি দিয়েছি তাকে আর তাদেরকে যারা তার সাথে ছিলো নৌযানে। আর আমরা তাদেরকে বানিয়েছি আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত। আর আমরা তাদেরকে ডুবিয়ে দিয়েছি যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে। সুতরাং লক্ষ্য করো কিরূপ হয়েছিলো যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিলো (অথচ তারা মানেনি) তাদের অবস্থা।

৬:৪৪-৪৫ :: তারপর যখন তারা উহা ভুলে গেছে তাদেরকে যে স্মরণিকা দ্বারা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিলো, তখন আমরা খুলে দিলাম সবকিছুর দরজাসমূহ। শেষ পর্যন্ত যখন তারা উল্লাস করছিলো উহা নিয়ে যা তাদেরকে দেয়া হয়েছে, আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি হঠাৎ করে, ফলে তখন তারা হতাশ ও নিরাশ হয়ে গেলো। তারপর কেটে দেয়া হয়েছে ঐ ধরনের কাওমের মূল/ গোড়া যারা যুলুম করেছে। আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের রব।

১৮:৫৮-৫৯ :: আর তোমার রব ক্ষমাশীল ও দয়াশীল। যদি তিনি (ক্ষমাশীল ও দয়াশীল না হয়ে) তাদেরকে পাকড়াও করতেন তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণে, তাহলে অবশ্যই ত্বরান্বিত করতেন তাদের জন্য শাস্তি। বরং (তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াশীল হওয়ার কারণে) তাদের জন্য আছে ওয়াদার একটি সময়, আর তারা পাবে না তাঁকে ছাড়া কোনো আশ্রয়। আর এই যে (ধ্বংসপ্রাপ্ত) জনপদগুলো, আমরা তাদেরকে ধ্বংস করেছি যখন তারা জুলুম করেছে। আর আমরা নির্ধারণ করেছিলাম তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য ওয়াদার একটি সময়।

২২:৪৫-৪৬ :: তারপর কত যে জনপদবাসীকে আমরা ধ্বংস করেছি, এ অবস্থায় যে, উহা (ঐসব জনপদবাসী) ছিলো জালিম। সুতরাং উহা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে আছে উহার ভিত্তির উপর। আর কত কূপ পরিত্যাক্ত হয়ে আছে, আর কত সুদৃঢ় প্রাসাদও। তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে নি? তাহলে (বাস্তব নিদর্শন দেখে) হতো তাদের কলবসমূহ এমন যে, উহা দ্বারা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতে পারতো অথবা তাদের কানসমূহ উহা দ্বারা শুনতে পারতো। নিশ্চয় উহার ক্ষেত্রে (ঐ সত্য দেখার ক্ষেত্রে) অন্ধ হয় না চোখসমূহ, কিন্তু অন্ধ হয় কলবসমূহ, যা আছে মস্তিষ্কসমূহে।

আলোচনা : উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহের আলোকে বলা যায় যে, প্রকৃতির ‘ল অফ রিটার্নস’ (প্রত্যাবর্তনের আইন) ব্যক্তি ও জাতি উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এটি তাদের জীবন-মৃত্যু ও উত্থান-পতনের সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থাৎ জাতিগুলোর উত্থান-পতন তাদের ভাগ্যের কারণে নয়, বরং তা তাদের নিজেদের কর্মের উপর নির্ভরশীল।

অবকাশের সময়কাল ও তাতে সংশোধিত না হলে ধ্বংস- আল্লাহর চিরন্তন সুন্নাত

২০:১২৯ :: আর যদি না (অপরাধীকে অবকাশ প্রদানের) বাণী আগে থেকে নির্ধারিত থাকতো তোমার রবের পক্ষ থেকে, তাহলে অবশ্যই (অপরাধের সাথে সাথেই শাস্তি) অনিবার্য হয়ে যেতো, আর (যদি না থাকতো) নির্ধারিত শেষ সময়সীমা (আজালিম মুছাম্মা)।

৩৫:৪৩ :: তারা অহংকার করে পৃথিবীতে আর নিকৃষ্ট কৌশল করে। আর (পরিণামে) নিকৃষ্ট কৌশল পরিবেষ্টন করে না/ ঘিরে ধরে না, উহার উদ্যোক্তাকে ছাড়া অন্য কাউকে। তারা কি অপেক্ষা করছে পূর্ববর্তীদের ক্ষেত্রে আল্লাহর অবলম্বিত সুন্নাত বা শাস্তিনীতি কার্যকর হওয়া ছাড়া অন্য কোনো পরিণতির জন্য? সুতরাং তুমি পাবে না আল্লাহর সুন্নাতে কোন পরিবর্তন (আল্লাহর সুন্নাত বদলে যায় না)। আর তুমি পাবে না আল্লাহর সুন্নাতে কোন বিচ্যুতি (আল্লাহর সুন্নাতে কোনো বিচ্যুতি ঘটে না)।

৩৫:৪৪ :: তারা কি ভ্রমণ করে নি পৃথিবীতে, ফলে তারা দেখবে কিরূপ হয়েছিলো তাদের পরিণাম যারা তাদের আগে ছিলো? আর তারা ছিলো অধিক শক্তিশালী তাদের চেয়েও শক্তিসামর্থে। আর আল্লাহ এমন নন যে, তাঁকে অক্ষম করতে পারে কোনো সত্তা/ কোনো কিছু আকাশমন্ডলীতে আর পৃথিবীতেও (কেউ তাঁকে অক্ষম করতে পারবে) না। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ এবং প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৩৫:৪৫ :: আর যদি আল্লাহ পাকড়াও করতেন লোকদেরকে তারা যা (যে পাপ) উপার্জন করে তার কারণে, তাহলে তিনি ছেড়ে দিতেন না ভূপৃষ্ঠে কোনো জীবজন্তুকে। কিন্তু তিনি তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন নির্দিষ্ট শেষ সময়সীমা (আজালুম মুসাম্মা) পর্যন্ত। তারপর যখন এসে যায় তাদের নির্দিষ্ট শেষ সময়সীমা (আজাল)। তবে নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে দৃষ্টিবান।

১০:১১ :: আর যদি আল্লাহ তাড়াতাড়ি করতেন মানুষের জন্য অকল্যাণ দেয়ার ব্যাপারে যেমন তাড়াতাড়ি তারা চায় কল্যাণ পেতে; তাহলে সম্পন্ন হয়ে যেতো তাদের ক্ষেত্রে তাদের অবকাশের সময়সীমা (আজাল)। সুতরাং আমরা তাদেরকে ছাড় দিয়েছি যারা আশা রাখে না আমাদের সাথে সাক্ষাতের বিষয়ে। তারা তাদের বিদ্রোহে/ সীমালংঘনে উদ্ভ্রান্ত/ দিশেহারা হয়ে ঘুরছে।

১৬:৬১ :: আর যদি আল্লাহ পাকড়াও করতেন মানুষকে তাদের জুলুমের জন্য, তাহলে ছেড়ে দিতেন না উহার উপর (পৃথিবীর উপর) কোনো প্রাণীকেই। কিন্তু তিনি তাদেরকে অবকাশ দেন সুনির্ধারিত শেষ সময়সীমা (আজালিম মুছাম্মা) পর্যন্ত। তারপর যখন এসে যায় তাদের শেষ সময়সীমা (আজাল), তখন তারা বিলম্বিত করতে পারে না এক মুহুর্তও, আর তারা ত্বরান্বিতও করতে পারে না।

৭:৩৪ :: আর প্রত্যেক উম্মাতের জন্যই আছে (অবকাশের) নির্দিষ্ট শেষ সময় (আজাল)। তারপর যখন এসে যায় (অবকাশের) নির্দিষ্ট শেষ সময়, তখন তারা বিলম্বিত করতে পারবে না এক মুহুর্তও আর তা ত্বরান্বিতও করতে পারবে না।

২৩:৪৩ :: ত্বরান্বিত করতে পারে না কোনো উম্মাত তার নির্ধারিত শেষ সময়সীমাকে (আজাল), আর বিলম্বিতও করতে পারে না।

১০:৪৯ :: বলো, “না আমি ক্ষমতা রাখি আমার নিজের ব্যাপারেও কোনো অপকার করার আর না কোনো উপকার করার, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। প্রত্যেক উম্মাতের জন্য আছে অবকাশের শেষ সময়সীমা (আজাল)। যখন এসে যায় তাদের অবকাশের শেষ সময়সীমা (আজাল), তখন তারা উহা বিলম্বিত করতে পারে না এক মুহুর্তও। আর তারা উহাকে ত্বরান্বিতও করতে পারে না।”

১৫:৪-৫ :: আর আমরা ধ্বংস করি না কোনো জনপদকে এ ছাড়া যে, উহার জন্য ছিলো সুপরিজ্ঞাত কিতাব (উহাকে কিতাবের মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার জ্ঞান দেয়া হয়েছিলো)। ত্বরান্বিত করতে পারে না কোনো উম্মাত তার শেষ সময়সীমা (আজাল), আর বিলম্বিতও করতে পারে না।

৮:৫৩ :: ইহা এজন্য যে, আল্লাহ পরিবর্তনকারী ছিলেন না কোনো নিয়ামাতের যা তিনি নিয়ামাত হিসাবে দিয়েছেন কোনো কওমকে, যতক্ষণ না তারা পরিবর্তন করে তাদের নিজেদের নৈতিক অবস্থা। আর নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

৩:১৭৮ :: আর তারা যেন হিসাব করে না রাখে যারা কুফর করেছে, এই যে আমরা ঢিল দিই তাদের জন্য, উহাকে তাদের নিজেদের কল্যাণের বিষয় হিসাবে (যদি না তারা কুফর ত্যাগ করে)। নিশ্চয় আমরা ঢিল দিই তাদের জন্য যেন (সংশোধিত না হলে) তারা বাড়িয়ে নেয় তাদের পাপ। আর তাদের জন্য আছে অপমানকর শাস্তি।

৭:১৮২-১৮৩ :: আর যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে, আমরা তাদেরকে ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবো, যেখান থেকে (যে অবস্থানে থেকে) তারা জানতে পারবে না। আর আমি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছি। নিশ্চয় আমার কায়দা-কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।

৬৮:৪৪-৪৫ :: সুতরাং ছেড়ে দাও আমাকে আর তাকে যে এ হাদীসের (আল কুরআনের) প্রতি মিথ্যা সাব্যস্ত করে। শীঘ্রই আমরা তাদেরকে ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবো, যেখান থেকে (যে অবস্থানে থেকে) তারা জানতে পারবে না। আর আমি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছি। নিশ্চয় আমার কায়দা-কৌশল মজবুত।

২৪:৫৫ :: ওয়াদা দিয়েছেন আল্লাহ তাদেরকে যারা বিশ্বাস করেছে তোমাদের মধ্য থেকে আর সৎকর্ম, সংস্কার প্রচেষ্টা ও যোগ্যতা-দক্ষতা অর্জনমূলক কাজ করেছে করেছে; তিনি অবশ্যই তাদেরকে আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ততা (খিলাফাহ) দিবেন পৃথিবীতে, যেমন আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ততা দিয়েছিলেন তাদেরকে যারা ছিলো তাদের আগে। আর প্রতিষ্ঠিত করে দিবেন তাদের জন্য, তাদের (জন্য প্রদত্ত) দ্বীনকে, যা তিনি পছন্দ করেছেন তাদের জন্য। আর তাদেরকে বদলস্বরূপ দিবেন তাদের ভয়-ভীতির পর নিরাপত্তা। তারা আমারই দাসত্ব করবে। তারা শিরক করবে না আমার সাথে কাউকে বা কোনো কিছুকে। আর যে কুফর করবে উহার পর, তারাই অবাধ্য।

৯:৩৯ :: যদি তোমরা (ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে) বের না হও তিনি তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন। আর বদলস্বরূপ আনবেন অন্য এক কওম তোমাদেরকে বাদ দিয়ে। আর তোমরা তাঁর ক্ষতি করতে পারবে না, কিছুমাত্রও। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

১১:৫৭ :: তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি তা-ই, আমি প্রেরিত হয়েছি যা নিয়ে তোমাদের প্রতি। আর স্থলাভিষিক্ত করবেন আমার রব তোমাদেরকে ছাড়া অন্য কওমকে। আর তোমরা তাঁর ক্ষতি করতে পারবে না কিছুমাত্রও। নিশ্চয় আমার রব সবকিছুর উপর তত্ত্বাবধায়ক।

৪৭:৩৮ :: তোমরাই সেসব লোক যাদেরকে আহবান করা হচ্ছে যেন তোমরা ব্যয় কর আল্লাহর পথে, কিন্তু তোমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ কৃপণতা করে। আর যে কৃপণতা করে, প্রকৃতপক্ষে সে কৃপণতা করে তার নিজের সাথে। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে তিনি (তোমাদের) বদলস্বরূপ আনবেন তোমাদেরকে ছাড়া অন্য কওমকে। তারপর তারা হবে না তোমাদের মত।

আলোচনা : ভুল বা মন্দ কর্মের জন্য আল্লাহর প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি হল সাধারণত তার মন্দ ফল প্রাথমিকভাবে সহজে লক্ষ্য করা যায় না এবং বাস্তবে রূপ নিতে কিছুটা সময় লাগে। এই সময়ের ব্যবধানকে অবকাশের সময়কাল বলা যেতে পারে।

যেহেতু একটি জাতির জীবন শতাব্দী ধরে ছড়িয়ে পড়ে (একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে দিন বা বছরের তুলনায়), তাদের অবকাশের সময়ও দীর্ঘ হয়।

একটি অত্যাচারী মানুষ, যারা মানবতাকে শোষণ করে এবং দমন করে এ অবকাশের সময়কালে তাদেরকে উন্নতির দিকে যেতে দেখা যায়।

অবকাশের সময়কাল একটি জাতিকে বাঁচাতে পারে যদি সে নিজেকে সংশোধন করে, অন্যথায় জাতিটি ধ্বংস হয়ে যায়।

এই অবকাশের সময়কাল বলতে পূর্বনির্ধারিত ভাগ্যকে বুঝায় না, বরং তা প্রাকৃতিক আইন দ্বারা পূর্বনির্ধারিত। জুলুমের যে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছলে জালিমের শাস্তি কার্যকর করা সংস্কারপন্থীদেরকে স্থলাভিষিক্ত করার জন্য অপরিহার্য ততক্ষণই সে অবকাশ পেতে পারে, তার বেশি নয়। এই অবকাশের সময়কালে নিজেকে সংশোধন না করলে অবকাশ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তার ধ্বংস সাধিত হয়, তার আগেও নয়, পরেও নয়।

এই যে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত অবকাশের সময়কালের পর একটি জাতিকে তার অন্যায়ের জন্য ধ্বংস করে দেয়া হয়, এটা মানুষের জন্য অবোধগম্য কোনো বিষয় নয়। বরং এটা সুপরিজ্ঞাত কিতাব (১৫:৪) অনুযায়ী হয়- যে বিধান তাদের পক্ষে জানা-বুঝা সম্ভব এবং এটার ঐতিহাসিক ধারাবাহিক প্রমাণ রয়েছে যেটাকে আল্লাহর সুন্নাত বা (চিরন্তন) মূলনীতি বলা হয়েছে এবং তা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব যে, তা অপরিবর্তনীয়ভাবে কার্যকর হয় (৩৫:৪৩)।

যতদিন একটি জাতি সঠিক পথে থাকার কারণে কোনো নেয়ামত দ্বারা ধন্য হওয়ার যোগ্য থাকে ততদিন তাদের নেয়ামত কেড়ে নেয়া হয় না বা এটি তার গৌরব ধরে রাখে। যখন এটি আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করে, তখন তার পতন শুরু হয়। পতন সম্পূর্ণ হওয়ার আগে এটি একটি অবকাশের সময়কাল উপভোগ করে, যার মধ্যে গৌরব ধরে রাখার জন্য নিজেকে সংশোধন করার সুযোগ থাকে।  যদি সে এ সময়কালকে সংশোধনের জন্য কাজে না লাগায় তাহলে এতে তার পাপ বৃদ্ধি পায় এবং পতন চূড়ান্ত হয়। সেই জাতি তখন অন্য একজনের স্থলাভিষিক্ত হয় যারা আল্লাহর পথ অনুসরণ করে আসছে। এভাবেই ইতিহাসের একটি প্রকৃত পর্যায়বৃত্ত তৈরি হয় এবং এটাই ইতিহাসের সঠিক অধ্যয়ন পদ্ধতি। এরি ধারাবাহিকতায় ২৪:৫৫ আয়াতে মুসলিমদেরকে খিলাফাহ প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে।

আবার মু’মিনগণ যদি তাদেরকে যে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের যে নির্দেশ এবং ব্যয়ের নীতিমালা জানানো হয়েছে সেজন্য যথাযথ ভূমিকা পালন না করে, তাহলে তাদের বদলে অন্য কওমকে এজন্য সুযোগ দিবেন, যারা ন্যায়নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের মতো নিষ্ক্রিয় হবে না।

পরিশেষে বলা যায় যে, যে কোনো সভ্যতা বা জাতির উত্থান-পতন নৈতিক আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, ভাগ্য দ্বারা নয়। কোনো জাতি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো নেয়ামত পেলে যতক্ষণ না তারা সেই নেয়ামতের অপব্যবহার করে, ততক্ষণ তাদের থেকে তা কেড়ে নেয়া হয় না। আর কোনো জাতির মধ্যে নৈতিক গুণাবলীর ইতিবাচক পরিবর্তন না হলে তাদের দুর্দশার মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয় না। তাদের প্রতি করুণা প্রদর্শন করে কোনো বিপদ থেকে উদ্ধার করলেও তারা তাদের স্বভাব-দোষে অধ:পতিত অবস্থাতেই থেকে যায়। সুতরাং জাতির প্রকৃত উত্থানের জন্য তার মধ্যে নৈতিক গুণের বিকাশ এবং তার পতনের জন্য তার নৈতিক গুণের অবক্ষয়ই দায়ী।

বিয়ে ও ভাগ্য

ভাগ্যবাদ অনুসারে ধারণা করা হয় যে, কার সাথে কার বিয়ে হবে তা ভাগ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। আল্লাহ যার সাথে যার জোড়া বেঁধে দিয়েছেন বা বিয়ে লিখে দিয়েছেন তার সাথেই তার বিয়ে হবে, অন্যত্র হবে না। ভাগ্যে যার সাথে বিয়ে আছে শত চেষ্টা করেও তা ঠেকানো যাবে না এবং যার সাথে বিয়ে নেই, তার সাথে বিয়ে দেয়া যাবে না। এ বিষয়ে একটি গান রচিত হয়েছে এরূপ : “বিয়ে শাদি খোদার হাতে, খোদার হুকুম নড়ে না; খোদা যদি কলম মারে, সেই কলম আর ফিরে না।” আরো বলা হয় যে, ভালো লোকের স্ত্রী ভালোই হয় আর জেনাকারীর স্ত্রী জেনাকারিনীই হয়, যদিও তার চরিত্র মানুষের জানা থাকে না। এ প্রবন্ধে আমরা এ বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখবো যে, সত্যিই কি বিয়ে-শাদি ভাগ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়, নাকি এতে মানুষের দায়বদ্ধতা আছে?

বিবাহের বিধান সম্পর্কিত কিছু আয়াত

২:২২১ :: আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করবে না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং নিশ্চয় মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর  (তোমাদের নারীদেরকে) মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে করাবে না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর নিশ্চয় একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহবান করে, আর আল্লাহ তাঁর অনুমতিতে তোমাদেরকে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন এবং মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।

২:২৩০ :: অতঃপর যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে এরপরে (অর্থাৎ তৃতীয়বার তালাকের পরে) সে নারী তার জন্য বৈধ হবে না, যতক্ষণ না সে নারী অন্য কাউকে বিয়ে করে এবং সে (অর্থাৎ পরবর্তী স্বামী) তাকে তালাক দেয়। তখন যদি তারা দুজন (অর্থাৎ নারীটি এবং তাকে পূর্বে তালাক দেয়া স্বামী) আল্লাহর সীমাসমূহ প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারবে বলে ধারণা করে তবে তারা পুনরায় বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াতে তাদের দুজনের কোনো গুনাহ হবে না। এগুলো আল্লাহর সীমা। তিনি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন।

২:২৩১ :: যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও (প্রথমবার বা দ্বিতীয়বার) এবং তারা তাদের (ইদ্দাতের) নির্ধারিত শেষ সীমায় পৌঁছে, তখন হয় তাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে রেখে দাও, না হয় ন্যায়সঙ্গতভাবে বিদায় দাও। আর তাদেরকে যাতনা দেয়ার উদ্দেশ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আটকে রেখো না। কেননা এতে বাড়াবাড়ি করা হয়। আর যে এরূপ করে সে অবশ্যই তার নিজ সত্তার প্রতিই জুলুম করে। আর তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে হাসি তামাশার বিষয় হিসাবে গ্রহণ করো না। আর তোমরা স্মরণ রেখো আল্লাহ তোমাদের উপর যে অনুগ্রহ করেছেন তা এবং তিনি কিতাব ও হিকমাত থেকে তোমাদের উপর যা নাজিল করেছেন তা। তিনি তা দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দেন। আর তোমরা আল্লাহ সচেতন হও। আর নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞানী।

২:২৩২ :: আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও তারপর তারা তাদের (ইদ্দাতের) নির্ধারিত শেষ সীমায় পৌঁছে, তখন তোমরা তাদেরকে তাদের (প্রস্তাবিত) স্বামীকে বিবাহ করতে বাধা দিও না, যখন তারা পরস্পরে ন্যায়সঙ্গতভাবে সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হয়। এ উপদেশ তাকে দেয়া হচ্ছে তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে। এটাই তোমাদের জন্য সবচেয়ে পরিশুদ্ধ ও সবচেয়ে পবিত্র নিয়ম। আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না।

২:২৩৫ :: আর তোমরা (বিধবা) নারীদের বিয়ে প্রসঙ্গে তোমাদের কথাবার্তায় যা (যে ইচ্ছা) প্রকাশ করো বা নিজেদের মনে তা গোপন রাখো সে বিষয়ে তোমাদের উপর গুনাহ নেই। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তোমাদের আলোচনায় তাদের বিষয় রাখবে। কিন্তু তোমরা তাদেরকে গোপনে ওয়াদা দিও না। কিন্তু তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের সাথে কথা বলতে পারবে। আর যতক্ষণ না বিধিবদ্ধ বিষয় (অর্থাৎ ইদ্দাত) তার শেষ সীমায় পৌছে ততক্ষণ তোমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত করো না। আর জেনে রাখ যে, তোমাদের মনে কী আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তোমার তাঁর প্রতি সচেতন থেকো। আর জেনে রাখ যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও সহনশীল।

৪:৩ :: আর যদি তোমরা ভয় করো যে, তোমরা ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে বিয়ে করে নাও (ইয়াতীম ছেলেমেয়ে থাকা) নারীদের মধ্য থেকে যে তোমাদের জন্য পছন্দনীয় হয়, দুই-দুই এবং তিন-তিন এবং চার-চার। তবে যদি তোমরা ভয় করো যে, তোমরা আদল (ইনসাফ / সমানাধিকার প্রদান) করতে পারবে না, তাহলে একজনকেই বিয়ে করো অথবা তোমাদের (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডান হাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে এরূপ নারীদেরকে। এটাই তোমরা অবিচার না করার নিকটবর্তী।

৪:২২ :: আর তোমরা বিবাহ করো না নারীদের মধ্য থেকে যাদেরকে বিবাহ করেছে তোমাদের বাপদাদাগণ। যা অতীতে হয়ে গেছে তা ভিন্ন। নিশ্চয় তা হল অশ্লীলতা ও ঘৃণিত বিষয় এবং নিকৃষ্ট পথ।

৪:২৩ :: তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিঝিদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের অভিভাবকত্বে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাকো তবে তোমাদের উপর কোনো পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকে। এবং দুই বোনকে একত্র করা, যা অতীতে হয়ে গেছে তা ভিন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

৫:৫ :: আজ তোমাদের জন্য পরিচ্ছন্ন জিনিসসমূহকে হালাল করা হলো। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং মু’মিনদের মধ্যকার সচ্চরিত্রা নারীদেরকে এবং যাদেরকে তোমাদের পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যকার সচ্চরিত্রা মেয়েদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো; যখন তোমরা তাদেরকে তাদের পারতোষিক (মোহরানা) প্রদান করো, বৈবাহিক দুর্গে সংরক্ষিত হিসেবে, নিছক/সাময়িক যৌনসঙ্গিনী গ্রহণকারী হিসেবে নয় এবং উপপত্নী গ্রহণকারী হিসেবেও নয়। আর যে ব্যক্তি ঈমানের প্রতি কুফর করে, নিশ্চয় তার কর্মসমূহ বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

২৪:৩ :: ব্যভিচারী বিয়ে করবে না ব্যভিচারিনীকে বা মুশরিক নারীকে ছাড়া। আর ব্যভিচারিনীকে বিবাহ করবে না ব্যভিচারী বা মুশরিক পুরুষ ছাড়া। আর এদেরকে মু’মিনদের উপর হারাম (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে।

২৪:২৬ :: দুশ্চরিত্রা নারী দুষ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং দুষ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযোগী। এবং সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযোগী। তারা (অপবাদদাতারা) যা বলে তা থেকে তারা সম্পর্কহীন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।

৬৬:১০ :: আল্লাহ দৃষ্টান্ত পেশ করছেন তাদের জন্য যারা কুফর করেছে নূহের স্ত্রীর ও লূতের স্ত্রীর। তারা দুজনে ছিলো আমাদের বান্দাদের মধ্য থেকে দুজন সৎকর্মশীল বান্দার অধীন। তারপর তারা দুজনই খিয়ানত করেছিলো। সুতরাং কাজে আসে নি তাদের দুজনের জন্য আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচাতে কোনো কিছুই। আর বলা হয়েছিলো, “তোমরা উভয়ে প্রবেশ করো (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশকারীদের সাথে।”

৬৬:১১ :: আর আল্লাহ দৃষ্টান্ত পেশ করছেন তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করেছে ফিরআউনের স্ত্রীর, যখন সে বলেছিলো, “হে আমার রব, আমার জন্য বানান আপনার কাছে জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর আর আমাকে মুক্তি দিন ফিরআউনের ও তার আমলের থেকে। আর আমাকে মুক্তি দিন জালিমদের কওম থেকে।”

২৪:৩২ :: আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও তোমাদের সমাজস্থ দাস-দাসীদের মধ্যকার সৎকর্মশীলদেরকে বিয়ে করাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।

২৪:৩৩ :: আর যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে। আর তোমাদের (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডানহাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবক-সেবিকা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে, তাদের মধ্যে যারা চুক্তিপত্র সন্ধান করে, তাদেরকে চুক্তিপত্রের ব্যবস্থা করে দাও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে বলে জানতে পারো এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তোমরা তাদেরকে দাও। আর তোমাদের যুবতীদেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করো না। যদি তারা বৈবাহিক দুর্গে সংরক্ষিতা হতে চায় (তাহলে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা না করা সঙ্গত নয়)। (তাদেরকে পতিতা হতে বাধ্য করো না) পার্থিব জীবনের স্বার্থ তালাশের জন্য। আর যাদেরকে (যে যুবতীদেরকে) বাধ্য করা হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে (সেই যুবতীদেরকে) বাধ্য করার পর (সেই যুবতীদের প্রতি) ক্ষমাশীল, দয়ালু।

আলোচনা : উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিয়ের বিষয়ে ভাগ্যের যে কথা বলা হয় কুরআনে তার সমর্থন নেই, বরং তা কুরআনের শিক্ষা ও বাস্তবতার বিপরীত। যদি ভাগ্যে যার সাথে বিয়ে লিখে দেয়া হয়েছে তার সাথেই বিয়ে হতো, তাহলে বিয়ে সম্পর্কিত বিধি-বিধান দেয়ার প্রয়োজন হতো না বা এরূপ বিধি-বিধান অর্থহীন বলে সাব্যস্ত হতো।

কুরআন-নির্দেশিত একটি নীতি হলো- “দুশ্চরিত্রা নারী দুষ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং দুষ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযোগী। এবং সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযোগী।” এ বিষয়টিকে অনেকে অপব্যাখ্যা করে যে, একজন সচ্চরিত্র পুরুষের স্ত্রী সচ্চরিত্রা হয়ে থাকে এবং একজন দুশ্চরিত্র পুরুষের স্ত্রী দুশ্চরিত্রা হয়ে থাকে, যদিও তার স্বভাব সম্পর্কে অন্যদের জানা না থাকে। কিন্তু কুরআনে থাকা উদাহরণে আমরা দেখতে পাই যে, কোনো কোনো নবীর স্ত্রীও মন্দ ছিলো এবং ফেরাউনের মতো মন্দ লোকের স্ত্রীও অত্যন্ত ভালো ছিলো। সুতরাং “ভালো পুরুষের জন্য ভালো মহিলা উপযোগী আর মন্দ পুরুষের জন্য মন্দ মহিলা উপযোগী”- এই তথ্যটির মাধ্যমে বুঝায় যে, একজন ভালো নারীকে বিয়ে করার জন্য প্রকৃত নৈতিক অধিকার সেই পুরুষেরই আছে যে নিজে ভালো পুরুষ। আর একজন মন্দ পুরুষ কোনো ভালো নারীকে বিয়ে করার নৈতিক অধিকার রাখে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাস্তবে এমনটি হওয়া সম্ভব যে, কোনো ভালো পুরুষের স্ত্রী মন্দ এবং কোনো মন্দ পুরুষের স্ত্রী ভালো। কুরআনে বর্ণিত নীতিটি বিবেকসঙ্গত এবং তা নারী-পুরুষ সবাইকে সচ্চরিত্র অবলম্বনের প্রেরণাদায়ক। অন্যদিকে ভাগ্যবাদ সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক, অবাস্তব ও অনর্থক।

রিজিক্বের তাক্বদীর

এ অধ্যায়ে আল্লাহ রিজিক্বদাতা হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যের অভাব ঘটা এবং আল্লাহ দয়াময় ও সর্বশক্তিমান হওয়া সত্ত্বেও জালেমরা জুলুম করতে পারার কারণ বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হবে। সেই সাথে কুরআনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক ধারণায়নের চেষ্টা করা হবে।

প্রচলিত ভাগ্যবাদে রিজিক্বের ধারণা

ভাগ্যবাদ অনুযায়ী বলা হয় যে, যেহেতু আল্লাহ রিজিক্বদাতা এবং প্রত্যেকের জন্য রিজিক্ব প্রদান করা আল্লাহর দায়িত্ব; তাই আল্লাহ যার ভাগ্যে যে রিজিক্ব রেখেছেন, সে সেই রিজিক্ব পাবেই। কারো ভাগ্যে যতটুকু রিজিক্ব ঠিক করে দেয়া হয়েছে কেউ তার থেকে এক দানা কম খেয়ে মরবে না এবং তা ভোগ করার পর আর বাঁচবে না। যদি থাকে নসীবে, আপনা-আপনি আসিবে। অথবা যার রিজিক্ব যেখানে লেখা আছে, সে যে কোনো অসিলায় সেখানে যাবেই এবং সেই রিজিক্ব ভোগ করবেই। এ কথা জানার পর আর আক্ষেপ ও উদ্বিগ্নতার কিছু নেই এবং প্রশান্তি অনুভব করা উচিত। একজনের রিজিক্ব অন্যজন ভোগ করতে পারবে না।

যেহেতু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কম রিজিক্ব দিয়ে থাকেন এবং যাকে ইচ্ছা বেশি রিজিক্ব দিয়ে থাকেন। তাই, আল্লাহ সম্পদ বা দারিদ্র্য যে অবস্থায় রাখেন তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা উচিত। অর্থাৎ একজন ধনী তার সম্পদের উপর এবং একজন দরিদ্র তার দারিদ্র্যের উপর সন্তুষ্ট থাকা উচিত।

আরো মারাত্মক কথা হলো, যখন বলা হয়- আল্লাহ দারিদ্র্য পছন্দ করেন। পার্থিব ধন-সম্পদ মৃত মাংসের মতো, যা কুকুরের পছন্দ। সুঁচের ছিদ্র দিয়ে উটের প্রবেশ অসম্ভব আর ধনীদের পক্ষে স্বর্গের রাজ্যে প্রবেশ দুঃসাধ্য। বলা হয় যে, আল্লাহর নবী-রসূল এবং অলি-আওলিয়াগণের প্রায় সবাই ছিলেন দরিদ্র। আরো বলা হয়, নবী নাকি বলেছেন, দারিদ্র্য আমার গর্ব। একটি গল্প প্রচলিত আছে যে, জনৈক বুজুর্গ ব্যক্তির কাছে তার কোনো অনুসারী যখন দারিদ্র্যের জন্য হতাশা ব্যক্ত করেছে, তখন তিনি তাকে একটি পুকুরে নিয়ে যান এবং দেখান যে, জলপান করা মেষশাবকগুলি নাক ডাকছিলো আর তৃষ্ণার্তগুলো মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিলো। এটা দেখিয়ে তিনি জানালেন যে, ধনীরা আল্লাহর প্রতি উদাসীন হয়ে যায় আর দরিদ্ররা তাঁর সাথে যোগাযোগ রাখে। এটাই সম্পদ ও দারিদ্র্যের অন্যতম পার্থক্য। এটা দেখে ঐ অনুসারী তার দারিদ্র্যের উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেলো।

বস্তুত এ ধরনের গল্পগুলো ধর্মীয় গল্প হিসেবে জনপ্রিয় করা হয়, যেন দরিদ্রদেরকে তাদের অধিকার এবং তাদের বিরুদ্ধে ধনীদের শোষণ-অবিচারের বিষয়ে অসচেতন করে রাখা যায়।

কুরআনের জীবিকার বিষয়ে ব্যবহৃত শব্দাবলি ও আয়াতসমূহ

কুরআনে জীবিকার বিষয়ে ‘রিজিক্ব’ এবং সেই সাথে ‘ফদল’, ‘মায়িশাহ’ ও ‘মাতআ’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। নিম্নে জীবিকার বিষয়ে এ শব্দাবলি ধারণকৃত বিভিন্ন আয়াত উপস্থাপন করা হলো, যেন এ প্রসঙ্গে কুরআনের মৌলিক বক্তব্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করা যেতে পারে।

১। রিজিক্ব বা জীবিকা

২:২-৩ :: ঐ কিতাব- যার মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই- স্রষ্টা-সচেতনদের জন্য পথনির্দেশ। যারা বিশ্বাস করে অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি। আর সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যা আমরা তাদেরকে রিজিক্ব দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে (অর্থাৎ নিজেদের প্রয়োজনে ভোগ ও বিনিময় করার পাশাপাশি যারা রিজিক্ব কম পেয়েছে তাদেরকেও রিজিক্ব দেয় বা তাদের সাথে রিজিক্ব ভাগ করে নেয়)।

২:২২ :: যিনি স্থাপন করেছেন তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানাস্বরূপ আর আকাশকে সামিয়ানাস্বরূপ। আর বর্ষণ করেছেন আকাশ থেকে পানি। তারপর বের করেছেন তা (পানি) দ্বারা ফলফলাদি তোমাদের জন্য রিজিক্বস্বরূপ। সুতরাং স্থাপন করো না আল্লাহর জন্য কোনো সমকক্ষ, এ সত্ত্বেও যে, তোমরা (প্রকৃত বিষয়) জানো।

২:২১২ :: যারা কুফরী করেছে দুনিয়ার জীবনকে তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। আর তারা মুমিনদের নিয়ে উপহাস করে। আর যারা স্রষ্টা-সচেতনতা অবলম্বন করেছে, তারা কিয়ামত দিবসে তাদের উপরে থাকবে। আর আল্লাহ রিজিক্ব দেন যাকে ইচ্ছা করেন, হিসাব ছাড়া  (অর্থাৎ সে যেই উপায়ে রিজিক্ব প্রাপ্তির হিসাব করে নি)। (অর্থাৎ মু’মিনরা শেষ পর্যন্ত প্রাথমিক দিনগুলোর মতো অর্থনৈতিক সংকটে থাকবে না)।

২:২৩৩ :: আর মায়েরা দুধপান করাবে তাদের (নিজেদের) সন্তানদেরকে পূর্ণ দুবছর, ঐ পিতার জন্য যে ইচ্ছা করেছে যে, তার সন্তান দুধপানের পূর্ণ মেয়াদ দুধপান করুক। এ অবস্থায় যে পুরুষের শিশু জন্ম নিয়েছে তার দায়িত্ব হচ্ছে তাদেরকে (সন্তানদের মায়েদেরকে) রিজিক্ব (জীবিকা) ও পোষাকাদি দিতে থাকবে ন্যায়সঙ্গতভাবে। আর কারো প্রতি বোঝা চাপানো যাবে না তার সামর্থ্য ব্যতীত। ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না মাকে এ জন্য যে, সন্তান তার আর যে পুরুষের শিশু জন্ম নিয়েছে তাকে এ জন্য যে, সন্তান তার। আর দুধদানকারী মায়ের এ অধিকার (সন্তানকে দুধপান করানোর পূর্ণ মেয়াদ জীবিকা ও পোশাকাদি প্রাপ্তির অধিকার) যেমন সন্তানের পিতার উপর রয়েছে তেমনি (ইতোমধ্যে তার মৃত্যু ঘটলে) তার ওয়ারিসদের উপরও রয়েছে সমান পরিমাণে। তারপর উভয়পক্ষ যদি (নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই) সন্তানকে দুধ ছাড়াতে ইচ্ছা করে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে ও পরামর্শক্রমে, তাহলে উভয়পক্ষের কারো গুনাহ নেই। আর যদি তোমরা ইচ্ছা করো যে, তোমরা দুধপান করাবে (কোনো সেবিকা মা দিয়ে) তোমাদের সন্তানদেরকে, তাহলে তোমাদের গুনাহ নেই, যখন তোমরা (সেই সন্তানের) নিরাপত্তা নিশ্চিত করো যাকে (যে সন্তানকে) তোমরা (অন্যের হাতে) অর্পন করেছো, ন্যায়সঙ্গতভাবে (খরচাদি দেয়ার মাধ্যমে)। আর আল্লাহকে ভয় করো আর জেনে রাখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ তার দ্রষ্টা, যা তোমরা করো।

২:২৫৪ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, যা আমরা তোমাদেরকে রিজিক্ব দিয়েছি তা থেকে তোমরা ব্যয় করো, সেই দিন আসার পূর্বে যেদিন কোনো বেচাকেনা হবে না আর কোনো বন্ধুত্ব বজায় থাকবে না আর কোনো সুপারিশ চলবে না। আর কাফিরগণই জালিম।

৩:২৭ :: আপনি (কোনো ঋতুতে) প্রবেশ করান রাতকে দিনের মধ্যে (এভাবে দিনকে বর্ধিত করে দেন)। আর আপনি (কোনো ঋতুতে) প্রবেশ করান দিনকে রাতের মধ্যে (এভাবে রাতকে বর্ধিত করে দেন)। আর আপনি বের করেন জীবিতকে মৃত থেকে। আর আপনি বের করেন মৃতকে জীবিত থেকে। আর আপনি রিজিক্ব দেন যাকে আপনি ইচ্ছা করেন, হিসাব ছাড়া (অর্থাৎ সে যেই উপায়ে রিজিক্ব প্রাপ্তির হিসাব করে নি)।

৩:৩৭ :: তারপর তাকে (মারইয়ামকে) কবুল করেছেন তার প্রতিপালক (আল্লাহ), উত্তম কবুলরূপে। আর তাকে গড়ে নিয়েছেন উত্তম গড়নে। আর তার জন্য তত্ত্বাবধায়ক করে দিয়েছেন যাকারিয়্যাকে। যখনই প্রবেশ করতো তার কাছে যাকারিয়্যা ব্যক্তিগত কক্ষে, তখন সে পেতো তার কাছ বিভিন্ন রিজিক্ব। (একদা) সে (যাকারিয়্যা) বললো, “হে মারইয়াম, কোথা থেকে আসে তোমার জন্য এসব রিজিক্ব?” (তখন) সে (মারইয়াম) বললো, “তা আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে।” নিশ্চয় আল্লাহ রিজিক্ব দেন যাকে ইচ্ছা করেন, হিসাব ছাড়া (অর্থাৎ সে যেই উপায়ে রিজিক্ব প্রাপ্তির হিসাব করে নি)।

৪:৫ :: আর তোমরা তুলে দিও না নির্বোধদের হাতে তোমাদের মালসম্পদ যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য জীবনকে প্রতিষ্ঠিত রাখার উপকরন হিসাবে। কিন্তু সেটার মাধ্যমে তোমরা তাদেরকে রিজিক্ব দাও এবং তাদেরকে পোশাকাদি দাও। আর তাদের উদ্দেশ্যে বলো ন্যায়সঙ্গত কথা।

৪:৮ :: আর যখন উপস্থিত হয় সম্পদ বন্টনের সময় (উত্তরাধিকারী নয় এমন) আত্মীয়-স্বজন আর ইয়াতীম ছেলেমেয়ে আর মিসকীন, তখন (প্রথমে) তা থেকে কিছুটা তাদেরকে রিজিক্ব দাও। আর তাদের উদ্দেশ্যে বলো ন্যায়সঙ্গত কথা।

৪:৩৯ :: আর কী হতো তাদের উপর! যদি তারা বিশ্বাস করতো আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি। আর তারা ব্যয় করতো তা থেকে যা আল্লাহ তাদেরকে রিজিক্বস্বরূপ দিয়েছেন। আর আল্লাহ তাদের সম্পর্কে জ্ঞাত।

৬:১৪০ :: নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা হত্যা করেছে তাদের সন্তানদেরকে বোকামীবশত: (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান না থাকার কারণে; আর হারাম (অবৈধ) করেছে যা আল্লাহ তাদেরকে রিজিক্বস্বরূপ দিয়েছেন, মিথ্যা আরোপ করে আল্লাহর উপর। নিশ্চয় তারা বিভ্রান্ত হয়েছে আর তারা ছিলো না হিদায়াতপ্রাপ্ত।

৬:১৫১ :: বলো, “তোমরা আসো আমি পাঠ করবো, কী হারাম করেছেন তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের উপর। তা হচ্ছে, তোমরা শরিক করো না তাঁর সাথে কাউকেই, আর পিতামাতার প্রতি উত্তম আচরণ করো, আর তোমরা হত্যা করো না তোমাদের সন্তানদেরকে দরিদ্রতার ভয়ে। আমরাই তোমাদেরকে রিজিক্ব দিয়ে থাকি আর তাদেরকেও দেবো। তোমরা কাছেও যাবে না অশ্লীল কাজের, উহা প্রকাশ্য হোক আর গোপন হোক। আর কোনো ব্যক্তিসত্তাকে হত্যা করো না যা আল্লাহ হারাম করেছেন, সত্য-সঙ্গত কারণ ও ধরন (বৈধতা) ছাড়া। তিনি তোমাদেরকে এই নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতে পারো।

৭:৩২ :: বলো, “কে হারাম (অবৈধ) করেছে আল্লাহ প্রদত্ত শোভা-সৌন্দর্যের জিনিসসমূহকে যা তিনি বাহির করেছেন তাঁর বান্দাদের জন্য, আর রিজিক্বস্বরূপ প্রদত্ত পবিত্র জিনিসসমূহকে?” বলো, “ইহা (সৌন্দর্যের ও জীবিকার উপকরণসমূহ) তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করেছে পার্থিব জীবনে, আর তা (তাদের জন্যই) খাঁটিভাবে কিয়ামাত দিবসে। এভাবে আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করি আয়াতসমূহকে, সেই কাওমের জন্য যারা জ্ঞান অজর্ন করে।

৮:২-৩ :: নিশ্চয় মু’মিন তো তারাই যারা এমন যে, যখন আল্লাহর স্মরণ করা হয়, তখন তাদের কলবসমূহ কেঁপে উঠে। আর যখন পাঠ করা হয় তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ, তখন তাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়। আর তাদের প্রতিপালকের উপরই তারা ভরসা করে। যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যা আমরা তাদেরকে রিজিক্ব দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।

১০:৩১ :: বলো, “কে তোমাদেরকে রিজিক্ব দেন আকাশ ও পৃথিবী থেকে? অথবা কে আধিপত্য রাখেন শ্রবণশক্তির উপর আর দৃষ্টিশক্তির উপর? আর কে বের করেন জীবিতকে মৃত থেকে আর বের করেন মৃতকে জীবিত থেকে? আর কে (বিশ্বব্যবস্থার) ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করছেন?” তাহলে, তারা শীঘ্রই বলবে, ‘আল্লাহ’। তারপর বলো, “তবুও কি তোমরা স্রষ্টা-সচেতনতা অবলম্বন করবে না?”

১০:৫৯ :: বলো, “তোমরা কি ভেবে দেখেছো উহার ব্যাপারে যা নাজিল (সৃষ্টি) করেছেন আল্লাহ তোমাদের জন্য রিজিক্বস্বরূপ। তারপর তোমরা বানিয়েছো তার মধ্য থেকে কিছুকে হারাম (অবৈধ) আর কিছুকে হালাল (বৈধ)?” বলো, “আল্লাহ কি অনুমতি দিয়েছেন তোমাদেরকে নাকি আল্লাহর ব্যাপারে তোমরা মিথ্যা রচনা করছো?”

১১:৬ :: আর কোন জীব নেই পৃথিবীতে, এছাড়া যে, আল্লাহরই উপর আছে উহার রিজিক্বের দায়িত্ব। আর তিনি জানেন তার চূড়ান্ত অবস্থান আর তার অচূড়ান্ত অবস্থান। সবই স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ।

১৩:২২ :: আর যারা সবর করে তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টির অন্বেষণে। আর সালাত প্রতিষ্ঠা করে। আর যা আমরা তাদেরকে রিজিক্ব দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে, গোপনে ও প্রকাশ্যে। আর দূর করে ভালো দিয়ে মন্দকে। তারাই ঐসব লোক যাদের জন্য আছে আখিরাতের উৎকৃষ্ট আবাস।

১৩:২৬ :: আল্লাহ প্রচুর করে দেন রিজিক্ব যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। আর তারা আনন্দিত হয়েছে পার্থিব জীবন নিয়ে। অথচ পার্থিব জীবন কিছুই নয় আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ-সামগ্রী ছাড়া।

১৪:৩১ :: বলো, আমার সেই বান্দাদেরকে যারা বিশ্বাস করেছে, যেন তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যেন তারা যা আমরা তাদেরকে রিজিক্ব দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে, গোপনে ও প্রকাশ্যে, সেই দিন আসার পূর্বে যাতে কোনো বেচাকেনা চলবে না আর কোনো বন্ধুত্বও চলবে না’।

১৪:৩২ :: তিনিই আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী, আর নাযিল করেছেন আকাশ থেকে বৃষ্টির পানি, তারপর বের করেছেন তা দ্বারা ফলফলাদি তোমাদের জন্য রিজিক্বস্বরূপ, আর নিয়োজিত করেছেন তোমাদের জন্য নৌযান, যেন তা প্রবাহিত হয়/ চলাচল করে সাগরে তাঁর আদেশক্রমে, আর নিয়োজিত করেছেন তোমাদের জন্য নদনদী।

১৫:১৯-২২ :: আর পৃথিবীকে আমরা বিস্তৃত করেছি আর আমরা স্থাপন করেছি তাতে পাহাড়সমূহ আর আমরা উদ্গত করেছি তাতে সবকিছু পরিমাপকৃতভাবে। আর আমরা সৃষ্টি করেছি তোমাদের জন্য তাতে জীবিকার উপকরণসমূহ আর তাদের প্রত্যেকের জন্যও তোমরা নও যার জন্য রিজিক্বদাতা। আর কোনো কিছুই নেই এছাড়া যে, আমাদেরই কাছে আছে তার ধনভান্ডার। আর আমরা তা নাযিল করি না সুপরিজ্ঞাত বা জানা-বোঝার উপযোগী নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন (natural law) ছাড়া। আর আমরা প্রেরণ/ প্রবাহিত করি বাতাস যা সুফলদায়ক তারপর আমরা বর্ষণ করি আকাশ থেকে বৃষ্টির পানি, তারপর আমরা তা তোমাদেরকে পান করাই। আর তোমরা নও উহার ভান্ডার রক্ষক।

[প্রাসঙ্গিক আলোচনা : পৃথিবীতে খাদ্য উৎপাদনের অকল্পনীয় সম্ভাবনা সত্ত্বেও একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রাকৃতিক আইন দ্বারা একটি সীমিত পরিমাণ পাওয়া যেতে পারে। সুতরাং মানুষকে পরিকল্পিত জীবন যাপন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। প্রসঙ্গত লক্ষ্যণীয় যে, প্রাকৃতিক আইন আবিষ্কার ও প্রয়োগের জন্য উন্মুক্ত, তাই সেটাকে জানা-বোঝার উপযোগী পরিমাপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।]

১৬:৭১ :: আর আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তোমাদের কাউকে অন্য কারো উপর রিজিক্বের ক্ষেত্রে। তারপর তারা হয় না যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, (হয় না) তাদের রিজিক্বের প্রত্যাবর্তনকারী, তাদের কাছে যারা ‘মা মালাকাত আইমানুহুম’ [তাদের (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডান হাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে]; যেন তারা (মা মালাকাত আইমানুহুম) সে ক্ষেত্রে তাদের সমান হয়ে যেতে পারে। তবে কি আল্লাহর নিয়ামাতকে তারা অস্বীকার করছে?

১৬:৭৩ :: আর তারা কি দাসত্ব করবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো, যে ক্ষমতা রাখে না তাদের জন্য রিজিক্ব দিতে আকাশমন্ডলী থেকে ও পৃথিবী থেকে, কিছুমাত্রও; আর (এমনকি) তারা কিছুই করতে সক্ষম নয়?

১৬:৭৫ :: আল্লাহ পেশ করছেন একজন দাসের দৃষ্টান্ত, সে অন্যের মালিকানাধীন, সে ক্ষমতা রাখে না কোনো কিছুর উপর; আর এমন এক ব্যক্তির (দৃষ্টান্ত) যাকে আমরা রিজিক্ব দিয়েছি আমাদের পক্ষ থেকে, উত্তম রিজিক্ব, তারপর সে ব্যয় করেতাথেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে। এ দুজন কি সমান হতে পারে? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। বরং তাদের অধিকাংশই জ্ঞান রাখে না।

১৬:১১২ :: আর আল্লাহ উপস্থাপন করছেন একটি জনপদের দৃষ্টান্ত, যা ছিলো নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত। যেখানে আসতো উহার রিজিক্ব স্বাচ্ছন্দ্যে প্রত্যেক স্থান থেকে। তারপর উহা (জনপদবাসী) অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে আল্লাহর নিয়ামাতের প্রতি। সুতরাং আল্লাহ উহাকে (ঐ জনপদবাসীদেরকে) স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন ক্ষুধা ও ভয়ের আচ্ছাদনের, তারা যা করতো তার কারণে।

১৭:২৬-৩০ :: আর দিয়ে দাও আত্মীয়-স্বজনকে তার অধিকার আর মিসকীনদেরকেও আর ছিন্নমূলদেরকেও। আর অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানদের ভাই। আর শয়তান হলো তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ। আর যদি তোমরা পাশ কাটিয়ে থাকতে চাও তাদের থেকে (আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও ইবনে সাবীলকে দান করা থেকে) এখনো তুমি তোমার রবের অনুগ্রহ (স্বচ্ছলতা) তালাশ করতে থাকা অবস্থায় আছো বলে, যা তোমরা আশা করছো; তাহলে তাদেরকে বলো সহজ/ কোমল/ বিনয়সূচক কথা। আর তুমি রেখো না তোমার হাতকে তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ করে (দান করার ক্ষেত্রে কৃপণতা করো না) আর উহাকে প্রসারিত করো না, সম্পূর্ণ প্রসারিত (দান করার ক্ষেত্রে যা আছে সবই দিয়ে দিও না)। কারণ তাহলে তুমি বসে পড়বে নিন্দিত অবস্থায় ও অক্ষম অবস্থায়। নিশ্চয় তোমার রব প্রশস্ত করে দেন রিজিক্বকে, যাকে তিনি ইচ্ছা করেন, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে অবগত ও দৃষ্টিবান।

১৭:৩১ :: তোমরা হত্যা করো না তোমাদের সন্তানদেরকে, দরিদ্রতার ভয়ে। আমরা তাদেরকেও রিজিক্ব দেবো আর তোমাদেরকেও (রিজিক্ব দেবো)। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ।

২২:৩৫ :: (বিনীত তারাই) যারা এমন যে, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন কেঁপে উঠে তাদের কলবসমূহ। আর যারা উহার উপর সবরকারী হয় যা (যে বিপদাপদ) তাদের উপর আপতিত হয়, আর সালাত কায়েমকারী হয় আর যা আমরা তাদেরকে রিজিক্বস্বরূপ দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।

২২:৫০ :: তারপর যারা বিশ্বাস করে ও আমলে সালেহ (সৎকর্ম) করে, তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিজিক্ব।

২৭:৬৪ :: কে তিনি, যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর উহার পুনরাবৃত্তি ঘটান; আর কে তোমাদেরকে রিজিক্ব দেন আকাশ ও পৃথিবী থেকে? আল্লাহর সাথে কোনো ইলাহ আছে কি? বলো, “নিয়ে আসো তোমাদের যৌক্তিক প্রমাণ, যদি তোমরা হও সত্যবাদী।”

২৮:৫৪ :: (পূর্বের কিতাবের যেসব ধারক-বাহক কুরআনের প্রতি ঈমান এনেছে) তাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেয়া হবে। এ কারণে যে, তারা সবর করেছে এবং তারা ভালো দিয়ে মন্দকে দূর করে এবং আমরা তাদেরকে যে রিজিক্ব দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।

২৮:৮২ :: আর তারা (নিজেদের) প্রভাত করলো যারা আকাঙ্ক্ষা করেছিলো তার অবস্থান (সমমর্যাদা) গতকালও, তারা (এ কথা) বলতে বলতে (যে,) “বড়ই আফসোস, আল্লাহ রিজিক্বকে সম্প্রসারিত করে দেন যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। যদি না আল্লাহ অনুগ্রহ করতেন আমাদের উপর, তাহলে তিনি ধ্বসিয়ে দিতেন আমাদেরকেও। আর উহার ব্যাপারে বড়ই আফসোস (যা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে,) কাফেররা সফল হয় না।”

২৯:১৭ :: (ইবরাহীম বলেছিলো), নিশ্চয় তোমরা উপাসনা করছো আল্লাহকে বাদ দিয়ে (একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত বাদ দিয়ে) মূর্তিসমূহের (উপাসনা)। আর তোমরা সৃষ্টি করছো মনগড়া বিষয়। নিশ্চয় যাদের তোমরা উপাসনা করছো আল্লাহকে বাদ দিয়ে (একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত বাদ দিয়ে), তারা কোনো ক্ষমতা রাখে না তোমাদের জন্য রিজিক্বের ব্যবস্থা করার। সুতরাং তোমরা তালাশ করো আল্লাহর কাছে রিজিক্ব, আর তোমরা তাঁরই দাসত্ব করো আর তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তাঁরই জন্য। তাঁরই দিকে তোমরা ফিরে যাবে।

২৯:৬০ :: আর কত জীব-জন্তু আছে যে বহন করে না তার রিজিক্ব। আল্লাহই তাকে রিজিক্ব দেন আর তোমাদেরকেও। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

২৯:৬২ :: আল্লাহ প্রশস্ত করেন রিজিক্বকে তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন আর তার জন্য তা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করেন (যখন ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে পরিজ্ঞাত।

৩০:২৮ :: তিনি পেশ করছেন তোমাদের জন্য একটি মাছাল/ দৃষ্টান্ত তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে। তোমাদের জন্য আছে কি ‘মা মালাকাত আইমানুকুম’ [তোমাদের (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডান হাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে তাদের] থেকে কেউ উহাতে তোমাদের অংশীদার যা আমরা তোমাদের রিজিক্বস্বরূপ দিয়েছি, যাতে তোমরা উহার ক্ষেত্রে সমান (অংশীদার হয়ে থাকো)? তোমরা কি তাদেরকে ভয় করো যেমন তোমরা ভয় করে থাকো তোমাদের নিজেদেরকে (তোমাদের একে অপরকে)? এরূপে আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করি আয়াতসমূহ, সেই কওমের জন্য যারা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি/ সাধারণ জ্ঞান/ common sense প্রয়োগ করে।

৩০:৩৬-৩৮ :: আর যখন আমরা মানুষকে রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই, তখন সে উহা পেয়ে আনন্দিত হয়। আর যদি তাদের কাছে পৌঁছে কোনো মন্দ অবস্থা উহার কারণে যা আগেই করেছে তাদের হাতসমূহ (তাদের কৃতকর্মের কারণে), তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে। তারা কি (ভেবে) দেখে নি যে, আল্লাহ প্রশস্ত করে দেন রিজিক্বকে যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় উহাতে আছে নিদর্শনসমূহ সেই কওমের জন্য যারা বিশ্বাস করে। সুতরাং দিয়ে দাও আত্মীয়-স্বজনকে তার অধিকার আর মিসকীনকেও আর ছিন্নমূলদেরকেও। উহাই তাদের জন্য উত্তম যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে ইচ্ছা করে। আর উহারাই সফলতা লাভকারী।

৩০:৪০ :: আল্লাহই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তারপর তোমাদেরকে রিজিক্ব দিয়েছেন তারপর তোমাদেরকে মৃত্যু দিবেন তারপর তোমাদেরকে জীবিত করবেন। তোমাদের (কল্পিত) শরীকদের মধ্য থেকে কেউ আছে কি যে করতে পারে এসবের কোনো কিছু? তিনি পবিত্র আর তারা যে শিরক করে তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।

৩২:১৬ :: (প্রায়ই) আলাদা থাকে তাদের (আয়াতে বিশ্বাসীদের) পিঠসমূহ তাদের শয্যাসমূহ থেকে। তারা ডাকে তাদের প্রতিপালককে ভয় ও আশার সাথে। আর যা আমরা তাদেরকে রিজিক্ব দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।

৩৪:৪ :: যেন তিনি তাদেরকে (ভালো) প্রতিফল দেন যারা বিশ্বাস করেছে ও আমলে সালেহ (সৎকর্ম) করেছে, তারাই এমন লোক যাদের জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিজিক্ব।

৩৪:২৪ :: বলো, “কে তোমাদেরকে রিজিক্ব দেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী থেকে?” বলো, ‘আল্লাহ’। (আরো বলো,) “আর নিশ্চয় আমরা অথবা তোমরা হিদায়াতের উপর থাকা হচ্ছে অথবা স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে থাকা হচ্ছে।”

৩৪:৩৬ :: বলো, “নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রশস্ত করে দেন রিজিক্বকে যার জন্য তিনি (প্রশস্ত করে দেয়ার) ইচ্ছা করেন, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। কিন্তু অধিকাংশ জ্ঞান রাখে না’।

৩৪:৩৯ :: বলো, “নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রশস্ত করে দেন রিজিক্বকে যার জন্য তিনি (প্রশস্ত করে দেয়ার) ইচ্ছা করেন, তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে; আর (কখনো) তিনি তার জন্য উহাকে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন। আর যা তোমরা (পরার্থে/যথানিয়মে) ব্যয় করো কোনো কিছু থেকে, তখন তিনিই উহার স্থলে আরো (অধিক ফিরিয়ে) দেন। আর তিনি উত্তম রিজিক্বদাতা।

৩৫:৩ :: হে মানুষ, তোমরা স্মরণ করো তোমাদের উপর দেয়া আল্লাহর নেয়ামতসমূহকে। কোন স্রষ্টা আছে কি, আল্লাহ ছাড়া? তিনি তোমাদেরকে রিজিক্ব দেন আকাশ ও পৃথিবী থেকে। কোনো ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। সুতরাং তোমাদেরকে কোথা থেকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে?

৩৫:২৯ :: নিশ্চয় যারা পাঠ করে আল্লাহর কিতাব আর সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর ব্যয় করে তা থেকে যা আমরা তাদেরকে রিজিক্বস্বরূপ দিয়েছি, গোপনে ও প্রকাশ্যে; তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসায়ের যাতে কখনো লোকসান হবে না।

৩৬:৪৭ :: আর যখন তাদেরকে বলা হয়, “তোমরা ব্যয় করো তা থেকে যা আল্লাহ তোমাদেরকে রিজিক্বস্বরূপ দিয়েছেন”, তখন কাফিররা মু’মিনদেরকে বলে, “আমরা কি খাওয়াবো তাকে যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে যাকে তিনি খাওয়াতেন? তোমরা নেই স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে ছাড়া।”

৩৯:৪৯-৫২ :: বস্তুত যখন মানুষকে স্পর্শ করে কোন বিপদ-আপদ, তখন সে আমাদেরকে ডাকে। তারপর যখন আমরা তাকে দান করি আমাদের পক্ষ থেকে নেয়ামত/অনুগ্রহ, তখন সে বলে, ‘বস্তুত উহা আমাকে দেয়া হয়েছে আমার জ্ঞানের কারণে’। বরং উহা পরীক্ষা। কিন্তু তাদের অধিকাংশই প্রকৃত জ্ঞান রাখে না। নিশ্চয় তারাও উহা বলেছিলো যারা ছিলো তাদের আগে।। তারপর ফলপ্রসূ হয়নি তাদের জন্য যা তারা উপার্জন করেছিলো। তারপর তাদের উপর পড়েছিলো উহার মন্দ পরিণতি যা (যে পাপ) তারা উপার্জন করেছিলো। আর যারা যুলুম করেছে এদের মধ্য থেকে, শীঘ্রই তাদের উপরও এসে পড়বে উহার মন্দ পরিণতি যা (যে পাপ) তারা উপার্জন করেছিলো। আর তারা হতে পারবে না উহার প্রতিরোধকারী। তারা কি জানে নি যে, আল্লাহ প্রশস্ত করে দেন রিজিক্বকে যার জন্য তিনি (প্রশস্ত করে দেয়ার) ইচ্ছা করেন, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় তাতে আছে নিদর্শন সেই কওমের জন্য যারা বিশ্বাস করে।

৪০:১৩ :: তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে দেখান তাঁর নিদর্শনসমূহ। আর তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে রিজিক্ব নাজিল করেন। আর কেউ উপদেশ স্মরণ রাখে না, যে (আল্লাহর) অভিমুখী হয় সে ছাড়া।

৪২:১২ :: তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিসমূহ। তিনি প্রশস্ত করে দেন রিজিক্ব, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় তিনি সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞানী।

৪২:২৭-২৮ :: আর যদি আল্লাহ প্রচুর পরিমাণে রিযিক দিতেন তাঁর সব বান্দাদেরকে, তাহলে তারা বিদ্রোহ করতো পৃথিবীতে। কিন্তু তিনি নাযিল করেন নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী, যা তিনি ইচ্ছা করেন (তদনুসারে)। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি অবগত ও দৃষ্টিবান। আর তিনিই সেই সত্তা যিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন লোকেরা নিরাশ হওয়ার পরে। আর তিনি বিস্তার করেন তাঁর রহমত। আর তিনিই অভিভাবক ও প্রশংসিত।

৪৫:৫ :: আর দিন ও রাতের আবর্তনের মধ্যে আর যা আল্লাহ বর্ষণ করেছেন আকাশ থেকে রিযিকস্বরূপ (অর্থাৎ বৃষ্টির পানি), তারপর জীবিত করেন তা দ্বারা জমিনকে উহার মৃত্যুর/ শুষ্কতার পর, আর বায়ু প্রবাহে নিদর্শনসমূহ আছে সেই কওমের জন্য যারা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি/ সাধারণ জ্ঞান (common sense) প্রয়োগ করে।

৫০:৯-১১ :: আর আমরা বর্ষণ করেছি আকাশ থেকে বরকতময় পানি। তারপর আমরা তা দ্বারা উদ্গত করেছি বাগানসমূহ ও পাকা শস্যাদি। আর উঁচু-উঁচু খেজুরগাছসমূহ, যাতে আছে সারি-সারি খেজুরগুচ্ছ। বান্দাদের জন্য রিজিক্বস্বরূপ। আর আমরা তা দ্বারা জীবিত করি মৃত/ শুষ্ক ভূখন্ডকে। এভাবেই পুনর্জীবিত করা হবে।

৫১:৫৭-৫৮ :: আমি তাদের থেকে পেতে ইচ্ছা করি না কোনো রিজিক্ব। আর আমি এও ইচ্ছা করি না যে, তারা আমাকে খাওয়াবে। নিশ্চয় আল্লাহই রিজিক্বদাতা, প্রবল পরাক্রান্ত শক্তিমান।

৬২:১১ :: আর যখন তারা দেখলো ব্যবসায় অথবা কৌতুক, তখন তারা ছুটে গেলো উহার দিকে এ অবস্থায় যে, তারা তোমাকে ছেড়ে গেলো (জুমুয়ার সালাতে) দাঁড়ানো অবস্থায়। বলো, “যা কিছু আল্লাহর কাছে আছে উহাই উত্তম, কৌতুকের চেয়ে ও ব্যবসায়ের চেয়ে। আর আল্লাহ উত্তম রিজিক্বদাতা’।

৬৩:১০ :: আর তোমরা ব্যয় কর তা থেকে যা আমরা তোমাদেরকে রিজিক্বস্বরূপ দিয়েছি উহার পূর্বে যে, তোমাদের কারো কাছে এসে যাবে মৃত্যু, তারপর সে বলবে, “হে আমার প্রতিপালক, কেন আপনি আমাকে অবকাশ দিলেন না নিকটবর্তী শেষ-সময়সীমা পর্যন্ত? তাহলে আমি দান করতাম আর আমি ভালো লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম’।

৬৫:৩ :: আর তিনি তাকে রিজিক্ব দেবেন এমন স্থান/উৎস/উপায় থেকে, যা সে হিসাব/ ধারণাও করে না। আর যে ভরসা করে আল্লাহর উপর, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর কাজকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছান। নিশ্চয় আল্লাহ নির্ধারণ  করে দিয়েছেন সকল সত্তা ও বিষয়ের জন্য প্রাকৃতিক পরিমাপ।

৬৫:৭ :: যেন ব্যয় করে স্বচ্ছল ব্যক্তি তার স্বচ্ছলতা অনুযায়ী আর যাকে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেয়া হয়েছে তার রিজিক্ব, সে যেন ব্যয় করে আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা অনুযায়ী। আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যের চেয়ে বেশি দায়িত্বভার অর্পণ করেন না। আল্লাহ শীঘ্রই দিবেন কষ্টের পর সহজতা।

৬৭:২১ :: নাকি এমন কেউ আছে যে তোমাদেরকে রিজিক্ব দেবে যদি তিনি বন্ধ করে দেন তাঁর (প্রদত্ত) রিজিক্ব। বরং তারা অবিচল আছে খোদাদ্রোহিতায় ও সত্য পরিহারের মধ্যে।

[রিজিক্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পানি সম্পর্কে বলা হয়েছে-

৬৭:৩০ :: বলো, “তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভে চলে যায়, তাহলে কে তোমাদেরকে বহমান পানি এনে দিবে?”]

৮৯:১৫-২০ :: তারপর মানুষের ব্যাপার হলো, যখন তাকে পরীক্ষা করেন তার প্রতিপালক তাকে সম্মানিত করে ও তাকে নেয়ামত দিয়ে, তখন সে বলে, “আমার প্রতিপালক আমাকে সম্মানিত করেছেন।” আর যখন তাকে পরীক্ষা করেন তার উপর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ মতো করে তার রিজিক্বকে, তখন সে বলে, “আমার প্রতিপালক আমাকে হেয় করেছেন।” কখনো না। বরং তোমরা ইয়াতীম ছেলেমেয়েদেরকে সম্মান কর না। আর তোমরা উৎসাহিত কর না মিসকীনের খাদ্য দান করার ব্যাপারে। আর তোমরা গ্রাস কর (উত্তরাধিকারীদের) উত্তরাধিকারকে নির্বিচারে গ্রাস করে। আর তোমরা মালসম্পদকে ভালবাস অতিমাত্রায় ভালবাসার মাধ্যমে।

২। আল্লাহর ফজল বা অনুগ্রহ

২:১৯৮ :: তোমাদের উপর গুনাহ নেই এ বিষয়ে যে, তোমরা তালাশ করবে অনুগ্রহ তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে (অর্থাৎ হজ্জের সময় অর্থনৈতিক উপার্জনে গুনাহ নেই)। তারপর যখন তোমরা যাত্রা করো আরাফাত থেকে (‘আল মাসজিদুল হারামের’ দিকে) তখন আল্লাহর স্মরণ করো ‘আল মাশআরিল হারামের’ কাছে। আর তাঁর স্মরণ করো যেভাবে তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত করেছেন, যদিও তোমরা ছিলে উহার আগে (হিদায়াত করার আগে) বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত।

২:২৬৮ :: শয়তান তোমাদেরকে ভয় দেখায় দারিদ্রের আর তোমাদেরকে আদেশ দেয় অশ্লীলতার। আর আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দেন তার পক্ষ থেকে ক্ষমার ও অনুগ্রহের (দারিদ্র্য-মুক্তির)। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।

৩:১৮০ :: আর তারা যেন হিসাব করে না রাখে যারা কৃপণতা করে উহার (ব্যয় করার) ব্যাপারে যা আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন তাঁর অনুগ্রহ থেকে (এ হিসাবে যে,) উহা (কৃপণতা) তাদের জন্য কল্যাণকর (অর্থাৎ কৃপণতাকে কল্যাণকর মনে করা যাবে না)। বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর। শীঘ্রই তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে দায়বদ্ধ করা হবে যে সম্পদে তারা কৃপণতা করেছে উহার বিনিময়ে (তাদের মজুদকৃত সম্পদ তাদের জন্য সুখের কারণ না হয়ে বরং শাস্তির কারণ হবে) ক্বিয়ামাত দিবসে। আর আল্লাহরই জন্য স্বত্বাধিকার আসমানসমূহ ও জমিনের। আর আল্লাহ তোমাদের আমলের বিষয়ে অবগত।

৪:৩৭ :: যারা কৃপণতা করে আর মানুষকে নির্দেশ দেয় কৃপণতার জন্য আর গোপন করে রাখে সেই সম্পদ যা আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন তাঁর অনুগ্রহ থেকে। আর আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি কাফিরদের জন্য অপমানকর শাস্তি।

৯:৫৮-৫৯ :: আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাকে দোষারোপ করে সাদাকাতের ব্যাপারে। কিন্তু যদি তাদেরকে দেয়া হয় উহা থেকে কিছু, তাহলে তারা সন্তুষ্ট হয়ে যায়। আর যদি না তাদেরকে দেয়া হয় উহা থেকে কিছু, তখন তারা অসন্তুষ্ট হয়ে যায়। অথচ (ভালো হতো) যদি তারা উহাতে সন্তুষ্ট হতো, যা তাদেরকে দিয়েছেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূল। আর যদি তারা বলতো, “আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। শীঘ্রই আল্লাহ আমাদেরকে দিবেন তাঁর অনুগ্রহ, আর তাঁর রসূল (তা আমাদের মধ্যে বন্টন করে দিবেন)। নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই কাছে আশান্বিত।”

৯:৭৪ :: তারা কসম করে আল্লাহর নামে, তারা সে কথা বলে নি। অথচ নিশ্চয় তারা বলেছে সেই কুফরি কথাটি। আর তারা কুফর করেছে তাদের ইসলাম গ্রহণের পরও। আর তারা সাহস দেখিয়েছে এমন কিছু করতে যা তারা করতে পারে নি। আর তারা প্রতিশোধ নিচ্ছে না এজন্য ছাড়া যে, তাদেরকে স্বচ্ছল করে দিয়েছেন আল্লাহ ও তাঁর রসূল, তাঁর অনুগ্রহ বন্টন করে। সুতরাং যদি তারা তাওবা করে তবে তা-ই হবে তাদের জন্য কল্যাণকর। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তাদেরকে আল্লাহ শাস্তি দিবেন, যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দুনিয়াতেও আর আখিরাতেও। আর তাদের জন্য না আছে পৃথিবীতে কোন অভিভাবক আর না আছে কোন সাহায্যকারী।

৯:৭৫-৭৬ :: আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, “নিশ্চয় যদি তিনি (আল্লাহ) আমাদেরকে দেন তাঁর অনুগ্রহ, তাহলে আমরা সদকা করবো আর অবশ্যই আমরা থাকবো সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।” তারপর যখন আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন তাঁর অনুগ্রহ, তখন তারা উহাতে কৃপণতা করেছে, আর তারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর তারা বিমুখ হয়েই আছে।

১১:৩ :: আর তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো তোমাদের রবের কাছে তারপর তাওবাহ করো তাঁর দিকে। তিনি তোমাদেরকে উপভোগ করতে দিবেন উত্তম ভোগসামগ্রী (প্রাকৃতিক নিয়মে) নির্ধারিত শেষ-সময়সীমা পর্যন্ত। আর তিনি দিবেন প্রত্যেক অনুগ্রহ পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিকে তাঁর অনুগ্রহ। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে নিশ্চয় আমি ভয় করি তোমাদের উপর বড় দিবসের শাস্তির ব্যাপারে।

১৬:১৪ :: আর তিনিই সেই সত্তা, যিনি নিয়োজিত করেছেন সাগরকে যেন তোমরা খেতে পারো উহা থেকে তাজা গোশত/ মৎস, আর তোমরা বের করতে পারো উহা থেকে রত্নাবলী, যা তোমরা পোশাকে পরিধান করো, আর তুমি দেখেছো যে, নৌযানসমূহ পানি চিরে চলে উহার মধ্যে (সাগরে)। আর যেন তোমরা তালাশ করো তাঁর অনুগ্রহ আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।

১৭:১২ :: আর আমরা করেছি রাতকে ও দিনকে দুটি নিদর্শন। তারপর আমরা নিষ্প্রভ করেছি রাতের নিদর্শনকে। আর আমরা করেছি দিনের নিদর্শনকে চাক্ষুস উজ্জল। যেন তোমরা তালাশ করতে পারো তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে থাকা অনুগ্রহ আর তোমরা জানতে পারো বছরসমূহের গণনা ও হিসাব। আর সবকিছুকে আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।

১৭:৬৬ :: তিনিই তোমাদের প্রতিপালক যিনি চালনা করেন তোমাদের জন্য নৌযান সাগরে, যেন তোমরা তালাশ করতে পারো তাঁর অনুগ্রহ থেকে। নিশ্চয় তিনি তোমাদের প্রতি দয়ালু।

২৪:২২ :: আর যেন কসম না করে তোমাদের মধ্যকার অনুগ্রহের অধিকারীরা ও প্রাচুর্যের অধিকারীরা যে, তারা দান করবে না আত্মীয় স্বজনকে ও মিসকীনকে ও আল্লাহর পথে হিজরতকারীদেরকে; আর তারা যেন উদারতা প্রকাশ করে আর তারা যেন ত্রুটি-বিচ্যুতি উপেক্ষা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন? আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।

২৮:৭৩ :: আর তাঁর রহমত থেকেই তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য রাত ও দিন, যেন তোমরা উহাতে প্রশান্তি লাভ করো আর যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করো, আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।

৩০:২৩ :: আর তাঁর আয়াতসমূহের মধ্যে আছে তোমাদের ঘুম রাতে ও দিনে, আর তোমাদের কর্তৃক তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করা। নিশ্চয় উহাতে আছে নিদর্শন, সেই কওমের জন্য যারা শুনে।

৩০:৪৬ :: আর তাঁর আয়াতসমূহের মধ্যে আছে এও যে, তিনি প্রেরণ করেন বাতাস সুসংবাদস্বরূপ আর তোমাদেরকে স্বাদ আস্বাদন করানোর জন্য তাঁর রহমত থেকে আর যেন চলে নৌযান তাঁর আদেশে আর যেন তোমরা তালাশ করো তাঁর অনুগ্রহ থেকে। আর যেন তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।

৩৫:১২ :: আর সমান নয় দুই সাগর। ইহা সুমিষ্ট, পিপাসা নিবারক, সুপেয় উহার পানীয়। আর ইহা লোনা, তিক্ত। আর প্রত্যেকটি থেকে তোমরা খেয়ে থাকো তাজা/ টাটকা গোশত (মাছ), আর তোমরা বের করে থাক অলংকার, যা তোমরা পোশাকে পরে থাকো। আর তুমি দেখো যে, নৌযানসমূহ উহার মধ্যে পানি চিরে চলে, যেন তোমরা তালাশ করতে পার তাঁর অনুগ্রহ থেকে আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।

[নৌযান সম্পর্কিত নিদর্শন সম্পর্কে অন্যত্র বলা হয়েছে-

৪২:৩২-৩৩ :: আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে আছে নৌযানসমূহ, যা সাগরের মধ্যে পর্বতসদৃশ (দেখা যায়)। যদি তিনি ইচ্ছা করেন তাহলে বাতাসকে থামিয়ে দিবেন, ফলে সেগুলো (নৌযানগুলো) স্থির হয়ে যাবে উহার পিঠের উপর (সমুদ্রপৃষ্ঠে)। নিশ্চয় উহাতে আছে নিদর্শনসমূহ, প্রত্যেকে সবরকারী ও শোকরকারীর জন্য।]

৪৫:১২ :: আল্লাহই সেই সত্তা যিনি নিয়োজিত করে দিয়েছেন তোমাদের জন্য সাগরকে। যেন চলাচল করতে পারে নৌযানসমূহ উহাতে তাঁর নির্দেশক্রমে। আর যেন তোমরা তালাশ করতে পার তাঁর অনুগ্রহ। আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।

৫৯:৮ :: মুহাজির অভাবগ্রস্তদের জন্য যাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে তাদের ঘরবাড়ি থেকে আর তাদের মালসম্পদ থেকে। তারা তালাশ করে আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি, আর তারা সাহায্য করে আল্লাহকে ও তাঁর রসূলকে। উহারা সত্যবাদী।

৬২:১০ :: তারপর যখন তোমরা সালাত সম্পন্ন করো, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আর তোমরা তালাশ করো আল্লাহর অনুগ্রহ, আর আল্লাহর স্মরণ কর বেশি পরিমাণে, যেন তোমরা সফলতা লাভ করতে পার।

৭৩:২০ :: নিশ্চয় তোমার রব জানেন যে, তুমি দাঁড়িয়ে থাকো রাতের প্রায় তিনভাগের দুই ভাগ, আর (কখনো) উহার অর্ধেক, আর (কখনো) উহার তিনভাগের এক ভাগ। আর যারা তোমার সাথে আছে তাদের একটি দলও (অনুরূপ করে)। আর আল্লাহই প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করেন রাতকে ও দিনকে। তিনি জেনেছেন যে, তোমরা উহার নিখুঁত হিসাব রক্ষা করতে পারবে না। তারপর তাঁর দিকে তোমাদের ফিরে থাকাকে তিনি কবুল করেছেন। সুতরাং তোমরা পাঠ কর যতটুকু সহজসাধ্য হয় কুরআন থেকে। তিনি জেনেছেন যে, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ হবে অসুস্থ। আর অন্য অনেকে পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে, আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করবে। আর অন্য অনেকে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে। সুতরাং তোমরা পাঠ করো যতটুকু সহজসাধ্য হয় উহা থেকে (কুরআন থেকে)। আর সালাত প্রতিষ্ঠা করো। আর যাকাত (পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করো। আর আল্লাহকে ঋণ দাও, উত্তম ঋণ। আর যা তোমরা আগে পাঠাবে তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণের জন্য উত্তম বিষয় থেকে, তোমরা উহাকে পাবে আল্লাহর কাছে। উহাই উত্তম আর প্রতিফল হিসাবেও মহিমান্বিত। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।

৩। মায়িশাহ (জীবিকার উপায়-উপকরণ)

৭:১০ :: আর নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি, আর আমরা সৃষ্টি করেছি তোমাদের জন্য উহাতে জীবিকার উপায়-উপকরণ। কিন্তু তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো।

১৫:২০ :: আর আমরা সৃষ্টি করেছি তোমাদের জন্য উহাতে জীবিকার উপায়-উপকরণ আর তাদের প্রত্যেকের জন্যও তোমরা নও যার জন্য রিযিকদাতা।

২০:১২৪ :: আর যে বিমুখ হবে আমার যিকির (স্মরণীয় তথ্য ও বিধি-বিধান) থেকে, তবে নিশ্চয় তার জীবিকার উপায়-উপকরণ হবে সংকুচিত/ অস্বস্তিকর। আর আমরা তাকে সমবেত করব কিয়ামাত দিবসে অন্ধ অবস্থায়।

২৮:৫৮ :: আর কত যে জনপদবাসীকে আমরা ধ্বংস করেছি যারা তাদের জীবিকার উপায়-উপকরনের অহংকার করতো। তারপর এই তাদের বাসগৃহসমূহ। উহাতে বসবাস করেনি তাদের পরে, অল্পসংখ্যক ছাড়া। আর আমরাই উত্তরাধিকারী।

৪৩:৩২ :: তারা কি বন্টন করে তোমার রবের রহমত? আমরা বন্টন করি তাদের মধ্যে জীবিকার উপায়-উপকরণ পার্থিব জীবনে। আর আমরা উন্নত করি তাদের কাউকে অন্য কারো উপর মর্যাদার মাত্রাসমূহে, যেন গ্রহণ করে তাদের একে অপরকে সেবকরূপে। আর তোমার রবের রহমত উহার চেয়ে উত্তম যা তারা জমা করে।

৭৮:১১ :: আর আমরা বানিয়েছি দিনকে জীবিকা উপার্জনের সময়।

৪। মাতআন (ভোগ-সামগ্রী)

২:১২৬ :: আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন ইবরাহীম বললো, “আমার প্রভু, এ ঘরকে বানিয়ে দিন শান্তিধাম আর উহার অধিবাসীদেরকে রিজিক্ব দান করুন ফলফলাদি থেকে, তাদের মধ্য থেকে তাকে যে বিশ্বাস করবে আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি।” তিনি (আল্লাহ) বললেন, “আর যে অবিশ্বাস করবে আমি তাকেও ভোগ-সামগ্রী দেবো (পার্থিব জীবনের) কিছুকাল। তারপর আমি তাকে ঠেলে দেবো (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তির দিকে আর তা খুবই মন্দ অবস্থান।”

২:২৩৬ :: তোমাদের উপর গুনাহ নেই, যদি (বিশেষ কোন কারণে) তোমরা তালাক দাও স্ত্রীদেরকে তাদেরকে তোমরা স্পর্শ করার আগেই অথবা দেনমোহর ধার্য করার আগে (উহার বিষয়ে অর্থাৎ এরূপ তালাক দেয়ায় বা এরূপ অবস্থায় তালাক দিলে দেনমোহর বাবদ কিছু না দেয়ায়)। আর এ অবস্থায় তোমরা তাদেরকে ভোগ-সামগ্রী দিতে হবে। সচ্ছল তার সক্ষমতা বা সাধ্যসীমা অনুসারে আর অসচ্ছল তার সক্ষমতা বা সাধ্যসীমা অনুসারে। ন্যায়সঙ্গত ভোগ-সামগ্রী। এটা উত্তম আচরণকারীদের উপর একটি দায়িত্ব।

২:২৪০ :: আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মৃত্যুবরণ করে আর তাদের পর তাদের স্ত্রীগণ জীবিত থাকে, তাহলে তাদের স্ত্রীদের বিষয়ে (তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আল্লাহর) ওয়াসিয়্যাত হচ্ছে, এক বছর পর্যন্ত (তাদের স্ত্রীদের) ভরণ-পোষণ/ভোগ-সামগ্রী দিতে হবে এবং ঘর থেকে বের করে দেয়া যাবে না। তবে যদি তারা নিজেরাই বেরিয়ে যায় তাহলে তোমাদের উপর গুনাহ নেই সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের বিষয়ে যা (যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন) করে ন্যায়সঙ্গতভাবে (সেই বিষয়ে)। আর আল্লাহ মহাশক্তিমান, মহাবিজ্ঞ।

২:২৪১ :: আর যে নারীকে তালাক দেয়া হয়েছে তাকে ন্যায়সঙ্গত (যথাসাধ্য) ভোগ-সামগ্রী দিতে হবে। (ইহা) মুত্তাকীদের (আল্লাহভীরু স্বামীদের) উপর দায়িত্ব।

৩:১৯৬-১৯৭ :: তোমাকে যেন প্রতারিত না করে তাদের দাপটের সাথে চলাফেরা যারা কুফর করেছে দেশে দেশে। এসব সামান্য ভোগ-সামগ্রী। তারপর তাদের আবাস জাহান্নাম। আর তা খুবই নিকৃষ্ট আবাস।

৪:৭৭ :: তুমি কি দেখনি তাদের অবস্থা যাদেরকে বলা হয়েছিলো, “তোমরা গুটিয়ে রাখো তোমাদের হাতসমূহ আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো আর তোমরা যাকাত (পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করো।” তারপর যখন যুদ্ধ বিধিবদ্ধ করা হয়েছে তাদের উপর, তখন তাদের মধ্য থেকে একদল মানুষকে ভয় করেছে যেমন ভয় করা উচিত আল্লাহকে অথবা তার চেয়ে কঠিন ভয়। আর তারা বললো, “আমাদের প্রভু, কেন তুমি যুদ্ধ বিধিবদ্ধ করেছো আমাদের উপর? কেন আমাদেরকে অবকাশ দাও নি নিকটবর্তী সময়সীমা পর্যন্ত (আর মাত্র কয়েকটা দিন)?” বলো, “দুনিয়ার ভোগ-সামগ্রী সামান্য। আর আখিরাতই তার জন্য উত্তম যে স্রষ্টা-সচেতনতা অবলম্বন করে। আর তোমাদেরকে যুলম করা হবে না বিন্দু পরিমাণও’।

৫:৯৬ :: হালাল করা হয়েছে তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার করা ও তা খাওয়া (অর্থাৎ জলচর প্রাণী হালাল)। তোমাদের (আবাসে) ভোগের জন্য ও কাফেলার ভোগের জন্য (অর্থাৎ শুটকি মাছ হালাল)। আর হারাম করা হয়েছে তোমাদের উপর স্থলভাগের শিকার, যতক্ষণ তোমরা থাকো হুরুমুন (হারাম মাসসমূহে অবস্থানকারী) অবস্থায়। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর দিকে তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।

৯:৩৮ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমাদের কী হয়েছে, যখন তোমাদেরকে বলা হয় তোমরা বেরিয়ে পড়ো আল্লাহর পথে, তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে (বসে) পড়ো জমিনের দিকে? তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়ে আছো পার্থিব জীবনের প্রতি আখিরাতের পরিবর্তে? অথচ দুনিয়ার ভোগ-সামগ্রী কিছুই নয় আখিরাতের তুলনায় অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিস ছাড়া।

৯:৬৯ :: (তোমাদের অবস্থা) তাদের মতো যারা তোমাদের আগে ছিলো। তারা ছিলো শক্তিতে তোমাদের চেয়েও প্রবলতর আর মাল-সম্পদে ও সন্তান-সন্ততিতে তোমাদের চেয়ে বেশি। তখন তারা ভোগ করেছে তাদের অংশ তারপর তোমরাও ভোগ করছো তোমাদের অংশ, যেমন তারা ভোগ করেছে যারা তোমাদের আগে ছিলো তাদের অংশ (অর্থাৎ প্রাকৃতিক নিয়মে যতটুকু অংশ ভোগ করা সম্ভব হয়েছে)। আর তোমরা বিতর্ক করছো যেমনটি তারা বিতর্ক করেছে। তারাই এমন লোক ব্যর্থ/ নষ্ট হয়ে গেছে যাদের আমলসমূহ দুনিয়াতেও আর আখিরাতেও। আর তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

১১:৩ :: আর তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো তোমাদের প্রভুর কাছে তারপর তাওবা করো তাঁর দিকে। তিনি তোমাদেরকে উপভোগ করতে দিবেন উত্তম ভোগ-সামগ্রী (প্রাকৃতিক নিয়মে) নির্ধারিত শেষ-সময়সীমা পর্যন্ত। আর তিনি দিবেন প্রত্যেক অনুগ্রহ পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিকে তাঁর অনুগ্রহ। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে নিশ্চয় আমি ভয় করি তোমাদের উপর বড় দিবসের শাস্তির ব্যাপারে।

১২:৬৫ :: আর যখন তারা খুলেছে তাদের ভোগ-সামগ্রী, তখন তারা দেখতে পেয়েছে তাদের পণ্যমূল্য ফেরত দেয়া হয়েছে তাদের কাছে। তারা বললো, “হে আমাদের আব্বা, আমরা আর কী তালাশ করবো? এই যে আমাদের পণ্যমূল্য ফেরত দেয়া হয়েছে আমাদের কাছে। আর আমরা খাদ্য এনে দেবো আমাদের পরিবারকে। আর আমরা হেফাযত করবো আমাদের ভাইকে। আর আমরা অতিরিক্ত আনবো এক উট বোঝাই মালের বরাদ্দ। ঐ পরিমাণ বরাদ্দ সহজেই পাওয়া যাবে।”

১৩:২৬ :: আল্লাহ প্রচুর করে দেন রিযিক যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। আর তারা আনন্দিত হয়েছে পার্থিব জীবন নিয়ে। অথচ পার্থিব জীবন কিছুই নয় আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ-সামগ্রী ছাড়া।

১৫:৮৮ :: প্রসারিত করো না তোমার দুচোখ উহার দিকে যা আমরা তাদেরকে ভোগ-সামগ্রী দিয়েছি, তাদের মধ্যকার বিভিন্ন শ্রেণীকে। আর দু:খিত হয়ো না তাদের ব্যাপারে। আর অবনত করো তোমার বাহু মু’মিনদের জন্য।

১৬:৮০ :: আর আল্লাহ স্থাপন করেছেন তোমাদের জন্য তোমাদের ঘরসমূহকে শান্তির আবাস আর তিনি স্থাপন করেছেন তোমাদের জন্য গবাদি পশুর চামড়া থেকে তাঁবুর ঘর। উহাকে তোমরা হালকা পাও/ সহজে বহন ও ব্যবহার করতে পারো, তোমাদের সফরের দিনে আর তোমাদের প্রতিষ্ঠিত থাকার/ অবস্থানের দিনে। আর উহার পশম, লোম ও চুল থেকে তৈরি হয় গৃহ সামগ্রী আর ভোগ-সামগ্রী কিছু সময়ের জন্য।

২০:১৩১ :: প্রসারিত করো না তোমার দুচোখ উহার দিকে যা আমরা তাদেরকে ভোগ-সামগ্রী দিয়েছি, তাদের মধ্যকার বিভিন্ন শ্রেণীকে। উহা তো পার্থিব জীবনের জাঁকজমক। উহা তাদেরকে দিয়েছি যেন তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি। আর তোমার প্রভুর রিজিক্ব (অর্থাৎ যা বৈধভাবে বা পুরস্কারস্বরূপ পাওয়া যাবে তা-ই) উত্তম ও অধিক স্থায়ী।

২৪:২৯ :: তোমাদের উপর গুনাহ নেই এ ব্যাপারে যে, তোমরা প্রবেশ করবে এমন ঘরসমূহে যা কারো বসবাসের স্থান নয়, যার মধ্যে তোমাদের সর্বজনীন ভোগ-সামগ্রী (উপকারী জিনিস) আছে। আর আল্লাহ জানেন যা তোমরা প্রকাশ করো আর যা তোমরা গোপন করো।

২৬:২০৫-২০৭ :: তুমি কি ভেবে দেখেছো যে, যদি আমরা তাদেরকে ভোগ-সামগ্রী দিই অনেক বছর। তারপর তাদের নিকট উহা আসলে যার (যে শাস্তির) ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়েছে। কী কাজে আসবে তাদের ব্যাপারে যা কিছু তারা উপভোগ করছে?

৩৩:২৮ :: হে নবী, তোমার স্ত্রীদেরকে বলো, “যদি তোমরা এমন হও যে, তোমরা ইচ্ছা করো পার্থিব জীবন ও উহার শোভা-সৌন্দর্য পেতে, তাহলে আসো আমি তোমাদেরকে ভোগ-সামগ্রী দিয়ে দিই আর আমি তোমাদেরকে বিদায় দিই, সুন্দর/ উত্তম বিদায় (এর মাধ্যমে)’।

৩৩:৪৯ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, যখন তোমরা বিবাহ করো কোন মু’মিন নারীকে, তারপর তোমরা তাদেরকে তালাক দাও তোমরা তাদেরকে স্পর্শ করার আগে; তাহলে তোমাদের অধিকার নেই তাদের উপর ইদ্দাত পালনের ব্যাপারে (দায়িত্ব আরোপ করার), যা তোমাদেরকে গণনা করতে হয়। তখন তাদেরকে (কিছু) ভোগ-সামগ্রী দিয়ে দাও আর তাদেরকে বিদায় দাও সুন্দরভাবে/ উত্তমভাবে দেয়া বিদায়ের মাধ্যমে।

৪০:৩৯ :: (মু’মিন ব্যক্তিটি বললো), হে আমার কওম, বস্তুত পার্থিব জীবন সামান্য ভোগ-সামগ্রী। আর নিশ্চয় পরকাল, উহাই অবস্থানের প্রকৃত ঘর/ আবাস।

৪৩:৩৩-৩৫ :: আর যদি এমন না হতো যে, হয়ে যাবে সব মানুষ একই উম্মাহ (কাফের উম্মাহ), তাহলে অবশ্যই আমরা পরিণত করে দিতাম তাদের জন্য যারা কুফর করে দয়াময়ের প্রতি, তাদের ঘরগুলোর ছাদসমূহকে রুপা দিয়ে আর সিঁড়িগুলোকেও, যার উপর তারা আরোহন করে। আর তাদের ঘরগুলোর দরজাসমূহকে, আর তাদের আসনসমূহকে, যার উপর তারা হেলান দিয়ে বসে। আর স্বর্ণ দিয়ে। আর সেসব নয় পার্থিব জীবনের ভোগ-সামগ্রী ছাড়া অন্য কিছু। আর আখিরাত তোমার রবের কাছে আল্লাহভীরুদের জন্য নির্দিষ্ট।

৪৭:১২ :: নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যারা বিশ্বাস করেছে ও আমলে সালেহ (সৎকর্ম) করেছে, যার নিচ দিয়ে নদী বয়ে যায়। আর যারা অবিশ্বাস করেছে, তারা ভোগ-সামগ্রী হাসিল করছে ও তারা খাচ্ছে যেমন গবাদি পশু খায়। আর (জাহান্নামের) আগুনই তাদের আবাস।

৫৬:৬৩-৭৩ :: তারপর কি তোমরা ভেবে দেখেছ যে বীজ তোমরা বপন কর? তোমরাই কি উহা (ফসলরূপে) উৎপাদন কর নাকি আমরাই উৎপাদনকারী? যদি আমরা ইচ্ছা করি তাহলে আমরা উহাকে পরিণত করতে পারি খড়কুটায়, তখন তোমরা কথা বানাতে থাকবে যে, নিশ্চয় আমরা লোকসানে পড়ে গেছি। বরং আমরা বঞ্চিত হয়ে গেছি। তোমরা কি ভেবে দেখেছ পানির ব্যাপারে যা তোমরা পান কর? তোমরাই কি উহা অবতরণ কর মেঘ থেকে নাকি আমরাই বর্ষণকারী? যদি আমরা ইচ্ছা করি তাহলে উহাকে বানাতে পারি লোনা। তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না? তোমরা কি ভেবে দেখেছ আগুনের ব্যাপারে যা তোমরা জ্বালাও? তোমরাই কি সৃষ্টি করেছ উহার গাছকে? নাকি আমরাই সৃষ্টিকারী? আমরা উহাকে করেছি স্মরণের মাধ্যম ও মুখাপেক্ষীদের জন্য ভোগ-সামগ্রী (প্রয়োজনীয় উপকরণস্বরূপ)।

৫৭:২০ :: তোমরা জেনে রাখো বস্তুত (আখিরাতের চিন্তাশূন্য) পার্থিব জীবন খেলা, কৌতুক, সৌন্দর্য ও তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক অহংকার আর মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির ক্ষেত্রে অধিক পাওয়ার প্রতিযোগিতা। ইহার দৃষ্টান্ত যেমন বৃষ্টি, চমৎকৃত করে কৃষকদেরকে উহার উদ্ভিদরাজি, তারপর শুকিয়ে যায়, তারপর তুমি উহাকে দেখ হলুদবর্ণ, তারপর উহা হয়ে যায় খড়কুটা। আর আখিরাতে আছে (কারো জন্য) কঠোর শাস্তি আর (কারো জন্য) আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর পার্থিব জীবন কিছুই নয় ধোঁকাময় ভোগ-সামগ্রী ছাড়া।

৮০:২৪-৩২ :: তারপর মানুষ লক্ষ্য করুক তার খাদ্যের দিকে। আমরা প্রচুর ঢালায় (বৃষ্টির) পানি ঢেলেছি। তারপর আমরা মাটিকে বিদীর্ণ করেছি। তারপর আমরা উৎপন্ন করেছি তার মধ্যে শস্য। ও আঙ্গুর ও শাকসবজি। ও জলপাই ও খেজুর। ও ঘন সন্নিবেশিত বাগিচাসমূহ। ও ফলফলাদি ও উদ্ভিদজাতীয় খাদ্য। ভোগ-সামগ্রীরূপে তোমাদের জন্য ও তোমাদের গবাদি পশুর জন্য।

খাদ্যসম্ভার (আক্বওয়াত)

৪১:৯-১০ :: বলো, “তোমরা কি নিশ্চয় অবিশ্বাস করছো তাঁকে যিনি সৃষ্টি করেছেন পৃথিবী দুইদিনে। আর তোমরা কি সাব্যস্ত করছো তাঁর জন্য সমকক্ষ? তিনিই সমগ্র মহাবিশ্বের প্রতিপালক ও বিধাতা। আর তাতে উপর থেকে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন আর তাতে বরকত দিয়েছেন আর তাতে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছেন সেটার খাদ্যসম্ভার চারদিনে, প্রার্থীদের জন্য প্রয়োজনের সমপরিমাণে।”

রিজিক্ব ও আল্লাহর অনুগ্রহ সম্পর্কিত আয়াতসমূহের কয়েকটি মৌলিক লক্ষ্যণীয় তথ্য-

* প্রত্যেকের রিজিক্বের দায়িত্ব আল্লাহর- ১১:৬।

* আল্লাহই রিজিক্বদাতা, তিনিই রিজিক্ব দেন ও দেবেন- ৬:১৫১, ১০:৩১, ১৬:৭৩, ১৭:৩১, ২৭:৬৪, ৩০:৪০, ৩৪:২৪, ৩৫:৩, ৫১:৫৭-৫৮, ৬৭:২১।

* আল্লাহর রিজিক্ব দেয়ার পদ্ধতি- ২:২২, ১৫:১৯-২২, ১৪:৩২, ৪৫:৫, ৫০:৯-১১।

* অনেক জীব-প্রজাতি নিজেদের রিজিক্ব বহন করে না বা সঞ্চয় করে রাখে না- ২৯:৬০।

* আল্লাহর কাছে রিজিক্ব তালাশ করা- ২৯:১৭।

* রিজিক্ব তালাশ করতে গিয়ে আল্লাহর বিধান পরিপালনে বিচ্যুতি কাম্য নয়- ৬২:১১।

* রিজিক্ব দেয়া হয় প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী এবং সবাইকে প্রচুর রিজিক্ব না দেয়ার কারণ- ৪২:২৭।

* আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কম বা বেশি রিজিক্ব দিয়ে থাকেন, অর্থাৎ আল্লাহর অতাৎক্ষণিক ইচ্ছানুযায়ী কেউ কম বা বেশি রিজিক্ব পেয়ে থাকে- ১৩:২৬, ১৭:৩০, ২৮:৮২, ২৯:৬২, ৩০:৩৭, ৩৪:৩৬, ৩৪:৩৯, ৩৯:৫২, ৪২:১২।

* রিজিক্ব কম বা বেশি দেয়ার মাধ্যমে পরীক্ষা এবং তাতে মানুষের করণীয়- ৮৯:১৫-২০।

* স্রষ্টা-সচেতন ব্যক্তিদেরকে বেহিসাব রিজিক্ব দেয়া হয় অর্থাৎ এমন উপায় বা উৎস থেকে তাদের রিজিক্বের ব্যবস্থা হয় যে বিষয়ে তারা ইতোপূর্বে কোনো ধারণা করে নি- ২:২১২, ৩:২৭, ৩:৩৭, ৬৫:৩।

* বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক রিজিক্ব- ২২:৫০, ৩৪:৪।

* আল্লাহর দেয়া রিজিক্বকে অন্যরা হারাম করার অধিকার রাখে না, অথচ তারা তা করে থাকে- ৬:১৪০, ৭:৩২, ১০:৫৯।

* রিজিক্ব থেকে ব্যয় করতে নির্দেশ ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- ২:২-৩, ২:২৫৪, ৪:৩৯, ৮:২-৩, ১৩:২২, ১৪:৩১, ১৬:৭৫, ২২:৩৫, ২৮:৫৪, ৩২:১৬, ৩৫:২৯, ৬৩:১০, ৬৫:৭।

* আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক্ব থেকে অন্যদেরকে রিজিক্ব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে- ৪:৫, ৪:৮, ২:২৩৩।

* রিজিক্বের ক্ষেত্রে অধীনস্তদেরকে অংশীদার না করা বা তাদের দিকে নিজেদের মতো একই নিয়মে রিজিক্বের প্রত্যাবর্তন না করা মানে আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা- ৩০:২৮, ১৬:৭১।

* রিজিক্বের কৃতজ্ঞতা না করার শাস্তি- ১৬:১১২।

* ভাগ্যবাদের দোহাই দিয়ে অন্যদেরকে না খাওয়ানো কাফিরদের কর্মনীতি ৩৬:৪৭।

* আল্লাহর অনুগ্রহ বণ্টনে রসূলের ভূমিকা- ৯:৫৮-৫৯, ৯:৭৪।

রিজিক্ব সম্পর্কিত নীতিমালার সামগ্রিক মৌলিক ধারণা : ভাগ্যবাদ বনাম রিজিক্বের তাক্বদীর

আল্লাহ বলেছেন যে, আল্লাহর ওপর সকল জীবের রিজিক্বের দায়িত্ব রয়েছে এবং তিনিই সবার রিজিক্বদাতা তথা তিনিই রিজিক্ব দেন ও দেবেন। তা সত্ত্বেও আমরা দেখি যে, অনেক প্রাণী ও মানুষ দুর্ভিক্ষে মৃত্যুবরণ করে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন আসে যে, আল্লাহ নিজে তাঁর নিজের ওপর যে দায়িত্বের কথা বলেছেন তা সত্ত্বেও এমনটি কিভাবে হতে পারে?

আমরা এ বিষয়টির সম্যক উপলব্ধি ও সামগ্রিক ধারণা অর্জনের জন্য বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন অনুভব করি। তাই রিজিক্ব সম্পর্কে উপরে উল্লেখিত আয়াতসমূহের ভিত্তিতে এবং আরো কিছু প্রাসঙ্গিক আয়াতসহ নিম্নে ‘রিজিক্বের তাক্বদীর’ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

বস্তুত আল্লাহ সবার সবার রিজিক্বের দায়িত্ব পূর্ণ করার জন্য প্রথমত রিজিক্বের উপায়-উপাদান সৃষ্টি ও উৎপাদন-ব্যবস্থা চালু করেছেন। তাই রিজিক্ব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তাঁর তৈরি প্রাকৃতিক নিয়মে যে ব্যবস্থা অবলম্বন করার কথা সেটা অবলম্বন করতে হবে। সবাইকে প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে সংযোগ (সালাত) রেখে যথাযথ কর্মব্যস্ততার (তাসবীহ) মাধ্যমে তা অর্জন করতে হবে।

কুরআনে জীবিকাকে আল্লাহর অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর আল্লাহর অনুগ্রহ বা জীবিকা সন্ধানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জীবিকা সন্ধান বলতে জীবিকা উপার্জনের জন্য পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় কাজ করাকে বুঝায়। কুরআনে দিন-রাতের সৃষ্টির ক্ষেত্রে জীবিকা সন্ধানের উদ্দেশ্যকে ব্যক্ত করা হয়েছে।

জীবিকা বরাদ্দ বা জীবিকা অর্জন বা সম্পদ উৎপাদন নিম্নোক্ত দুটি প্রভাবক উপাদানের সমন্বয়ে হয়ে থাকে-

(১) পৃথিবীর প্রাকৃতিক উৎস (আলো, তাপ, বায়ু, জল, জমি ইত্যাদি), যা মানুষ আল্লাহর অনুগ্রহে অনায়াসে পেয়ে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন ধরনের ভৌগোলিক অবস্থা ও জলবায়ু উৎপাদনকে প্রভাবিত করে, যেখানে মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বা খুব সামান্যই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

(২) মানুষের কর্মক্ষমতা ও তার পার্থক্য সাপেক্ষে তার কর্মপ্রচেষ্টা।

মানুষের কর্মক্ষমতা ও তার পার্থক্য প্রধানত নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর দ্বারা নির্ধারিত হয়-

ক. বংশগতভাবে প্রাপ্ত সামর্থ্য ও ব্যাধি

খ. গর্ভাবস্থায় বিকশিত শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য

[যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে শারীরিক রোগ-ব্যাধির প্রতিরোধ ও প্রতিকারে অনেক উন্নতি সাধিত হচ্ছে, তা সত্ত্বেও তা সব মানুষের সমান যোগ্যতা-সামর্থ্য অর্জনের নিশ্চয়তা দেয় না।]

গ. শিক্ষা-প্রশিক্ষণ, প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশ, পাঠ্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদির পার্থক্য

ঘ. চাহিদা ও সরবরাহ, উপলব্ধ সুবিধা ও তাদের ব্যবহারের পার্থক্য।

ঙ. সমাজব্যবস্থা।

একজন ব্যক্তি সমাজের সাথে সম্পর্কিত অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, বরং সে তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর তার ফলে একটি সমাজব্যবস্থায় একজন ব্যক্তি যা করতে পারে, ভিন্নরূপ সমাজব্যবস্থায় তার পক্ষে ভিন্নরূপ করা সম্ভব। একটি সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থায় মানুষ বৈধভাবে সমৃদ্ধি অর্জনের যে সুযোগ পায় তাও আল্লাহর অনুগ্রহ হিসেবে সাব্যস্ত।

মানুষের মধ্যে সম্পদ ও জীবিকার তারতম্য একটি প্রকৃতিগত বিষয়। কিন্তু এই প্রকৃতিগত তারতম্য যেমন সামাজিকভাবে সম্পূর্ণরূপে মিটিয়ে দেয়ার অবকাশ নেই, তেমনি সেটাকে কৃত্রিম বৈষম্য সৃষ্টির যুক্তি হিসেবেও গ্রহণ করা যেতে পারে না। বরং এই প্রকৃতিগত তারতম্য পরস্পরের সেবা বিনিময়ের অন্যতম নিয়ামক। আর প্রকৃতিগত তারতম্যকে বিবেচনায় নিয়ে যারা পিছিয়ে আছে তাদের সাথে অমানবিক প্রতিযোগিতার পরিবর্তে তাদেরকে সহযোগিতা করা এবং তাদের সক্ষমতা সৃষ্টিতে উদ্যোগ গ্রহণ করাই মানবিক ও নৈতিক গুণ। প্রকৃতিগত অসমতা ও এর কার্যকারণ সম্পর্কে নিম্নের আয়াতগুলো লক্ষ্যণীয়-

৬:১৬৫ :: আর তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত করেছেন। আর সমুন্নত করেছেন তোমাদের কাউকে অন্য কারো উপর যোগ্যতা-সামর্থ্য ও সুযোগ-সুবিধার বিভিন্ন মাত্রায়। যেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন তোমাদেরকে যা (কম বা বেশি) দিয়েছেন তা যথাযথভাবে বিবেচনা করে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক অপরাধীর শাস্তিদানে তৎপর। আর নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।

৪৩:৩২ :: তারা কি বন্টন করে তোমার প্রভুর রহমত? আমরা বন্টন করি তাদের মধ্যে জীবিকার উপায়-উপকরণ পার্থিব জীবনে। আর আমরা উন্নত করি তাদের কাউকে অন্য কারো উপর মর্যাদার মাত্রাসমূহে, যেন গ্রহণ করে তাদের একে অপরকে সেবকরূপে। আর তোমার প্রভুর রহমত উহার চেয়ে উত্তম যা তারা জমা করে।

রিজিক্ব প্রাপ্তিতে সমৃদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব সহজাত যোগ্যতা-বৈশিষ্ট্য মানুষের জন্য সহায়ক উপাদান হয়ে থাকে, সেটাকে আল্লাহর অনুগ্রহ বা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশিষ্টতা প্রদান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু প্রকৃতিগতভাবে রিজিক্ব ও অন্যান্য উপায়-উপাদানের বণ্টনে কারো চেয়ে কাউকে কম-বেশি বা বিশিষ্টতা প্রদান করার মধ্যে সামাজিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে, তাই এক্ষেত্রে একে-অন্যকে ঈর্ষা করা উচিত নয়। অবশ্য অন্যের সাথে ঈর্ষা পোষণ না করে আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ লাভের প্রার্থনা করা দোষণীয় নয়, বরং সেটাই করণীয়।

আল্লাহ মানুষকে জীবিকা, ক্ষমতা প্রভৃতি কম-বেশি দিয়ে থাকেন তাঁর ইচ্ছায় কার্যকর প্রাকৃতিক ও নৈতিক নিয়মের আওতায়, যাতে ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের একটি ভূমিকা বিদ্যমান থাকে। এতে ব্যক্তি ভালো বা মন্দ যে নৈতিক নিয়মেই কাজ করুক যদি সে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে থাকা অবকাশ অনুযায়ী কম বা বেশি প্রাপ্তির নিয়মানুযায়ী কাজ করে সেটাও একটি ভূমিকা রাখে। সুতরাং কেউ যদি অন্যায় পথে বেশি সম্পদের মালিক হয়, তাও তাকে আল্লাহই দিয়েছেন আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক নিয়মের আওতায়। আল্লাহ কাউকে তার অন্যায় প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে কোনো সম্পদ দিলে সেটা আল্লাহর দেয়া হলেও তাতে তিনি বৈধতা দেন নি। কারণ আল্লাহ অন্যায় কাজকে অবৈধ করেছেন। এমতাবস্থায় মু’মিনরা যদি ন্যায় পথে প্রচেষ্টা করে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি অনুসারে তুলনামূলক কম অর্জন করতে পারে, তা সত্ত্বেও তাদেরকে পবিত্র সম্পদে পরিতুষ্ট থাকার এবং বৈধ পথেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং নিজেদের বঞ্চিত থাকার আক্ষেপস্বরূপ কাফিরদের অধিক সম্পদের দিকে চোখ বড় করে তাকাতে নিষেধ করা হয়েছে।

যেহেতু সম্পদ উৎপাদনের ক্ষমতা ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন হয়ে থাকে। তাই যে ব্যক্তির যেরূপ সম্পদ উৎপাদনের যোগ্যতা রয়েছে তাকে সেইরূপ দায়িত্বভার অর্পণ করা উচিত। একে শ্রমবিভাগ বলা হয়। মানুষ তার যোগ্যতা অনুযায়ী কোনো বিশেষ কর্মে নিয়োজিত বা নিয়োগপ্রাপ্ত হবে এবং তার কর্মের ধরন অনুসারে উপার্জন করবে। অতঃপর যাদের উপার্জন ক্ষমতা নেই বা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম, তারা সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় যারা অধিক উপার্জন করেছে তাদের থেকে বিশেষ অনুদান প্রাপ্তির অধিকারী হবে। এটাই কুরআনিক অর্থনীতির মূলতত্ত্ব। রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যে, সম্পদ যেন শুধুমাত্র সম্পদশালীদের মধ্যে আবর্তিত বা পুঞ্জিভুত না হয়।

কুরআনের অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসারে প্রতিষ্ঠিত সমাজব্যবস্থায় মানুষের প্রকৃতিগত অসমতা তাদের জীবনযাত্রায় সামান্য প্রভাব রাখে। কারণ এতে মানুষের মধ্যে কৃত্রিমভাবে বৈষম্য করাকে বা বেইনসাফিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, মানুষকে তার যোগ্যতা অনুসারে কর্মে নিযুক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তারা প্রকৃতিগত ও সামাজিক ব্যবস্থাগত যে সুযোগ-সুবিধা পায় তা থেকে অন্যদের জন্য ব্যয় করে কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে এবং অন্যদের জন্য ব্যয় না করাকে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

১৬:৭১ :: আর আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তোমাদের কাউকে অন্য কারো উপর রিজিক্বের ক্ষেত্রে। তারপর তারা হয় না যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, (হয় না) তাদের রিজিক্বের প্রত্যাবর্তনকারী, তাদের কাছে যারা ‘মা মালাকাত আইমানুহুম’ [তাদের (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডান হাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে]; যেন তারা (মা মালাকাত আইমানুহুম) সে ক্ষেত্রে তাদের সমান হয়ে যেতে পারে। তবে কি আল্লাহর নিয়ামাতকে তারা অস্বীকার করছে?

উপরোল্লেখিত আয়াতটিতে আল্লাহ এককে অন্যের উপর রিজিক্বে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা মনে করার কোনো অবকাশ নেই যে, যেহেতু যারা জীবিকার দিক থেকে সমৃদ্ধ আল্লাহই তাদেরকে তাতে সমৃদ্ধি দান করেছেন, সুতরাং তাতে তাদের নিরংকুশ অধিকার স্বীকৃত হওয়া উচিত এবং তারা তা থেকে বিনিময় ছাড়া কাউকে কিছু দান করা বাধ্যতামূলক নয়। কারণ আয়াতটিতে স্পষ্টভাবে যারা অধিক নেয়ামত পেয়েছে তারা তা থেকে তাদের অধীনস্তদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে শেয়ার না করাকে নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

৭০:২৩-২৪ :: আর যাদের মালসম্পদে আছে সুপরিজ্ঞাত অধিকার। প্রার্থীদের ও বঞ্চিতদের জন্য।

১৬:৫৩-৫৫ :: আর যা কিছু আছে তোমাদের কাছে নিয়ামাতের মধ্য থেকে, তার সবই আল্লাহর থেকে এসেছে। তারপর যখন তোমাদেরকে স্পর্শ করে দু:খ-কষ্ট, তখন তাঁরই কাছে তোমরা ফরিয়াদ করো। তারপর যখন তিনি দূর করে দেন দু:খ-কষ্ট তোমাদের থেকে, তখন তোমাদের মধ্যকার একদল তাদের প্রভুর সাথে (অন্যদেরকে) শিরক করে। কুফর/ অস্বীকার/ অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ঐ বিষয়ের প্রতি যা আমরা তাদেরকে দিয়েছি। আচ্ছা, তোমরা ভোগ করো তারপর শীঘ্রই তোমরা (প্রকৃত ব্যাপারটি/ এর পরিণতি) জানতে পারবে।

অন্যদিকে কারূনী (পুঁজিবাদী) অর্থব্যবস্থায় নিজের উপার্জনকে নিজের কাছে ধরে রাখার এবং কোনোরূপ বিনিময় ছাড়া হস্তান্তর না করার অধিকার দাবি করা হয়।

২৮:৭৬-৭৮ :: নিশ্চয় কারূন মূসার কওমের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। তারপর সে বিদ্রোহ করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে (তার কওমের বিরুদ্ধে)। আর আমরা তাকে দিয়েছিলাম ধনভান্ডারসমূহ যা এমন ছিলো যে, নিশ্চয় তার (ধনকক্ষসমূহের) চাবিসমূহ অবশ্যই নুয়ে দিতো একটি শক্তিশালী দলকে, (যারা ছিলো) অত্যন্ত শক্তিসম্পন্ন। (স্মরণ করো) যখন তাকে বলেছিলো তার কওম, “আনন্দে আত্মহারা হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ আনন্দে আত্মহারাদেরকে ভালবাসেন না। আর তুমি তালাশ করো উহার মাধ্যমে যা আল্লাহ তোমাকে দিয়েছেন, (তালাশ করো) আখিরাতের ঘর। আর ভুলে যেও না তোমার অংশ নিতে দুনিয়া থেকে। আর উত্তম কাজ করো, যেমন আল্লাহ উত্তম আচরণ করেছেন তোমার প্রতি। আর (সুযোগ) তালাশ করো না পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদেরকে ভালবাসেন না।” সে (কারূন) বলেছিলো, “নিশ্চয় উহা আমাকে দেয়া হয়েছে আমার নিকট থাকা জ্ঞানের কারণে।” সে কি জানে না যে, আল্লাহ নিশ্চয় ধ্বংস করেছেন তার আগেও বহু যুগের জনগোষ্ঠীকে, যে ছিলো তার চেয়ে অধিক শক্তিশালী আর সংঘবদ্ধ জনবলেও (তার চেয়ে) অনেক বেশি? আর (ধ্বংস করার আগে) জিজ্ঞাসা করা হয় না অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধসমূহ সম্পর্কে?

সুতরাং নি:সন্দেহে বলা যায় যে, আল্লাহ সবার জন্য রিজিক্বের ব্যবস্থা করেছেন। তবে আল্লাহ-প্রদত্ত রিজিক্ব-প্রাপ্তির জন্য ব্যক্তিগত ও সমাজগতভাবে প্রাকৃতিক আইন ও আসমানী কিতাবের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে নিম্নের আয়াতসমূহ লক্ষ্যণীয়-

১৭:১৮-২০ :: যে ইচ্ছা করে (সব সুখ-সম্পদ) তাড়াতাড়ি (পার্থিব জীবনেই) পেতে, আমরা তাড়াতাড়ি দিই তার জন্য উহাতে (পৃথিবীতে) যা আমরা ইচ্ছা করি, যাকে আমরা (দেয়ার) ইচ্ছা করি। তারপর আমরা নির্ধারণ করি তার জন্য জাহান্নাম। সে উহাতে জ্বলবে নিন্দিত অবস্থায় ও রহমত থেকে বঞ্চিত অবস্থায়। আর যে ইচ্ছা করে আখিরাত পেতে আর প্রচেষ্টা চালায় (কাজ করে) তার জন্য (তার উপযোগী) তার (যথাযথ) চেষ্টার মাধ্যমে, এ অবস্থায় যে, সে একজন মু’মিন, তারাই এমন লোক যাদের প্রচেষ্টা হয় (আল্লাহর কাছে) স্বীকৃত/ গৃহীত। (পার্থিব জীবনে) প্রত্যেককেই আমরা সাহায্য করি, এদেরকেও এবং ওদেরকেও, তোমার প্রভুর দান থেকে। আর তোমার প্রভুর দান (কারো জন্য) অবরুদ্ধ নয়।

৫:৬৬ :: আর যদি তারা প্রতিষ্ঠা রাখতো তাওরাত ও ইনজীল আর যা নাযিল করা হয়েছে তাদের প্রতি তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে, তাহলে তারা খাদ্য পেতো তাদের উপর থেকে (আসমান থেকে) আর তাদের পায়ের নিচ থেকে (যমিন থেকে)। তাদের মধ্যে আছে মিতাচারী উম্মাত (যারা আচার আচরণে ভালো)। আর তাদের অধিকাংশই মন্দ কাজ করে।

৭:৯৬ :: আর যদি এসব জনপদের অধিবাসীরা বিশ্বাস করতো আর স্রষ্টা-সচেতনতা অবলম্বন করতো, তাহলে আমরা খুলে দিতাম তাদের উপর বরকতসমূহ, আসমান থেকে ও জমিন থেকে। কিন্তু তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। সুতরাং আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি তারা যে পাপ উপার্জন করেছে তার কারণে।

৩৪:১৫-১৯ :: নিশ্চয় সাবার জন্য (সাবাবাসীদের জন্য) ছিলো তাদের বাসভূমিতে নিদর্শন; দুটি জান্নাত, ডানে ও বামে। (আমি বলেছিলাম,) “তোমরা খাও তোমাদের প্রভুর রিজিক্ব থেকে, আর তাঁরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। এটি পবিত্র দেশ আর প্রভু (আল্লাহ) ক্ষমাশীল।” তবুও তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। তারপর আমরা পাঠিয়েছিলাম তাদের উপর বাঁধভাঙ্গা বন্যা। আর আমরা উহাকে বদলে দিয়েছিলাম, তাদের দুটি বাগানের পরিবর্তে এমন দুটি বাগানে, যা ছিলো বিস্বাদ খাদ্যসম্পন্ন আর (যাতে ছিলো) ঝাউগাছ আর (ছিলো) অল্প সংখ্যক বরইগাছ। উহা আমরা তাদেরকে প্রতিফলস্বরূপ দিয়েছিলাম তারা যে কুফর করেছিলো তার কারণে। আর আমরা এরূপ প্রতিফল দিই না, কাফেরদেরকে ছাড়া। আর (উহার আগে) আমরা স্থাপন করেছিলাম তাদের ও ঐ জনপদের মধ্যে, যাতে আমরা বরকত দিয়েছিলাম, (স্থাপন করেছিলাম) দৃশ্যমান জনপদসমূহ, আর আমরা উহাতে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছিলাম ভ্রমণ-দূরত্ব। (আমি বলেছিলাম,) “তোমরা উহাতে ভ্রমণ করো রাতসমূহে ও দিনসমূহে, নিরাপত্তাসহকারে।” তারপর তারা বলেছিলো, “হে আমাদের প্রভু, দূরত্ব বাড়িয়ে দিন আমাদের সফরের ক্ষেত্রে।” আর তারা যুলুম করেছিলো তাদের নিজেদের উপর। তারপর আমরা তাদেরকে পরিণত করলাম ইতিহাসের কাহিনীতে। আর আমরা তাদেরকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দিয়েছিলাম, প্রত্যেক বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে। নিশ্চয় উহাতে আছে নিদর্শন, প্রত্যেক সবরকারী ও শোকরকারীর জন্য।

আল্লাহ রিজিক্বদাতা হওয়ার তাৎপর্য শুধু এ নয় যে, তিনি প্রত্যেকের প্রয়োজনীয় পরিমাণ রিজিক্বের উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছেন এবং তাঁর প্রদত্ত শক্তি-সামর্থ্য ব্যবহার করে যে যা রিজিক্ব সংগ্রহ করা সম্ভব, সেটাই তার জন্য আল্লাহ-প্রদত্ত রিজিক্ব। বরং আল্লাহর রিজিক্ব প্রদানের অন্যতম একটি দিক হলো, তিনি তাঁর পক্ষ থেকে বিধি-বিধান দিয়েছেন যে, ক্ষুধার্তকে অন্নদান করতে হবে। যখন তাঁর বিধান অনুযায়ী স্বচ্ছল মু’মিনরা ক্ষুধার্তকে অন্নদান করে, তখন ঐ ক্ষুধার্তদের জন্য যে অন্নসংস্থান হয়, সেটাও তাদের জন্য আল্লাহ-প্রদত্ত রিজিক্ব হিসেবে সাব্যস্ত হয়। আল্লাহ সরাসরি প্রত্যেকের কাছে নিজেই অলৌকিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রিজিক্ব পৌঁছে দেন না, বরং তাঁর বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামাজিকভাবে সর্বজনীন অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়। এ বিষয়ে নিম্নের আয়াতটি লক্ষ্যণীয়-

৩৬:৪৭ :: আর যখন তাদেরকে বলা হয়, “তোমরা ব্যয় করো তা থেকে যা আল্লাহ তোমাদেরকে রিজিক্বস্বরূপ দিয়েছেন”, তখন কাফিররা মু’মিনদেরকে বলে, “আমরা কি খাওয়াবো তাকে যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে যাকে তিনি খাওয়াতেন? তোমরা নেই স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে ছাড়া।”

উপরোল্লেখিত আয়াতটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহ রিজিক্বদাতা হওয়ার অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সরাসরি রিজিক্ব পৌঁছে দিবেন এবং তাতে মানুষের কোনো করণীয় নেই। বরং আল্লাহ রিজিক্বদাতা হওয়ার তাৎপর্য হলো, আল্লাহ মানুষের জন্য রিজিক্বের উৎস ও উপায় সৃষ্টি করেছেন, মানুষকে রিজিক্ব সন্ধানের যোগ্যতা দিয়েছেন এবং তাদেরকে যোগ্যতায় কম-বেশি দেয়ার মাধ্যমে রিজিক্বের মধ্যে কম-বেশি দিয়েছেন আর সেক্ষেত্রে তিনি রিজিক্ব বণ্টনের বিধান বা ক্ষুধার্তকে অন্নদানের বিধান দিয়েছেন। এভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য রিজিক্বের ব্যবস্থা করেছেন।

আল্লাহ রিজিক্বদাতা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর রিজিক্বের বিধান বাস্তবায়নের পথে কাফিরদের প্রতিবন্ধকতার কারণে সাময়িকভাবে মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হতে পারে। কিন্তু এ অবস্থার মোকাবেলায় আল্লাহর বিধানে বিশ্বাসীরা নিজেদের জান-মাল উৎসর্গ করে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। যখন মানুষ স্রষ্টা-সচেতন থাকে, স্রষ্টা প্রদত্ত অর্থনীতি বাস্তবায়ন করে তখন তারা অন্যের অধিকার রক্ষা করে, নিজের বৈধ প্রয়োজনে ব্যয়ের পাশাপাশি পরার্থে ব্যয় করে এবং বিনিময়ে সমাজে সুষম সমৃদ্ধি আসে।

আল্লাহ রিজিক্বদাতা এবং সেই সাথে তিনি মু’মিনদেরকে অর্থ-সংকটের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। যদি তারা তাতে সবর করে, তারপর তারা একটি সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে সক্ষম হতে পারে। এ প্রসঙ্গে নিম্নের আয়াতটি লক্ষ্যণীয়-

২:১৫৫ :: আর অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো (কাফিরদের কারণে উদ্ভুত) কিছু বিষয় দ্বারা যেমন আশংকা আর ক্ষুধা আর মালসামানা, জীবনসমূহ ও ফলফলাদির ক্ষয়ক্ষতি। আর সবরকারীদেরকে সুসংবাদ দাও। (অর্থাৎ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বা সংগ্রামকাল অতিবাহিত হলে নিরাপত্তা ও সম্মানজনক রিজিক্ব রয়েছে)।

আল্লাহ রব্বুল আলামীন কোনো জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিয়ম-নীতির মাধ্যমে অন্নসংস্থানের সুবন্দোবস্ত করে দেন, যা তাদেরকে রিজিক্ব অন্বেষণে শংকামুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দেয় এবং তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা তৈরি করে। আর এরূপ সুব্যবস্থার স্বাভাবিক দাবি হলো, তারা একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করবে। এ বিষয়ে নিম্নের আয়াতটি লক্ষ্যণীয়-

১০৬:১-৪ :: যেহেতু কুরাইশকে প্রথাগত প্রণোদনা সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাদেরকে শীত ও গ্রীষ্মের বাণিজ্য সফরে প্রথাগত প্রণোদনা সুবিধা দেয়া হয়েছে। সুতরাং তারা যেন দাসত্ব করে এ ঘরের (কা’বাঘরের) রবের। যিনি তাদেরকে অন্নসংস্থান করেছেন ক্ষুধা থেকে বাঁচিয়ে আর তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন ভয় থেকে বাঁচিয়ে।

আলোচনার এ পর্যায়ে বলা যেতে পারে, প্রকৃতপক্ষে রিজিক্বের বিষয়টি হিদায়াতের মতো। আল্লাহ সাধারণভাবে সবার উদ্দেশ্যে হিদায়াত দিয়েছেন। কিন্তু তাদেরকেই হিদায়াত দেন, যারা ঐ হিদায়াতকে গ্রহণ করে বা হিদায়াত গ্রহণের জন্য যথানিয়মে চেষ্টা-সাধনা করে। অনুরূপভাবে আল্লাহ আমাদেরকে খাদ্য প্রদান করেন বা আমাদের জন্য খাদ্য-সংস্থান করেন। কিন্তু তা সম্পূর্ণরূপে অনায়াসে পাওয়া যাবে না, বরং সেজন্য আমাদেরকে প্রয়োজনীয় কাজ করতে হবে। আর সেই কাজ করতে হবে এ বিষয়ে আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক আইন অনুসরণ করে।

মানুষের খাদ্য সংস্থানের ক্ষেত্রে আল্লাহর ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম উদাহরণ হলো, শিশুর খাদ্য। একটি মানব সন্তান যেন জন্মের সাথে সাথেই মায়ের বুকের দুধ পান করতে পারে সেজন্য সন্তান গর্ভে থাকতেই মায়ের স্তনে দুধ তৈরি হয়। শিশুর হজম ক্ষমতার সাথে মিল করে মায়ের দুধ কম চর্বিযুক্ত ও বেশি জলযুক্ত হয়। ধীরে ধীরে মায়ের দুধ অধিক চর্বিযুক্ত হতে থাকে এবং শিশুটির দাঁত ওঠে ও সে অন্য খাবার হজমের উপযুক্ত হয়। শিশুর স্বাভাবিক সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় তাকে পূর্ণ দুই বছর দুধপানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুধপান পূর্ণ করার পর মায়ের দুধ শুকিয়ে যায়। সুতরাং শিশুর ক্রমবিকাশের উপযোগী করে মায়ের স্তনে দুধের প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আল্লাহ তার জন্য দুধ সরবরাহ করেছেন এবং তাকে পূর্ণ দুই বছর দুধপান করানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এভাবে আল্লাহ তার রিজিক্বের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু যদি তার মা তাকে দুধপান না করায় তাহলে সে তা পাবে না।

দুধপান পরবর্তী বয়সে তার খাদ্য-সংস্থানের জন্য তার বাবা-মাকে কাজ করতে হয়। আর যখন সে যৌবনে উপনীত হয় তখন তাকেও অনুরূপভাবে খাদ্য সংগ্রহ ও উৎপাদনে কাজ করতে হয়। আর এ কাজ তাদেরকে যথাযথভাবে প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ করেই করতে হয়।

মানুষকে সম্পদ সংগ্রহ ও উৎপাদনের পাশাপাশি নিজেদের প্রয়োজনে সম্পদ ও সেবার বিনিময় বা বণ্টনও করতে হয়। ন্যায্য বণ্টনের মাধ্যমে সবার বৈধভাবে সম্পদপ্রাপ্তির অধিকার পূর্ণ হয়। অন্যথায় কেউ অবৈধভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ করে এবং তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়। এজন্য কুরআনে দাঁড়িপাল্লায় কম দেয়া, সুদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া যারা অধিক সম্পদের অধিকারী হয়, তা থেকে যদি যারা জীবন ধারণের জন্য নুন্যতম প্রয়োজনীয় পরিমাণ সম্পদেরও অধিকারী হতে পারে না, তাদেরকে সহযোগিতা করা না হয়; তাহলে সমাজে সম্পদের সঠিক প্রবাহ ও প্রবৃদ্ধি বিনষ্ট হবে। তাই এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিক পর্যায়ে অনুদানের নির্দেশ ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যখন এই নির্দেশ ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়, তখন সবাই আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক্ব লাভ করতে পারে। অন্যথায় দরিদ্ররা তা থেকে বঞ্চিত হয়, ঐ শিশুর মতো যাকে তার মা দুধপান না করানোর ফলে সে দুধ পায় নি। অথচ আল্লাহ তার মায়ের স্তনে যে দুধ উৎপাদন করেছেন তা তার মায়ের জন্য নয়, বরং তার জন্য উৎপাদন করেছেন। এক্ষেত্রে তার মা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করায় সে দুধপান থেকে বঞ্চিত হলো। তার মা যেন তাকে বঞ্চিত করতে না পারে, সেজন্য সমাজস্থ ব্যক্তিদের সচেতনতা ও সামাজিক চাপ তৈরির প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু যদি সমাজ সেই সচেতনতা ও সামাজিক চাপ তৈরিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে শিশুটি আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক্ব থেকে বঞ্চিত হতে পারে এবং সেজন্য সমাজ দায়ী থাকবে। আল্লাহ চাইলে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতাবলে ঐ শিশুকে রক্ষা করতে পারেন। কিন্তু তিনি সাধারণত তা করেন না। কারণ তিনি শিশুটির রিজিক্বের দায়িত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁর কর্তৃক রিজিক্বের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা করা অবশ্যম্ভাবী, কিন্তু প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনার বাইরে কিছু করা না করা অবশ্যম্ভাবী নয়। কারণ তাঁর বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনার সাধারণ দিক হলো, তিনি এখানে মানুষকে একটি প্রাকৃতিক ব্যবস্থার মধ্যে জীবন নির্বাহ করতে দেবেন এবং এভাবে তাদের এককে অন্যের মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন বা এককে অন্যের পরীক্ষার মাধ্যম বানাবেন।

রিজিক্ব কম-বেশি দেয়ার মাধ্যমে মানুষকে যে পরীক্ষা করা হয় তা হলো তারা সবর ও শোকর করে কিনা। সবরের তাৎপর্য হলো ধৈর্যের সাথে অধ্যবসায় করা, যেন বৈধভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটতে পারে। আর শোকরের তাৎপর্য হলো প্রকৃত প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে রিজিক্ব প্রাপ্তি ঘটে, সেটাকে যাদের রিজিক্বের ঘাটতি রয়েছে তাদের নিকট প্রত্যার্বনের জন্য আমানতস্বরূপ বিবেচনা করে তাদের সাথে তা শেয়ার করা।

আল্লাহর বিধান অনুসারে রিজিক্বের বণ্টন না হওয়ার কারণে আমরা প্রায়ই দেখি যে, কেউ খুব কঠিন সংগ্রাম বা হাঁড় কাঁপানো পরিশ্রম করে কিন্তু দরিদ্র থাকে ও তার পরিবার ক্ষুধার্ত থাকে। অন্যদিকে কেউ তেমন কোনো কাজ না করেও সমৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করে।

এর কারণ হিসেবে কেউ পুনর্জন্মবাদ হাজির করে আর কেউ প্রাক-নিয়তির মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা করে যে, কে কখন কতটুকু সুখ বা দুঃখ ভোগ করবে তা পূর্ব নির্ধারিত ভাগ্য, যা পরিবর্তন করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু কুরআন এ উভয় মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করে।

কুরআন অনুযায়ী এর প্রকৃত কারণ হলো অন্যায্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। যেমন, সশস্ত্র ডাকাত বা চোর ও পকেটমার মানুষকে তাদের কষ্টার্জিত সম্পদ থেকে বঞ্চিত করে। এটা সহজেই বুঝা যায় যে, এরূপ অবস্থায় কোনো ব্যক্তি তার বৈধ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয় এবং অন্য কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে তা ভোগ করে। কিন্তু সামাজিক কাঠামোর স্তরে যে অন্যায্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একইভাবে মানুষের সম্পদ শোষণ করা হয়, অনেক সময় তা লক্ষ্য করা হয় না। একজন সামন্ত জমির মালিক বা শিল্পপতি যথাক্রমে খামার-শ্রমিক ও কারখানা-শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমের পারিশ্রমিক শোষণ করে। একজন কৃষক বা শ্রমিক কী পরিমাণ পারিশ্রমিক পাবে তা পুনর্জন্ম বা প্রাক-নিয়তির মাধ্যমে নয়, বরং ভূমি মালিক বা শিল্প-কারখানার মালিকেরা তাদের স্বাধীন ইচ্ছায় নির্ধারণ করে অথবা তাদেরকে সহায়তাকারী রাষ্ট্রীয় প্রশাসন তা নির্ধারণে কিছু ভূমিকা রাখে। এই স্তরে আল্লাহ মানুষের মধ্যে সরাসরি সম্পদের বণ্টন করেন না। বরং তিনি তাঁর বিধানের মাধ্যমে সম্পদ বণ্টনের যে নীতিমালা দিয়েছেন তা মানুষ তা গ্রহণ করতে বা প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

সুষ্ঠু অর্থনৈতিক বণ্টন নিশ্চিত করতে কুরআনে সুদকে হারাম করা হয়েছে। সুদ হলো যখন অর্থ ধার দিয়ে অধিক অর্থ ফেরত নেয়া হয় অথবা যখন অর্থ বিনিয়োগ (!) করে লাভ-ক্ষতির অংশীদারিত্ব ছাড়াই শুধুমাত্র বিনিয়োগকৃত অর্থের (পুঁজি) উপর ভিত্তি করে বাড়তি নেয়া হয়। বস্তুত সুদ হচ্ছে অর্থ সঞ্চয় করে তা দিয়ে মানুষকে শোষণ করার উপায়।

সুদের সহায়ক উপাদান হিসেবে অর্থ-সম্পদ মজুদ করে রাখাকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেহেতু এর মাধ্যমে মানবতা পুড়ে ছাই হয়, তাই মজুদদারিতাকে নরকের জ্বালানি সাব্যস্ত করা হয়েছে।

৯:৩৪-৩৫ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, (জেনে রাখো যে,) নিশ্চয় বেশিরভাগ ধর্মগুরু ও সন্ন্যাসী এমন যে, তারা খেয়ে থাকে মানুষের মালসমূহ অন্যায়ভাবে; আর তারা বাধা দেয় আল্লাহর পথ থেকে। আর যারা জমা করে রাখে সোনা ও রূপা, আর উহা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে। সুতরাং তাদেরকে সংবাদ দাও কষ্টদায়ক শাস্তির। যেদিন গরম করা হবে উহাকে (অবৈধ সম্পদকে) জাহান্নামের আগুনে। তারপর দাগ দেয়া হবে উহা দিয়ে তাদের কপালে আর তাদের পার্শ্বসমূহে আর তাদের পিঠে। ইহা তাহাই যাহা তোমরা জমা করে রাখতে তোমাদের নিজেদের স্বার্থে। সুতরাং তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো যা তোমরা জমা করে রাখতে তার।

পরিশেষে বলা যায় যে, আল্লাহই রিজিক্বদাতা এবং তিনি ছাড়া কেউ রিজিক্বদাতা নেই। আল্লাহ যদি রিজিক্ব প্রদান না করতেন তাহলে কেউ কোনোভাবে কোনো রিজিক্ব লাভ করতো না। আল্লাহ সবার জন্য রিজিক্ব দেন এবং দেবেন। আল্লাহর রিজিক্ব এত পর্যাপ্ত ও অবারিত যে, যেসব প্রাণী নিজিদের রিজিক্ব বহন করে না বা সঞ্চয় করে রাখে না, প্রকৃতিতে তাদের জন্যও রিজিক্বের ঘাটতি নেই। তবে প্রত্যেককে তার রিজিক্ব পৌঁছে দেয়ার জন্য বিধি-মোতাবেক যাদের উপর দায়িত্বভার অর্পিত হয়, তাদেরকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর যারা রিজিক্ব অন্বেষণের সামর্থ্যের অধিকারী, তাদের দায়িত্ব হলো সেজন্য যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা চালিয়ে যাওয়া। আল্লাহর বিধানে স্বেচ্ছা-বেকারত্ব বা পরনির্ভরতা গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো সমাজে যদি আল্লাহর বিধান অনুসারে রিজিক্বের বণ্টন না হয়, সেই সমাজ নিজের উপর অত্যাচারী এবং সেক্ষেত্রে যারা অত্যাচারিত তাদেরকে সেই অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য বিশ্বাসীদেরকে উদ্যোগী ও সংগ্রামী হতে হবে। যদি কোনো সমাজে এরূপ উদ্যোগ ও সংগ্রামের অভাব থাকে, সেক্ষেত্রে তা করুণ পরিণতির সম্মুখীন হবে বা তাতে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। আর এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো আল্লাহর বিধানে প্রত্যাবর্তন। এটাই রিজিক্বের তাক্বদীর বা প্রাকৃতিক নিয়ম। অন্যদিকে রিজিক্বের বিষয়ে ভাগ্যবাদে যে ধারণাগুলো ব্যক্ত করা হয়, তা কুরআনের বার্তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

সম্মান-অপমানের নীতিমালা

 আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করেন। নিম্নের আয়াতটিতে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে-

৩:২৬ :: বলো, ‘হে আল্লাহ, সমস্ত আধিপত্যের অধিপতি। আপনি আধিপত্য দান করেন যাকে আপনি (আধিপত্য দানের) ইচ্ছা করেন। আর আপনি আধিপত্য কেড়ে নেন যার থেকে আপনি (আধিপত্য কেড়ে নেয়ার) ইচ্ছা করেন। আর আপনি সম্মানিত করেন যাকে আপনি (সম্মানিত করার) ইচ্ছা করেন। আর আপনি অপমানিত করেন যাকে আপনি (অপমানিত করার) ইচ্ছা করেন। আপনার হাতেই সমস্ত কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

কিছু ব্যক্তি রাজত্ব নিয়ে চিন্তিত থাকে, আর অন্যান্য সাধারণ মানুষ সামাজিক অবস্থানের জন্য ব্যতিব্যস্ত। সমাজে যে ব্যক্তি যত সম্পদের অধিকারী সে ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান তত উচ্চ বলে ধরা হয়। উপরোল্লেখিত আয়াত অনুযায়ী কেউ সম্মানিত হওয়া বা অপমানিত হওয়ার বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তাই এটিকে ভাগ্যবাদের প্রমাণ হিসেবে দেখা হয়।

আমরা ইতোমধ্যে কৃত পর্যালোচনায় দেখেছি যে, ‘আল্লাহর ইচ্ছা’ বলতে ‘আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক আইন’-কে বুঝানো হয়। সুতরাং রাজত্ব/রাষ্ট্রক্ষমতা এবং সম্মান পাওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর তৈরি শর্ত বা নীতিমালার অনুসরণের মাধ্যমেই তা পাওয়া যেতে পারে।

সম্মানকে তাকরীম এবং অসম্মানকে তাওহীন বলা হয়। আবার সম্মানকে ইজ্জাত এবং অসম্মানকে জিল্লাত বলা হয়। ইজ্জাত শব্দের দুটি অর্থ রয়েছে- সম্মান ও কঠোরতা। অনুরূপভাবে জিল্লাত শব্দের দুটি অর্থ রয়েছে- অপমান ও কোমলতা। বাক্যে ব্যবহার অনুসারে এ অর্থগুলো নির্ধারিত হয়।

সামাজিক নিয়ম-শৃঙ্খলার স্বাভাবিকতায় একজন বয়োজ্যাষ্ঠ ব্যক্তি বয়োকনিষ্ঠ ব্যক্তির তুলনায় সম্মানিত হয়ে থাকেন। একজন অধিক জ্ঞানী ব্যক্তি একজন কম জ্ঞানী ব্যক্তির চেয়ে সম্মানিত হয়ে থাকেন। একইভাবে একজন ব্যক্তি যে তার জ্ঞান, দক্ষতা ও পরিচালনাগত যোগ্যতার কারণে তুলনামূলক উচ্চ অবস্থানে থাকেন তিনি অধিক সম্মানিত হিসেবে পরিগণ্য হয়ে থাকেন।

এছাড়া যিনি তাঁর সদগুণের কারণে যত বেশি খ্যাত, সদাচারী, সদুপদেশ দানকারী, কল্যাণকর্মে তৎপর তিনি তত বেশি সম্মানিত হয়ে থাকেন। সুতরাং সাধারণভাবে সকল মানুষ সমান মানবিক মর্যাদার অধিকারী। তারপর যিনি হিতকর জ্ঞান ও কর্মগুণে সমৃদ্ধ তিনি স্বাভাবিক মূল্যবোধ অনুসারে বিশেষ সম্মান পেয়ে থাকেন।

কুরআনে প্রত্যেক আদম সন্তানকে সম্মানিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক মানুষই মানুষ হওয়ার কারণে সম্মানিত। তারপর প্রত্যেক ব্যক্তি তার কর্মের গুণ অনুসারে মর্যাদার অধিকারী হয়। যে ব্যক্তি যত বেশি স্রষ্টা-সচেতন তথা স্রষ্টার বিধানকে উত্তমভাবে অনুসরণ করে, সে-ই তত বেশি সম্মানিত। প্রচলিত সমাজে যেভাবে সম্পদকে সম্মানের মানদণ্ড হিসেবে ধারণা করা হয়, কুরআনে তার কোনো সমর্থন নেই। বাস্তবেও একজন সৎগুণের অধিকারী ব্যক্তি দরিদ্র হলেও মানুষ তাকে মন থেকে সম্মান করে, কিন্তু একজন ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে যদি সৎগুণের অভাব থাকে, তাহলে মানুষ তাকে বাহ্যিকভাবে সম্মান করতে বাধ্য হলেও মন থেকে তাকে সম্মান করে না, বরং তার ব্যক্তিত্ব মানুষের কাছে অপমানিত হয়।

কুরআন অনুযায়ী, সমস্ত সম্মান আল্লাহরই আয়ত্তে, তিনি যাকে সম্মানিত করেন সে-ই সম্মানিত এবং তিনি যাকে অপমানিত করেন সে-ই অপমানিত। তিনি রসূল ও মু’মিনদের জন্য সম্মান নির্ধারণ করেছেন এবং কাফির ও অবাধ্যদের জন্য অপমান নির্ধারণ করেছেন। কখনো বাহ্যিকভাবে এর বিপরীত কিছু মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটাই সঠিক চিত্র। যেমন, কখনো কোনো অভদ্র লোক কোনো ভদ্রলোককে অপমানিত করতে পারে, কিন্তু এতে ঐ ভদ্র লোকের জন্য অপমান নেই, বরং সে যথার্থ সম্মানিত থাকে। অন্যদিকে এতে অভদ্র লোকটির অভদ্রতার বহির্প্রকাশ তাকে অভদ্র হিসেবে স্পষ্ট করে তোলে তথা সে অপমানিত হয়। সময়ের ব্যবধানে সে এমনভাবে অপমানিত হয় যে, তার অপমান তার নিজের কাছে এবং অন্য সবার কাছে তার যথার্থ প্রতিফল হিসেবে অনুভূত ও স্বীকৃত হয়।

সম্মান-অপমানের নীতিমালা প্রসঙ্গে নিম্নের আয়াতসমূহ লক্ষ্যণীয়-

১৭:২০ :: আর নিশ্চয় আমরা সম্মানিত করেছি বনী আদমকে। আর আমরা তাদেরকে বাহন দিয়েছি স্থলভাগের মধ্যে ও জলভাগের মধ্যে। আর আমরা তাদেরকে রিযিক দিয়েছি পবিত্র জিনিসসমূহ থেকে। আর আমরা তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি অনেকের উপর তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে আমরা সৃষ্টি করেছি, যথাযথ শ্রেষ্ঠত্ব।

৬:১৩২ :: আর সকলের জন্য আছে মর্যাদার মাত্রা তা অনুযায়ী যা তারা করেছে। আর তারা যা করে তা সম্বন্ধে তোমার প্রভু উদাসীন নন।

৪৬:১৯ :: আর প্রত্যেকের জন্য আছে মর্যাদা তার কর্ম অনুযায়ী। যেন তিনি তাদেরকে পূর্ণ করে দেন তাদের কর্মের প্রতিফল। আর তাদেরকে যুলুম করা হবে না।

৫৮:১১ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘মজলিশের মধ্যে তোমরা (আরেকজনের জন্য) স্থান করে দাও’, তখন তোমরা স্থান করে দিও। তাহলে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘উঠে যাও’, তখন তোমরা উঠে যেয়ো। আল্লাহ তাদেরকে সমুন্নত করবেন যারা তোমাদের মধ্য থেকে বিশ্বাস করেছে আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, (সমুন্নত করবেন) মর্যাদার মাত্রাসমূহে। আর আল্লাহ তোমাদের কর্ম বিষয়ে অবগত।

২০:৭৫ :: আর যে তাঁর কাছে আসবে মু’মিন হয়ে, নিশ্চয় যে সৎকর্ম করেছে; তারাই ঐসব লোক যাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদা।

৪৯:১৩ :: হে মানুষ, নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে, আর আমরা তোমাদেরকে পরিণত করেছি বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোত্রে, যেন তোমরা একে অন্যকে চিনতে পারো। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সে-ই সবচেয়ে মর্যাদাবান যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে স্রষ্টা-সচেতন। নিশ্চয় আল্লাহ জ্ঞানী ও (সব বিষয়ে) অবগত।

৩৫:১০ :: যে ইচ্ছা করে সম্মান পেতে, তাহলে সমস্ত সম্মান তো আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীন। তাঁর দিকে উঠে যায় পবিত্র বাক্য, আর সৎকর্ম তাকে মর্যাদায় সমুন্নত করে। আর যারা মন্দ কৌশল করে, তাদের জন্য আছে কঠোর শাস্তি। আর তাদের কৌশল, উহা তো ব্যর্থ হবে।

৪:১৩৯ :: যারা গ্রহণ করে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসাবে মু’মিনদেরকে বাদ দিয়ে {কাফিরদেরকে বন্ধু বানায়, মু’মিনদেরকে বন্ধু বানায় না}, তারা কি তালাশ করে তাদের কাছে (কাফিরদের কাছে) সম্মান? তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত যে, নিশ্চয় সম্মান আল্লাহরই অধিকারভুক্ত, সবটুকুই।

৬৩:৮ :: (তারা বলে), যদি আমরা ফিরে যেতে পারি শহরে, তাহলে বের করে দেবে অধিক মর্যাদাবানরা উহা থেকে মর্যাদাহীনদেরকে। অথচ মর্যাদা তো রয়েছে আল্লাহর জন্য ও তাঁর রসূলের জন্য ও মু’মিনদের জন্য। কিন্তু মুনাফিকরা জ্ঞান রাখে না।

৫৮:২০ :: নিশ্চয় যারা বিরোধিতা করে আল্লাহর ও তাঁর রসূলের, উহারা অধিক অপমানিতদের মধ্যে থাকবে।

১০:২৬-২৭ :: যারা উত্তম কাজ করে তাদের জন্য আছে উত্তম প্রতিফল আর অনুগ্রহের প্রবৃদ্ধি। আর আচ্ছন্ন করবে না তাদের মুখমন্ডলসমূহকে কোনো কালিমা আর কোনো অপমানও আচ্ছন্ন করবে না। তারাই জান্নাতবাসী। তারা তাতে স্থায়ী হবে। আর যারা উপার্জন করেছে মন্দ কাজ তারা তাদের মন্দ কাজের প্রতিফল পাবে ঐ মন্দ কাজের অনুরূপ। আর তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে অপমান। তাদের জন্য নেই আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচাতে কোনো ত্রাণকর্তা। যেন ঢেকে ফেলেছে তাদের মুখমন্ডলসমূহ রাতের অন্ধকারের কোনো টুকরা। তারাই অগ্নিবাসী। তারা তাতে স্থায়ী হবে।

২:৬১ :: আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন তোমরা বলেছিলে, “হে মূসা, আমরা সবর করবো না একই ধরনের খাদ্যের উপর। সুতরাং তুমি প্রার্থনা করো আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে, যেন তিনি বের করেন আমাদের জন্য তা থেকে যা ভূমি উৎপন্ন করে অর্থাৎ উহার শিম/ বরবটি আর উহার শসা/ খিরা/ কাকড় আর উহার রসূন আর উহার মসুর ডাল আর উহার পেঁয়াজ।“ সে বললো, “তোমরা কি পরিবর্তনস্বরূপ পেতে চাও উহাকে যা নগণ্য উহার বিনিময়ে যা উত্তম? (তাহলে) তোমরা চলে যাও মিসরে। তাহলে নিশ্চয় তোমাদের জন্য (পাবে) যা তোমরা পেতে চেয়েছো।“ আর আপতিত হয়েছে তাদের উপর অপমান আর অসহায়ত্ব। আর তারা পরিবেষ্টিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সৃষ্ট ক্রোধে। উহা এ কারণে যে, তারা অবিশ্বাস করতো আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি, আর তারা সম্পূর্ণ অনধিকার চর্চা করে নবীদেরকে হত্যা করতো। উহা এ কারণে যে, তারা অবাধ্যতা করেছে আর তারা সীমালংঘন করতো।

৩:১১৩ :: আপতিত হয়েছে তাদের উপর অপমান যেখানেই তাদেরকে পাওয়া গেছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া রজ্জু (আঁকড়ে ধরা) ছাড়া আর মানুষের পক্ষ থেকে পাওয়া রজ্জু (আঁকড়ে ধরা) ছাড়া। আর তারা পরিবেষ্টিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সৃষ্ট ক্রোধে। আর আপতিত হয়েছে তাদের উপর অসহায়ত্ব। উহা এ কারণে যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি অবিশ্বাস করতো আর তারা সম্পূর্ণ অনধিকার চর্চা করে নবীদেরকে হত্যা করতো। উহা এ কারণে যে, তারা অবাধ্যতা করেছে আর তারা সীমালংঘন করতো।

২:৮৫ :: আবার তোমরাই ঐসব লোক যারা হত্যা করছো তোমাদের নিজেদেরকে আর তোমরা বের করে দিচ্ছো তোমাদের মধ্যকার এক পক্ষকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে। তোমরা নিজেদেরকে প্রকাশ করছো তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ও বাড়াবাড়ির সাথে। আর যদি তারা তোমাদের কাছে আসে (শত্রুদের হাতে) বন্দী হয়ে, তোমরা মুক্তিপণ দিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে নাও। অথচ তাদেরকে বের করে দেয়াই তোমাদের উপর অবৈধ ছিল। তাহলে কি তোমরা বিশ্বাস করো কিতাবের কোনো অংশের প্রতি আর অবিশ্বাস করো অপর কোনো অংশের প্রতি? তাহলে কি হতে পারে প্রতিফল তোমাদের মধ্যকার যে এরূপ করবে তার? এছাড়া যে, পার্থিব জীবনে লাঞ্চনা আর কিয়ামাত দিবসে তারা নিক্ষিপ্ত হবে কঠিন শাস্তির দিকে। আর তোমাদের আমলের বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন নন।

২:১১৪ :: আর তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর মাসজিদসমূহের ক্ষেত্রে মানা করে তাতে তাঁর নামের স্মরণ করতে আর উহার প্রকৃতিকে বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা করে। তারাই ঐসব লোক যাদের জন্য অবকাশ নেই যে, তাতে প্রবেশ করবে শংকিত হয়ে থাকা ছাড়া। তাদের জন্য আছে দুনিয়াতে লাঞ্চনা আর তাদের জন্য আছে আখিরাতে মহাশাস্তি।

২২:৯-১০ :: সে বাঁকা করে তার ঘাড়কে যেন বিভ্রান্ত করতে পারে আল্লাহর পথ থেকে। তার জন্য আছে দুনিয়াতে লাঞ্চনা আর আমরা তাকে স্বাদ আস্বাদন করাবো কিয়ামাত দিবসে আগুনে দহনের শাস্তি। উহা তোমার নিজ হাতের উপার্জনের কারণে। আর নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের উপর যালিম নন।

পরিশেষে বলা যায় যে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন- এটি অবশ্যই সত্য। তবে এর মানে এ নয় যে, কোনো নীতিমালা ছাড়াই আল্লাহ কাউকে সম্মানিত বা অপমানিত করেন। সুতরাং সম্মান ও অপমান মানুষের জন্য বিনা কারণে লিখে দেয়া ভাগ্য নয়, বরং আল্লাহর অতাৎক্ষণিক ইচ্ছা বা আল্লাহর তৈরি নীতিমালা অনুসারে সম্মান ও অপমান নির্ধারিত হয়।

রাষ্ট্রক্ষমতার উত্থান-পতনের নীতিমালা

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রাষ্ট্রক্ষমতা দেন এবং যার থেকে ইচ্ছা রাষ্ট্রক্ষমতা কেড়ে নেন। এ বিষয়টিকে এভাবে অপব্যাখ্যা করা হয় যে, কে রাষ্ট্রক্ষমতা পাবে এবং কে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হবে তা ভাগ্যের বিষয়, এক্ষেত্রে মানুষের কিছু করার নেই। বরং যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে, তারা আল্লাহর ইচ্ছাতেই রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে, তাই তাদের বিরোধিতা করার মানে হলো- আল্লাহর ইচ্ছার বিরোধিতা করা। যেহেতু তারা আল্লাহর ইচ্ছায় রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে তাই তাদের রাষ্ট্রক্ষমতাকে বৈধ বলে গণ্য করা উচিত। এ অধ্যায়ে আমরা এ ধারণাটির পর্যালোচনার চেষ্টা করবো।

রাষ্ট্রক্ষমতার উত্থান-পতনে আল্লাহর ইচ্ছা বা তাঁর তৈরি নীতিমালা

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর ইচ্ছায় রাষ্ট্রক্ষমতার উত্থান-পতন ঘটে থাকে। এ বিষয়ে নিম্নের আয়াতটিতে অত্যন্ত স্পষ্ট বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে-

৩:২৬ :: বলো, “হে আল্লাহ, সমস্ত রাজ্যের রাজা। আপনি রাজত্ব দান করেন যাকে আপনি (রাজত্ব দানের) ইচ্ছা করেন। আর আপনি রাজত্ব কেড়ে নেন যার থেকে আপনি (রাজত্ব কেড়ে নেয়ার) ইচ্ছা করেন। আর আপনি সম্মানিত করেন যাকে আপনি (সম্মানিত করার) ইচ্ছা করেন। আর আপনি অপমানিত করেন যাকে আপনি (অপমানিত করার) ইচ্ছা করেন। আপনার হাতেই সমস্ত কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

আমরা ইতোমধ্যে কৃত পর্যালোচনায় দেখেছি যে, ‘আল্লাহর ইচ্ছা’ বলতে ‘আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক আইন’-কে বুঝানো হয়। সুতরাং রাজত্ব/রাষ্ট্রক্ষমতা এবং সম্মান পাওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর তৈরি শর্ত বা নীতিমালার অনুসরণের মাধ্যমেই তা পাওয়া যেতে পারে।

কারা রাজত্ব বা খিলাফাহ বা পৃথিবীর উত্তরাধিকারত্ব পাবে সেই বিষয়ে আল্লাহ তাঁর নীতিমালা উল্লেখ করেছেন-

২১:১০৫-১০৬ :: আর নিশ্চয় আমরা লিখে দিয়েছি ‘যাবূর’ নামক কিতাবে স্মরণীয় উপদেশের পর এ কথাটি যে, ‘নিশ্চয় পৃথিবীর ওয়ারিস হবে আমার সৎকর্মশীল বান্দারা’। নিশ্চয় এত আল্লাহর ইবাদাতকারী কওমের জন্য (সর্বজনীন) বার্তা রয়েছে।

আয়াতটিতে ব্যবহৃত ‘সালেহীন’ শব্দের অর্থ হলো যারা কোনো নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের যোগ্যতা রাখে। আর আমলে সালেহ হলো এমন কাজ যা একজনের সঠিক কর্মক্ষমতা বা যোগ্যতার বিকাশ ঘটায়। সুতরাং যারা আল্লাহর প্রদত্ত নীতিমালা অনুসরণ করে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণক্ষমতা অর্জনের যোগ্যতা রাখে তারাই সালেহীন।

এটা সম্ভব যে, সালেহীনদের অভাবে শুধুমাত্র শারীরিক শক্তি ও মানসিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি বা দল রাষ্ট্রক্ষমতায় সমাসীন হয়েছে বা রয়েছে। তারা হতে পারে স্বৈরাচারী, যারা নৈতিক মূল্যবোধকে উপেক্ষা করে। অন্যদিকে যখন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য উপযুক্ত একদল সালেহীন যারা একই সাথে শারীরিক শক্তি, মানসিক দক্ষতা এবং স্থায়ী নৈতিক মূল্যবোধ (কুরআনিক নীতিমালা) ধারণ করে অস্তিত্বে আসে তখন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা যথাসময়ে তাদেরকে প্রদান করা হয়। এটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এবং চিরন্তন নীতি।

২৪:৫৫ :: ওয়াদা দিয়েছেন আল্লাহ তাদেরকে যারা বিশ্বাস করেছে তোমাদের মধ্য থেকে আর সৎকর্ম করেছে; “তিনি অবশ্যই তাদেরকে আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ততা দিবেন পৃথিবীতে, যেমন আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ততা দিয়েছিলেন তাদেরকে যারা ছিলো তাদের আগে। আর প্রতিষ্ঠিত করে দিবেন তাদের জন্য, তাদের (জন্য প্রদত্ত) দ্বীনকে, যা তিনি পছন্দ করেছেন তাদের জন্য। আর তাদেরকে বদলস্বরূপ দিবেন তাদের ভয়-ভীতির পর নিরাপত্তা। তারা আমারই দাসত্ব করবে। তারা শিরক করবে না আমার সাথে কোন কিছুকে। আর যে কুফর করবে উহার পর, তারাই সত্যত্যাগী।

তবে মু’মিনদেরকে তাদের আমলে সালেহের অংশ হিসেবে যথাযথ সামরিক প্রস্তুতিও গ্রহণ করতে হবে। বস্তুত কোনো অপারেশনে সফলতার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও সঠিক পদ্ধতিতে অপারেশন প্রয়োজন।

৮:৬০ :: আর তোমরা প্রস্তুত রাখো তাদের জন্য তোমাদের যথাসাধ্য বস্তুগত শক্তি (অর্থনেতিক শক্তি, সামরিক শক্তি, প্রচার শক্তি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ইত্যাদি)। আর সদাসজ্জিত অশ্বারোহী বাহিনী তথা সজ্জিত সামরিক বাহিনী। তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে উহা দ্বারা আল্লাহর শত্রুদেরকে আর তোমাদের শত্রুদেরকে আর তারা ছাড়াও অন্য এমন শত্রুদেরকে যাদেরকে তোমরা শত্রু  হিসাবে জানো না, আল্লাহ তাদেরকে (তোমাদের শত্রু হিসাবে) জানেন। আর যা তোমরা ব্যয় করো যে কোন কিছু থেকে আল্লাহর পথে, উহার পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে তোমাদেরকে। আর তোমাদেরকে যুলুম করা হবে না।

রাষ্ট্রক্ষমতায় স্থলাভিষিক্ততা বা খিলাফাহ প্রসঙ্গে বানী ইসরাইলের উদাহরণ

২৮:৫-৬ :: আর আমরা ইচ্ছা করি যে, আমরা তাদেরকে অনুগ্রহ করবো যাদেরকে পৃথিবীতে দুর্বল করে রাখা হয়েছে আর তাদেরকে অগ্রগামী বানিয়ে দিতে আর তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিতে। আর আমরা আবাসনের ব্যবস্থা করবো তাদের জন্য পৃথিবীতে আর আমরা দেখাবো ফেরাউনকে ও হামানকে আর তাদের উভয়ের সেনাদলকে তাদের থেকে (বনী ইসরাইল থেকে) যা তারা (ফেরাউন ও হামানরা) আশংকা করতো (বনী ইসরাইলের জাতীয় উত্থান ঘটবে)।

আল্লাহ কিছু ইচ্ছা করলে তা সংঘটিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী। যদি তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ঘটাতে চান, তাহলে তা তাৎক্ষণিকভাবে সংঘটিত হয়। কিন্তু যদি তিনি এরূপ ইচ্ছা করেন যে, কোনো কিছু বিভিন্ন শর্তের মাধ্যমে একটা পর্যায়ক্রমিক ধারাবাহিকতার মাধ্যমে সম্পন্ন করবেন, তাহলে তা সেভাবেই সম্পন্ন হয়।

বানী ইসরাইলকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার ইচ্ছা যে কর্মসূচীর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে তা হলো, নবী মূসাকে একটি ব্যাপক পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিলো যেন তিনি তাদেরকে এজন্য উপযুক্ত করতে নৈতিক প্রশিক্ষণ দেন এবং প্রয়োজনীয় রণনীতি অবলম্বন করেন। নবী মূসার সাথে থাকা বানী ইসরাইলের প্রবীণ প্রজন্ম তাদের মনোভাবে উন্নতি সাধন করতে না পারায় ৪০ বছর উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং তাদের ‘সবর’ গুণ অর্জন করতে পারা নবীন প্রজন্মের মাধ্যমে ‘উতরাধিকারিত্ব’ বা ‘ক্ষমতায় স্থলাভিষিক্ত’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়।

৫:২৬ :: তিনি (আল্লাহ) বললেন, “তাহলে নিশ্চয় উহা নিষিদ্ধ করা হলো তাদের উপর চল্লিশ বছর পর্যন্ত। তারা উদ্ভ্রান্ত/ দিশাহারা হয়ে ঘুরবে পৃথিবীতে। সুতরাং তুমি দু:খ করো না ফাসিক কওমের ব্যাপারে।”

২৬:৫৯ :: এরূপই হয়েছিলো। আর আমরা বনী ইসরাইলকে উহার (ফেরাউনের ধনভান্ডার ও উচ্চ অবস্থানের) উত্তরাধিকারী করে দিয়েছিলাম।

৭:১৩৭ :: আর আমরা উত্তরাধিকারী করে দিয়েছি সেই কওমকে যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো, সেই ভূখন্ডের পূর্বদিকসমূহে আর উহার পশ্চিম দিকসমূহে, যাতে আমরা বরকত দিয়েছি (তথা বরকতময় দেশটির সমগ্র অঞ্চলে)। আর পূর্ণ হয়েছে তোমার রবের উত্তম (ওয়াদার) বাণীসমূহ বানী ইসরাইলের উপর, এ কারণে যে, তারা সবর করেছিলো। আর আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি যা রচনা করছিলো ফেরাউন ও তার কওম আর তারা যেসব আসনে সমাসীন হতো (তাদের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে)।

আল্লাহর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মানুষের কর্ম ও দায়িত্ব

২:২৫১ :: সুতরাং তারা (তালুত ও তার সেনাবাহিনী) তাদেরকে (জালুত ও তার সেনাবাহিনীকে) পরাজিত করেছে আল্লাহর অনুমতিক্রমে। আর হত্যা করেছে দাউদ জালুতকে। আর আল্লাহ তাকে (দাউদকে) দান করেছেন রাজত্ব ও বিজ্ঞতা। আর তাকে (দাউদকে) শিক্ষা দিয়েছেন যা (তাকে শিক্ষা দেয়ার) ইচ্ছা করেছেন। আর যদি আল্লাহ মানবজাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ জগদ্বাসীর প্রতি অনুগ্রহশীল।

৪:৭৫ :: আর তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করছো না? অথচ দুর্বল নির্যাতিত নিষ্পেষিত মানুষ - পুরুষ, নারী ও শিশু, যারা বলে, “আমাদের প্রভু, আমাদেরকে বের করে নিন (উদ্ধার করুন) এই জনপদ থেকে, যার অধিবাসীরা যালিম। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অভিভাবকের ব্যবস্থা করুন এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারীর ব্যবস্থা করুন।”

আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করেন যারা আল্লাহকে সাহায্য করে

আল্লাহকে সাহায্য করা তথা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে সাহায্য করারর অর্থ হলো আল্লাহর পথে রসূলকে সাহায্য করা।

৪৭:৭-৯ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, যদি তোমরা আল্লাহকে (তাঁর দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার বিষয়ে) সাহায্য করো, তাহলে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন, আর তিনি দৃঢ় (বিজয়োপযোগী) করে দেবেন তোমাদের পদক্ষেপকে। আর যারা কুফর করেছে তাদের জন্য দুর্গতি আর তিনি ব্যর্থ করে দেবেন তাদের আমলসমূহ। উহা এ কারণে যে, তারা অপছন্দ করেছে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন উহাকে। তাই তিনি নষ্ট করে দিয়েছেন তাদের আমলসমূহকে।

২২:৪০ :: যাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে তাদের নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে, শুধু এ কারণে যে, তারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের প্রভু’। আর যদি আল্লাহ মানুষকে প্রতিহত না করতেন (তাঁর বিধানের বা প্রাকৃতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে) তাদের এক দল দ্বারা অন্য দলকে, তাহলে অবশ্যই বিধ্বস্ত করা হতো সওয়ামি’ (নৈতিক সংশোধন ও প্রশিক্ষণমূলক স্বল্পকালীন অবস্থানের কেন্দ্রসমূহ বা আশ্রম/মঠ), এবং বিয়া’ (ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি, অঙ্গীকার ও শপথ অনুষ্ঠানের কেন্দ্রসমূহ/ আন্তর্জাতিক চুক্তি ও বাণিজ্যকেন্দ্র) এবং সালাওয়াত (সালাতের বা যোগাযোগ ও সমর্থন যোগানোর কেন্দ্রসমূহ বা উপাসনালয়) এবং মাসাজিদ (মসজিদসমূহ বা সাজদাহ সম্পাদনের কেন্দ্রসমূহ); যাতে স্মরণ করা হয় আল্লাহর নাম অধিক পরিমাণে। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত শক্তিমান ও ক্ষমতাধর।

৫৯:৮ :: মুহাজির ফকিরদের/ অভাবগ্রস্তদের জন্য, যাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে তাদের ঘরবাড়ি থেকে আর তাদের মালসম্পদ থেকে। তারা তালাশ করে আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি, আর তারা সাহায্য করে আল্লাহকে ও তাঁর রসূলকে। উহারা সত্যবাদী।

৫৭:২৫ :: নিশ্চয় আমরা প্রেরণ করেছি আমাদের রসূলদেরকে স্পষ্ট যুক্তিপ্রমাণ সহকারে আর আমরা নাযিল করেছি তাদের সাথে কিতাব ও মীযান/ দাড়িপাল্লা/ মানদন্ড, যেন মানুষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আর তিনি নাযিল করেছেন লোহা/ রাজদন্ড, উহার মধ্যে আছে প্রচন্ড শক্তি আর ব্যাপক উপকারিতা মানবজাতির জন্য। আর যেন আল্লাহ প্রকাশ করেন কে সাহায্য করে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে, (তাঁকে) না দেখা সত্ত্বেও। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিমান ও মহাপরাক্রমশালী।

৬১:৯-১৪ :: তিনিই সেই সত্তা যিনি প্রেরণ করেছেন তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও সত্য জীবনব্যবস্থা সহকারে, উহাকে বিজয়ী করার জন্য প্রতিটি জীবনব্যবস্থার উপরে, যদিও মুশরিকরা উহা অপছন্দ করে। হে ঐসব লোক যারা বিশ্বাস করেছ, আমি কি তোমাদেরকে সন্ধান দেব এমন একটি ব্যবসায়ের ব্যাপারে যা তোমাদেরকে মুক্তি দিবে কষ্টদায়ক শাস্তি থেকে? তোমরা বিশ্বাস করো আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি আর আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো তোমাদের মালসম্পদ ও তোমাদের জানপ্রাণ দ্বারা। উহাই তোমাদের জন্য উত্তম (অর্জন), যদি তোমরা জানো। তিনি ক্ষমা করবেন তোমাদের গুনাহসমূহ আর তিনি তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, জারি হয় যার নিচ অংশে নদীসমূহ, আর স্থায়ী জান্নাতে পবিত্র বাসগৃহসমূহে। আর অন্য যে বিষয়টি তোমরা পছন্দ করো, আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়। হে ঐসব লোক যারা বিশ্বাস করেছ, তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও, যেমন ঈসা ইবনে মারিয়াম হাওয়ারীদেরকে বলেছিল, ‘কে আল্লাহর দিকে আমার সাহায্যকারী হবে?’ হাওয়ারীরা বলেছিল, ‘আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী’। তারপর বনী ইসরাইলের একদল বিশ্বাস করেছিল আর একদল কুফর করেছিল। তারপর আমরা তাদেরকে সাহায্য করেছিলাম যারা বিশ্বাস করেছিল, তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে, ফলে তারা বিজয়ী হয়েছিল।

আল্লাহর সাহায্যের তাৎপর্য ও শর্ত

বৃষ্টি যেমন সেই কৃষকদের উপকৃত করে যারা প্রাকৃতিক কৃষিনীতি অনুযায়ী কাজ করে, অনুরূপভাবে তারাই আল্লাহর সাহায্য দ্বারা উপকৃত হয়, যারা তার শর্ত পূর্ণ করে। যেমন ৮:৬০-৬১, ৮:৬৫-৬৬ নিম্নের আয়াতসমূহে আল্লাহর উপর ভরসার পূর্বে করণীয় বা আল্লাহর অনুমতিক্রমে বিজয়ী হওয়ার জন্য করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

৮:৬০-৬১ :: আর তোমরা তাদের (কাফিরদের) জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা আল্লাহর শত্রু এবং তোমাদের শত্রুকে আতঙ্কিত রাখবে এবং তারা ছাড়া অন্যদেরও যাদের তোমরা জানো না, কিন্তু আল্লাহ জানেন। আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদের দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। আর তারা যদি সন্ধির প্রস্তাব দেয়, তবে তুমি তা গ্রহণ করো এবং আল্লাহর উপর ভরসা করো, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।

৮:৬৫-৬৬ :: হে নবী, মু’মিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো। তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল যোদ্ধা থাকলে তারা দুইশত জন কাফিরের উপর বিজয়ী হবে। আর তোমাদের মধ্যে এক হাজার জন (ধৈর্যশীল) যোদ্ধা থাকলে তারা একহাজার জন কাফিরের উপর বিজয়ী হবে। কারণ তারা (কাফিরগণ) এমন এক সম্প্রদায়, যারা সঠিক বোধ রাখে না। আল্লাহ এখন তোমাদের ভার লাঘব করলেন এবং তিনি জানেন যে, তোমাদের মধ্যে (জ্ঞানগত) দুর্বলতা আছে। তাই তোমাদের মধ্যে একশত জন ধৈর্যশীল যোদ্ধা থাকলে তারা দুইশত জনের উপর বিজয়ী হবে। আর তোমাদের মধ্যে এক হাজার জন (ধৈর্যশীল) যোদ্ধা থাকলে তারা দুই হাজার জনের উপর বিজয়ী হবে। আল্লাহর অনুমতিক্রমে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।

মু’মিনদের ক্ষমতায়নের অন্তর্বর্তীকালে যালেমদের জন্য অবকাশ এবং পরিত্রাণের নির্দেশনা

১০:১১ :: যদি আল্লাহ মানুষের অকল্যাণ তরান্বিত করতেন যেভাবে তারা তাদের কল্যাণ তরান্বিত করতে আগ্রহী, তাহলে অবশ্যই তারা ধ্বংস হয়ে যেত। সুতরাং যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে ঘুরপাক খেতে ছেড়ে দিই।

৭:১৬৫ :: অতঃপর যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, যখন তারা তা ভুলে গেল তখন আমি মুক্তি দিলাম তাদেরকে যারা মন্দ হতে নিষেধ করে। আর যারা যুলম করেছে তাদেরকে কঠিন আযাব দ্বারা পাকড়াও করলাম। কারণ, তারা পাপাচার করত।

৮:২৫ :: তোমরা সেই ফিতনাকে ভয় কর যা তোমাদের মধ্যকার শুধুমাত্র যালিম ও পাপিষ্ঠদেরকেই বিশেষভাবে ক্লিষ্ট করবেনা। তোমরা জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর।

১৬:৬১ :: আর আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের যুলমের কারণে (অনতিবিলম্বে) পাকড়াও করতেন, তবে তাতে (পৃথিবীতে) কোনো বিচরণকারী প্রাণীকেই ছাড়তেন না। তবে আল্লাহ তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেন। যখন তাদের নির্দিষ্ট সময় চলে আসে, তখন এক মুহূর্তও পেছাতে পারে না, এবং আগাতেও পারে না।

উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহ আরো বিভিন্ন আয়াত থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পরীক্ষা করছেন, ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে অনেকে যুলুম করার সুযোগ পায়। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে অনতিবিলম্বে ধ্বংস করে দেন না। বরং তাদের যুলুমের কারণে অনেক অসহায় ব্যক্তি কষ্ট পেলেও তিনি তা থেকে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য তাঁর প্রতি বিশ্বাসীদেরকে লড়াই করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন কিন্তু সরাসরি হস্তক্ষেপে তাদেরকে সহসা উদ্ধার করেন না। অন্যদিকে যদি সেখানে সংশোধনকামী লোকেরা থাকে তা সত্ত্বেও জালিমরা উপদেশ লংঘন করতে থাকে তাহলে এক পর্যায়ে তিনি তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। আর তিনি ন্যায়পন্থীদেরকে উদ্ধার করেন। কিন্তু যদি সেখানে অন্যায় থেকে বাধাদানকারী কেউ না থাকে, তাহলে তিনি এমন আযাব দেন যাতে অন্যায়কারীদের পাশাপাশি যারা নিজেরা সরাসরি ঐ অন্যায়ে জড়িত ছিল না, কিন্তু বাধাও দেয়নি তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেন।

এছাড়া পূর্বে উল্লেখিত আয়াত থেকে প্রতিভাত হয়েছে যে, আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক নিয়মানুসারে জালিমের জুলুমের প্রতিকার এভাবেও হয় যে, মানুষের একদল দ্বারা অন্যদলকে প্রতিহত করা হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, আল্লাহর তৈরি কল্যাণময় নীতিমালার মাধ্যমে তাঁর অতাৎক্ষণিক বা তাৎক্ষণিক ইচ্ছায় রাষ্ট্রক্ষমতায় উত্থান-পতন হয় এবং যাবতীয় বিশৃঙ্খলাকে একটি মৌলিক শৃঙ্খলা-বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আল্লাহর ইচ্ছায় রাষ্ট্রক্ষমতার উত্থান-পতনের মানে এ নয় যে, এক্ষেত্রে মানুষের কোনো করণীয় নেই বা যখন যে-ই ক্ষমতায় থাকুক সেটাকে বৈধ হিসেবে মেনে নিতে হবে বা তার বিরোধিতা করা বা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা যাবে না। বরং রাষ্ট্রক্ষমতার উত্থান-পতনে আল্লাহর ইচ্ছা এজন্য তাঁর বেঁধে দেয়া নীতিমালার সাথে সম্পর্কিত। এর সাথে ভাগ্য বা নিয়তিবাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

হিদায়াত ও পথভ্রষ্টতা বিষয়ক আয়াতসমূহ

তাক্বদীর ও ভাগ্যবাদের ক্ষেত্রে হিদায়াত ও পথভ্রষ্টতা একটি প্রধান আলোচ্য বিষয়। হিদায়াত ও পথভ্রষ্টতা একটি অন্যটির বিপরীত শব্দ এবং অনেক ক্ষেত্রে একই আয়াতে বা পূর্বাপর আয়াতে হিদায়াত ও পথভ্রষ্টতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাই হিদায়াত ও পথভ্রষ্টতা সম্পর্কিত নীতিমালা সম্পর্কে জানার জন্য এ অধ্যায়ে হিদায়াত ও পথভ্রষ্টতা বিষয়ক আয়াতসমূহকে সমন্বিতভাবে উপস্থাপন করা হলো।

১:৬ :: আমাদেরকে সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথের (সিরাতুল মুসতাক্বীম) হিদায়াত দিন।

২:৩-৫ :: যারা বিশ্বাস করে অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি। আর সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যা আমরা তাদেরকে রিজিক্ব দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা বিশ্বাস করে ঐ বিষয়ের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি আর যা নাযিল করা হয়েছে তোমার আগে। আর আখিরাতের প্রতি (জীবনের মৃত্যু পরবর্তী অনিবার্য পরিণতির প্রতি) তারা ইয়াকীন (নিশ্চয়তাবোধ) রাখে। তারাই হিদায়াতের উপর আছে (যা) তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে (এসেছে)। আর তারাই সফলতালাভকারী।

২:১৬ :: তারাই (মুনাফিক্বরা) এমন লোক যারা ক্রয় করেছে পথভ্রষ্টতা, হিদায়াতের পরিবর্তে। সুতরাং লাভজনক হয়নি তাদের ব্যবসায়। আর তারা ছিলো না হিদায়াত গ্রহণকারী।

২:২৬ :: নিশ্চয় আল্লাহ লজ্জাবোধ করেন না পেশ করতে (উহার) উপমা, যা মশা, সেই সাথে (উহার) উপমা যা (ক্ষুদ্রতায়) তার চেয়ে বড় (অর্থাৎ ক্ষুদ্রতর)। সুতরাং ব্যাপার এই যে, যারা বিশ্বাস করেছে তখন তারা জানে নিশ্চয় তা সঠিক তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে। আর ব্যাপার এই যে, যারা অবিশ্বাস করেছে তখন তারা বলে, কি ইচ্ছা করেছেন আল্লাহ এই উপমা দ্বারা? তিনি পথভ্রষ্ট করেন তা (উপমা) দ্বারা অনেককে আর তিনি হিদায়াত করেন তা (উপমা) দ্বারা অনেককে। আর তিনি বিভ্রান্ত করেন না তা দ্বারা ফাসিক্বদের ছাড়া অন্যদেরকে।

২:৫৩ :: আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা মূসাকে দিয়েছি কিতাব ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী (ফুরক্বান তথা তাওরাত) যেন তোমরা হিদায়াত গ্রহণকারী হও।

২:১০৮ :: তোমরা কি ইচ্ছা করো যে, তোমরা প্রশ্ন করবে তোমাদের নিকট প্রেরিত রসূলকে যেমন প্রশ্ন করা হয়েছে মূসাকে ইতিপূর্বে? আর যে বিশ্বাসের বিনিময়ে অবিশ্বাসকে বদলস্বরূপ গ্রহণ করেছে নিশ্চয় সে সরল-সোজা পথ থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছে।

২:১৩৫ :: আর তারা বললো, “তোমরা হয়ে যাও ইয়াহুদ বা নাসারা, তাহলেই তোমরা হিদায়াত পাবে।” বলো, “বরং (গ্রহণ করো) মিল্লাতা ইবরাহীম (ইবরাহীমের ইবাদাতের শিরকমুক্ত প্রকৃতি ও স্বরূপ), সত্যনিষ্ঠ হয়ে। আর সে ছিলো না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।”

২:১৩৭ :: তারপর যদি তারা বিশ্বাস করে তোমাদের বিশ্বাসের অনুরূপ (অর্থাৎ যদি তারাও নবীদের প্রতি তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছাড়াই বিশ্বাস করে), তাহলে তারা হিদায়াত পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে নিশ্চয় তারা বিরোধে লিপ্ত। সুতরাং তাদের বিপক্ষে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

২:১৪২ :: শীঘ্রই বোকা লোকেরা বলবে, “কিসে তাদেরকে (মুসলিমদেরকে) বিমুখ করেছে তাদের ক্বিবলাহ থেকে যার উপর তারা এতদিন ছিলো?” বলো, “আল্লাহরই অধিকারভুক্ত পূর্ব পশ্চিম (সকল দিক)। তিনি হিদায়াত করেন যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথে (সিরাতুল মুসতাক্বীম)।

২:১৪৩ :: আর এভাবে আমরা তোমাদেরকে প্রতিস্থাপন করেছি মধ্যপন্থী উম্মাহরূপে, যেন তোমরা স্বাক্ষী হও মানবজাতির উপর আর রসূল তোমাদের (অর্থাৎ তোমরা যারা তাঁর সমকালের ব্যক্তি তাদের) উপর স্বাক্ষী হয়। আর আমরা (অধ্যাদেশমূলক ওহীর মাধ্যমে) প্রতিস্থাপন করি নি ঐ ক্বিবলাহকে যার উপর তুমি ছিলে, এছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে যে, যেন আমরা প্রকাশ করে দিতে পারি (তাকে) যে রসূলের অনুসরণ করে তার থেকে (পৃথক করে) যে তার দুগোড়ালীর উপর ভর দিয়ে অন্যদিকে ফিরে যায়। আর যদিও তা ছিলো অবশ্যই বড় ধরনের (কষ্টকর) বিষয় কিন্তু আল্লাহ যাদেরকে হিদায়াত করেছেন তাদের উপর নয়। আর আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের বিশ্বাসকে বিনষ্ট করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি স্নেহশীল, দয়ালু।

২:১৫০ :: আর যেখান থেকেই তুমি (মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ) বের হও (তোমার বর্তমান কার্যনির্বাহ যেখান থেকেই করো না কেন), মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখ ফিরাও (যেন তা তোমার অধিকারে আসে কারণ সেটাই সাংবিধানিক বিশ্বকেন্দ্র)। আর যেখানেই তোমরা থাকো উহার দিকে মুখ ফিরাও (মাসজিদুল হারামকে তোমাদের বাস্তব পরিচালনা কেন্দ্ররূপে কার্যকর করার জন্য)। যেন না থাকে মানুষের নিকট তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো বিতর্কের অবকাশ। কিন্তু তাদের মধ্যকার যারা যুলুম করেছে (তারা বিতর্ক করবেই)। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, (বরং) আমাকেই ভয় করো। আর যেন আমি সম্পূর্ণ করি আমার নিয়ামত তোমাদের উপর। আর যেন তোমরা হিদায়াত গ্রহণকারী হও।

২:১৫৫-১৫৭ :: আর অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো (কাফিরদের কারণে উদ্ভুত) কিছু বিষয় দ্বারা যেমন আশংকা আর ক্ষুধা আর সম্পদ, জীবন ও ফলফলাদির ক্ষয়ক্ষতি। আর সবরকারীদেরকে সুসংবাদ দাও। যারা (এমন যে,) যখন তারা মুসীবতগ্রস্ত হয়, তারা বলে, “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে ফিরে যাবো।” তারা (ঐসব লোক) যাদের উপর তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ করা হয় ও দয়া করা হয়। আর তারা হিদায়াত গ্রহণকারী।

২:১৭০ :: যখন তাদেরকে বলা হয়, “তোমরা অনুসরণ করো যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তা।” তারা বলে, “বরং আমরা অনুসরণ করবো যার উপর আমাদের বাপদাদাকে পেয়েছি তা।” তবুও কি, যদি তাদের বাপদাদা কিছুমাত্রও আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ না করে থাকে আর তাই হিদায়াত গ্রহণকারী না হয়?

২:১৭৪-১৭৫ :: নিশ্চয় যারা গোপন করে/ গোপন রাখে আল্লাহ (তাঁর) কিতাব থেকে যা নাযিল করেছেন তা, আর ক্রয় করে তার বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য; তারা খায় না তাদের পেটে আগুন ব্যতীত। আর আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না কিয়ামাত দিবসে। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। আর তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা ঐসব লোক যারা ক্রয় করেছে পথভ্রষ্টতাকে হিদায়াতের পরিবর্তে আর (ক্রয় করেছে) শাস্তিকে ক্ষমার পরিবর্তে। তারপর তারা কতইনা ধৈর্যশীল আগুনের উপর/ আগুন সহ্য করতে!

২:১৯৮ :: তোমাদের উপর গুনাহ নেই এ বিষয়ে যে, তোমরা তালাশ করবে অনুগ্রহ তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে (অর্থাৎ হজ্জের সময় অর্থনৈতিক উপার্জনে গুনাহ নেই)। তারপর যখন তোমরা যাত্রা করো আরাফাত থেকে (মাসজিদুল হারামের দিকে) তখন আল্লাহর স্মরণ করো মাশআরিল হারামের কাছে। আর তাঁর স্মরণ করো যেভাবে তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত করেছেন, যদিও তোমরা ছিলে উহার আগে (হিদায়াত করার আগে) পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত।

২:২১৩ :: মানবজাতি ছিলো এক জাতি। তারপর আল্লাহ সমুত্থিত (প্রেরণ) করেছেন নবীদেরকে সুসংবাদদাতারূপে ও সতর্ককারীরূপে আর নাযিল করেছেন তাদের সাথে কিতাব সঠিক তথ্যসহ যেন তারা মীমাংসা করে মানুষের মধ্যে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করে তাতে। আর তাতে মতভেদ করে নি তারা ছাড়া যাদেরকে তা পৌঁছানো হয়েছে এরপরও যে, তাদের কাছে সুস্পষ্ট যুক্তি-প্রমাণ এসেছে; তাদের একে অন্যের প্রতি বিরুদ্ধাচরণবশত:। তারপর আল্লাহ হিদায়াত করেছেন তাদেরকে যারা বিশ্বাস করেছে উহার প্রসঙ্গে, তারা মতভেদ করেছে সঠিক তথ্য থেকে যে বিষয়ে, তাঁর অনুজ্ঞাক্রমে। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন যাকে (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথে (সিরাতুল মুসতাক্বীম)।

২:২৫৮ :: তুমি কি দেখো নি তার অবস্থা যে ইবরাহীমের সাথে বিতর্ক করেছে তার প্রতিপালক সম্বন্ধে, এজন্য যে, আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন রাজত্ব? যখন ইবরাহীম বললো, “তিনিই আমার প্রভু, যিনি জীবন দেন ও মৃত্যু দেন।” সে বললো, “আমিই জীবিত রাখি (মৃত্যুদন্ড মাফ করে দিই) ও মেরে ফেলি (মৃত্যুদন্ড দিই)।” ইবরাহীম বললো, “তবে নিশ্চয় আল্লাহ সূর্যকে (দৃষ্টিতে) এনে দেন পূর্ব দিক থেকে। তাহলে তুমি এনে দাও উহাকে পশ্চিম দিক থেকে।” তখন সে হতবুদ্ধি হয়ে গেলো যে অবিশ্বাস করেছে। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিম ক্বওমকে।

২:২৬৪ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমরা নষ্ট করো না তোমাদের সদাক্বাত অনুগ্রহের খোঁটা দেয়া ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে, ঐ ব্যক্তির মতো যে ব্যয় করে তার সম্পদ মানুষকে দেখানোর জন্য আর বিশ্বাস করে না আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসে। সুতরাং তার উপমা একটি পাথরের চাতালের (সাথে সম্পর্কিত) উপমার মতো, যার উপর ছিলো মাটি, তারপর তাতে বর্ষিত হয়েছে প্রবল বৃষ্টি, ফলে উহাকে (ধুয়ে) সাফ করে ছেড়েছে। তারা লাভ করতে সক্ষম হবে না যা তারা উপার্জন করেছে তা থেকে (শ্রমলব্ধ ফল থেকে) সামান্য কিছুও। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না (অযৌক্তিকভাবে) অবিশ্বাসী ক্বওমকে।

২:২৭২ :: তোমার উপর দায়বদ্ধতা নেই তাদেরকে হিদায়াত করার। কিন্তু আল্লাহ হিদায়াত করেন যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন। আর যা তোমরা ব্যয় করো (বৈধ) সম্পদ থেকে তা তোমাদের নিজেদের জন্যই। আর তোমরা তো ব্যয় করো না আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ করা ছাড়া (অন্য উদ্দেশ্য)। আর যা তোমরা ব্যয় করো (বৈধ) সম্পদ থেকে তা পূর্ণ করে (ফেরত) দেয়া হবে তোমাদের দিকে। আর তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।

৩:৮ :: আমাদের প্রতিপালক, আমাদের কলবসমূহকে বাঁকা করবেন না যখন আপনি আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন তারপর। আর আমাদেরকে দান করুন আপনার পক্ষ থেকে দয়া। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা।

৩:২০ :: সুতরাং যদি তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে, তাহলে তুমি বলো, “আমি সমর্পণ করেছি আমার সত্তাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে। আর যারা আমার অনুসরণ করে তারাও (আত্মসমর্পণ করেছে)।” আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে ও উম্মীদেরকে (যাদের আসমানী কিতাবের জ্ঞান নেই তাদেরকে) বলো, “তোমরা কি আত্মসমর্পণ করেছো?” তারপর যদি তারা আত্মসমর্পণ করে, তাহলেই তারা হিদায়াত পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে মূলতঃ যথাযথভাবে পৌঁছে দেয়াই (বালাগ) তোমার দায়িত্ব। আর আল্লাহ তাঁর দাসগণের প্রতি দৃষ্টিবান।

৩:৬৯ :: কামনা করে আহলে কিতাবের মধ্য থেকে একদল, যদি তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারতো! আর তারা বিভ্রান্ত করে না তাদের নিজেদেরকে ছাড়া। আর তারা তা অনুভব করে না।

৩:৮৬ :: কিরূপে আল্লাহ হিদায়াত করবেন (এরূপ) কোনো সম্প্রদায়কে যারা অবিশ্বাস করেছে তারা বিশ্বাস করার পর, অথচ তারা সাক্ষ্য দিয়েছিলো যে, এই রসূল সঠিক। আর তাদের কাছে এসেছে স্পষ্ট যুক্তি-প্রমাণ। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিম ক্বওমকে।

৩:৯০ :: নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করেছে তারা বিশ্বাস করার পর, তারপর বাড়িয়ে নিয়েছে অবিশ্বাস, কখনো ক্ববুল করা হবে না তাদের তাওবাহ। আর তারাই পথভ্রষ্ট।

৩:১০১ :: আর কিরূপে তোমরা অবিশ্বাস করবে, অথচ তোমাদের কাছে পাঠ করা হয় আল্লাহর আয়াতসমূহ আর তোমাদের মধ্যে অবস্থান করছে তাঁর রাসূল? আর যে (কুরআন আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে) আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধরে তবে নিশ্চয় তাকে হিদায়াত করা হয় সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথের দিকে (সিরাতুল মুসতাক্বীম)।

৩:১০৩ :: আর তোমরা আঁকড়ে ধরো আল্লাহর রজ্জুকে সবাই একত্র হয়ে। আর তোমরা বিভিন্ন দলে-দলে ভাগ হয়ো না। আর তোমরা স্মরণ করো তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামত, যখন তোমরা ছিলে (একজন অন্যজনের) শত্রু, তারপর তিনি মিলিয়ে দিয়েছেন তোমাদের কলবসমূহের মধ্যে (গভীর সম্পর্ক), তাই তোমরা তাঁর নিয়ামতের দ্বারা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা ছিলে আগুনের চুলার কিনারার উপর তারপর তিনি তোমাদেরকে সরিয়ে এনেছেন তা থেকে। এভাবেই আল্লাহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ যেন তোমরা হিদায়াত গ্রহণ করতে পারো।

৩:১৬৪ :: নিশ্চয় আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন মু’মিনদের উপর যখন তিনি সমুত্থিত (প্রেরণ) করেছেন তাদের মধ্যে একজন রসূল তাদের নিজেদের মধ্য থেকে। যে পাঠ করে তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ, আর তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে, আর তাদেরকে শিক্ষাদান করে কিতাব ও হিকমাত। যদিও তারা ছিলো এর আগে স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে।

৪:২৬ :: আল্লাহ ইচ্ছা করেন স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে তোমাদের জন্য আর তোমাদেরকে হিদায়াত করতে তোমাদের আগের লোকদের (জন্য আল্লাহর নির্ধারিত) সুন্নাতসমূহ/ নীতিমালা আর তোমাদের তাওবাহ ক্ববুল করতে। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞ।

৪:৪৪ :: তুমি কি দেখো নি তাদের অবস্থা যাদেরকে কিতাবের অংশবিশেষ দেয়া হয়েছে? (অর্থাৎ ইহুদী খৃস্টানদেরকে)। তারা ক্রয় করে পথভ্রষ্টতা আর তারা ইচ্ছা করে যে, তোমরা যেন পথভ্রষ্ট হয়ে যাও সঠিক পথ সম্পর্কে।

৪:৬০ :: তুমি কি দেখো নি তাদের অবস্থা যারা দাবি করে যে, তারা বিশ্বাস করেছে উহার প্রতি যা তোমরা প্রতি নাযিল করা হয়েছে আর ঐসবের প্রতি যা তোমার আগে নাযিল করা হয়েছে? তারা ইচ্ছা করে যে, তারা বিচারপ্রার্থী হবে তাগূতের কাছে। অথচ নিশ্চয় তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো উহার (তাগুতের) প্রতি কুফর করতে/ তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করতে। আর শয়তান ইচ্ছা করে তাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে, সুদূর পথভ্রষ্টতায়।

৪:৬৬-৬৮ :: আর যদি নিশ্চয় আমরা তাদের উপর বিধিবদ্ধ করে দিতাম যে, তোমরা হত্যা করো তোমাদের নিজেদেরকে অথবা তোমরা বেরিয়ে যাও তোমাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে, তাহলে তারা তা পালন করতো না, তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া। আর যদি বাস্তবে তারা পালন করতো যা পালন করার জন্য তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়, তাহলে নিশ্চয় তা তাদের জন্য কল্যাণকর, আরো হতো মনের স্থিরতায় দৃঢ়তর। আর তখন আমরা তাদেরকে দিতাম আমাদের পক্ষ থেকে মহাপুরস্কার। আর আমরা তাদেরকে হিদায়াত করতাম সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথ (সিরাতুল মুসতাক্বীম)।

৪:৮৮ :: তোমাদের কী অধিকার আছে যে, মুনাফিকদের ব্যাপারে তোমরা দুই দল হয়ে যাবে? অথচ আল্লাহ তাদেরকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন তাদের অন্যায় উপার্জনের কারণে। তোমরা কি ইচ্ছা করো যে, তোমরা তাদেরকে হিদায়াত করবে যাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করে দিয়েছেন? আর যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করে দেন তারপর তুমি পাবে না তার জন্য কোনো পথ।

৪:৯৮ :: ঐ সব দুর্বল-নির্যাতিত-নিষ্পেষিতরা ছাড়া - পুরুষ, নারী ও শিশুদের মধ্য থেকে যারা সক্ষম হয় না কোনো উপায় অবলম্বনের আর তারা পথের হিদায়াত পায় নি (কোন পথ দিয়ে হিজরত বা স্বদেশত্যাগ করবে সেই নির্দেশনা পায় নি)।

৪:১১৩ :: আর যদি না হতো আল্লাহর অনুগ্রহ তোমার উপর আর (না হতো) তাঁর দয়া. তাহলে তো সাহস করেই ফেলেছিলো তাদের মধ্যকার একদল তোমাকে পথভ্রষ্ট করতে। আর তারা তো পথভ্রষ্ট করবে না তাদের নিজেদেরকে ছাড়া অন্যদেরকে। আর তারা তোমার ক্ষতি করতে পারবে না, কিছুমাত্রও। আর আল্লাহ নাযিল করেছেন তোমার উপর কিতাব ও হিকমাত। আর তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন (এমন বিষয়) যা তুমি জানতে না। আর আল্লাহর অনুগ্রহ তোমার উপর অনেক বড়।

৪:১১৫ :: আর যে রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এরপরও যে, সুস্পষ্ট হয়ে গেছে তার কাছে হিদায়াত, আর অনুসরণ করে মু’মিনদের অনুসৃত পথ (কুরআনের পথ) ছাড়া অন্য পথ; আমরা তাকে সেদিকে ফিরিয়ে দেবো যেদিকে সে ফিরে গেছে। আর আমরা তাকে জ্বালাবো জাহান্নামে। আর তা অত্যন্ত মন্দ অবস্থান।

৪:১১৬ :: নিশ্চয় আল্লাহ মাফ করেন না তাঁর সাথে শিরক করার গুনাহ আর তিনি মাফ করেন উহা ছাড়া অন্য গুনাহ যাকে তিনি (মাফ করার) ইচ্ছা করেন। আর যে শিরক করে আল্লাহর সাথে নিশ্চয় সে পথভ্রষ্ট হয় সুদূর পথভ্রষ্টতায়।

৪:১১৮-১১৯ :: আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অভিশাপ দিয়েছেন। আর সে (শয়তান) বলেছিলো, “নিশ্চয় আমি গ্রহণ করবো আপনার দাসগণের থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ। নিশ্চয় আমি তাদেরকে বিভ্রান্ত করবো আর নিশ্চয় আমি তাদেরকে আশা-আকাঙ্ক্ষা দিবো আর নিশ্চয় আমি তাদেরকে আদেশ দিবো সুতরাং তারা ছেদ করবে গবাদি পশুর কানসমূহ আর নিশ্চয় আমি তাদেরকে আদেশ দিবো সুতরাং তারা আল্লাহর সৃষ্টির সৃষ্টিগত প্রকৃতিকে বিকৃত করবে/ আল্লাহর সৃষ্টিকে তার সৃষ্টিগত প্রকৃতির বিপরীতে ব্যবহার করবে। আর যে গ্রহণ করে শয়তানকে অভিভাবক হিসাবে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে {অর্থাৎ যে আল্লাহকে অভিভাবক বানায় না, বরং শয়তানকে অভিভাবক বানায়}, নিশ্চয় সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুস্পষ্ট ক্ষতিতে।

৪:১৩৬ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমরা বিশ্বাস করো আল্লাহর প্রতি, আর তাঁর রাসূলের প্রতি, আর ঐ কিতাবের প্রতি যা তিনি নাযিল করেছেন তাঁর রাসূলের প্রতি, আর ঐ কিতাবের প্রতিও যা তিনি নাযিল করেছেন (তোমাদের সময়ের) আগে। আর যে অবিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি আর তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি আর তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি আর তাঁর রসূলগণের প্রতি আর আখিরাত দিবসের প্রতি, নিশ্চয় সে পথভ্রষ্ট হয়েছে সুদূর পথভ্রষ্টতায়।

৪:১৩৭ :: নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করেছে তারপর অবিশ্বাস করেছে তারপর বিশ্বাস করেছে তারপর অবিশ্বাস করেছে তারপর বাড়িয়ে নিয়েছে অবিশ্বাস, আল্লাহ তাদেরকে মাফ করবেন না আর তাদেরকে হিদায়াত করবেন না সঠিক পথ।

৪:১৪২-১৪৩ :: নিশ্চয় মুনাফিকগণ আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায় অথচ তিনিই তাদেরকে ধোঁকায় রেখেছেন। আর যখন তারা দাঁড়ায় সালাতের জন্য, তারা দাঁড়ায় অনাগ্রহের সাথে, মানুষকে দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অত্যন্ত অল্পই স্মরণ করে। তারা ঐ অবস্থার মধ্যেই দোদুল্যমান, তারা এদের দিকেও না আর তারা ওদের দিকেও না। আর যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন তুমি পাবে না তার জন্য কোনো পথ।

৪:১৬৭ :: নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করেছে আর বাধা দিয়েছে আল্লাহর পথ থেকে নিশ্চয় তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে সুদূর পথভ্রষ্টতায়।

৪:১৬৮-১৬৯ :: নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করেছে আর যুলুম করেছে আল্লাহ তাদেরকে মাফ করবেন না। আর তাদেরকে হিদায়াত করবেন না কোনো তরিকা/পথ। জাহান্নামের তরিকা/পথ ছাড়া। তারা তাতে স্থায়ী হবে চিরকাল। আর উহা আল্লাহর জন্য সহজ।

৪:১৭৫ :: তারপর যারা বিশ্বাস করেছে আল্লাহর প্রতি আর তাঁকে (আল্লাহকে) আঁকড়ে ধরেছে, শীঘ্রই তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন তাঁর পক্ষ থেকে দয়া ও অনুগ্রহের মধ্যে। আর তাদেরকে হিদায়াত করবেন তাঁর দিকে সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথে (সিরাতুল মুসতাক্বীম)।

৪:১৭৬ :: তারা তোমার কাছে ফতোয়া জানতে চায়, বলো, আল্লাহ তোমাদেরকে ফতোয়া জানাচ্ছেন, আল-কালালাহর বিষয়ে। যদি কোনো পুরুষ (male human) মৃত্যুবরণ করে যার সন্তান (পুত্র/কন্যা) নেই, আর তার একজন বোন থাকে, তাহলে তার (সেই বোনের) জন্য ১/২, যা (যতটুকু সম্পদ) সে ছেড়ে গিয়েছে উহা থেকে। আর (বিপরীতক্রমে) সে (ভাইটি) তার (বোনটির) ওয়ারিস হবে, যদি তার (সেই ভাইটির) সন্তান (পুত্র/কন্যা) না থাকে। তারপর যদি তারা (ভাই-বোন) হয় দুইজন, তাহলে তাদের দুইজনের জন্য ২/৩, যা (যতটুকু সম্পদ) সে ছেড়ে গিয়েছে উহা থেকে। আর যদি তারা হয় ভাই-বোন, পুরুষগণ (men/ male human) ও নারীগণ (women/ female human), তাহলে এক পুরুষের (male) জন্য দুই নারীর (female) অংশের মতো। আল্লাহ স্পষ্টভাবে বিশদ বর্ণনা করছেন তোমাদের জন্য, পাছে তোমরা পথভ্রষ্ট/বিভ্রান্ত হবে। আর আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে জ্ঞানী।

৫:১২ :: আর নিশ্চয় আল্লাহ গ্রহণ করেছেন বানী ইসরাইলের প্রতিশ্রুতি। আর আমরা সমুত্থিত করেছি তাদের মধ্য থেকে বারোজন অধিনায়ক। আর আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি, যদি তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো আর তোমরা যাকাত (পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করো আর তোমরা আমার রসূলগণের প্রতি বিশ্বাস করো আর তোমরা তাদের শক্তি যোগাও আর তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তাহলে নিশ্চয় আমি মোচন করবো তোমাদের থেকে তোমাদের মন্দ কাজগুলো আর নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে প্রবেশ করাবো জান্নাতে, জারি হয় যার নিচ অংশে নদীসমূহ। অন্যদিকে যে অবিশ্বাস করেছে উহার পরও (প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার পরও) তোমাদের মধ্য থেকে, নিশ্চয় সে পথভ্রষ্ট হয়েছে সরল-সোজা পথ থেকে।

৫:১৬ :: উহা (নূর ও কিতাবুম মুবীন) দ্বারা আল্লাহ হিদায়াত করেন তাকে যে অনুসরণ করে তাঁর সন্তুষ্টি, (হিদায়াত করেন) শান্তির পথ। আর তিনি তাদেরকে বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, তাঁর অনুজ্ঞাক্রমে। আর তিনি তাদেরকে হিদায়াত করেন সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথের দিকে (সিরাতুল মুসতাক্বীম)।

৫:৫১ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমরা গ্রহণ করো না ইয়াহুদকে ও নাসারাকে, বন্ধু/অভিভাবক হিসাবে। তাদের একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধু/অভিভাবক বানাবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিম ক্বওমকে।

৫:৬০ :: বলো, “আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেবো উহার চেয়ে মন্দ প্রতিফলের সংবাদ যা আল্লাহর নিকট আছে? যাকে আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন আর তার উপর গযব আপতিত করেছেন আর বানিয়ে দিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে বানর ও শুকর। আর যে দাসত্ব করেছে তাগুতের; উহারাই অত্যন্ত মন্দ তাদের অবস্থানে আর সরল-সোজা পথ থেকে অতিমাত্রায় পথভ্রষ্ট।

৫:৬৭ :: হে রসূল, প্রচার করো/ পৌঁছে দাও যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে (কুরআন)। আর যদি তুমি তা না করো তাহলে তুমি প্রচার করলে না/ পৌঁছে দিলে না তাঁর বার্তা (কুরআন)। আর আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন মানুষের কবল থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন না কাফির ক্বওমকে।

৫:৭৭ :: বলো, “হে আহলে কিতাব, তোমরা বাড়াবাড়ি করো না তোমাদের জীবনব্যবস্থার ব্যাপারে অন্যায়ভাবে। আর তোমরা অনুসরণ করো না এমন কোনো ক্বওমের প্রবৃত্তির, যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে ইতোপূর্বে এবং পথভ্রষ্ট করেছে অনেককে এবং পথভ্রষ্ট হয়েছে সরল-সোজা পথ থেকে।

৫:১০৪ :: আর যখন তাদেরকে বলা হয়, “তোমরা এসো আল্লাহ যা নাযিল করেছেন উহার (কুরআনের) দিকে ও রসূলের দিকে।” তখন তারা বলে, “আমাদের জন্য উহাই যথেষ্ট যার উপর আমরা পেয়েছি আমাদের বাপদাদাকে। তবুও কি, যদিও তাদের বাপদাদা (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান রাখতো না কিছুমাত্রও, আর তাই তারা হিদায়াত গ্রহণকারীও ছিলো না?

৫:১০৫ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমাদের উপর দায়িত্ব তোমাদের নিজেদের। তোমাদেরকে ক্ষতি করতে পারবে না যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে, যখন তোমরা হিদায়াতের উপর থাকবে। আল্লাহরই দিকে ফিরে যেতে হবে তোমাদের সকলকে। তারপর তিনি জানিয়ে দিবেন তোমাদেরকে ঐ বিষয়ে যা তোমরা করতে।

৫:১০৮ :: উহাই (দ্বিপাক্ষিক সাক্ষ্য-পদ্ধতি) নিকটতর যে, তারা সঠিক সাক্ষ্য দেবে অথবা তারা ভয় করবে যে, ফিরিয়ে দেয়া হবে তাদের শপথকে (প্রথম দুজনের শপথকে), তাদের শপথের পরে (পরের দুজনের শপথের পরে)। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর তোমরা শুনো। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না ফাসিক ক্বওমকে।

৬:৩৫ :: আর যদি তোমার উপর বড় ধরনের (কষ্টকর) বিষয় হয় তাদের কর্তৃক তোমাকে উপেক্ষা করা, তাহলে যদি তুমি পারো তবে তালাশ করো পৃথিবীতে কোনো সুড়ঙ্গ অথবা আসমানে উঠার কোনো সিঁড়ি, তারপর তাদেরকে এনে দাও কোনো নিদর্শন। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে তাদেরকে একত্র করতেন হিদায়াতের উপর। সুতরাং তুমি হয়ো না মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত।

৬:৩৯ :: আর যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে, তারা বধির ও বোবা, (তারা আছে) অন্ধকারের মধ্যে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে পথভ্রষ্ট করেন আর তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে রাখেন সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথের উপর (সিরাতুল মুসতাক্বীম)।

৬:৫৬ :: বলো, “নিশ্চয় আমাকে নিষেধ করা হয়েছে যেন না আমি তাদের দাসত্ব করি যাদেরকে তোমরা ডাকো আল্লাহ ছাড়া।” বলো, “আমি অনুসরণ করি না তোমাদের প্রবৃত্তির। নিশ্চয় আমি পথভ্রষ্ট হবো (তা করলে) তখনি, আর তাহলে আমি থাকবো না হিদায়াত গ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।”

৬:৭১ :: বলো, “আমরা কি ডাকবো আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে, যারা আমাদের কোনো উপকার করতে পারে না আর আমাদের কোনো অপকারও করতে পারে না? আর আমরা কি উল্টোদিকে ফিরে যাবো আমাদের গোড়ালীসমূহের উপর ভর দিয়ে এরপরও যখন আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন, (আমরা কি ফিরে যাবো) তার মতো যাকে বিভ্রমে ফেলে দিয়েছে শয়তান, পৃথিবীতে সে দিশেহারা হয়ে ঘুরছে? তার সাথীগণ তাকে আহবান করছে হিদায়াতের দিকে, এই বলে যে, এসো আমাদের কাছে।” বলো, “নিশ্চয় আল্লাহর হিদায়াত, উহাই একমাত্র হিদায়াত। আর আমরা আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যেন আমরা আত্মসমর্পণ করি বিশ্বপ্রভুর উদ্দেশ্যে।”

৬:৭৪ :: আর যখন ইবরাহীম তার পিতা আযারকে বললো, “আপনারা কি গ্রহণ করেছেন মূর্তিগুলোকে ইলাহ হিসাবে? নিশ্চয় আমি দেখছি আপনাকে আর আপনার ক্বওমকে স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে।”

৬:৭৭ :: তারপর যখন (আরেক রাতে) সে (ইবরাহীম) চাঁদকে উজ্জলরূপে উদীয়মান দেখলো, তখন সে বললো, “ইহাই আমার প্রভু।” তারপর যখন তা অস্তমিত হয়ে গেলো তখন সে বললো, “নিশ্চয় যদি আমাকে হিদায়াত না করেন আমার প্রভু, তাহলে আমি হবো পথভ্রষ্ট ক্বওমের অন্তর্ভুক্ত।”

৬:৮০ :: আর তার ক্বওম তার সাথে বিতর্ক করলো। সে বললো, “তোমরা কি আমার সাথে বিতর্ক করছো আল্লাহর ব্যাপারে? অথচ নিশ্চয় তিনি আমাকে হিদায়াত করেছেন। আর আমি তাদেরকে ভয় করি না যাদেরকে তোমরা শরিক করো তাঁর সাথে। এছাড়া যে, ইচ্ছা করেন আমার প্রভু কোনো বিষয়। পরিব্যাপ্ত করেছেন আমার প্রভু সবকিছুকে, জ্ঞানে (অর্থাৎ আমার প্রভুর জ্ঞান সকল কিছুর উপর পরিব্যাপ্ত)। তোমরা কি তাঁকে স্মরণ করবে না?”

৬:৮২ :: যারা বিশ্বাস করেছে আর মিশায় নি তাদের বিশ্বাসকে যুলুমের সাথে, তারাই এমন লোক যাদের জন্য আছে নিরাপত্তা আর তারাই হিদায়াত গ্রহণকারী।

৬:৯০ :: তারাই (পূর্ববর্তী নবী-রসূলগণ) এমন লোক যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত করেছেন, সুতরাং তুমি তাদের (অনুসৃত) হিদায়াতের অনুসরণ করো। বলো, “আমি তোমাদের কাছে চাই না উহার (কুরআনের প্রচারের) জন্য কোনো পারিশ্রমিক। উহা (কুরআন) নয় সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য ‘যিকর’ (স্মরণীয় তথ্য ও বিধি-বিধান) ছাড়া কিছু।”

৬:৯৭ :: আর তিনিই সেই সত্তা যিনি স্থাপন করেছেন তোমাদের জন্য নক্ষত্রকে, যেন তোমরা পথের হিদায়াত (দিশা) পাও উহার দ্বারা, স্থলভাগের ও জলভাগের অন্ধকারসমূহের মধ্যে। নিশ্চয় আমরা বিস্তারিত বর্ণনা করেছি আমাদের আয়াতসমূহকে সেই ক্বওমের জন্য যারা জ্ঞান অর্জন করে।

৬:১১৬-১১৭ :: আর যদি তুমি আনুগত্য করো পৃথিবীবাসীদের অধিকাংশের, তারা তোমাকে পথভ্রষ্ট করবে আল্লাহর পথ থেকে। তারা অনুসরণ করে না অনুমান ছাড়া অন্য কিছু। আর তারা যৌক্তিক কিছু করে না জল্পনা-কল্পনা করা ছাড়া। নিশ্চয় তোমার প্রভু পরিজ্ঞাত কে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে তাঁর পথ থেকে? আর তিনি পরিজ্ঞাত হিদায়াত গ্রহণকারীদের সম্বন্ধে।

৬:১১৯ :: আর তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা খাবে না সেই খাদ্য থেকে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে যার উপর। আর নিশ্চয় তিনি বিস্তারিত জানিয়ে দিয়েছেন তোমাদের জন্য, যা তিনি হারাম করেছেন তোমাদের উপর, তোমরা নিরুপায় হয়ে তা খেতে বাধ্য হওয়া ছাড়া। আর নিশ্চয় অধিকাংশ লোক অন্যকে বিভ্রান্ত করে তাদের প্রবৃত্তি দ্বারা, (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান না থাকার কারণে। নিশ্চয় তোমার প্রভু পরিজ্ঞাত সীমালংঘনকারীদের সম্বন্ধে।

৬:১২৫ :: সুতরাং যাকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন যে, তাকে হিদায়াত করবেন, প্রশস্ত করে দেন তার মস্তিষ্ক ইসলামের জন্য। আর যাকে তিনি ইচ্ছা করেন যে, তাকে পথভ্রষ্ট করবেন, বানিয়ে দেন তার মস্তিষ্ককে অত্যন্ত সংকীর্ণ, যেন (সে ইসলামের অনুসরণ করার অর্থ হলো) সে অতি কষ্টে আরোহন করতে হচ্ছে আকাশের দিকে। এভাবে আল্লাহ চাপিয়ে দেন অপবিত্রতা/ কলুষতা তাদের উপর যারা বিশ্বাস করে না।

৬:১৪০ :: নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা হত্যা করেছে তাদের সন্তানদেরকে বোকামীবশত: (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান না থাকার কারণে; আর হারাম করেছে যা আল্লাহ তাদেরকে রিজিক্বস্বরূপ দিয়েছেন, মিথ্যা আরোপ করে আল্লাহর উপর। নিশ্চয় তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে আর তারা ছিলো না হিদায়াত গ্রহণকারী।

৬:১৪৪ :: আর উট শ্রেণী থেকে দুইটি জোড়া আর গরু শ্রেণী থেকে দুইটি জোড়া। বলো, “নর দুটিকেই কি তিনি হারাম করেছেন নাকি মাদী দুটিকে নাকি উহাকে যা মাদী দুটির গর্ভে রয়েছে? নাকি তোমরা ছিলে সাক্ষী, যখন আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন উহার সম্পর্কে? সুতরাং তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট করার জন্য (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান না থাকার দরুন? নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিম ক্বওমকে।”

৬:১৪৯ :: বলো, “আল্লাহরই কাছে চূড়ান্ত যুক্তি-প্রমাণ। সুতরাং যদি তিনি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তোমাদের সকলকে হিদায়াত করতেন।”

৬:১৬১ :: বলো, “নিশ্চয় আমাকে হিদায়াত করেছেন আমার প্রভু, (হিদায়াত করেছেন) সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথ (সিরাতুল মুসতাক্বীম), প্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থা, একনিষ্ঠ ইবরাহীমের মিল্লাত (ইবাদাতের স্বরূপ ও প্রকৃতি)। আর সে (ইবরাহীম) ছিলো না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।”

৭:৩০ :: একদলকে তিনি হিদায়াত করেছেন আর একদল হক্বদার হয়েছে তাদের উপর পথভ্রষ্টতা চাপিয়ে নেয়ার। (কারণ) তারা গ্রহণ করেছে শয়তানদেরকে অভিভাবকরূপে আল্লাহকে বাদ দিয়ে। আর তারা হিসাব করে নিয়েছে যে, তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত।

৭:৩৮ :: তিনি (আল্লাহ) বলবেন, “তোমরা প্রবেশ করো সেই উম্মাতসমূহের মধ্যে ইতোমধ্যেই যারা (মৃত্যু বা নিহত হওয়ার মাধ্যমে) গত হয়েছে তোমাদের আগে, জ্বিন ও মানুষের মধ্য থেকে, (জাহান্নামের) আগুনে।” যখনই প্রবেশ করবে কোনো উম্মাত তখন তারা তার পূর্ববর্তী উম্মাতকে অভিশাপ দিতে থাকবে। শেষ পর্যন্ত যখন উহাতে পেয়ে যাবে সকলকে, তখন বলবে তাদের পরবর্তী উম্মাতগুলো তাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগুলোর প্রসঙ্গে, “হে আমাদের প্রভু, এরাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। সুতরাং তাদেরকে দিন (জাহান্নামের) আগুনের দ্বিগুণ শাস্তি।” তিনি (আল্লাহ) বলবেন, “প্রত্যেকের জন্যই আছে দ্বিগুণ শাস্তি। কিন্তু তোমরা কোন জ্ঞানই রাখো না।”

৭:৪২-৪৩ :: আর যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে। আমরা কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যের বেশি দায়িত্বভার অর্পণ করি না। তারাই জান্নাতবাসী হবে। তারা তাতে স্থায়ী হবে। আর আমরা দূর করে দিয়েছি তাদের মনে থাকা ঈর্ষা। প্রবাহিত হয় উহার (জান্নাতের) নিচ অংশে নদীসমূহ। আর তারা বলবে, “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন এই পথ। আর আমরা তো এমন ছিলাম না যে আমরা নিজেরাই হিদায়াত পেতে পারতাম যদি না হিদায়াত করতেন আল্লাহ (অর্থাৎ আল্লাহ হিদায়াত না করলে আমরা হিদায়াত পেতাম না)। নিশ্চয় আমাদের কাছে এসেছে আমাদের প্রভুর রসূলগণ সত্য সহকারে।” তাদেরকে ডেকে বলা হবে যে, “এই-ই জান্নাত, তোমাদেরকে উহার উত্তরাধিকারী করা হয়েছে, তোমরা যা করতে তার কারণে।”

৭:৫৯-৬১ :: নিশ্চয় আমরা প্রেরণ করেছি নূহকে তার ক্কওমের প্রতি। তখন সে বললো, “হে আমার ক্বওম, তোমরা আল্লাহরই দাসত্ব করো। তোমাদের কোনো ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। নিশ্চয় আমি ভয় করি তোমাদের উপর শাস্তি আপতিত হওয়ার, এক মহাদিবসে।” (জবাবে) তার কওমের মধ্যকার প্রধানগণ বললো, “নিশ্চয় আমরা তোমাকে দেখছি স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে।” সে (নূহ) বললো, “হে আমার ক্বওম, আমার মধ্যে কোনো পথভ্রষ্টতা নেই। বরং আমি বিশ্বপ্রভুর রসূল।”

৭:১০০ :: তাদেরকে তাদের পূর্ববর্তী যেসব অধিবাসীর উত্তরাধিকারী করা হয়েছিলো তাদেরকে কি (এ বিষয়টি) হিদায়াত করে নি যে, যদি আমরা ইচ্ছা করি তাহলে আমরা তাদেরকে শাস্তি দেবো তাদের পাপসমূহের কারণে, আর আমরা মোহর লাগিয়ে দেবো তাদের কলবসমূহের উপর, সুতরাং তারা (সত্যভাষণ) শুনবে না।

৭:১৪৮-১৪৯ :: আর গ্রহণ করেছে মূসার ক্বওম তার অনুপস্থিতিতে তাদের অলংকারসমূহ দ্বারা নির্মিত বাছুরের পুতুলকে (উপাস্যরূপে), যা ‘হাম্বা’ আওয়াজ দিতো। তারা কি দেখে নি যে, উহা তাদের সাথে কথা বলে না আর তাদেরকে পথের হিদায়াত করে না। তবুও তারা উহাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে আর বস্তুতই তারা ছিলো জালেম। আর যখন তাদের ভুল ভেঙ্গেছে আর তারা দেখেছে যে, তারা নিশ্চয় পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছে, তখন তারা বললো, “যদি আমাদেরকে দয়া না করেন আমাদের প্রভু, আর আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, তাহলে নিশ্চয় আমরা হয়ে যাবো ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।”

৭:১৫৮ :: বলো, “হে মানুষ, নিশ্চয় আমি আল্লাহর রসূল তোমাদের সকলের জন্য, যিনি (আল্লাহ) সেই সত্তা, যাঁর ইখতিয়ারভুক্ত আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব। কোনো ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। তিনিই জীবন দেন আর তিনিই মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা বিশ্বাস করো আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলান-নবীর প্রতি যিনি উম্মী, যিনি বিশ্বাস করেন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর বাণীর প্রতি। তোমরা তাঁকে (রসূলকে) অনুসরণ করো যেন তোমরা হিদায়াত গ্রহণ করতে পারো।”

৭:১৫৯ :: আর মূসার ক্বওমের মধ্যে ছিলো একটি উম্মাত, যারা হিদায়াত করে সত্যের দ্বারা আর উহা দ্বারা (সত্য দ্বারা) তারা ন্যায়বিচার করে।

৭:১৭৮-১৭৯ :: যাকে হিদায়াত করেন আল্লাহ, সে-ই হিদায়াত গ্রহণকারী। আর যাদেরকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। আর নিশ্চয় আমরা উপযোগী করেছি জাহান্নামের জন্য অনেককে, জ্বিনদের মধ্য থেকে আর মানুষের মধ্য থেকে। তাদের আছে কলবসমূহ কিন্তু তারা উহা দ্বারা উপলব্ধি করে না, আর তাদের আছে চোখসমূহ কিন্তু তারা উহা দ্বারা দেখে না, আর তাদের আছে কানসমূহ কিন্তু তারা উহা দ্বারা শুনে না। তারা গবাদি পশুর মতো বরং তারা অত্যধিক পথভ্রষ্ট। তারাই উদাসীন।

৭:১৮১ :: আর তাদের মধ্যে (জ্বিন ও মানুষের মধ্যে) আমরা সৃষ্টি করেছি একটি উম্মাত যারা হিদায়াত করে সত্যের দ্বারা আর উহা (সত্য) দ্বারা তারা ন্যায়বিচার করে।

৭:১৮৬ :: আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোনো হিদায়াতকারী নেই। আর তিনি তাদেরকে ছেড়ে দেন তাদের বিদ্রোহের মধ্যে তারা উদ্ভ্রান্ত/ দিশেহারা হয়ে ঘুরতে থাকে।

৭:১৯৩ :: আর যদি তোমরা তাদেরকে (মুশরিকদেরকে) আহবান করো হিদায়াতের দিকে, তারা তোমাদের অনুসরণ করে না। তোমাদের জন্য সমান যে, তোমরা কি তাদেরকে আহবান করো নাকি তোমরা নীরবতা অবলম্বনকারী হয়ে থাকো।

৭:১৯৮ :: আর যদি তোমরা তাদেরকে (মুশরিকদেরকে) আহবান করো হিদায়াতের দিকে, তারা তা শুনে না। আর তুমি তাদেরকে দেখো তারা তাকাচ্ছে তোমার দিকে, অথচ তারা দেখতে পায় না।

৯:১৮ :: নিশ্চয় তারাই ব্যবস্থাপনা করবে (ব্যবস্থাপনার অধিকার রাখে) আল্লাহর মসজিদসমূহের, যারা বিশ্বাস করেছে আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি আর সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যাকাত (পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করে আর কাউকে ভয় করে না আল্লাহকে ছাড়া। ঐসব লোকের ব্যাপারেই আশা করা যায় যে, তারা থাকবে হিদায়াত গ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

৯:১৯ :: তোমরা কি বিবেচনা করেছো হাজীদেরকে পানি পান করানো আর মাসজিদুল হারামের ব্যবস্থাপনা করা ঐ ব্যক্তির কাজের সমান যে বিশ্বাস করেছে আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি আর (এর ভিত্তিতে) আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেছে? আল্লাহর কাছে তারা দুজন সমান নয়। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিম ক্বওমকে।

৯:২৪ :: বলো, “যদি হয় তোমাদের পিতারা আর তোমাদের সন্তানেরা আর তোমাদের ভাইয়েরা আর তোমাদের স্বামীরা/স্ত্রীরা আর তোমাদের জ্ঞাতিগোষ্ঠী আর তোমরা যে সম্পদ উপার্জন করেছো সেই সম্পদসমূহ আর ব্যবসায় বাণিজ্য তোমরা ভয় করো যার মন্দা পড়ার ব্যাপারে আর বাসগৃহসমূহ যা তোমরা পছন্দ করো; অধিক ভালোবাসার পাত্র তোমাদের কাছে আল্লাহর চেয়ে আর তাঁর রসূলের চেয়ে আর তাঁর (আল্লাহর) পথে সংগ্রাম করার চেয়ে; তাহলে তোমরা অপেক্ষা করো যতক্ষণ না আল্লাহ দেন তাঁর চূড়ান্ত আদেশ (যতক্ষণ না আল্লাহ তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।) আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না ফাসিক ক্বওমকে।”

৯:৩৭ :: নিশ্চয় নাসী (হারাম মাসের হিসাব স্থগিতকরন বা মূলতবিকরন ও অন্য মাসের সাথে সমন্বয়করন অথবা বাড়তি মাস সংযোজনের মাধ্যমে হারাম মাসের স্থানচ্যুতি) কুফরের ক্ষেত্রে একটি বৃদ্ধি (অর্থাৎ নাসী কুফরকে বৃদ্ধি করে)। উহা (নাসী) দ্বারা তাদেরকে পথভ্রষ্ট করা হয় যারা কুফর করে। তারা উহাকে (নাসীকে) হালাল করে কোনো চান্দ্রবর্ষে আর তারা উহাকে (নাসীকে) হারাম করে অন্য কোনো চান্দ্রবর্ষে; ঐ গণনাকে মিল করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য যা (যত মাস) আল্লাহ হারাম করেছেন। এভাবে তারা উহাকে (নাসীকে/ ঐ মাসকে) হালাল করে যা আল্লাহ হারাম করেছেন। শোভিত করা হয়েছে তাদের জন্য তাদের মন্দকর্মসমূহ। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না কাফির ক্বওমকে।

৯:৮০ :: তুমি তাদের (মুনাফিক্বদের) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো অথবা তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করো (দুটোই সমান)। যদি তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো সত্তর বারও, তবুও আল্লাহ কখনোই তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। উহা এ কারণে যে, তারা অবিশ্বাস করেছে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না ফাসিক ক্বওমকে।

৯:১০৯ :: তবে কি যে স্থাপন করেছে তার ভিত্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্জিত আল্লাহভীরুতার উপর আর তাঁর সন্তুষ্টির (আশার উপর) সে উত্তম নাকি সে উত্তম যে স্থাপন করেছে তার ভিত্তি ধ্বংসোন্মুখ অন্ত:সারশূন্য কিনারার উপর, তারপর উহা পতিত হলো তাকে সহকারে জাহান্নামের আগুনে? আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিম ক্বওমকে।

৯:১১৫ :: আর আল্লাহ এমন নন যে, পথভ্রষ্ট করবেন কোনো কওমকে যখন তাদেরকে হিদায়াত করেছেন তারপরও, যতক্ষণ না তিনি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন তাদের জন্য, কী থেকে তারা সাবধান থাকবে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে জ্ঞানী।

১০:৯ :: নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদেরকে হিদায়াত করবেন তাদের প্রভু তাদের ঈমানের কারণে। প্রবাহিত হবে তাদের পাদদেশে নদীসমূহ, নিয়ামাতে পরিপূর্ণ জান্নাতে।

১০:২৫ :: আর আল্লাহ আহবান করেন শান্তি-নিকেতনের দিকে আর তিনি হিদায়াত করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথে (সিরাতুল মুসতাক্বীম)।

১০:৩১-৩২ :: বলো, “কে তোমাদেরকে রিজিক্ব দেন আকাশ ও পৃথিবী থেকে? অথবা কে আধিপত্য রাখেন শ্রবণশক্তির উপর ও দৃষ্টিশক্তির উপর? আর কে বের করেন জীবিতকে মৃত থেকে আর বের করেন মৃতকে জীবিত থেকে? আর কে (বিশ্বব্যবস্থার) ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করছেন?” তাহলে, তারা শীঘ্রই বলবে, ‘আল্লাহ’। তারপর বলো, “তবুও কি তোমরা স্রষ্টা-সচেতনতা অবলম্বন করবে না? এ-ই হচ্ছেন আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত প্রভু। সুতরাং কী থাকতে পারে সত্যের পরে পথভ্রষ্টতা ছাড়া? সুতরাং কোন উল্টোদিকে তোমরা পরিচালিত হচ্ছো?”

১০:৩৫ :: বলো, “আছে কি তোমাদের করা শরীকদের মধ্য থেকে কেউ এমন, যে হিদায়াত করে সত্যের দিকে?” বলো, “আল্লাহই হিদায়াত করেন সত্যের দিকে। তবে কি যে হিদায়াত করে সত্যের দিকে সে-ই অধিক হকদার এ ব্যাপারে যে, তার অনুসরণ করা হবে, নাকি সে- যে হিদায়াত পায় না এছাড়া যে, তাকে হিদায়াত করা হয়? সুতরাং তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা কিরূপ সিদ্ধান্ত করছো?”

১০:৪৩ :: আর তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে। তবে কি তুমি অন্ধদেরকে হিদায়াত করবে যদিও তারা না দেখে?

১০:৪৫ :: আর যেদিন তাদেরকে সমবেত করা হবে, সেদিন তারা ভাববে যেন তারা অবস্থান করে নি দিনের মধ্যকার মাত্র একঘন্টা ছাড়া। তারা তাদের মধ্যকার একজনকে অন্যজন চিনতে পারবে। নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের (জবাবদিহিতার) ব্যাপারটি। আর তাই তারা হিদায়াত গ্রহণকারী ছিলো না।

১০:১০৮ :: বলো, “হে মানুষ, নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে সত্য তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে। সুতরাং যে হিদায়াত গ্রহণ করলো তবে নিশ্চয় সে হিদায়াত গ্রহণ করে তার নিজেরই জন্য। আর যে পথভ্রষ্ট হলো তবে নিশ্চয় সে পথভ্রষ্ট হয় তার নিজেরই বিরুদ্ধে। আর আমি নই তোমাদের ব্যাপারে কর্মবিধায়ক।”

১৩:৭ :: আর যারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে, ‘কেন নাযিল করা হয় নি তার উপর কোনো নিদর্শন তার প্রভুর পক্ষ থেকে?” নিশ্চয় তুমি (মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ) একজন সতর্ককারী। আর প্রত্যেক ক্বওমের জন্য ছিলো (কোনো না কোনো) হিদায়াতকারী।

১৩:২৭ :: আর যারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে, “কেন নাযিল করা হয় নি তার উপর কোনো নিদর্শন তার প্রভুর পক্ষ থেকে?” বলো, “নিশ্চয় আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর তিনি হিদায়াত করেন তাঁর নিজের দিকে যে তাঁর দিকে ফিরে আসে তাকে।”

১৩:৩১ :: আর যদি এমন হতো যে, কুরআন দিয়ে টলানো যেতো পাহাড়সমূহকে অথবা খন্ড বিখন্ড করা যেতো উহা দিয়ে পৃথিবীকে অথবা কথা বলানো যেতো উহা দিয়ে মৃতকে (তবুও তারা বিশ্বাস করতো না)। বরং আল্লাহরই অধিকারভুক্ত সমস্ত বিষয়/ কাজ। তবে কি তারা নিরাশ হয় নি যারা বিশ্বাস করেছে এ কারণে যে, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে নিশ্চয় হিদায়াত করতেন সমস্ত মানুষকে। আর সর্বদাই যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের কাছে পৌঁছবে ঐ কারণে যা তারা করেছে, (পৌঁছবে বিভিন্ন) বিপদাপদ অথবা তা নেমে আসবে তাদের ঘরবাড়ির নিকটে, যতক্ষণ না আসবে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।

১৩:৩৩ :: তবে কি সেই সত্তা (সম্পর্কে ভেবে দেখো নি) যিনি প্রতিষ্ঠিত আছেন প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যাপারে সে যা উপার্জন করেছে তার ফায়সালার জন্য। অথচ তারা স্থির করেছে আল্লাহর জন্য (তাদের কল্পিত) শরীকগণকে। বলো, “তাদের নাম বলো। নাকি তোমরা তাঁকে সংবাদ জানাচ্ছো উহার সম্পর্কে যা তিনি জানেন না পৃথিবীতে? অথবা ইহা শুধুই (অর্থহীন) কথার বহির্প্রকাশ?” বরং শোভনীয় করা হয়েছে তাদের জন্য যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের কুটকৌশল। আর তাদেরকে সরিয়ে রাখা হয়েছে সঠিক পথ থেকে। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য নেই কোনো হিদায়াতকারী।

১৪:৩ :: যারা অধিক ভালবাসে পার্থিব জীবনকে আখিরাতের তুলনায়। আর বাধা দেয় আল্লাহর পথ থেকে আর উহাতে তালাশ করে বক্রতা। তারাই আছে সুদূর পথভ্রষ্টতার মধ্যে।

১৪:৪ :: আর আমরা প্রেরণ করি না কোনো রসূলকে তার ক্বওমের ভাষায় ছাড়া। যেন তিনি তাদের কাছে হুবহু স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। তারপর আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর তিনি হিদায়াত করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর তিনি মহাশক্তিমান, মহাবিজ্ঞ।

১৪:১২ :: আর আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা ভরসা করবো না আল্লাহর উপর? অথচ নিশ্চয় তিনি আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন আমাদের পথসমূহে। আর অবশ্যই আমরা সবর করবো তোমরা আমাদেরকে যে কষ্ট দিচ্ছো উহার ব্যাপারে। আর আল্লাহরই উপর ভরসা করা উচিত ভরসাকারীগণ।

১৪:১৮ :: তাদের দৃষ্টান্ত (দেয়া হচ্ছে) যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের প্রভুর প্রতি। তাদের কাজসমূহ যেন ভষ্ম, যাকে উড়িয়ে দিয়েছে বায়ুপ্রবাহ, এক ঝটিকাপূর্ণ দিনে। তারা (ইচ্ছানুরূপ প্রভাব বিস্তারমূলকভাবে) নিয়ামকে পরিণত করতে পারবে না যা তারা উপার্জন করেছে তার কিছুকে কোনো ক্ষেত্রের উপর। উহাই সুদূর পথভ্রষ্টতা।

১৪:২১ :: আর বের হয়ে আসবে আল্লাহর কাছে সকলে। তারপর বলবে দুর্বল-নির্যাতিত-নিষ্পেষিতগণ, তাদেরকে (উদ্দেশ্য করে) যারা অহংকার করতো, “নিশ্চয় আমরা ছিলাম তোমাদের অধীনস্থ। সুতরাং হবে কি তোমরা উপকারী আমাদের ব্যাপারে, আল্লাহর শাস্তি থেকে (আমাদেরকে বাঁচাতে), কিছুমাত্রও?” তারা বলবে, “যদি আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত করতেন, তাহলে আমরা তোমাদেরকে হিদায়াত করতাম। আমাদের উপর সমান আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা আমরা ধৈর্যশীল হই। আমাদের জন্য নেই কোনো পালানোর জায়গা।”

১৪:২৭ :: আল্লাহ তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন যারা বিশ্বাস করেছে দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত কথার মাধ্যমে পার্থিব জীবনে ও আখিরাতে। আর আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন যালিমদেরকে। আর আল্লাহ করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন।

১৪:৩০ :: আর তারা স্থির করেছে আল্লাহর জন্য সমকক্ষ, যেন তারা পথভ্রষ্ট করতে পারে তাঁর পথ থেকে। বলো, “তোমরা ভোগ করো, তারপর নিশ্চয় তোমাদের ফিরে যাবার স্থান (জাহান্নামের) আগুন।”

১৪:৩৬ :: (ইবরাহীম বললো), “হে আমার প্রভু, নিশ্চয় সেগুলো (মূর্তিগুলো) পথভ্রষ্ট করেছে মানুষের মধ্য থেকে অধিকাংশকে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয় সে হবে আমার (আদর্শিক বলয়ের) অন্তর্ভুক্ত। আর যে আমার অবাধ্য হবে, তাহলে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু (অর্থাৎ আপনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন)।

১৫:৫৬ :: সে (ইবরাহীম) বললো, “কে নিরাশ হয় তার প্রভুর দয়া থেকে পথভ্রষ্টরা ছাড়া?”

১৬:৯ :: আর আল্লাহরই উপর দায়িত্ব হিদায়াত করা। আর পথসমূহের মধ্যে বাঁকা পথও আছে। আর যদি তিনি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তোমাদের সকলকে হিদায়াত করতেন।

১৬:১৫-১৬ :: আর তিনি স্থাপন করেছেন পৃথিবীতে পাহাড়সমূহ, যেন না টলে যায় তোমাদেরকে নিয়ে, আর নদীসমূহ আর রাস্তাসমূহ, যেন তোমরা হিদায়াত (পথের দিশা) পেতে পারো। আর আলামতসমূহ/ চিহ্নসমূহ। আর নক্ষত্রের সাহায্যে তারা হিদায়াত (পথের দিশা) পায়।

১৬:২৪-২৫ :: আর যখন তাদেরকে বলা হয়, “কী নাযিল করেছেন তোমাদের প্রভু?” তারা বলে, “পূর্ববর্তীদের উপকথা।” যেন তারা বহন করে তাদের বোঝাসমূহ সম্পূর্ণভাবে, কিয়ামাত দিবসে; আর সেই সাথে তাদের সাথে সম্পর্কিত বোঝাসমূহও যাদেরকে তারা পথভ্রষ্ট করেছে অজ্ঞতাবশত:। জেনে রাখো উহা খুবই মন্দ যা তারা বহন করবে।

১৬:৩৬ :: আর নিশ্চয় আমরা সমুত্থিত/ প্রেরণ করেছি প্রত্যেক উম্মাতের কাছে (কোনো না কোনো) রসূল, এ মর্মে যে, “তোমরা আল্লাহর দাসত্ব করো আর তাগুতকে বর্জন করো।” তারপর তাদের মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহ হিদায়াত করেছেন আর তাদের মধ্য থেকে কেউ এমনও আছে যে হক্বদার হয়েছে তার নিজের উপর পথভ্রষ্টতা আরোপিত করার জন্য। সুতরাং তোমরা ভ্রমণ করো পৃথিবীতে, তারপর তোমরা লক্ষ্য করো, কিরূপ হয়েছে মিথ্যারোপকারীদের পরিণতি?

১৬:৩৭ :: যদি তুমি আগ্রহী হও তাদের হিদায়াতের ব্যাপারে, তবুও আল্লাহ তাকে হিদায়াত করেন না যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন। আর তাদের জন্য নেই কোনো সাহায্যকারী।

১৬:৯৩ :: আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে করতেন একক উম্মাত (তাওহীদপন্থী উম্মাত)। কিন্তু তিনি পথভ্রষ্ট করেন যাকে তিনি (পথভ্রষ্ট করার) ইচ্ছা করেন। আর তিনি হিদায়াত করেন যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন। আর অবশ্যই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে উহার ব্যাপারে যা তোমরা করছিলে।

১৬:১০৪ :: নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে না আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি, আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত করেন না, আর তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

১৬:১০৬-১০৮ :: যে অবিশ্বাস করে আল্লাহকে তার বিশ্বাসের পরও, সে ছাড়া যাকে বাধ্য করা হয়েছে অথচ তার অন্তর ঈমানে সুদৃঢ় (তবু প্রচন্ড নির্যাতনে বাধ্য হয়ে সাময়িকভাবে বাহ্যত কুফরী বাক্য উচ্চারণ বা কুফরী কার্য করেছে); কিন্তু (এদের কথা নয় বরং) যে উন্মুক্ত রাখে কুফরের জন্য তার সম্মুখ মস্তিষ্কের অগ্রভাগকে, তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে গযব পড়বে, আর তাদের জন্য আছে মহাশাস্তি। উহা এজন্য যে, তারা পছন্দ করেছে পার্থিব জীবনকে আখিরাতের তুলনায়। আর এজন্যও যে, আল্লাহ হিদায়াত করেন না কাফির ক্বওমকে। তারাই ঐসব লোক আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন যাদের কলবসমূহের উপর আর যাদের শ্রবণশক্তির উপর আর যাদের দৃষ্টিশক্তির উপর, আর তারাই উদাসীন।

১৬:১২৫ :: ডাকো তোমার প্রভুর পথের দিকে হিকমাতের মাধ্যমে, আর উত্তম উপদেশের মাধ্যমে, আর তাদের সাথে বিতর্ক করো ঐ (পদ্ধতি অবলম্বন ও যুক্তি উপস্থাপনের) মাধ্যমে যা অধিক উত্তম। নিশ্চয় তোমার প্রভুই জানেন তার সম্পর্কে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে তাঁর পথ থেকে, আর তিনিই জানেন হিদায়াত গ্রহণকারীদের সম্পর্কে।

১৭:৯ :: নিশ্চয় এই কুরআন হিদায়াত করে সেই (পথের) দিকে যা সবচেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত, আর সুসংবাদ দেয় মু’মিনদেরকে, যারা সৎকর্ম করে, এ মর্মে যে, তাদের জন্য আছে বড় ধরনের পুরস্কার।

১৭:১৫ :: যে হিদায়াত গ্রহণ করে, তাহলে নিশ্চয় সে হিদায়াত গ্রহণ করে তার নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তাহলে নিশ্চয় সে পথভ্রষ্ট হয় তার নিজেরই অকল্যাণের জন্য। আর কোনো বোঝা বহন করবে না কোনো বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা। আর আমরা শাস্তিদানকারী নই যতক্ষণ না আমরা সমুত্থিত/ প্রেরণ করি কোনো রসূল।

১৭:৪৭-৪৮ :: আমরা জানি ঐ বিষয়ে যা তারা শুনে, যখন তারা কান লাগিয়ে থাকে তোমার প্রতি, আর যখন তারা গোপনে আলোচনা করে, তখন যালিমরা বলে, “তোমরা অনুসরণ করছো না, একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির ছাড়া।” লক্ষ্য করো, কিরূপে তারা উপস্থাপন করে তোমার জন্য দৃষ্টান্ত, তাই তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, সুতরাং তারা সঠিক পথ পেতে পারে না।

১৭:৮৪ :: বলো, “প্রত্যেকেই কাজ করে যায় নিজ-নিজ বাছাইকৃত নিয়ম-রীতি/পন্থার উপর (যেহেতু মানুষকে freedom of will and choice/ ইচ্ছা ও নির্বাচনের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে)। (যদিও সবাই নিজের অনুসৃত নিয়মরীতিকেই সঠিক মনে করে) কিন্তু তোমাদের প্রভুই জানেন কে সর্বাধিক সঠিক পথের হিদায়াত গ্রহণকারী?

১৭:৯৪ :: আর মানুষকে বিরত রাখেনি বিশ্বাস করতে যখন তাদের কাছে এসেছে হিদায়াত, এছাড়া যে, তারা বললো, “আল্লাহ কি সমুত্থিত/ প্রেরণ করেছেন মানুষ রসূল?”

১৭:৯৭-৯৮ :: আর যাকে আল্লাহ হিদায়াত করেন সে-ই হিদায়াতপ্রাপ্ত। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তুমি পাবে না তাদের জন্য কোনো অভিভাবক, তাঁকে ছাড়া। আর আমরা তাদেরকে সমবেত করবো কিয়ামাত দিবসে তাদের মুখমন্ডলের উপর/ তাদেরকে নিচু-মুখ করে/ উপুড় করে (টেনে এনে), অন্ধ, বোবা আর বধির অবস্থায়। তাদের আবাস হবে জাহান্নাম। যখনই স্তিমিত হবে, আমরা তাদেরকে বাড়িয়ে দেবো আগুন। উহাই তাদের প্রতিফল এ কারণে যে, তারা অবিশ্বাস করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে, আর তারা (বিদ্রূপ করে) বলেছে, “তবে কি যখন আমরা হবো হাড্ডিসার আর চূর্ণ-বিচূর্ণ, নিশ্চয় কি আমরা এরপরও পুনরুত্থিত হবোই (আমাদেরকে কি আবার উঠানো হবে) নতুন সৃষ্টিরূপে?”

১৮:১৭ :: আর তুমি (যদি দেখতে পারতে তবে) দেখতে যে, সূর্য যখন উদিত হতো, তখন সরে যেতো তাদের (আসহাবে কাহাফের) গুহা থেকে ডান পাশ দিয়ে, আর যখন অস্ত যেতো তখন তা তাদেরকে অতিক্রম করতো বাম পাশ দিয়ে; আর তারা অবস্থান করছিলো গুহার প্রশস্ত চত্বরে। উহা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত (যে, তিনি তাঁর পথে সংগ্রামীদের জন্য এমনি ব্যবস্থা করে দেন)। যাকে আল্লাহ হিদায়াত করেন সে-ই হিদায়াত গ্রহণকারী। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তুমি পাবে না তার জন্য কোনো অভিভাবক ও পথপ্রদর্শক।

১৮:২৩-২৪ :: আর কখনো বলো না কোনো ব্যাপারে, “নিশ্চয় আমি উহা করবো আগামী কাল।” (তুমি তা সম্পাদনকারী হতে পারো না) এছাড়া যে, আল্লাহ ইচ্ছা করেন। (অথবা, 'যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন' বলা ছাড়া)। আর স্মরণ করো তোমার প্রভুকে, যখন তুমি ভুলে যাও (এ নির্দেশ পালন করতে)। আর বলো, “আশা করা যায় যে, আমাকে হিদায়াত করবেন আমার প্রভু উহার দিকে যা এই ব্যাপারে সবচেয়ে নিকটবর্তী সঠিক (বিষয়) হিসাবে।”

১৮:৫৫ :: আর মানুষকে কিছুই বিরত রাখেনি বিশ্বাস করতে, যখন তাদের কাছে এসেছে হিদায়াত আর তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে তাদের প্রভুর কাছে, এছাড়া যে, তাদের কাছে আসবে পূর্ববর্তীদের (ব্যাপারে আল্লাহর অবলম্বিত) সুন্নাত বা মূলনীতি অথবা (/তথা) তাদের কাছে আসবে সামনাসামনি শাস্তি।

১৮:৫৭ :: আর তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে যাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় তার প্রভুর আয়াতসমূহ দিয়ে তারপর সে মুখ ফিরিয়ে নেয় উহা থেকে আর সে ভুলে থাকে ঐসব কাজের পরিণাম, যা আগেই পাঠিয়েছে তার দুহাত (অর্থাৎ তার অতীতের কর্মকান্ডের পরিণাম কী হতে পারে তা সে ভুলে থাকে)? নিশ্চয় আমরা স্থাপন করেছি তাদের কলবসমূহের উপর আবরণ, যেন না তারা উহা উপলব্ধি করতে পারে, আর তাদের কানসমূহে আছে বধিরতা। আর যদি তুমি তাদেরকে ডাকো হিদায়াতের দিকে, তবুও তারা হিদায়াত গ্রহণ করবে না এখন আর কখনোই।

১৮:১০৩-১০৫ :: বলো, “আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ জানাবো কর্মে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্কে? তারা হচ্ছে যাদের প্রচেষ্টা পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়ে গেছে পার্থিব জীবনে আর তারা হিসাব (ধারণা) করে নেয় যে, তারা উত্তম কাজই করছে। তারাই ঐসব লোক যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের প্রভুর আয়াতসমূহের প্রতি আর তাঁর সাথে সাক্ষাতের (তাঁর সামনে জবাবদিহির সম্মুখীন হওয়ার) প্রতি। সুতরাং নিষ্ফল হয়ে গেছে তাদের কর্মসমূহ।” সুতরাং আমরা প্রতিষ্ঠিত করবো না তাদের জন্য কিয়ামাত দিবসে কোন ওজন/ মূল্যমান (অর্থাৎ তাদের কর্মসমূহকে কোনো মূল্যই দেয়া হবে না, তাই তারা জান্নাতে যেতে পারবে না)।

১৯:৩৮ :: (সেদিন) তারা অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই শুনবে আর অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই দেখবে, যেদিন তারা আমাদের কাছে আসবে। কিন্তু যালিমগণ আজ স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে আছে।

১৯:৪৩ :: (ইবরাহীম বললো), “হে আমার আব্বা, নিশ্চয় আমার কাছে এসেছে এমন কিছু জ্ঞান, যা আপনার কাছে আসেনি। সুতরাং আপনি আমার অনুসরণ করুন। আমি আপনাকে হিদায়াত করবো সরল-সোজা সঠিক পথ।”

১৯:৭৫ :: বলো, “যে হবে পথভ্রষ্টতায় পতিত, সে ক্ষেত্রে দয়াময় (আল্লাহ) তাকে ঢিল দিবেন, যথাযথ ঢিল। শেষ পর্যন্ত যখন তারা দেখবে ঐ বিষয়ে যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়েছে। তা হয় শাস্তি হোক আর না হয় প্রলয়মুহুর্ত হোক। তখন তারা জানবে- কে অবস্থানে নিকৃষ্ট আর জনশক্তিতে দুর্বলতর?

১৯:৭৬ :: আর আল্লাহ তাদেরকে বাড়িয়ে দিবেন যারা হিদায়াত গ্রহণ করে, (বাড়িয়ে দিবেন) হিদায়াত। আর স্থায়ী সৎকর্মসমূহই তোমার প্রভুর কাছে উত্তম, প্রতিফলের বিষয় হিসাবেও আর উত্তম, পরিণতির বিষয় হিসাবেও।

২০:৯-১০ :: আর তোমার কাছে কি এসেছে মূসার ঘটনার বিবরণ? যখন সে দেখেছে আগুন; তখন সে বলেছে তার পরিবারকে, “তোমরা থাকো। নিশ্চয় আমি দেখেছি আগুন। সম্ভবত আমি তোমাদের কাছে আনবো উহা থেকে কিছু অঙ্গার। অথবা আমি পাবো আগুনের পাশে হিদায়াত (পথের দিশা)।”

২০:৫০ :: সে (মূসা) বললো, “তিনিই আমাদের প্রভু যিনি দিয়েছেন প্রত্যেক জিনিসকে উহার সৃষ্টি-কাঠামো তারপর তাকে তার হিদায়াত (প্রকৃতিগত পথনির্দেশ) দিয়েছেন।”

২০:৭৯ :: আর ফেরাউন পথভ্রষ্ট করেছে তার ক্বওমকে আর সে (তাদেরকে) হিদায়াত করে নি।

২০:৮২ :: আর নিশ্চয় আমি ক্ষমাশীল তার জন্য যে তাওবাহ করে আর বিশ্বাস করে আর সৎকর্ম করে তারপর হিদায়াত গ্রহণ করে।

২০:৮৫ :: তিনি (আল্লাহ) বললেন, “নিশ্চয় আমরা পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছি তোমার (মূসার) ক্বওমকে তোমার (প্রস্থানের) পর। আর তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে সামেরি।

২০:১২৩ :: তিনি (আল্লাহ) বললেন, “তোমরা উভয়ে চলে যাও উহা থেকে এক সঙ্গে। তোমাদের একে অপরের শত্রু। তারপর যখন তোমাদের কাছে পৌঁছবে আমার পক্ষ থেকে হিদায়াত, তখন যে অনুসরণ করবে আমার হিদায়াতকে, সে পথভ্রষ্ট হবে না আর কষ্টে পড়বে না।

২০:১২৮ :: তাদেরকে কি হিদায়াত করেনি (ইতিহাসের/ ঘটনাপ্রবাহের এ নিদর্শন যে,) কত যে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি তাদের আগে জনপদসমূহের মধ্য থেকে। (এখন) তারা চলছে তাদের বাসস্থানসমূহের মধ্য দিয়ে। নিশ্চয় উহার মধ্যে আছে উপলব্ধি-সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শনসমূহ।

২০:১৩৫ :: বলো, “প্রত্যেকেই অপেক্ষাকারী। সুতরাং তোমরা অপেক্ষা করো। শীঘ্রই তোমরা জানবে, কারা সরল-সোজা পথের অনুসারী ও কে হিদায়াতপ্রাপ্ত।”

২১:৩১ :: আর আমরা স্থাপন করেছি পৃথিবীতে পর্বতসমূহ, যেন না উহা টলে যায় তাদেরকে নিয়ে। আর আমরা স্থাপন করেছি উহাতে প্রশস্ত রাস্তাসমূহ, যেন তারা হিদায়াত (পথের দিশা) পেতে পারে।

২১:৫২-৫৪ :: যখন সে (ইবরাহীম) তার পিতাকে ও তার ক্বওমকে বললো, “এ মূর্তিগুলো কীরূপ তোমরা যার জন্য আত্মনিয়োজিত?” তারা বললো, “আমরা পেয়েছি আমাদের বাপদাদাকে উহার উপাসনাকারীরূপে। সে (ইবরাহীম) বললো, “নিশ্চয় তোমরা আছো আর তোমাদের বাপদাদা ছিলো প্রকাশ্য বিভ্রান্তির মধ্যে।”

২১:৭৩ :: আর আমরা তাদেরকে (ইবরাহীম, লূত, ইসহাক, ইয়াকুব প্রমুখকে) বানিয়েছি অগ্রগামী/নেতা। তারা হিদায়াত করতো আমাদের আদেশক্রমে। আর আমরা ওয়াহী করেছি তাদের প্রতি, উত্তম কার্যনির্বাহ করতে, সালাত প্রতিষ্ঠা করতে, যাকাত (পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করতে; আর তারা ছিলো আমাদের ইবাদাতকারী।”

২২:৪ :: (অথচ) লিখে দেয়া হয়েছে তার উপর (শয়তানের উপর) এই যে, যে-ই তাকে বন্ধু বানাবে, তবে নিশ্চয় সে তাকে পথভ্রষ্ট করে দেবে আর তাকে হিদায়াত (পথনির্দেশ) করবে প্রজ্জলিত আগুনের শাস্তির দিকে।

২২:১২ :: তারা ডাকে আল্লাহকে ছাড়া এমন কাউকে যা তার ক্ষতি করতে পারে না, আর যা তার উপকারও করতে পারে না। উহাই সুদূর পথভ্রষ্টতা।

২২:১৬ :: আর এভাবেই আমরা উহাকে (কুরআনকে) নাযিল করেছি স্পষ্ট আয়াতসমূহরূপে। আর নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন।

২২:২৪ :: আর তাদেরকে হিদায়াত করা হয়েছে পবিত্র কথা বলার জন্য, আর হিদায়াত করা হয়েছে প্রশংসিত সত্তার (আল্লাহর) পথের দিকে।

২২:৩৭ :: আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না (মূল্যায়ন পায় না) উহাদের গোশত ও রক্ত। কিন্তু তাঁর কাছে পৌঁছে (মূল্যায়ন পায়) তোমাদের স্রষ্টা-সচেতনতা। এভাবে তিনি উহাকে নিয়োজিত করেছেন তোমাদের কল্যাণের জন্য। যেন তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো তাঁর হিদায়াত অনুযায়ী। আর উত্তম আচরণকারীদেরকে সুসংবাদ দাও।

২২:৫৪ :: আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা যেন জানে যে, সত্য তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে। তারপর তারা উহতে বিশ্বাস করে। তারপর বিনীত হয় তাদের কলবসমূহ। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাদের হিদায়াতকারী যারা বিশ্বাস করে, (তিনি তাদেরকে হিদায়াত করেন) সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথের দিকে (সিরাতুল মুসতাক্বীম)।

২৩:৪৯ :: আর নিশ্চয় আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছি যেন তারা হিদায়াত গ্রহণ করতে পারে।

২৩:১০৫-১০৬ :: এটাই নয় কি যে, যখন আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো তোমাদের কাছে, তখন তোমরা উহাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে? তারা বলবে, “হে আমাদের প্রভু, আমাদেরকে পরাজিত করেছে আমাদের মানসিক বিকারগ্রস্ততা, আর আমরা ছিলাম পথভ্রষ্ট ক্বওম।”

২৪:৩৫ :: আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আলো (আদি কারণ)। তাঁর (ব্যবস্থাকৃত) আলোর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন একটি খাঁজ, তার মধ্যে আছে একটি প্রদীপ। আর প্রদীপটি আছে একটি স্বচ্ছ চিমনির মধ্যে। আর স্বচ্ছ চিমনিটি এমন যে, যেন তা উজ্জল গ্রহ। (প্রদীপটিকে) প্রজ্জলিত করা হয় বরকতময় যয়তূন/ জলপাই গাছের তেল দিয়ে। (যে গাছ) পূর্বেরও নয়, পশ্চিমেরও নয়। উপক্রম হয় উহার তেল (ঐ গাছের তেল) উজ্জল আলো দিতে, যদিও আগুন উহাকে (তেলকে) স্পর্শ করেনি। আলোর উপর আলো। আল্লাহ হিদায়াত করেন তাঁর আলোর দিকে যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্তসমূহ উপস্থাপন করেন। আর আল্লাহ সবকিছুর বিষয়ে জ্ঞানী।

২৪:৪৬ :: নিশ্চয় আমরা নাযিল করেছি স্পষ্ট আয়াতসমূহ। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন, যাকে তিনি ইচ্ছা করেন, সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথের দিকে (সিরাতুল মুসতাক্বীম)।

২৪:৫৪ :: বলো, “আল্লাহর আনুগত্য করো ও রসূলের আনুগত্য করো।“ তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে নিশ্চয় তার (রসূলের) উপর যা তাকে দায়িত্বভার দেয়া হয়েছে, আর তোমাদের উপর যা তোমাদেরকে দায়িত্বভার দেয়া হয়েছে। আর যদি তোমরা তার আনুগত্য করো, তাহলে তোমরা হিদায়াত পাবে। আর রাসূলের উপর দায়িত্ব নেই স্পষ্টভাবে পৌঁছানো/প্রকাশ্য প্রচার ছাড়া।

২৫:৭-৯ :: আর তারা বলে, “এ কেমন রসূল, যে খাদ্য খায় আর হাটে বাজারে চলাফেরা করে। কেন নাযিল করা হয় নি তার কাছে কোনো ফেরেশতা, যে হতো তার সাথে ভয় প্রদর্শনকারী? অথবা প্রেরণ করা হতো তার কাছে কোনো ধনভান্ডার, অথবা তার থাকতো কোনো বাগান, যা থেকে সে খেতো।” আর যালিমরা বলে, “তোমরা অনুসরণ করছো না একজন যাদুগ্রস্ত পুরুষকে ছাড়া অন্য কাউকে।” লক্ষ্য করো তারা তোমার জন্য কীরূপ দৃষ্টান্ত পেশ করছে। এভাবে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তাই তারা সঠিক পথ পেতে পারে না।

২৫:১৭-১৮ :: আর যেদিন তিনি তাদেরকে সমবেত করবেন, আর তারা যাদের দাসত্ব করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে (তাদেরকেও সমবেত করবেন); তখন তিনি বলবেন, “তোমরাই কি পথভ্রষ্ট করেছিলে আমার এসব বান্দাদেরকে, নাকি তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিলো?” তারা বলবে, “আপনি পবিত্র। আমাদের জন্য সম্ভব ছিলো না যে, আমরা গ্রহণ করবো আপনাকে ছাড়া কোনো অভিভাবককে। কিন্তু আপনি তাদেরকে ভোগসামগ্রী দিয়েছিলেন আর তাদের বাপদাদাকেও (ভোগসামগ্রী দিয়েছিলেন), যতক্ষণ না তারা যিকর (স্মরণীয় তথ্য ও বিধিবিধান) ভুলে গিয়েছিলো। আর তারা হয়েছিলো এক ধ্বংসপ্রাপ্ত ক্বওম।”

২৫:২৭-২৯ :: আর সেদিন যালিম ব্যক্তি তার নিজের দুই হাত কামড়াবে। সে বলবে, “হায়! আমার আফসোস! যদি আমি ধরতাম রসূলের সাথে সঠিক পথ! হায়! আমার দুর্ভোগ! আমার আফসোস! যদি আমি গ্রহণ না করতাম অমুককে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরূপে! নিশ্চয় সে আমাকে পথভ্রষ্ট করেছে যিকর (স্মরণীয় তথ্য ও বিধিবিধান) থেকে, যখন উহা আমার কাছে এসেছে এরপরও। আর শয়তান হলো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।”

২৫:৩১ :: আর এভাবে আমরা করেছি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদেরকে শত্রুস্বরূপ। আর তোমার প্রভুই যথেষ্ট হিদায়াতকারী ও সাহায্যকারী হিসাবে।

২৫:৪১-৪২ :: আর যখন তারা তোমাকে দেখে, তখন তারা তোমাকে গ্রহণ করে না ঠাট্টা বিদ্রুপের পাত্র হিসাবে ছাড়া। (তারা বলে), “এ-ই কি সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন রসূলরূপে? সেকি উপক্রম হয় নি আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দিতে আমাদের ইলাহদের থেকে, যদি না আমরা সবর (দৃঢ়তা অবলম্বন) করতাম উহার উপর?” আর শীঘ্রই তারা জানতে পারবে যখন তারা আযাব দেখবে, (জানতে পারবে,) কে পথভ্রষ্ট হয়েছে?

২৫:৪৪ :: নাকি তুমি হিসাব (ধারণা) করে নিয়েছো যে, তাদের অধিকাংশ শুনে অথবা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি (common sense) প্রয়োগ করে? তারা নয় গবাদি পশুর মতো ছাড়া অন্যরূপ। বরং তারা ততোধিক পথভ্রষ্ট।

২৬:৬০-৬৩ :: তারা (ফেরাউন ও তার সেনাদল) তাদের (বানী ইসরাইলের) অনুসরণ করেছিলো/ পিছু নিয়েছিলো সূর্যোদয়কালে। তারপর যখন উভয় দল উভয় দলকে দেখলো, তখন মূসার সাথীগণ বলেছিলো, “নিশ্চয় আমরা ধরা পড়ে গেলাম।” সে (মূসা) বলেছিলো, “কখনো না। নিশ্চয় আমার সাথে আছেন আমার প্রভু। শীঘ্রই তিনি আমাকে হিদায়াত (পথনির্দেশ) করবেন।” সুতরাং আমরা মূসার প্রতি ওহী করেছিলাম যে, “তুমি আঘাত করো তোমার লাঠি দিয়ে সাগরে (অর্থাৎ যাত্রা করো একটা শুষ্ক পথ দেখে ২০:৭৭)।” তখন (চড়াভূমি) প্রকট হয়ে উঠলো। ফলে প্রতিটি চড়া প্রতীয়মান হলো বৃহৎ বালুকাস্তুপের মতো।

২৬:৭৮ :: (ইবরাহীম বললো), “যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তারপর তিনিই আমাকে হিদায়াত করেন।”

২৬:৯৭-৯৯ :: (সাধারণ পথভ্রষ্টরা বলবে), “আল্লাহর কসম, আমরা কি ছিলাম না স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে? যখন আমরা তোমাদেরকে সমান মর্যাদা দিতাম বিশ্বপ্রভুর সাথে। আর আমাদেরকে কেউ পথভ্রষ্ট করে নি অপরাধীরা ছাড়া।”

২৭:২৪ :: (হুদহুদ বললো), “আর আমি পেয়েছি তাকে ও তার ক্বওমকে (এরূপ যে), তারা সাজদাহ করে সূর্যকে, আল্লাহকে সাজদাহ করার পরিবর্তে। আর সুশোভিত করেছে তাদের জন্য শয়তান তাদের কর্মসমূহকে। আর তাদেরকে বিরত রেখেছে সঠিক পথ থেকে। তাই তারা হিদায়াত গ্রহণ করে না।”

২৭:৪১ :: সে (সুলাইমান) বললো, “অপরিচিত করে দাও তার জন্য তার সিংহাসনকে। আমরা লক্ষ্য করবো যে, সে কি হিদায়াত পায় (অর্থাৎ সে কি তার করণীয় বুঝতে পারে), নাকি সে হয় তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা হিদায়াত পায় না (অর্থাৎ করণীয় সম্পর্কে বুঝে না)?”

২৭:৬৩ :: অথবা তিনি কে, যিনি তোমাদেরকে হিদায়াত (পথের দিশা) দেন স্থলভাগের ও জলভাগের অন্ধকারের মধ্যে, আর যিনি বাতাসকে প্রেরণ করেন সুসংবাদস্বরূপ, তাঁর দয়ার আগে? আল্লাহর সাথে কোনো ইলাহ আছে কি? আল্লাহ উহার অতি ঊর্ধ্বে, যে শিরক তারা করে।

২৭:৮১ :: আর তুমি অন্ধদের হিদায়াতকারী হতে পারবে না তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে। তুমি কাউকে শুনাতে পারবে না তাকে ছাড়া যে বিশ্বাস করে আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি এ অবস্থায় যে, তারা আত্মসমর্পনকারী।

২৭:৯২ :: আর যেন আমি কুরআন তিলাওয়াত করি। তারপর যে হিদায়াত গ্রহণ করবে, তাহলে নিশ্চয় সে হিদায়াত গ্রহণ করবে তার নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর যে পথভ্রষ্ট হবে, তাহলে বলো, ‘নিশ্চয় আমি তো সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত।”

২৮:১৫ :: আর (একদা) সে (মূসা) শহরে প্রবেশ করলো উহার অধিবাসীরা অসচেতন/ অসতর্ক থাকা অবস্থায়। তারপর সে পেলো উহাতে দুজন পুরুষকে; তারা মারামারি/ দ্বন্দ্ব-সংঘাত করছিলো। এ একজন তার স্বগোত্রের আর এ আরেকজন তার শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত। সে তার (মূসার) নিকট সাহায্য চাইলো যে ছিলো তার স্বগোত্রের অন্তর্ভুক্ত, (সাহায্য চাইলো) তার বিরুদ্ধে যে ছিলো তার শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত। তখন মূসা তাকে এক ঘুষি মারলো। তার ফলে তার ব্যাপার চুকে গেলো (অর্থাৎ সে মরে গেলো)। তখনি সে (মূসা) বলেছিলো, “ইহা তো শয়তানের কর্মের অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয় সে স্পষ্ট পথভ্রষ্টকারী শত্রু।”

২৮:২২ :: আর যখন সে (মূসা) অভিমুখী হলো/ রওনা করলো মাদিয়ানের অভিমুখে, তখন সে বললো, “আশা করি আমার প্রভু আমাকে হিদায়াত করবেন সরল-সোজা পথ।

২৮:৩৭ :: আর মূসা বললো, “আমার প্রভু জানেন তার সম্পর্কে যে এসেছে হিদায়াতসহ তাঁর নিকট থেকে আর কার জন্য (শুভ হবে) শেষ পরিণাম। নিশ্চয় যালিমরা সফল হয় না।”

২৮:৪৯ :: বলো, “তাহলে তোমরা আনো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো কিতাব, যা ঐ দুটির চেয়ে (তাওরাত ও কুরআনের চেয়ে) বেশি হিদায়াতকারী। আমিই উহা অনুসরণ করবো, যদি তোমরা হও সত্যবাদী।”

২৮:৫০ :: তারপর যদি তারা সাড়া না দেয় তোমার ডাকে, তাহলে জেনে রাখো, নিশ্চয় তারা অনুসরণ করছে তাদের প্রবৃত্তির। আর তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট কে হতে পারে যে অনুসরণ করে তার প্রবৃত্তির, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন হিদায়াত ছাড়া? নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিম ক্বওমকে।”

২৮:৫৬ :: নিশ্চয় তুমি হিদায়াত করতে পারো না যাকে তুমি ভালবাসো। কিন্তু আল্লাহ হিদায়াত করেন যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন। আর তিনি জানেন হিদায়াত গ্রহণকারীদেরকে।

২৮:৫৭ :: আর তারা বলে, “যদি আমরা হিদায়াতের অনুসরণ করি তোমার সাথে, তাহলে আমাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে আমাদের স্বদেশ থেকে।” আমরা কি বসবাসের ব্যবস্থা করি নি তাদের জন্য নিরাপদ হারামে (নিষিদ্ধ/ সংরক্ষিত এলাকায়), আনা হয় যার দিকে প্রত্যেক প্রকারের ফল-ফলাদি,আমাদের পক্ষ থেকে রিজিক্বস্বরূপ? কিন্তু তাদের অধিকাংশই জ্ঞান রাখে না।

২৮:৬৪ :: আর তাদেরকে বলা হবে, “ডাকো তোমাদের (কল্পিত) শরীকদেরকে।” তখন তাদেরকে ডাকা হবে। কিন্তু তারা সাড়া দেবে না তাদের জন্য। আর তারা শাস্তি দেখবে। যদি তারা হিদায়াত গ্রহণ করতো!

২৮:৮৫ :: নিশ্চয় যিনি ফরজ (নির্ধারিত/ অবশ্য পালনীয়) করেছেন তোমার উপর আল কুরআনকে। তিনি তোমাকে অবশ্যই ফিরিয়ে নিবেন চূড়ান্ত অবস্থানে। বলো, “আমার প্রভু জানেন কে এসেছে হিদায়াত নিয়ে আর কে আছে স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে?”

২৯:৬৯ :: আর যারা সংগ্রাম করেছে আমাদের (হিদায়াত পাওয়ার) ব্যাপারে, অবশ্যই আমরা তাদেরকে আমাদের পথসমূহে হিদায়াত করবো। আর নিশ্চয় আল্লাহ উত্তম আচরণকারীদের সাথে থাকেন।

৩০:২৯ :: বরং যারা যুলুম করেছে তারা অনুসরণ করে তাদের প্রবৃত্তিকে, জ্ঞান না থাকার কারণে। সুতরাং কে তাকে হিদায়াত করবে যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেছেন? আর তাদের জন্য নেই কোনো সাহায্যকারী।

৩০:৫৩ :: আর তুমি হতে পারো না (যে সত্যবিমুখ সেই) অন্ধের হিদায়াতকারী তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে। তুমি কাউকে শুনাতে পারবে না তাকে ছাড়া যে বিশ্বাস করে আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি, সেই সাথে তারা (আল্লাহর কাছে) আত্মসমর্পণকারী।

৩১:৪-৫ :: যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যাকাত (পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করে, এ অবস্থায় যে, আখিরাতের প্রতি নিশ্চিত ধারণা রেখে। তারাই তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে হিদায়াতের উপর আছে আর তারাই সফলতা লাভকারী।

৩১:৬ :: আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এমনও আছে যে কিনে নেয় মন-ভুলানো কথা, পথভ্রষ্ট করার জন্য আল্লাহর পথ থেকে, জ্ঞান ছাড়াই। আর উহাকে (আল্লাহর পথকে) গ্রহণ করে ঠাট্টার বিষয়রূপে। এরাই এমন লোক যাদের জন্য আছে অপমানকর শাস্তি।

৩১:১০-১১ :: তিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী এমন কোনো স্তম্ভ ছাড়াই, যা তোমরা দেখছো। আর তিনি স্থাপন করেছেন পৃথিবীতে পাহাড়সমূহ, যেন না টলে যায় তোমাদেরকে নিয়ে। আর তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে প্রত্যেক প্রকারের জীব-জন্তু। আর আমরা বর্ষণ করেছি আকাশ থেকে (বৃষ্টির) পানি, তারপর আমরা উদ্গত করি তাতে প্রত্যেক প্রকার মানসম্পন্ন (উদ্ভিদ) জোড়া। এ হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টি। তারপর আমাকে দেখাও তিনি ছাড়া অন্যরা কী সৃষ্টি করেছে? বরং সত্যলঙ্ঘনকারীরা স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় আছে।

৩২:৩ :: নাকি তারা বলে যে, “সে উহা রচনা করেছে। বরং উহা সত্য তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে, যেন তুমি সতর্ক করো এমন এক ক্বওমকে যাদের কাছে আসে নি কোনো সতর্ককারী তোমার আগে, যেন তারা হিদায়াত গ্রহণ করতে পারে।

৩২:১৩-১৪ :: আর যদি আমরা ইচ্ছা করতাম তাহলে আমরা দিতাম প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার হিদায়াত। কিন্তু (শাস্তি সম্পর্কিত) বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে আমার পক্ষ থেকে যে, “অবশ্যই আমি পূর্ণ করবো জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষকে দিয়ে একত্রে।“ সুতরাং তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো এ কারণে যে, তোমরা ভুলে গিয়েছিলে তোমাদের এ দিনের সম্মুখীন হওয়ান বিষয়ে। নিশ্চয় আমরাও তোমাদেরকে ভুলে গেলাম (অর্থাৎ তোমাদেরকে উপেক্ষা করলাম)। আর তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো স্থায়ী শাস্তির, তোমরা যা কাজ করতে তার কারণে।

৩২:২৪ :: আর আমরা তাদের (বানী ইসরাইলের) মধ্য থেকে করেছিলাম অনেক অগ্রগামী/নেতা, যারা হিদায়াত করতো আমাদের আদেশক্রমে, যখন তারা ধৈর্য ধরেছিলো আর তারা আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি নিশ্চিত ধারণা রাখতো।

৩২:২৬ :: তাদেরকে কি (এ ব্যাপারটি) হিদায়াত করে নি যে, কত যে আমরা ধ্বংস করেছিলাম তাদের আগে যুগ-যুগান্তরের লোকদের মধ্য থেকে, তারা বিচরণ করে যাদের আবাসভূমিসমূহের মধ্য দিয়ে। নিশ্চয় উহাতে আছে নিদর্শনসমূহ তারা কি শুনবে না?

৩৩:৪ :: আল্লাহ ব্যবস্থা করেন নি কোনো মানুষের জন্য দুটি কলবের, তার (মস্তিষ্কের) অভ্যন্তরে। আর তিনি বানিয়ে দেন নি তোমাদের স্ত্রীদেরকে, যাদেরকে তোমরা যিহার (মায়ের মতো হিসাবে প্রকাশ) করো তাদের মধ্য থেকে কাউকে (বানিয়ে দেন নি) তোমাদের মা। আর তিনি বানিয়ে দেন নি তোমাদের মুখ-ডাকা (পালক) পুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র। এসব তো তোমাদের মুখের কথামাত্র। আর আল্লাহ সত্য কথা বলেন। আর তিনি হিদায়াত করেন সঠিক পথ।

৩৩:৩৬ :: আর কোনো মু’মিন পুরুষের জন্য সঙ্গত নয়, আর কোনো মু’মিন নারীর জন্যও (সঙ্গত) নয়, যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনো সিদ্ধান্ত দেন, এটি যে, তা সত্ত্বেও তার জন্য অন্যরকম কাজ করার ইখতিয়ার থাকবে। আর যে অমান্য করে আল্লাহকে ও তাঁর রসূলকে, তবে নিশ্চয় সে পথভ্রষ্ট হয় স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায়।

৩৩:৬৭ :: আর তারা বলবে, “হে আমাদের প্রভু, নিশ্চয় আমরা আনুগত্য করেছিলাম আমাদের সাদাতদের (সমাজপতি ও ধর্মগুরুদের) এবং আমাদের (মধ্যকার) কবীরদের (শ্রেষ্ঠদের/ মাতবরদের/ বুজুর্গদের); অথচ তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দিয়েছিলো সঠিক পথ থেকে।

৩৪:৬ :: আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা দেখে যে, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে, উহা সত্য। আর উহা হিদায়াত করে মহাশক্তিমান মহাপ্রশংসিত সত্তার পথের দিকে।

৩৪:৭-৮ :: আর যারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে, “আমরা কি তোমাদেরকে সন্ধান দেবো এমন এক পুরুষের, যে তোমাদেরকে সংবাদ দেয় যে, ‘যখন তোমাদেরকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করা হবে, প্রত্যেক (অণুকণিকায়) ছিন্নবিচ্ছন্ন করে; তখনো নিশ্চয় তোমরা হবে নতুন সৃষ্টিরূপে (পুনর্গঠিত)।’” সে কি রচনা করেছে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা, নাকি তার সাথে আছে কোনো জ্বিন? বরং যারা বিশ্বাস করে না আখিরাতের প্রতি, তারা শাস্তির মধ্যেই থাকবে আর তারা সুদূর পথভ্রষ্টতায় আছে।

৩৪:২৪ :: বলো, “কে তোমাদেরকে রিজিক্ব দেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী থেকে?” বলো, ‘আল্লাহ’। (আরো বলো,) “আর নিশ্চয় আমরা অথবা তোমরা হিদায়াতের উপর থাকা হচ্ছে অথবা স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে থাকা হচ্ছে।”

৩৪:৩২ :: যারা অহংকার করতো/ বড় বনে ছিলো তারা বলবে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো, “আমরা কি তোমাদেরকে বাধা দিয়েছিলাম হিদায়াত গ্রহণ থেকে উহার পরও যখন তা তোমাদের কাছে এসেছিলো? বরং তোমরাই তো ছিলে অপরাধী (তোমরা স্বেচ্ছায় অন্যায়কে পছন্দ করে নিয়েছিলে)।”

৩৪:৫০ :: বলো, “যদি আমি পথভ্রষ্ট হয়ে থাকি তাহলে নিশ্চয় আমি পথভ্রষ্ট হয়েছি আমার নিজ দায়িত্বে। আর যদি আমি হিদায়াত গ্রহণ করে থাকি, তাহলে উহার কারণ ওয়াহী করেন আমার প্রতি আমার প্রভু। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সবচেয়ে নিকটবর্তী।”

৩৫:৮ :: তবে যার জন্য সুশোভিত করা হয়েছে তার মন্দ কাজকে, তারপর সে উহাকে দেখে উত্তম কাজ হিসাবে (সে কি হিদায়াত গ্রহণ করতে পারে?)। নিশ্চয় আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর তিনি হিদায়াত করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। সুতরাং তোমার নিজ-সত্তা যেন চলে না যায় (তুমি যেন প্রাণ বিসর্জন না দাও) তাদের জন্য আফসোস করে। নিশ্চয় আল্লাহ উহা জানেন যা তারা তৈরি করছে।

৩৬:২১ :: তোমরা অনুসরণ করো এমন ব্যক্তির যে তোমাদের কাছে চায় না (সত্য প্রচারের জন্য) কোনো প্রতিফল/ পারিশ্রমিক/ মজুরি। আর তারা হিদায়াত গ্রহণকারী।

৩৬:২২-২৪ :: আর আমার কী হয়েছে যে, আমি আল্লাহর দাসত্ব করবো না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন? আর তাঁরই দিকে তোমরা ফিরে যাবে। আমি কি গ্রহণ করবো তাঁকে ছাড়া অন্য ইলাহদেরকে? যদি আমাকে চান দয়াময় (আল্লাহ) কোনো ক্ষতি করতে, তবে কাজে আসবে না আমার ব্যাপারে তাদের শাফায়াত/ সুপারিশ, কিছুমাত্রও। আর তারা আমাকে উদ্ধার করতে পারবে না। নিশ্চয় আমি তখন স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে (পড়ে যাব)।

৩৬:৬০-৬২ :: আমি কি ফরমান জারি করি নি তোমাদের প্রতি হে বানী আদম, এ মর্মে যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু। আর তোমরা আমার দাসত্ব করো। ইহাই সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথ (সিরাতুল মুসতাক্বীম)। আর নিশ্চয় সে পথভ্রষ্ট করেছে তোমাদের মধ্য থেকে অধিকাংশ লোককে। তবুও কি তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি/ common sense প্রয়োগ করছিলে না?

৩৭:৯৯ :: আর সে (ইবরাহীম) বললো, “নিশ্চয় আমি চললাম আমার প্রভুর দিকে। শীঘ্রই তিনি আমাকে হিদায়াত (পথনির্দেশ) করবেন।”

৩৮:২১-২২ :: আর তোমার কাছে কি পৌঁছেছে মামলাকারীদের সংবাদ? যখন তারা দেয়াল টপকে (দাউদের) ব্যক্তিগত কক্ষে ঢুকে পড়েছিলো। যখন তারা প্রবেশ করেছিলো দাউদের কাছে, তখন সে তাদের থেকে ঘাবড়ে গিয়েছিলো। তারা বলেছিলো, “ভয় করবেন না। আমরা মামলার দুই পক্ষ। বাড়াবাড়ি করেছে আমাদের একে অপরের প্রতি। সুতরাং বিচার করে দিন আমাদের মধ্যে সত্যের ভিত্তিতে। আর অবিচার করবেন না। আর আমাদেরকে হিদায়াত করুন সরল-সোজা পথে।”

৩৮:২৬ :: হে দাউদ, নিশ্চয় আমরা তোমাকে স্থাপন করেছি পৃথিবীতে খলিফা (ক্ষমতায় স্থলাভিষিক্ত) হিসাবে। সুতরাং তুমি বিচার-ফায়সালা করো মানুষের মধ্যে সত্যের ভিত্তিতে। আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তাহলে উহা তোমাকে পথভ্রষ্ট করবে আল্লাহর পথ থেকে। নিশ্চয় যারা পথভ্রষ্ট হয় আল্লাহর পথ থেকে তাদের জন্য আছে কঠোর শাস্তি, এ কারণে যে, তারা ভুলে গেছে হিসাব দিবসকে।

৩৯:৩ :: জেনে রাখো, খাঁটি জীবনব্যবস্থা আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। আর যারা গ্রহণ করেছে তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য অভিভাবকদেরকে, (আর বলে) “আমরা তাদের দাসত্ব করি না এজন্য ছাড়া যে, তারা আমাদেরকে নিকটবর্তী করে দেবে আল্লাহর কাছে, নিকটবর্তী সত্তা হিসাবে।” নিশ্চয় আল্লাহ ফায়সালা করে দেবেন তাদের মধ্যে ঐ বিষয়ে যাতে তারা মতভেদ করছে। নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন না তাকে যে মিথ্যাবাদী ও অবিশ্বাসী/ অস্বীকারকারী।

৩৯:৮ :: আর যখন স্পর্শ করে মানুষকে কোনো বিপদ, তখন সে ডাকে তার প্রভুকে তাঁর দিকে অভিমুখী হয়ে। তারপর যখন তিনি তাকে দান করেন তাঁর পক্ষ থেকে নেয়ামত/ অনুগ্রহ, তখন সে ভুলে যায় সে বিপদকে যার জন্য সে তাঁকে ডেকেছিল ইতিপূর্বে। আর সে সাব্যস্ত করে আল্লাহর জন্য সমকক্ষ, তাঁর পথ থেকে লোকদেরকে পথভ্রষ্ট করতে। বলো, “(যদি অবিশ্বাস করো, তবে) তুমি উপভোগ করো তোমার অবিশ্বাস/অস্বীকারের স্বাদ স্বল্পকাল। নিশ্চয় তুমি হবে অগ্নিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত।”

৩৯:১৮ :: যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে তারপর উহার উত্তমটিকে অনুসরণ (গ্রহণ) করে, তারাই এমন লোক যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত করেছেন আর তারাই সুষ্ঠু চিন্তাশীল।

৩৯:২২ :: তবে কি সে (অন্যদের মতো হতে পারে) আল্লাহ উন্মুক্ত করেছেন যার মস্তিষ্ককে ইসলামের জন্য, তারপর সে তার প্রভুর পক্ষ থেকে আসা আলোর উপর প্রতিষ্ঠিত? সুতরাং তাদের জন্য দুর্ভোগ- শক্ত হয়ে গেছে যাদের কলবসমূহ আল্লাহর যিকির (স্মরণীয় তথ্য ও বিধিবিধান) থেকে। তারাই স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে আছে।

৩৯:২৩ :: আল্লাহ নাযিল করেছেন সবচেয়ে উত্তম বাণী, সাদৃশ্যপূর্ণ বক্তব্যসমষ্টির কিতাব, যা বারবার আবৃত্তি করার যোগ্য। তাদের চর্ম শিহরিত হয় উহা থেকে (উহা পাঠ করে ও শ্রবণ করে) যারা ভয় করে তাদের প্রভুকে। তারপর নরম হয় তাদের চর্ম আর তাদের কলব আল্লাহর যিকিরের (স্মরণীয় তথ্য ও বিধিবিধানের) প্রতি। উহাই আল্লাহর হিদায়াত। তিনি হিদায়াত করেন উহা দ্বারা যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তারপর তার জন্য নেই কোনো হিদায়াতকারী।

৩৯:৩৬-৩৭ :: আল্লাহ কি যথেষ্ট নন তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে? আর তারা তোমাকে ভয় দেখায়, তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদের (ভয়)। আর যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন, তারপর তার জন্য নেই কোনো হিদায়াতকারী। আর যাকে আল্লাহ হিদায়াত করেন তার জন্য নেই কোনো পথভ্রষ্টকারী। আল্লাহ কি নন মহাশক্তিমান, প্রতিশোধ গ্রহণকারী?

৩৯:৪১ :: নিশ্চয় আমরা নাযিল করেছি তোমার উপর এ কিতাব মানবজাতির জন্য সত্যসহকারে। সুতরাং যে হিদায়াত গ্রহণ করে সে তা গ্রহণ করে তার নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর যে পথভ্রষ্ট হয় তবে বস্তুত সে পথভ্রষ্ট হয় তার নিজেরই বিরুদ্ধে। আর তুমি নও তাদের উপর কর্মবিধায়ক।

৩৯:৫৫-৫৭ :: আর তোমরা অনুসরণ করো উত্তম যা নাযিল করা হয়েছে তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে, এর আগেই যে, তোমাদের উপর হঠাৎ শাস্তি আসবে, এ অবস্থায় যে, তোমরা টের পাবে না। যেন না বলতে হয় কোনো ব্যক্তিকে, “হায়! আমার আফসোস! এ কারণে যে, আমি ত্রুটি করেছি আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে। আর আমি কি ছিলাম না ঠাট্টাবিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত?” অথবা বলবে, “যদি এমন হতো যে, আল্লাহ আমাকে হিদায়াত করতেন তাহলে আমি হতাম স্রষ্টা-সচেতনদের অন্তর্ভুক্ত।”

৪০:২৮ :: আর একজন মু’মিন পুরুষ বলেছিলো, যে ছিলো ফেরাউনের লোকজনের অন্তর্ভুক্ত, যে গোপন রেখেছিলো তার ঈমান, “তোমরা কি হত্যা করবে একজন পুরুষকে, এ কারণে যে, সে বলে, ‘আল্লাহ আমার প্রভু’, আর সে তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে স্পষ্ট যুক্তি-প্রমাণ সহকারে। আর যদি সে হয় মিথ্যাবাদী, তাহলে তার নিজের উপর বর্তাবে তার মিথ্যাবাদিতার দায়ভার। আর যদি সে হয় সত্যবাদী, তাহলে তোমাদের উপর আপতিত হবে উহার কিছু যা সম্পর্কে সে তোমাদেরকে ওয়াদা দিচ্ছে। নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন না তাকে, যে অপচয়কারী/ সীমালংঘনকারী ও মিথ্যাবাদী।

৪০:২৯ :: (ফেরাউনের দরবারের মু’মিন ব্যক্তিটি বললো), “হে আমার ক্বওম, তোমাদেরই আধিপত্য আছে আজ তোমরা পৃথিবীতে বিজয়ী। কিন্তু কে আমাদেরকে সাহায্য করবে আল্লাহর শাস্তি থেকে যদি উহা আমাদের উপর আসে?” ফেরাউন বলেছিলো, “আমি তোমাদেরকে দেখাচ্ছি না আমি নিজে যা দেখছি তা ছাড়া অন্যরূপ। আর আমি তোমাদেরকে হিদায়াত করছি না সঠিক পথে ছাড়া।”

৪০:৩৩-৩৪ :: (ফেরাউনের দরবারের মু’মিন ব্যক্তিটি বললো), “যেদিন তোমরা পালাবে পিঠ ফিরিয়ে। তোমাদের জন্য নেই আল্লাহর শাস্তি থেকে কোনো রক্ষাকারী। আর যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন, তাহলে তার জন্য নেই কোনো হিদায়াতকারী। আর নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছিলো ইউসুফ ইতিপূর্বে স্পষ্ট যুক্তি-প্রমাণসহ। কিন্তু তোমরা সবসময় ছিলে সন্দেহের মধ্যে, তোমাদের কাছে যা এসেছিলো সে বিষয়ে। শেষ পর্যন্ত যখন সে হালাক হলো/মৃত্যুবরণ করলো, তখন তোমরা বলেছিলো, ‘আল্লাহ কখনো সমুত্থিত/ প্রেরণ করবেন না তাঁর পরবর্তীতে কোনো রসূল।’ এরূপে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন তাকে, যে অপচয়কারী/ সীমালংঘনকারী ও সন্দেহকারী।”

৪০:৩৮ :: আর যে বিশ্বাস করেছিলো সে বললো, “হে আমার ক্বওম, তোমরা আমার অনুসরণ করো। আমি তোমাদেরকে হিদায়াত করবো সঠিক পথে।

৪০:৭৩-৭৪ :: তারপর তাদেরকে বলা হবে, “(তারা) এখন কোথায় যাদেরকে তোমরা শরীক করতে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে?” তারা বলবে, “তারা উধাও হয়ে গেছে আমাদের থেকে। বরং আমরা ডাকতাম না ইতিপূর্বে কাউকে/ কোনো কিছুকে।” এরূপে আল্লাহ কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করেন।

৪১:১৭ :: আর সামুদের অবস্থা ছিলো এই যে, তারপর আমরা তাদেরকে হিদায়াত করেছিলাম। কিন্তু তারপর তারা পছন্দ করেছিলো অন্ধ হয়ে থাকতে হিদায়াতের তুলনায়। সুতরাং তাদেরকে পাকড়াও করেছিলো অপমানকর শাস্তির বজ্র, তারা যা (যে পাপ) উপার্জন করেছিলো তার কারণে।

৪১:২৯ :: আর যারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলবে, “হে আমাদের প্রভু, আমাদেরকে দেখিয়ে দিন সেই দুই প্রজাতির লোকদেরকে যারা আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে জিন ও মানুষের মধ্য থেকে। আমরা তাদের উভয়কে পদদলিত করবো আমাদের পায়ের নিচে ফেলে, যেন তারা উভয়ে হয় অপমানিতদের অন্তর্ভুক্ত।”

৪১:৫২ :: বলো, “তোমরা কি ভেবে দেখেছো, যদি (এ কুরআন) হয় আল্লাহর নিকট থেকে, তারপর তোমরা উহার প্রতি অবিশ্বাস করে থাকো; তাহলে তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট কে হতে পারে যে বিরোধিতায় বহুদূর চলে গেছে?”

৪২:১৩ :: তিনি বিধিবদ্ধ করেছেন তোমাদের জন্য জীবনব্যবস্থা থেকে উহাকেই যার প্রতি তিনি নির্দেশদান করেছিলেন নূহকে, আর যা আমরা ওয়াহী করেছি তোমার প্রতি, আর যার প্রতি আমরা নির্দেশদান করেছিলাম ইবরাহীমকে, মূসাকে ও ঈসাকে; এ মর্মে যে “জীবনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করো। আর উহার ক্ষেত্রে নানা দলে বিভক্ত হয়ে যেয়ো না।” বড়ই বেদনাদায়ক হয়েছে মুশরিকদের উপর ঐ বিষয় যার দিকে তুমি তাদেরকে আহবান করছো। আল্লাহ তাঁর দিকে বেছে নেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন, আর (তিনি তাকে) তাঁর দিকে হিদায়াত করেন যে (তাঁর) অভিমুখী হয়।

৪২:১৭-১৮ :: তিনিই আল্লাহ যিনি নাযিল করেছেন এ কিতাব সত্য সহকারে আর (নাযিল করেছেন এ) দাড়িপাল্লা/মাপকাঠি। আর তুমি কি জানো যে, সম্ভবত প্রলয়-মুহুর্ত নিকটবর্তী? তারাই উহা সম্পর্কে তাড়াহুড়া করছে যারা উহার প্রতি বিশ্বাস করে না। আর যারা বিশ্বাস করেছে তারা উহাকে ভয় করে, আর তারা জানে যে, উহা সত্য। জেনে রাখো, নিশ্চয় যারা সন্দেহ সৃষ্টি করে প্রলয়-মুহুর্ত সম্পর্কে, তারা আছে সুদূর পথভ্রষ্টতার মধ্যে।

৪২:৪৪ :: আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য নেই কোনো অভিভাবক তাঁর পরে। আর তুমি দেখবে যালিমদেরকে, যখন তারা শাস্তি দেখবে, তখন তারা বলবে, “ফিরে যাওয়ার কোনো পথ/ উপায় আছে কি?”

৪২:৪৬ :: আর তাদের জন্য থাকবে না কোনো অভিভাবক তাদেরকে সাহায্য করতে, আল্লাহ ছাড়া। আর যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য নেই কোনো পথ।

৪২:৫২ :: আর এভাবে আমরা ওয়াহী করেছি তোমার কাছে রুহকে (কুরআনকে) আমাদের আদেশক্রমে। তুমি জানতে না কিতাব কী? আর ঈমান কী তাও জানতে না। কিন্তু আমরা উহাকে (রুহকে/কুরআনকে) করেছি আলো। আমরা উহা (রুহ/আলো/কুরআন) দ্বারা হিদায়াত করি যাকে আমরা ইচ্ছা করি আমাদের বান্দাদের মধ্য থেকে। আর নিশ্চয় তুমি হিদায়াত করছো সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথের দিকে (সিরাতুল মুসতাক্বীম)।

৪৩:১০ :: যিনি পরিণত করেছেন তোমাদের জন্য পৃথিবীকে দোলনাতে আর স্থাপন করেছেন তোমাদের জন্য উহাতে পথসমূহ, যাতে তোমরা হিদায়াত (পথের দিশা) পেতে পারো।

৪৩:২১-২২ :: নাকি আমরা তাদেরকে দিয়েছি কোনো কিতাব উহার (কুরআনের) আগে, তারপর তারা হয়েছে উহাকে দৃঢ়ভাবে ধারণকারী? বরং তারা বলে, “নিশ্চয় আমরা পেয়েছি আমাদের বাপদাদাকে একটি উম্মাত/ আদর্শিক জনগোষ্ঠী হিসাবে। আর নিশ্চয় আমরা তাদের আছারের/শিক্ষার ভিত্তিতে হিদায়াত গ্রহণকারী।

৪৩:২৩-২৪ :: আর এরূপে আমরা প্রেরণ করি নি তোমার আগে কোনো জনপদে কোন সতর্ককারী, এছাড়া যে/ যার সাথে এরূপ ঘটেনি যে, মুতরাফীন (যারা বিত্ত-বিভব পেয়েছে, তারা দুর্বিনীত ও বেপরোয়া শাসক ও শোষক হওয়ার প্রেক্ষিতে তারা) বলেছিলো, “নিশ্চয় আমরা পেয়েছি আমাদের বাপদাদাকে একটি উম্মাত/ আদর্শিক জনগোষ্ঠী হিসাবে, আর নিশ্চয় আমরা তাদের আছারের/শিক্ষার ভিত্তিতে অনুসরণকারী হয়ে আছি।” (প্রত্যেক নবী-রসূল) বলতো, “এ সত্ত্বেও কি যে,আমি তোমাদের কাছে এনেছি অধিক নির্ভুল হিদায়াত উহার চেয়েও যার উপর তোমরা পেয়েছো তোমাদের বাপদাদাকে?” তারা বলতো, “নিশ্চয় আমরা যা সহকারে তোমরা প্রেরিত হয়েছো উহার প্রতি অবিশ্বাসী।”

৪৩:৩৬-৩৭ :: আর যে বিমুখ হয় দয়াময়ের যিকির (স্মরণীয় তথ্য ও বিধিবিধান) থেকে, আমরা নিয়োজিত করি তার জন্য কোনো শয়তানকে। তখন সে তার জন্য সহচর হয়ে যায়। আর নিশ্চয় তারা (শয়তানরা) তাদেরকে বাধা দেয় সঠিক পথ থেকে। আর তারা হিসাব/ধারণা করে যে, তারা হিদায়াত গ্রহণকারী।

৪৩:৪০ :: তবে কি তুমি বধিরকে শুনাবে? অথবা অন্ধকে হিদায়াত করবে? আর তাকেও যে স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে আছে?

৪৫:২৩ :: তুমি কি ভেবে দেখেছ যে গ্রহণ করেছে তার ইলাহ হিসাবে তার প্রবৃত্তিকে, আর আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন জ্ঞানের ভিত্তিতে, আর তিনি মোহর করে দিয়েছেন তার কানের উপর ও তার কলবের উপর, আর তিনি রেখে দিয়েছেন তার চোখের উপর পর্দা। সুতরাং কে তাকে হিদায়াত করবে আল্লাহর পরে? তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না?

৪৬:৫ :: আর তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট কে হতে পারে যে ডাকে আল্লাহকে ছাড়া এমন সত্তাকে যে তার ডাকে সাড়া দিতে পারবে না কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত আর তারা তাদের দোয়া সম্পর্কে অনবহিত?

৪৬:১১ :: আর যারা অবিশ্বাস/অস্বীকার করেছে তারা বলে তাদের প্রসঙ্গে যারা বিশ্বাস করেছে, “যদি উহা হতো কল্যাণকর, তাহলে তারা অগ্রগামী হতে পারতো না উহার ক্ষেত্রে।” আর যখন তারা হিদায়াত পায় নি উহার প্রতি, তাই শীঘ্রই তারা বলবে, “ইহা পুরাতন মিথ্যা।”

৪৬:৩২ :: আর যে সাড়া দেয় না আল্লাহর দিকে আহবানকারীর ডাকে, তবে তারা পৃথিবীতে (আল্লাহকে) অক্ষমকারী হতে পারবে না, আর তার জন্য নেই তিনি ছাড়া কোনো অভিভাবক। উহারাই স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে আছে।

৪৬:৩০ :: তারা (জ্বিনেরা) বললো, “হে আমাদের ক্বওম, নিশ্চয় আমরা শুনেছি একটি কিতাব, যা নাযিল করা হয়েছে মূসার পরবর্তীতে, সেসবের সত্যতা প্রতিপাদনকারীরূপে যা উহার সামনে আছে। উহা হিদায়াত করে সত্যের দিকে ও সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথের দিকে (তরিকেম মুসতাক্বীম)।

৪৭:৪-৫ :: সুতরাং যখন তোমরা তাদের মোকাবেলা করো যারা অবিশ্বাস/অস্বীকার করেছে, তখন তোমরা আঘাত করো (তাদের) ঘাড়ে। শেষ পর্যন্ত যখন তোমরা তাদেরকে পর্যুদস্ত করবে, তারপর তাদেরকে শক্ত করে বাঁধবে। তারপর হয়তো পরবর্তীতে অনুগ্রহ করবে, নয়তো মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিবে; (আঘাত করো) যতক্ষণ না যুদ্ধ-অস্ত্র নামিয়ে নেয় (অর্থাৎ অস্ত্র নামিয়ে নিলে বা আত্মসমর্পণ করলে তখন আঘাত করা যাবে না)। উহাই বিধান। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাহলে আল্লাহ তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু (তিনি এ ব্যবস্থা করেছেন) যেন তোমাদের এক পক্ষকে দ্বারা অপর পক্ষকে পরীক্ষা করতে পারেন। আর যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে আল্লাহর পথে থাকার কারণে, তিনি কখনো ব্যর্থ করবেন না তাদের আমলসমূহকে। তিনি তাদেরকে হিদায়াত করবেন আর সংশোধন করে দেবেন তাদের অবস্থা।

৪৭:১৭ :: আর যারা হিদায়াত পেয়েছে তিনি তাদেরকে বাড়িয়ে দেন হিদায়াত আর তিনি তাদেরকে দান করেন তাদের স্রষ্টা-সচেতনতা।

৪৮:২০ :: আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন অনেক মাগানিমের/যুদ্ধলভ্য সম্পদের, তোমরা তা গ্রহণ করবে। এখন তাড়াতাড়ি দিলেন তোমাদের জন্য ইহা (প্রশান্তি)। আর তিনি বিরত রেখেছেন মানুষের হাতসমূহকে তোমাদের থেকে। আর যেন উহা হয় মু’মিনদের জন্য একটি নিদর্শন। আর তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত করেন সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথ (সিরাতুল মুসতাক্বীম)।

৪৯:১৭ :: তারা তোমার উপর অনুগ্রহ প্রকাশ করে এ মর্মে যে, তারা আত্মসমর্পণ করেছে। বলো, “তোমরা অনুগ্রহ করো নি আমার উপর তোমাদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। বরং আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন তোমাদের উপর এ মর্মে যে, তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত করেছেন বিশ্বাস করার জন্য, যদি তোমরা হও সত্যবাদী।”

৫৩:২৯-৩০ :: সুতরাং মুখ ফিরিয়ে নাও তার থেকে যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আমাদের যিকির (স্মরণীয় তথ্য ও বিধিবিধান) থেকে, আর ইচ্ছা করে না পার্থিব জীবন ছাড়া অন্য কিছু। উহাই তাদের জ্ঞানের সীমা। নিশ্চয় তোমার প্রভু জানেন তার ব্যাপারে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে তাঁর পথ থেকে আর তিনি জানেন তার ব্যাপারেও যে হিদায়াত গ্রহণকারী।

৫৪:৪৭ :: নিশ্চয় অপরাধীগণ রয়েছে পথভ্রষ্টতা ও বুদ্ধি বিকৃতির মধ্যে।

৬০:১ :: হে যারা বিশ্বাস করেছ, তোমরা গ্রহণ করো না আমার ও তোমাদের শত্রুকে অভিভাবকরূপে/বন্ধুরূপে। তোমরা স্থাপন করো তাদের সাথে বন্ধুত্ব, অথচ নিশ্চয় তারা অবিশ্বাস/অস্বীকার করেছে উহার প্রতি যা তোমাদের কাছে এসেছে সত্য থেকে। তারা রসূলকে ও তোমাদেরকে বের করে দিয়েছে এ কারণে যে, তোমরা বিশ্বাস করেছো আল্লাহর প্রতি যিনি তোমাদের প্রভু। যদি তোমরা বের হয়ে থাকো আমার পথে সংগ্রামে ও আমার সন্তুষ্টির তালাশে, তবে কেন তোমরা গোপনে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো? অথচ আমি জানি যা তোমরা গোপন করো ও যা তোমরা প্রকাশ করো। আর যে উহা করবে তোমাদের মধ্য থেকে, তবে নিশ্চয় সে পথভ্রষ্ট হয়েছে সরল-সোজা পথ থেকে।

৬১:৫ :: আর যখন মূসা বলেছিল তার ক্বওমকে, “কেন তোমরা আমাকে কষ্ট দাও? অথচ নিশ্চয় তোমরা জানো যে, আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর রসূল।” তারপর যখন তারা বক্রতা অবলম্বন করেছে, তখন আল্লাহ বক্র করে দিয়েছেন তাদের অন্তরসমূহকে। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না ফাসিক্ব ক্বওমকে।

৬১:৭ :: আর তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা রচনা করে অথচ তাকে আহবান করা হয় ইসলামের দিকে? আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না কোনো যালিম কওমকে।

৬২:২ :: তিনিই সেই সত্তা যিনি উম্মীদের মধ্যে সমুত্থিত/ প্রেরণ করেছেন একজন রসূলকে তাদেরই মধ্য থেকে। সে তিলাওয়াত করে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ আর সে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর সে তাদেরকে শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমাত, যদিও তারা ছিল ইতিপূর্বে স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে।

৬২:৫ :: যাদেরকে তাওরাত বহন করতে দেয়া হয়েছিল তারপর তারা তা বহন করে নি তাদের দৃষ্টান্ত গাধার দৃষ্টান্তের মত যে (গাধা) কিতাবসমূহ বহন করে। খুবই মন্দ সেই ক্বওমের দৃষ্টান্ত যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিম ক্বওমকে।

৬৩:৬ :: তাদের (মুনাফিক্বদের) জন্য সমান তুমি কি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো নাকি তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো নি। আল্লাহ কখনো তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন না ফাসিক্ব ক্বওমকে।

৬৪:৬ :: উহা এজন্য যে, তাদের কাছে আসতো তাদের (কাছে প্রেরিত) রসূলগণ স্পষ্ট যুক্তি-প্রমাণসহ। তারপর তারা বলেছিলো, “মানুষই কি আমাদেরকে হিদায়াত করবে?” তারপর তারা অবিশ্বাস/অস্বীকার করেছিলো আর তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। আর আল্লাহ বেপরোয়া হয়েছেন। আর আল্লাহ বেপরোয়া ও প্রশংসিত।

৬৪:১১ :: কোনো মুসিবতই হয় না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর যে বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি, তিনি হিদায়াত করেন তার ক্বলবকে। আর আল্লাহ সবকিছুর বিষয়ে জ্ঞানী।

৬৭:২২ :: সুতরাং যে চলে তার মুখ নিচু করে, সেই কি অধিক হিদায়াত গ্রহণকারী, নাকি সে (হিদায়াত গ্রহণকারী) যে মুখ সোজা রেখে (সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে) চলে সত্যে-সুপ্রতিষ্ঠিত পথের উপর (সিরাতুল মুসতাক্বীম)?

৬৭:২৯ :: বলো, “তিনিই দয়াময় (আল্লাহ)। আমরা তাঁর প্রতি বিশ্বাস করেছি আর তাঁরই উপর আমরা ভরসা করেছি। সুতরাং শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে, কে স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে আছে?”

৬৮:৭ :: নিশ্চয় তোমার প্রভু জানেন কে পথভ্রষ্ট হয়েছে তাঁর পথ থেকে? আর তিনিই জানেন হিদায়াত গ্রহণকারীদেরকে।

৭১:২৪ :: (নূহ বলেছিলো), “আর নিশ্চয় তারা (নূহের ক্বওম) পথভ্রষ্ট করেছিলো অধিকাংশ লোককে। আর আপনি যালিমদেরকে বাড়িয়ে দিবেন না পথভ্রষ্টতা ছাড়া অন্য কিছু।”

৭২:১-২ :: বলো, “ওয়াহী করা হয়েছে আমার কাছে যে, শুনেছে জিনদের মধ্য থেকে একটি দল, তারপর তারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আমরা শুনেছি আশ্চর্য/বিস্ময়কর কুরআন। উহা হিদায়াত করে সত্যের দিকে। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করেছি উহার প্রতি। আর আমরা কখনো শিরক করবো না আমাদের প্রভুর সাথে কাউকেই।

৭৪:৩০-৩১ :: উহার উপরে উনিশ (অর্থাৎ জাহান্নামের উপর দায়িত্বশীল হিসাবে আছে উনিশজন ফেরেশতা)। আর আমরা নিযুক্ত করি নি (যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেবে এমন দায়িত্বশীল) ফেরেশতাদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে। আর আমরা নির্ধারণ করি নি তাদের সংখ্যা, যারা কুফর করেছে তাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ ছাড়া, আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা নিশ্চিত ধারণা লাভ করার জন্য ছাড়া, আর যারা বিশ্বাস করেছে তাদের বিশ্বাস বেড়ে যাওয়ার জন্য ছাড়া, আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা ও মু’মিনগণ সন্দেহে না পড়ার জন্য ছাড়া, আর যাদের কলবসমূহে (বক্রচিন্তার) রোগব্যাধি আছে তারা ও কাফিরগণ এ কথা বলার জন্য ছাড়া যে, “এ দৃষ্টান্ত দ্বারা আল্লাহ কী ইচ্ছা করেছেন?” এভাবে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন, আর তিনি হিদায়াত করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর কেউই জানে না তোমার প্রভুর সৈন্যবাহিনীকে, তিনি ছাড়া। আর উহা (কুরআন) তো নয় মানুষের জন্য যিকির (স্মরণীয় তথ্য ও বিধিবিধান) ছাড়া অন্যরূপ কিছু।

৭৬:৩ :: নিশ্চয় আমরা তাকে (মানুষকে) হিদায়াত করেছি। হয়তো সে কৃতজ্ঞ হবে নয়তো সে অকৃতজ্ঞ হবে।

৭৯:১৯ :: (মূসাকে বলা হয়েছে যেন সে ফেরাউনকে বলে যে), “আমি (মূসা) তোমাকে (ফেরাউনকে) হিদায়াত করবো তোমার প্রভুর দিকে। সুতরাং তুমি (তাঁকে) ভয় করবে।”

৮৭:১-৩ :: তোমার মহান প্রভুর নামের পবিত্রতা প্রকাশ করো। যিনি সৃষ্টি করেছেন তারপর সুবিন্যস্ত করেছেন। আর যিনি প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণ করেছেন, তারপর (তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ) হিদায়াত করেছেন।

৯০:১০ :: আর আমরা তাকে (মানুষকে) হিদায়াত করেছি (ভালো ও মন্দ) দুটি পথ।

৯২:১২ :: নিশ্চয় আমাদেরই উপর দায়িত্ব হিদায়াত করা।

হুদা (হিদায়াত) : কুরআন বা আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবই হিদায়াত

২:২ :: ঐ কিতাব -যাতে কোনো সন্দেহ নেই- স্রষ্টা-সচেতনদের জন্য হিদায়াত।

২:৩৮ :: আমরা বললাম, “চলে যাও উহা থেকে তোমরা সবাই। তারপর যখন তোমাদের কাছে আসবে আমার পক্ষ থেকে হিদায়াত, তখন যারা অনুসরণ করবে আমার হিদায়াত, তাহলে তাদের কোনো ভয় নেই আর না তারা দু:খিত হবে।

২:৯৭ :: বলো, “যে হয় জীবরীলের শত্রু, (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় সে (জিবরীল) উহা (কুরআন) নাযিল করেছে তোমার ক্বলবের উপর আল্লাহর অনুমতিক্রমে (যা) উহার সামনে থাকা সত্যের সত্যায়নকারী (অর্থাৎ যা তখন তাওরাত ও ইনজীলের যতটুকু অবিকৃত অবস্থায় ছিলো সেটুকুর সত্যতা প্রতিপাদনকারী) আর মু’মিনদের জন্য হিদায়াত ও সুসংবাদ।

২:১২০ :: আর কখনো সন্তুষ্ট হবে না তোমার প্রতি ইয়াহুদ আর না সন্তুষ্ট হবে নাসারা, যতক্ষণ না তুমি অনুসরণ করবে তাদের মিল্লাত (ইবাদাতের প্রকৃতি ও স্বরূপ)। বলো, “নিশ্চয় আল্লাহর হিদায়াত, উহাই একমাত্র হিদায়াত। আর যদি তুমি অনুসরণ করো তাদের প্রবৃত্তির, উহার পরও যা তোমার কাছে এসেছে জ্ঞান থেকে, তাহলে না তোমার জন্য পাবে আল্লাহ থেকে (বাঁচাতে) কোনো অভিভাবক আর না কোনো সাহায্যকারী।

২:১৫৯ :: নিশ্চয় যারা গোপন করে যা আমরা নাযিল করেছি স্পষ্ট যুক্তি-প্রমাণ আর হিদায়াতরূপে, উহার পরেও যা আমরা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি মানবজাতির জন্য কিতাবের মধ্যে। তারা (ঐসব লোক) যাদেরকে অভিশাপ দেন আল্লাহ আর আর যাদেরকে অভিশাপ দেয় অভিশাপকারীগণ।

২:১৮৫ :: রমাদানের মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে আল কুরআন যা মানবজাতির জন্য হিদায়াত, হিদায়াতের স্পষ্ট যুক্তি-প্রমাণ ও ফুরকান/ সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাসকে প্রত্যক্ষ করবে সে যেন তাতে (মাসব্যাপী) সিয়াম (‌আত্মসংযম-অনুষ্ঠান) পালন করে। আর যে হবে অসুস্থ অথবা থাকবে সফরে সে সংখ্যা (পূর্ণ করবে) অন্য দিনসমূহে। আল্লাহ ইচ্ছা করেন তোমাদের প্রতি সহজতা আরোপের আর তিনি ইচ্ছা করেন না তোমাদের প্রতি কঠোরতা আরোপের। আর যেন তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করো। আর যেন তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো তাঁর হিদায়াত অনুযায়ী। আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।

৩:৩-৪ :: তিনি নাযিল করেছেন তোমার উপর কিতাব সঠিক তথ্যসহ, যা উহার সামনে থাকা সত্যের সত্যায়নকারী। আর তিনি নাযিল করেছেন তাওরাত আর ইনজীল। এর আগে মানবজাতির জন্য হিদায়াতস্বরূপ। আর (এসব কিতাবের মাধ্যমে) নাযিল করেছেন ফুরকান/ সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস/অস্বীকার করেছে আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি, তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। আর আল্লাহ মহাশক্তিমান, কঠোর দন্ডদাতা।

৩:১৩৮ :: ইহা (কুরআন) স্পষ্ট বর্ণনা মানবজাতির জন্য আর হিদায়াত ও ওয়াজ স্রষ্টা-সচেতনদের জন্য।

৫:৪৪ :: নিশ্চয় আমরা নাযিল করেছি তাওরাত, উহার মধ্যে আছে হিদায়াতে ও আলো। উহা দ্বারা বিচার-ফায়সালা করতো নবীগণ, (আর নবীগণের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) তারা আত্মসমর্পণ করেছিলো, (বিচার-ফায়সালা করতো) তাদের জন্য যারা (পরবর্তীতে) ইহুদী হয়ে গেছে, আর (বিচার-ফায়সালা করতো) রব্বানীগণ (প্রতিপালন-ব্যবস্থা বাস্তবায়নকারীগণ) ও পণ্ডিতগণ। কারণ তাদেরকে হিফাযাতকারী বানানো হয়েছিলো আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে, আর তারা ছিলো তার ব্যাপারে সাক্ষ্যদাতা। সুতরাং তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় করো। আর তোমরা ক্রয় করো না আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছমূল্য (পার্থিব সুবিধা)। আর যারা বিচার-ফায়সালা করে না যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তা দ্বারা, তারাই কাফির।

৫:৪৬ :: আর আমরা ঐ নবীগণের পরে পাঠিয়েছি ঈসা ইবনে মারইয়ামকে, উহার সত্যতা প্রতিপাদনকারীরূপে যা তার সামনে অবশিষ্ট ছিলো তাওরাত থেকে। আর আমরা তাকে দিয়েছি ইনজীল, উহাতে আছে হিদায়াত ও আলো। আর তা উহার সত্যতা প্রতিপাদনকারী যা তার সামনে অবশিষ্ট ছিলো তাওরাত থেকে, আর হিদায়াত ও ওয়াজ, স্রষ্টা-সচেতনদের জন্য।

৬:৯১ :: আর তারা আল্লাহকে মর্যাদা দেয় নি যেমনভাবে তাঁকে মর্যাদা দেয়া উচিত (বা তিনি যেরূপ মর্যাদার হক্বদার বা তাঁকে মর্যাদা দেয়ার হক্ব আদায় করে যথাযথভাবে)। যখন তারা বললো, “আল্লাহ নাযিল করেন নি কোনো মানুষের উপর কোনো কিছু।” বলো, “কে নাযিল করেছেন কিতাব যা নিয়ে এসেছিলো মূসা আলোস্বরূপ ও মানবজাতির জন্য হিদায়াতস্বরূপ? তোমরা উহা রেখে থাকো তোমাদের কাগজসমূহে, তোমরা উহার কিছু প্রকাশ করে থাকো আর অনেক কিছু গোপন করে রাখো। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছিলো যা না জানতে তোমরা আর না জানতো তোমাদের বাপদাদা।“ বলো, “আল্লাহই (নাযিল করেছেন)।” তারপর তাদেরকে ছেড়ে দাও তাদের অর্থহীন আলোচনার মধ্যে তারা খেলতে থাকুক।

৬:১৫৪ :: তাছাড়া আমরা মুসাকে কিতাব দিয়েছি, যা স্বয়ংসম্পূর্ণ তার জন্য যে উত্তম কাজ করে, আর তা প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, হিদায়াত ও দয়া, যেন তারা তাদের প্রভুর সাথে সাক্ষাতের (জবাবদিহির) প্রতি বিশ্বাস করতে পারে।

৬:১৫৭ :: অথবা তোমরা বলতে পারো, “যদি বাস্তবিক নাযিল করা হতো আমাদের উপর কিতাব, তাহলে আমরা হতাম তাদের তুলনায় অধিক হিদায়াত গ্রহণকারী।” সুতরাং এখন নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে স্পষ্ট যুক্তি-প্রমাণ, তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে, আর হিদায়াত ও দয়া। সুতরাং তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে, যে মিথ্যা সাব্যস্ত করে আল্লাহর আয়াতসমুহের প্রতি আর মুখ ফিরিয়ে থাকে উহা থেকে? শীঘ্রই আমরা তাদেরকে প্রতিফল দেবো যারা মুখ ফিরিয়ে থাকে আমাদের আয়াতসমূহ থেকে, নিকৃষ্ট শাস্তি, তারা মুখ ফিরিয়ে রাখার কারণে।

৭:৫২ :: আর নিশ্চয় আমরা তাদেরকে এনে দিয়েছি একটি কিতাব। আমরা উহাকে বিস্তারিত ব্যাখ্যামূলকভাবে বর্ণনা করেছি জ্ঞানের ভিত্তিতে হিদায়াত ও দয়াস্বরূপ সেই ক্বওমের জন্য যারা বিশ্বাস করে।

৭:১৫৪ :: আর যখন দমে গিয়েছে মূসার ক্রোধ, তখন সে তুলে নিয়েছে ফলকগুলো। আর উহার শিলালিপিতে ছিল হিদায়াত ও দয়া তাদের জন্য যারা তাদের প্রভুকে ভয় করে।

৭:২০৩ :: আর যখন তুমি তাদের কাছে পেশ করো না কোন নিদর্শন, তখন তারা বলে, “কেন তুমি নিজেই কোনোটি বাছাই করে নাও নি?” বলো, “নিশ্চয় আমি উহারই অনুসরণ করি যা ওয়াহী করা হয় আমার প্রতি আমার প্রভুর পক্ষ থেকে। ইহা (কুরআন) তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে চক্ষু উন্মোচন, হিদায়াত ও দয়া, সেই ক্বওমের জন্য যারা বিশ্বাস করে। ”

৯:৩৩ :: তিনিই সেই সত্তা, যিনি প্রেরণ করেছেন তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও সত্য-সঠিক জীবনব্যবস্থা সহকারে, যেন উহাকে বিজয়ী করেন অন্য সকল জীবনদর্শন ও জীবনব্যবস্থার উপর; যদিও তা অপছন্দ করে মুশরিকগণ।

১০:৫৭ :: হে মানুষ, নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে ওয়াজ তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে, আর উহার আরোগ্য যা তোমাদের মস্তিষ্কসমূহে আছে, আর হিদায়াত ও দয়া, স্রষ্টা-সচেতনদের জন্য।

১২:১১১ :: নিশ্চয় তাদের কিসসা-কাহিনীতে শিক্ষা আছে চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য। ইহা (কুরআন) মনগড়া হাদীস নয়। কিন্তু ইহা তার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যতা প্রতিপাদন করে। আর ইহা (কুরআন) সবকিছুর বিশদ বিবরন, হিদায়াত ও দয়া, সেই ক্বওমের জন্য যারা বিশ্বাস করে।

১৬:৬৪ :: আর আমরা নাযিল করি নি তোমার উপর কিতাব এ জন্য ছাড়া যে, যেন তুমি হুবহু স্পষ্টভাবে প্রকাশ করো তাদের জন্য সেই বিষয়ে তারা মতভেদ করেছে যে ব্যাপারে; আর হিদায়াত ও দয়া, সেই ক্বওমের জন্য যারা বিশ্বাস করে।

১৬:৮৯ :: আর সেদিন আমরা সমুত্থিত করবো/ দাঁড় করাবো প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে একজন করে সাক্ষী তাদের উপর তাদের নিজেদের মধ্য থেকে। আর আমরা উপস্থিত করবো তোমাকে স্বাক্ষী হিসাবে এদের (তোমার সমকালীন ও তোমার সাথে সংশ্লিষ্টদের) উপর। আর আমরা নাযিল করেছি তোমার উপর এই কিতাব (কুরআন) যা প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট বিবরন, হিদায়াত, দয়া ও সুসংবাদ আত্মসমর্পণকারীদের জন্য।

১৬:১০২ :: বলো, “উহা নাযিল করে রুহুল কুদুস (জিবরীল) তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে সত্য সহকারে, দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাদেরকে যারা বিশ্বাস করেছে আর (উহা) হিদায়াত ও সুসংবাদ আত্মসমর্পণকারীদের জন্য।

১৭:২ :: আর আমরা মূসাকে দিয়েছি কিতাব, আর আমরা উহাকে (কিতাবকে) করেছি বানী ইসরাইলের জন্য হিদায়াত, এ মর্মে যে, “তোমরা গ্রহণ করো না আমাকে ছাড়া কোনো কর্মবিধায়ক।”

২২:৮-৯ :: আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যে তর্ক করে আল্লাহর ব্যাপারে জ্ঞান ছাড়া। আর তাদের কাছে না আছে হিদায়াত আর না আছে দীপ্তিমান কিতাব। সে বাঁকা করে তার ঘাড়কে যেন পথভ্রষ্ট করতে পারে আল্লাহর পথ থেকে। তার জন্য আছে দুনিয়াতে লাঞ্চনা আর আমরা তাকে স্বাদ আস্বাদন করাবো কিয়ামাত দিবসে আগুনে দহনের শাস্তি।

২৭:১-২ :: তোয়া সীন। এগুলো কুরআনের আয়াতসমূহ ও স্পষ্ট কিতাবের (আয়াতসমূহ)। হিদায়াত ও সুসংবাদ, স্রষ্টা-সচেতনদের জন্য।

২৭:৭৬-৭৭ :: নিশ্চয় এই কুরআন বর্ণনা করে বানী ইসরাইলের কাছে এমন অনেক কিছু যা এমন যে, তারা তাতে মতভেদ করে থাকে; (কুরআন ঐ মতভেদের সমাধান পেশ করে)। আর নিশ্চয় উহা হিদায়াত ও দয়া, বিশ্বাসীদের জন্য।

২৮:৪৩ :: আর নিশ্চয় আমরা দিয়েছিলাম মূসাকে কিতাব আগের যুগের লোকদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার পর, মানবজাতির জন্য চক্ষু উন্মোচন, হিদায়াত ও দয়াস্বরূপ, যেন তারা অনুস্মরণ/অনুবর্তন করতে পারে।

৩১:২-৩ :: ইহা বিজ্ঞতাপূর্ণ কিতাবের আয়াতসমূহ। হিদায়াত ও দয়া- উত্তম আচরণকারীদের জন্য।

৩১:২০ :: তোমরা কে দেখো নি যে, আল্লাহ নিয়োজিত করে দিয়েছেন তোমাদের জন্য যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে আর যা কিছু আছে পৃথিবীতে আর সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন তোমাদের উপর তাঁর প্রকাশ্য ও গোপন নিয়ামাতসমূহ। আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এমনও আছে যে বিতর্ক করে আল্লাহর ব্যাপারে জ্ঞান ছাড়াই আর হিদায়াত ছাড়া আর জ্যোতির্ময় কিতাব ছাড়া।

৩২:২৩ :: আর নিশ্চয় আমরা দিয়েছিলাম মূসাকে কিতাব। সুতরাং তুমি থেকো না সন্দেহের মধ্যে, উহার সম্মুখীন হওয়ার (কিতাব লাভ করার) ব্যাপারে। আর আমরা উহাকে করেছিলাম বানী ইসরাইলের জন্য হিদায়াত।

৪০:৫৩-৫৪ :: আর নিশ্চয় আমরা দিয়েছিলাম মূসাকে হিদায়াত। আর আমরা ওয়ারিস করেছিলাম বানী ইসরাইলকে কিতাবের (ওয়ারিস)। হিদায়াত ও যিকির (স্মরণীয় তথ্য ও বিধিবিধান) চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য।

৪১:৪৪ :: আর যদি আমরা উহাকে করতাম আ’যমী/ অনারবী (ভাষার) কুরআন, তাহলে তারা বলতো, “কেন বিস্তারিত ব্যাখ্যারূপে বিবৃত হয় নি উহার আয়াতসমূহ? (এটা আশ্চর্যের ব্যাপার যে, কুরআন হচ্ছে) আ’যমী/ অনারবী আর (রসূল হচ্ছে) আ’রবী।“ বলো, “উহা যারা বিশ্বাস করেছে তাদের জন্য হিদায়াত ও (মনের) রোগ নিরাময়কারী।” আর যারা বিশ্বাস করে না, তাদের কানগুলোর মধ্যে আছে বধিরতা, আর তাদের উপর আছে অন্ধত্ব। ঐসব লোককে যেন ডাকা হচ্ছে কোন দূরবর্তী স্থান থেকে।

৪৫:১১ :: ইহাই (কুরআন) হিদায়াত। আর যারা অবিশ্বাস/অস্বীকার করেছে তাদের প্রভুর আয়াতসমূহের প্রতি, তাদের জন্য আছে কষ্টদায়ক কলুষতাপূর্ণ শাস্তি।

৪৫:২০ :: ইহা (কুরআন) মানবজাতির জন্য চক্ষু উন্মোচন, হিদায়াত ও দয়া, সেই ক্বওমের জন্য যারা নিশ্চিত ধারণা (বুঝ) রাখে।

৪৭:২৫-২৬ :: নিশ্চয় যারা ফিরে যায় তাদের পিছনের দিকে উহার পরে যা স্পষ্ট হয়েছে তাদের জন্য হিদায়াত স্বরূপ, শয়তান (এ আচরণকে) শোভনীয় করেছে তাদের জন্য আর আশা-আকাঙ্ক্ষার ধারা দীর্ঘ করে দিয়েছে তাদের জন্য। উহা এ কারণে যে, তারা তাদেরকে বলে যারা অপছন্দ করে উহাকে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন, (তারা বলে,) “আমরা তোমাদের আনুগত্য করবো কিছু নির্দেশের ক্ষেত্রে।” আর আল্লাহ জানেন তাদের গোপন শলা-পরামর্শ সম্পর্কে।

৪৮:২৮ :: তিনিই সেই সত্তা যিনি প্রেরণ করেছেন তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও সত্য-সঠিক জীবনব্যবস্থা সহকারে, যেন তিনি উহাকে বিজয়ী করতে পারেন অন্য সব জীবনব্যবস্থার উপর। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।

৫৩:২৩ :: ইহা (লাত, মানাত, উজ্জা) তো কিছুই নয় কিছু নাম ছাড়া যা নামকরণ করেছ তোমরা আর তোমাদের বাপদাদা। আল্লাহ নাযিল করেন নি যার সপক্ষে কোনো প্রমাণপত্র। তারা অনুসরণ করে না অনুমান ছাড়া ও যা তাদের নিজ-সত্তা কামনা করে তা ছাড়া অন্য কিছুর। অথচ নিশ্চয় তাদের কাছে এসেছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে হিদায়াত।

৬১:৯ :: তিনিই সেই সত্তা যিনি প্রেরণ করেছেন তাঁর রসূলকে হিদায়াত সহকারে ও সত্য-সঠিক জীবনব্যবস্থা সহকারে, উহাকে বিজয়ী করার জন্য প্রতিটি জীবনব্যবস্থার উপরে, যদিও মুশরিকরা উহা অপছন্দ করে।

৭২:১৩ :: আর যখন আমরা শুনেছি হিদায়াত (কুরআন), আমরা উহার প্রতি বিশ্বাস করেছি। যে বিশ্বাস করে তার প্রভুর প্রতি, সে (সৎকর্মের প্রতিফলের ক্ষেত্রে) ক্ষতির ভয় করবে না, দ্বিধান্বিত/বিব্রতও হবে না।

>>  পরবর্তী পৃষ্ঠায় যাওয়ার জন্য ক্লিক করুন